পিতা এবং প্রাচীন—উভয় ভূমিকাগুলি পূর্ণ করা
“যদি কেহ ঘর শাসন করিতে না জানে, সে কেমন করিয়া ঈশ্বরের মণ্ডলীর তত্ত্বাবধান করিবে?”—১ তীমথিয় ৩:৫.
১, ২. (ক) প্রথম শতাব্দীতে অবিবাহিত অধ্যক্ষেরা এবং সন্তানহীন বিবাহিত অধ্যক্ষেরা কিভাবে তাদের ভাইয়েদের সেবা করতে সক্ষম হয়েছিলেন? (খ) আক্বিল্লা এবং প্রিষ্কিল্লা কিভাবে বর্তমানের অনেক বিবাহিত দম্পতিদের জন্য এক উদাহরণস্বরূপ?
প্রাথমিক খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে অধ্যক্ষেরা অবিবাহিত, সন্তানহীন বিবাহিত অথবা সন্তানসহ বিবাহিত পুরুষ হতে পারতেন। নিঃসন্দেহে, ঐ খ্রীষ্টানদের মধ্যে কেউ কেউ করিন্থীয় ৭ অধ্যায়ে লেখা প্রথম পত্রে অবিবাহিত থাকার বিষয়ে প্রেরিত পৌলের উপদেশকে অনুসরণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যীশু বলেছিলেন: “এমন নপুংসক আছে, যাহারা স্বর্গ-রাজ্যের নিমিত্তে আপনাদিগকে নপুংসক করিয়াছে।” (মথি ১৯:১২) প্রেরিত পৌল এবং সম্ভবত তার কয়েকজন ভ্রমণ সঙ্গীদের মত এইধরনের অবিবাহিত পুরুষেরা তাদের ভাইয়েদের সাহায্য করার জন্য ভ্রমণ করতে স্বাধীন ছিলেন।
২ বার্ণবা, মার্ক, সীল, লূক, তীমথিয় এবং তীত অবিবাহিত ছিলেন কি না সে সম্বন্ধে বাইবেল কিছু বলে না। যদি বিবাহিত হয়েও থাকেন, তাহলেও স্পষ্টতই তারা বিভিন্ন কার্যভারে বহুদূরে যাত্রা করার জন্য তাদের পরিবারের দায়িত্বগুলির থেকে যথাযোগ্যভাবে মুক্ত ছিলেন। (প্রেরিত ১৩:২; ১৫:৩৯-৪১; ২ করিন্থীয় ৮:১৬, ১৭; ২ তীমথিয় ৪:৯-১১; তীত ১:৫) হতে পারে তারা তাদের স্ত্রীয়েদের সঙ্গে নিতেন, যেমন পিতর এবং “অন্য সকল প্রেরিত” যারা আপাতদৃষ্টিতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার সময় স্ত্রীয়েদের নিয়েছিলেন। (১ করিন্থীয় ৯:৫) আক্বিলা এবং প্রিষ্কিল্লা হলেন বিবাহিত দম্পতির এক উদাহরণ যারা পৌলকে অনুসরণ করে করিন্থ থেকে ইফিষ, তারপর রোম এবং আবার ইফিষে অবস্থান করতে ইচ্ছুক ছিলেন। তাদের কোন সন্তান ছিল কি না সে সম্বন্ধে বাইবেল কিছু বলে না। ভাইয়েদের জন্য তাদের একাগ্র সেবা তাদেরকে “পরজাতীয়দের সমুদয় মণ্ডলী”-র কাছ থেকেও কৃতজ্ঞতা এনে দিয়েছিল। (রোমীয় ১৬:৩-৫; প্রেরিত ১৮:২, ১৮; ২ তীমথিয় ৪:১৯) বর্তমানে, নিঃসন্দেহে অনেক বিবাহিত দম্পতিরা আছেন, যারা আক্বিলা এবং প্রিষ্কিল্লার মত, সম্ভবত যেখানে অধিকতর প্রয়োজন সম্ভবত সেখানে যাওয়ার দ্বারা অন্যান্য মণ্ডলীগুলিতে সেবা করতে পারেন।
পিতা এবং প্রাচীন
৩. কী ইঙ্গিত করে যে প্রথম-শতাব্দীর অনেক প্রাচীনেরা পরিবারসহ বিবাহিত ব্যক্তি ছিলেন?
৩ সা.শ. প্রথম শতাব্দীতে অধিকাংশ খ্রীষ্টীয় প্রাচীনেরা মনে হয় সন্তান সহ বিবাহিত পুরুষ ছিলেন। পৌল যখন “অধ্যক্ষপদের আকাঙ্ক্ষী” একজন ব্যক্তির আবশ্যক যোগ্যতাগুলি সম্বন্ধে বলেন, তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে এইধরনের এক খ্রীষ্টীয় ব্যক্তি “আপন ঘরের শাসন উত্তমরূপে করেন, এবং সম্পূর্ণ ধীরতা সহকারে সন্তানগণকে বশে রাখেন।”—১ তীমথিয় ৩:১, ৪.
৪. সন্তানসহ বিবাহিত প্রাচীনদের কী আবশ্যক ছিল?
৪ আমরা যেমন দেখেছি যে কোন অধ্যক্ষ সন্তান থাকা অথবা এমনকি বিবাহিত হতেও বাধ্য ছিলেন না। কিন্তু যদি বিবাহিত হতেন, তবে একজন খ্রীষ্টানের প্রাচীন বা পরিচারক দাস হিসাবে যোগ্য হয়ে ওঠার জন্য অবশ্যই তার স্ত্রী এবং সন্তানদের প্রতি যথার্থ এবং প্রেমময় মস্তক ব্যবস্থা অনুশীলন করতে হত এবং তার সন্তানদের যথার্থভাবে বশে রাখার জন্য নিজেকে যোগ্যরূপে দেখাতে হত। (১ করিন্থীয় ১১:৩; ১ তীমথিয় ৩:১২, ১৩) তার পরিবারকে পরিচালনা করতে কোন গুরুতর দুর্বলতা একজন ভাইকে মণ্ডলীতে কোন বিশেষ সুযোগ প্রাপ্তির অযোগ্য করে তুলত। কেন? পৌল ব্যাখ্যা করেন: “কিন্তু যদি কেহ ঘর শাসন করিতে না জানে, সে কেমন করিয়া ঈশ্বরের মণ্ডলীর তত্ত্বাবধান করিবে?” (১ তীমথিয় ৩:৫) যদি তার নিজ মাংসিক সম্বন্ধযুক্ত লোকেরা তার তত্ত্বাবধানের প্রতি বশীভূত থাকতে অনিচ্ছুক হয়, তাহলে, অন্যেরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে?
“যাঁহার সন্তানগণ বিশ্বাসী”
৫, ৬. (ক) সন্তানদের কোন্ প্রয়োজনীয়তার কথা পৌল তীতের কাছে উল্লেখ করেছিলেন? (খ) যে প্রাচীনদের সন্তান রয়েছে তাদের কাছে কী প্রত্যাশা করা হয়ে থাকে?
৫ ক্রীতীর মণ্ডলীগুলিতে অধ্যক্ষদের নিযুক্ত করার জন্য তীতকে নির্দেশনা দেওয়ার সময়ে পৌল শর্ত হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন: “যে ব্যক্তি অনিন্দনীয় ও কেবল এক স্ত্রীর স্বামী, যাঁহার সন্তানগণ বিশ্বাসী, নষ্টামি দোষে অপবাদিত বা অদম্য নয় (তাহাকে নিযুক্ত কর)। কেননা ইহা আবশ্যক যে, অধ্যক্ষ ঈশ্বরের ধনাধ্যক্ষ বলিয়া অনিন্দনীয় হন।” কিন্তু “যাঁহার সন্তানগণ বিশ্বাসী” এই আবশ্যকতা দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?—তীত ১:৬, ৭.
৬ “সন্তানগণ বিশ্বাসী” এই উক্তিটি সেই সব অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েদের ইঙ্গিত করে যারা ইতিমধ্যেই তাদের জীবন যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত করেছে এবং বাপ্তিস্মিত হয়েছে অথবা সেই অল্পবয়স্কদের যারা উৎসর্গীকরণ এবং বাপ্তিস্মের দিকে পরিচালিত হতে উন্নতি করছে। মণ্ডলীর সদস্যেরা আশা করে যে প্রাচীনদের সন্তানেরা সাধারণতঃ ভদ্র আচরণকারী এবং বাধ্য হবে। এটি প্রতীয়মান হওয়া উচিত যে, একজন প্রাচীন তার সন্তানদের বিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য তার পক্ষে যতটা করা সম্ভব তা তিনি করছেন। রাজা শলোমন লিখেছিলেন: “বালককে তাহার গন্তব্য পথানুরূপ শিক্ষা দেও, সে প্রাচীন হইলেও তাহা ছাড়িবে না।” (হিতোপদেশ ২২:৬) কিন্তু যদি একজন যুবককে সেই সমস্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরও সে যিহোবাকে সেবা করতে প্রত্যাখ্যান করে বা এক গুরুতর অন্যায় করে, সেক্ষেত্রে কী?
৭. (ক) কেন এটি সুস্পষ্ট যে হিতোপদেশ ২২:৬ পদ একটি অনমনীয় নিয়মকে প্রকাশ করে না? (খ) যদি একজন প্রাচীনের সন্তান যিহোবাকে সেবা করা বেছে না নেয়, তাহলে কেন স্বাভাবিকভাবে প্রাচীনটি তার সুযোগগুলিকে হারাবেন না?
৭ এটি স্পষ্ট যে উপরে উল্লেখিত প্রবাদটি কোন বিধিবদ্ধ নিয়ম সম্বন্ধে বর্ণনা দেয় না। এটি স্বাধীন ইচ্ছার নীতিকে বিলোপ করে না। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৫, ১৬, ১৯) যখন একজন ছেলে বা মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তখন উৎসর্গীকরণ এবং বাপ্তিস্ম সম্বন্ধে তাকে অবশ্যই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি একজন প্রাচীন স্পষ্টভাবে প্রয়োজনীয় আধ্যাত্মিক সাহায্য, নির্দেশনা এবং শাসন প্রদানের পরও কোন যুবক বা যুবতী যিহোবাকে সেবা করা বেছে না নেয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই পিতা একজন অধ্যক্ষ হিসাবে সেবা করার অযোগ্য হতে পারেন না। অপরদিকে, যদি একজন প্রাচীনের গৃহে অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানেরা থাকে যারা একের পর এক আধ্যাত্মিকভাবে অসুস্থ এবং সমস্যাজনক হয়ে পড়ছে, তবে তিনি হয়ত আর “আপন ঘরের শাসন উত্তমরূপে করেন” বলে বিবেচিত হবেন না। (১ তীমথিয় ৩:৪) বিষয়টি হচ্ছে, এটি প্রকাশ পাওয়া উচিত যে ‘সন্তানগণকে বিশ্বাসী, নষ্টামি দোষে অপবাদিত বা অদম্য নয়’ হিসাবে গড়ার জন্য একজন অধ্যক্ষ তার যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন।a
এক “অবিশ্বাসিনী স্ত্রী”-র সাথে বিবাহিত
৮. একজন প্রাচীনের তার অবিশ্বাসিনী স্ত্রীর প্রতি কিরূপ আচরণ করা উচিত?
৮ অবিশ্বাসিনীদের সাথে বিবাহিত খ্রীষ্টীয় পুরুষদের সম্বন্ধে পৌল লিখেছিলেন: “যদি কোন ভ্রাতার অবিশ্বাসিনী স্ত্রী থাকে, আর সেই নারী তাহার সহিত বাস করিতে সম্মতা হয়, তবে সে তাহাকে পরিত্যাগ না করুক; . . . কেননা . . . অবিশ্বাসিনী স্ত্রী সেই ভ্রাতাতে পবিত্রীকৃতা হইয়াছে; তাহা না হইলে তোমাদের সন্তানগণ অশুচি হইত, কিন্তু বাস্তবিক তাহারা পবিত্র। কারণ, . . . হে স্বামি, তুমি কি করিয়া জান যে, তুমি তোমার স্ত্রীকে পরিত্রাণ করিবে কি না?” (১ করিন্থীয় ৭:১২-১৪, ১৬) এখানে “অবিশ্বাসিনী” শব্দটি এমন এক স্ত্রীকে উল্লেখ করে না যার কোন ধর্মীয় বিশ্বাস নেই, বরঞ্চ এটি তাকে নির্দেশ করে যে যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত নয়। সে একজন যিহূদী বা পৌত্তলিক দেবতাগুলিতে বিশ্বাসী হতে পারে। বর্তমানে একজন প্রাচীন হয়ত এমন এক মহিলার সাথে বিবাহিত থাকতে পারেন যে এক ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাস করে, একজন অজ্ঞেয়বাদী অথবা এমনকি একজন নাস্তিকও হতে পারে। যদি সেই স্ত্রী তার সাথে বাস করতে চায়, তাহলে কেবল ভিন্ন বিশ্বাসের কারণে তাকে পরিত্যাগ করা স্বামীর উচিত নয়। তবুও তার তাকে রক্ষা করার প্রত্যাশা নিয়ে ‘অপেক্ষাকৃত দুর্ব্বল পাত্র বলিয়া তাহার সহিত জ্ঞানপূর্ব্বক বাস করা’ উচিত।—১ পিতর ৩:৭; কলসীয় ৩:১৯.
৯. যে দেশগুলিতে আইন স্বামী এবং স্ত্রী উভয়কেই তাদের সন্তানদের কাছে তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাসকে প্রকাশ করার অধিকার দেয়, সেই ক্ষেত্রে একজন প্রাচীনের কিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখান উচিত এবং এটি তার সুযোগগুলিকে কিভাবে প্রভাবিত করবে?
৯ যদি একজন অধ্যক্ষের সন্তান থাকে, তবে তিনি তাদেরকে “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] শাসনে ও চেতনা প্রদানে” লালন পালন করার জন্য যথার্থভাবে স্বামী এবং পিতা হিসাবে মস্তক ব্যবস্থাকে অনুশীলন করবেন। (ইফিষীয় ৬:৪) অনেক দেশের আইন উভয় বিবাহ সাথীকে তাদের সন্তানদের ধর্মীয় নির্দেশনা প্রদানের অধিকার প্রদান করে। এই ক্ষেত্রে স্ত্রী হয়ত সন্তানদের কাছে তার ধর্মীয় বিশ্বাস ও অভ্যাসগুলিকে প্রকাশ করার জন্য তার অধিকার প্রয়োগের দাবি করতে পারে, যার অন্তর্ভুক্ত হয়ত তাদেরকে তার গির্জায় নিয়ে যাওয়া হতে পারে।b মিথ্যা ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সন্তানদের অবশ্যই তাদের বাইবেল-শিক্ষিত বিবেককে অনুসরণ করা উচিত। পরিবারের মস্তক হিসাবে পিতা তার সন্তানদের সাথে অধ্যয়ন করার এবং যখন সম্ভব তাদেরকে কিংডম হলের সভাগুলিতে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিজের অধিকারকে অনুশীলন করবেন। যখন তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেওয়ার মত বয়সে পৌঁছায়, তখন তারা কোন্ পথ বেছে নেবে সে সম্বন্ধে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে। (যিহোশূয় ২৪:১৫) যদি তার সহপ্রাচীন এবং মণ্ডলীর সদস্যেরা দেখেন যে তিনি তার সন্তানদেরকে যথার্থভাবে সত্যের পথে নির্দেশনা দেবার জন্য আইন যতটুকু অনুমোদন করে, সে ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ চেষ্টা করছেন, তবে তিনি একজন অধ্যক্ষ হিসাবে অযোগ্য হবেন না।
‘তাহার ঘরের শাসন উত্তমরূপে করেন’
১০. যদি একজন বিবাহিত পুরুষ একজন প্রাচীন হন, তাহলে তার প্রাথমিক কর্তব্য কী হবে?
১০ এমনকি একজন প্রাচীন যিনি একজন পিতা এবং যার স্ত্রী সহখ্রীষ্টান, তার পক্ষেও তার সময় এবং মনোযোগ যথার্থভাবে তার স্ত্রী, সন্তান এবং মণ্ডলীর দায়িত্বগুলির মধ্যে ভাগ করা সহজ হয় না। শাস্ত্র এবিষয়ে খুবই স্পষ্ট যে একজন খ্রীষ্টীয় পিতা তার স্ত্রী এবং সন্তানদের প্রতি যত্ন নেওয়ার জন্য দায়িত্ববদ্ধ। পৌল লিখেছিলেন: “কিন্তু কেহ যদি আপনার সম্পর্কীয় লোকদের বিশেষতঃ নিজ পরিজনগণের জন্য চিন্তা না করে, তাহা হইলে সে বিশ্বাস অস্বীকার করিয়াছে, এবং অবিশ্বাসী অপেক্ষা অধম হইয়াছে।” (১ তীমথিয় ৫:৮) সেই একই পত্রে, পৌল উল্লেখ করেছিলেন যে, বিবাহিত ব্যক্তিরা যারা ইতিমধ্যেই নিজেদের উত্তম স্বামী এবং পিতা হিসাবে প্রদর্শন করেছেন শুধুমাত্র তাদেরকেই অধ্যক্ষ হিসাবে সেবা করার জন্য সুপারিশ করা উচিত।—১ তীমথিয় ৩:১-৫.
১১. (ক) কোন্ উপায়ে একজন প্রাচীনের “আপনার সম্পর্কীয় লোকদের . . . জন্য চিন্তা” করা উচিত? (খ) এটি কিভাবে একজন প্রাচীনকে তার মণ্ডলীর দায়িত্বগুলিকে পূরণ করতে সাহায্য করতে পারে?
১১ একজন প্রাচীনের তার সম্পর্কীয় লোকেদের জন্য শুধু বস্তুগত বিষয়ই নয়, বরঞ্চ আধ্যাত্মিক এবং আবেগত বিষয়েও “চিন্তা” করা উচিত। বিজ্ঞ রাজা শলোমন লিখেছিলেন: “বাহিরে তোমার কার্য্যের আয়োজন কর, ক্ষেত্রে আপনার জন্য তাহা সম্পন্ন কর, পরে তোমার ঘর বাঁধ।” (হিতোপদেশ ২৪:২৭) সুতরাং তার স্ত্রী এবং সন্তানের বস্তুগত, আবেগগত এবং আমোদপ্রমোদ সংক্রান্ত বিষয়গুলি সম্বন্ধে চিন্তা করার সাথে সাথে একজন অধ্যক্ষের তাদের আধ্যাত্মিকভাবেও গড়ে তোলা উচিত। এটি করার জন্য সময়ের প্রয়োজন—সেই সময় যা তিনি মণ্ডলীর কাজে নিয়োজিত করতে সমর্থ হবেন না। কিন্তু এটি হচ্ছে সেই সময় যা পরিবারের আনন্দ এবং আধ্যাত্মিকতাকে প্রচুরভাবে পুরস্কৃত করতে পারে। পরিশেষে, যদি তার পরিবার আধ্যাত্মিকভাবে সবল হয় তবে প্রাচীনকে হয়ত পরিবারের সমস্যাগুলি মোকাবিলার জন্য কম সময় ব্যয় করতে হবে। এটি মণ্ডলীর বিষয়গুলিতে মনোযোগ দেওয়ার জন্য তার মনকে মুক্ত রাখবে। একজন উত্তম স্বামী এবং একজন উত্তম পিতা হিসাবে তার উদাহরণ মণ্ডলীর জন্য আধ্যাত্মিকভাবে উপকারজনক হবে।—১ পিতর ৫:১-৩.
১২. পরিবারের কোন্ বিষয়ে পিতাদের, যারা প্রাচীন একটি উত্তম উদাহরণ স্থাপন করা উচিত?
১২ উত্তমরূপে শাসন করা একটি পারিবারিক অধ্যয়নের জন্য সময় তালিকাবদ্ধ করাকে অন্তর্ভুক্ত করে। এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ যে প্রাচীনেরা এই বিষয়ে একটি উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেন, কারণ দৃঢ় পরিবারগুলি দৃঢ় মণ্ডলী গঠন করে। একজন অধ্যক্ষের সময় নিয়মিতভাবে পরিচর্যার অন্যান্য সুযোগগুলি দ্বারা এতটা পরিব্যাপ্ত হওয়া উচিত নয় যার ফলে তার স্ত্রী এবং সন্তানদের সাথে অধ্যয়ন করার সময় থাকে না। যদি এরকম ঘটতে থাকে, তবে তার তালিকাকে পুনরায় পরীক্ষা করা উচিত। তার হয়ত পুনরায় তালিকা করা অথবা তাকে হয়ত অন্যান্য বিষয়গুলিতে নিয়োজিত সময়, এমনকি কিছু বিশেষ সুযোগগুলির ক্ষেত্রেও সময় কম করতে হতে পারে।
ভারসাম্যপূর্ণ তত্ত্বাবধান
১৩, ১৪. যাদের পরিবার আছে এমন প্রাচীনদের “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” কোন্ পরামর্শ দিয়েছেন?
১৩ পরিবার এবং মণ্ডলীর দায়িত্বগুলির মধ্যে ভারসাম্য বজার রাখা সম্বন্ধীয় পরামর্শ প্রদান নতুন কিছু নয়। অনেক বছর ধরে প্রাচীনদেরকে “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” এই বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আসছেন। (মথি ২৪:৪৫) ৩৭ বছরেরও পূর্বে, সেপ্টেম্বর ১৫, ১৯৫৯, প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি), পৃষ্ঠা ৫৫৩ এবং ৫৫৪ পরামর্শ দিয়েছিল: “আমাদের সময়ে এই সমস্ত বিষয়গুলির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা কি প্রকৃতপক্ষেই একটি বিষয় নয়? এই ভারসাম্যে আপনাদের নিজেদের পরিবারের আগ্রহগুলিকে যথার্থ গুরুত্ব আরোপ করুন। নিশ্চয়ই যিহোবা ঈশ্বর আশা করেন না যে একজন ব্যক্তি তার সমস্ত সময় মণ্ডলীর কার্যে, তার ভাইয়েদের এবং প্রতিবেশীদের পরিত্রাণ লাভে সাহায্য করতে ব্যবহার করবেন, কিন্তু তার নিজের পরিবারের পরিত্রাণের বিষয়ে যত্ন নেবেন না। একজন ব্যক্তির স্ত্রী এবং সন্তান হচ্ছে তার প্রাথমিক দায়িত্ব।”
১৪ নভেম্বর ১, ১৯৮৬, প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি), পৃষ্ঠা ২২ পরামর্শ দিয়েছিল: “পরিবার হিসাবে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশগ্রহণ আপনাদেরকে আরও ঘনিষ্ঠ করবে, তবুও প্রত্যেক সন্তানের একান্ত প্রয়োজনের জন্য আপনার ব্যক্তিগত সময় এবং আবেগগত শক্তি প্রদান করা আবশ্যক। অতএব, ‘যারা আপনার সম্পর্কীয় লোক’ তাদের আধ্যাত্মিক, আবেগগত এবং বস্তুগত বিষয়গুলির যত্ন নেওয়ার সাথে সাথে . . . মণ্ডলীর কর্তব্যে আপনি কতটা সময় ব্যবহার করতে পারেন তা স্থির করার ক্ষেত্রে ভারসাম্যের প্রয়োজন। [একজন খ্রীষ্টানের] অবশ্যই ‘প্রথমতঃ [তাহার] নিজ বাটীর লোকদের প্রতি ভক্তি প্রকাশ করিতে . . . শিক্ষা করা’ উচিত। (১ তীমথিয় ৫:৪, ৮)”
১৫. স্ত্রী এবং সন্তান সহ একজন প্রাচীনের কেন প্রজ্ঞা এবং বিচক্ষণতার প্রয়োজন আছে?
১৫ একটি শাস্ত্রীয় প্রবাদ বলে: “প্রজ্ঞা দ্বারা গৃহ নির্ম্মিত হয়, আর বুদ্ধি দ্বারা তাহা স্থিরীকৃত হয়।” (হিতোপদেশ ২৪:৩) হ্যাঁ, একজন অধ্যক্ষের তার ঐশিক কর্তব্যগুলি পূর্ণ করার জন্য এবং একই সাথে তার পরিবারকে গড়ে তোলার জন্য, অবশ্যই বিশেষ প্রজ্ঞা এবং বিচক্ষণতার প্রয়োজন। শাস্ত্রীয়ভাবে, তত্ত্বাবধান করার জন্য তার একটির চেয়ে বেশি ক্ষেত্র রয়েছে। তার পরিবার এবং তার মণ্ডলীর দায়িত্বগুলি জড়িত। এইগুলির মধ্য ভারসাম্য বজায় রাখতে তার বিচক্ষণতার প্রয়োজন। (ফিলিপীয় ১:৯, ১০) অগ্রাধিকারের বিষয়গুলিকে নির্ধারণের তার প্রজ্ঞার প্রয়োজন। (হিতোপদেশ ২:১০, ১১) মণ্ডলীর সুযোগগুলিতে যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি যতটা দায়িত্বই অনুভব করুন না কেন, একজন স্বামী এবং পিতা হিসাবে তার উপলব্ধি করা উচিত যে তার ঈশ্বর-দত্ত প্রাথমিক দায়িত্ব হল তার পরিবারের যত্ন নেওয়া এবং পরিত্রাণ করা।
উত্তম পিতারা, একই সাথে উত্তম প্রাচীনেরা
১৬. একজন প্রাচীনের কী বিশেষ সুযোগ রয়েছে, যদি তিনি একজন পিতাও হন?
১৬ একজন প্রাচীন যার ভদ্র আচরণকারী সন্তানেরা রয়েছে তারা এক প্রকৃত সম্পদ হতে পারে। যদি তিনি তার পরিবারের উত্তম যত্ন নিতে শেখেন, তাহলে তিনি মণ্ডলীর অন্যান্য পরিবারগুলিকেও সাহায্য করার যোগ্য হবেন। তিনি তাদের সমস্যাগুলি আরও ভালভাবে বোঝেন এবং পরামর্শ দিতে পারেন যা তার নিজের অভিজ্ঞতাকে প্রতিফলিত করে। আনন্দের বিষয় যে, সারা পৃথিবীতে হাজার হাজার প্রাচীনেরা স্বামী, পিতা এবং অধ্যক্ষ হিসাবে এক উত্তম কাজ করে যাচ্ছেন।
১৭. (ক) একজন পুরুষ যিনি একজন পিতা এবং প্রাচীন উভয়ই, তার কখনও কী ভুলে যাওয়া উচিত নয়? (খ) মণ্ডলীর অন্যান্য সদস্যদের কিভাবে সহানুভূতি দেখান উচিত?
১৭ একটি বিবাহিত পুরুষের প্রাচীন হওয়ার জন্য তাকে অবশ্যই এমন একজন পরিপক্ব খ্রীষ্টান হতে হবে, যিনি তার স্ত্রী এবং সন্তানের যত্ন নেওয়ার সাথে সাথে তার বিষয়গুলিকে এমনভাবে পরিচালিত করতে পারেন, যাতে করে তিনি মণ্ডলীর অন্যান্যদের প্রতি সময় এবং মনোযোগ দিতে সক্ষম হন। তার কখনও ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে তার পালনের কাজ ঘর থেকেই শুরু হয়। স্ত্রী এবং সন্তান সহ প্রাচীনদের তাদের পরিবার এবং মণ্ডলী উভয়ের প্রতি কর্তব্য রয়েছে, এটি জেনে মণ্ডলীর সদস্যেরা তাদের কাছ থেকে অযৌক্তিক সময় দাবি করার চেষ্টা করবে না। উদাহরণস্বরূপ, একজন প্রাচীন যার এমন সন্তান রয়েছে যাদের পর দিন সকালে বিদ্যালয়ে যেতে হবে, হয়ত সবসময় সন্ধ্যায় সভাগুলির পর কিছু সময় থাকতে সক্ষম হবেন না। মণ্ডলীর অন্যান্য সদস্যদের তা বোঝা উচিত এবং সহানুভূতি প্রদর্শন করা উচিত।—ফিলিপীয় ৪:৫.
প্রাচীনেরা আমাদের কাছে প্রিয় হবেন
১৮, ১৯. (ক) ১ করিন্থীয় ৭ অধ্যায়ের পরীক্ষা আমাদের কী উপলব্ধি করতে সক্ষম করেছে? (খ) ঐ ধরনের খ্রীষ্টীয় পুরুষদের আমাদের কিভাবে বিবেচনা করা উচিত?
১৮ করিন্থীয়দের কাছে লেখা পৌলের প্রথম পত্রের ৭ অধ্যায়টির পরীক্ষা, আমাদের দেখতে সক্ষম করেছে যে পৌলের উপদেশ অনুসরণ করে, অনেক অবিবাহিত পুরুষেরা আছেন যারা তাদের স্বাধীনতাকে রাজ্যের আগ্রহের জন্য সেবা করতে ব্যবহার করছেন। এছাড়া, হাজার হাজার সন্তানহীন বিবাহিত ভাইয়েরাও আছেন যারা তাদের স্ত্রীয়েদের প্রতি যুক্তিসঙ্গত মনোযোগ দিয়ে, তাদের স্ত্রীয়েদের প্রশংসনীয় সহযোগিতার দ্বারা উত্তম অধ্যক্ষ হিসাবে জেলাগুলিতে, সীমাগুলিতে, মণ্ডলীগুলিতে এবং ওয়াচ টাওয়ার শাখাগুলিতে সেবা করে যাচ্ছেন। পরিশেষে, যিহোবার লোকেদের প্রায় ৮০,০০০ মণ্ডলীগুলিতে অনেক পিতারা আছেন যারা শুধুমাত্র তাদের স্ত্রী এবং সন্তানদের যত্নই নেন না, কিন্তু তাদের ভাইয়েদেরকেও যত্নবান পালক হিসাবে সেবা করার জন্য সময় নিয়ে থাকেন।—প্রেরিত ২০:২৮.
১৯ প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “যে প্রাচীনেরা উত্তমরূপে শাসন করেন, বিশেষতঃ যাঁহারা বাক্যে ও শিক্ষাদানে পরিশ্রম করেন, তাঁহারা দ্বিগুণ সমাদরের যোগ্য গণিত হউন।” (১ তীমথিয় ৫:১৭) হ্যাঁ, যে প্রাচীনেরা উত্তম রূপে তাদের গৃহ এবং মণ্ডলীগুলি শাসন করেন, তারা আমাদের প্রেম এবং সম্মানের যোগ্য। বাস্তবিকই আমাদের “এই প্রকার লোকদিগকে সমাদর” করা উচিত।—ফিলিপীয় ২:২৯.
[পাদটীকাগুলো]
a প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি), ফেব্রুয়ারি ১, ১৯৭৮, পৃষ্ঠা ৩১-২ দেখুন।
b প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি), ডিসেম্বর ১, ১৯৬০, পৃষ্ঠা ৭৩৫-৬ দেখুন।
পুনরালোচনার মাধ্যমে
◻ আমরা কিভাবে জানি যে সা.শ. প্রথম শতাব্দীর অনেক প্রাচীনদের পরিবার ছিল?
◻ সন্তান সহ বিবাহিত প্রাচীনদের কী প্রয়োজন এবং কেন?
◻ “সন্তানগণ বিশ্বাসী” বলার দ্বারা কী বোঝান হয়েছে, কিন্তু সে ক্ষেত্রে কী যদি একজন প্রাচীনের সন্তান যিহোবাকে সেবা করা বেছে না নেয়?
◻ কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে একজন প্রাচীনের “আপনার সম্পর্কীয় লোকদের . . . জন্য চিন্তা” করা উচিত?
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
দৃঢ় পরিবারগুলি দৃঢ় মণ্ডলী গঠন করে