-
আমরা যেন কখনও বিনাশের জন্য সরে না পড়ি!১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ | ডিসেম্বর ১৫
-
-
আমরা যেন কখনও বিনাশের জন্য সরে না পড়ি!
“আমরা বিনাশের জন্য সরিয়া পড়িবার লোক নহি।”—ইব্রীয় ১০:৩৯.
১. কোন্ পরিস্থিতিতে প্রেরিত পিতর ভয়ের কাছে হার মেনেছিলেন?
প্রেরিতেরা নিশ্চয় খুবই হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন, যখন তাদের প্রিয় প্রভু যীশু তাদেরকে বলেছিলেন যে তারা ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়বে ও তাঁকে ছেড়ে চলে যাবে। তাদের প্রভুর এত বড় বিপদের সময়ে তারা কীভাবে এমন কাজ করতে পারেন? পিতর খুব জোর গলায় বলেছিলেন: “যদিও সকলে বিঘ্ন পায়, তথাপি আমি পাইব না।” পিতর আসলে একজন সাহসী ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু, যীশুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে যখন তাঁকে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তখন পিতর ও অন্যান্য শিষ্যরা ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। এরপর যীশুকে যখন মহাযাজক কায়াফার বাড়িতে জেরা করা হচ্ছিল তখন পিতর খুব অস্থিরভাবে প্রাঙ্গণে অপেক্ষা করছিলেন। ঠাণ্ডা রাত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পিতরকে হয়তো এই ভয় পেয়ে বসেছিল যে যীশু আর তাঁর সঙ্গে যারা মেলামেশা করেছেন এমন সবাইকে মেরে ফেলা হবে। সেখানে কিছু লোক যখন পিতরকে দেখে যীশুর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে চিনে ফেলেছিল তখন তিনি একেবারে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। তিনি যীশুর সঙ্গে তার কোনরকম সম্পর্ক থাকার কথা তিন বার অস্বীকার করেছিলেন। এমনকি পিতর বলেছিলেন যে তিনি তাঁকে চেনেন না!—মার্ক ১৪:২৭-৩১, ৬৬-৭২.
২. (ক) যীশুকে যে রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সেই রাতে পিতরের ভয় পাওয়া কেন তাকে “বিনাশের জন্য সরিয়া পড়িবার লোক” করে তোলেনি? (খ) আমাদের কোন্ সংকল্প নেওয়া উচিত?
২ এটা ছিল পিতরের জীবনের একটা দুর্বল মুহূর্ত আর এই মুহূর্তের কথা ভেবে তিনি যে সারা জীবন অনুশোচনা করেছিলেন, সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু, সেই রাতে পিতর যা করেছিলেন তার জন্য কি তাকে কাপুরুষ বলা যায়? এটা কি তাকে এমন এক “লোক” করে তুলেছিল যে সম্বন্ধে পরে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “পরন্তু আমরা বিনাশের জন্য সরিয়া পড়িবার লোক নহি”? (ইব্রীয় ১০:৩৯) আমরা প্রায় সবাই স্বীকার করব যে পৌলের এই কথাগুলো পিতরের বেলায় খাটে না। কেন? কারণ পিতরের ভয় ছিল ক্ষণস্থায়ী। তিনি তার জীবনে যে অসীম সাহস ও বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন সেই তুলনায় সেটা ছিল এক সামান্য ব্যর্থতা। একইভাবে, আমাদের অনেকের জীবনেই এমন কিছু মুহূর্ত আছে যা মনে করে আমরা হয়তো কিছুটা লজ্জা পাই, যখন আমাদের হয়তো এক অজানা ভয় পেয়ে বসেছিল যাতে করে সত্যের জন্য আমাদের যতটা সাহস দেখানোর দরকার ছিল ততটা আমরা দেখাতে পারিনি। (রোমীয় ৭:২১-২৩ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) এটা জেনে আমরা আশ্বাস পেতে পারি যে ক্ষণিকের জন্য এইরকম সামান্য ব্যর্থতা আমাদেরকে বিনাশের জন্য সরে পড়ার লোক করে তোলে না। তারপরও, আমাদের সংকল্প নেওয়া উচিত যে আমরা যেন কখনও সেরকম লোক না হয়ে পড়ি। কেন? আর এইরকম লোক হওয়া আমরা কীভাবেই বা এড়াতে পারি?
বিনাশের জন্য সরে পড়া মানে কী
৩. ভাববাদী এলিয় ও যোনা কীভাবে ভয়ের কাছে হার মেনেছিলেন?
৩ পৌল যখন “সরিয়া পড়িবার লোক” কথাগুলো লিখেছিলেন তখন তিনি কিছু সময়ের জন্য সাহস হারিয়ে ফেলাকে বোঝাননি। পৌল নিশ্চয়ই পিতরের কথা এবং এইরকম অন্যান্য ঘটনা জানতেন। সাহসী ও স্পষ্টভাষী ভাববাদী এলিয়ও একবার ভয়ের কাছে হার মেনেছিলেন এবং রানি ঈষেবল যখন তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল তখন তিনি তার জীবন বাঁচানোর জন্য পালিয়ে গিয়েছিলেন। (২ রাজাবলি ১৯:১-৪) ভাববাদী যোনা এর চেয়েও বেশি ভয় পেয়েছিলেন। যিহোবা তাকে হিংস্রতার জন্য কুখ্যাত, দুষ্ট লোকেদের শহর নীনবীতে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু যোনা সঙ্গে সঙ্গে নীনবীর প্রায় ৩,৫০০ কিলোমিটার উল্টো দিকে অবস্থিত তর্শীশে যাওয়ার জন্য জাহাজে চড়েছিলেন। (যোনা ১:১-৩) তবুও, এই বিশ্বস্ত ভাববাদীদের অথবা প্রেরিত পিতর কাউকেই সরে পড়ার লোক বলা যায় না। কেন বলা যায় না?
৪, ৫. (ক) ইব্রীয় ১০:৩৯ পদে ‘বিনাশ’ কথার দ্বারা পৌল আসলে কী বোঝাতে চেয়েছেন তা বুঝতে এই প্রসঙ্গ আমাদের কীভাবে সাহায্য করে? (খ) “আমরা বিনাশের জন্য সরিয়া পড়িবার লোক নহি” বলার দ্বারা পৌল কী বোঝাতে চেয়েছিলেন?
৪ পৌল যে কথাগুলো লিখেছেন তা পুরোটা দেখুন: “পরন্তু আমরা বিনাশের জন্য সরিয়া পড়িবার লোক নহি।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) “বিনাশের” জন্য বলতে তিনি কী বুঝিয়েছিলেন? এটার জন্য তিনি যে গ্রিক শব্দ ব্যবহার করেছেন তা কখনও কখনও চির ধ্বংসকে বোঝায়। পৌলের বলা প্রসঙ্গের সঙ্গে এই অর্থটা মিলে যায়। একটু আগেই পৌল সাবধান করেছিলেন: “সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পাইলে পর যদি আমরা স্বেচ্ছাপূর্ব্বক পাপ করি, তবে পাপার্থক আর কোন যজ্ঞ অবশিষ্ট থাকে না, কেবল থাকে বিচারের ভয়ঙ্কর প্রতীক্ষা এবং বিপক্ষদিগকে গ্রাস করিতে উদ্যত অগ্নির চণ্ডতা।”—ইব্রীয় ১০:২৬, ২৭.
৫ তাই পৌল যখন তার খ্রীষ্টান ভাইবোনদের বলেছিলেন যে, “আমরা বিনাশের জন্য সরিয়া পড়িবার লোক নহি,” তখন তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে তিনি এবং তার বিশ্বস্ত খ্রীষ্টান পাঠক-পাঠিকারা সংকল্পবদ্ধ ছিলেন যে তারা কখনও যিহোবার পথ থেকে সরে যাবেন না ও তাঁকে সেবা করা বন্ধ করে দেবেন না। কারণ তা করা শুধু চির ধ্বংসের দিকেই নিয়ে যেতে পারে। ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা ছিলেন এমন একজন যিনি বিনাশের জন্য সরে পড়েছিলেন, ঠিক যেমন সত্যের অন্যান্য শত্রুরাও স্বেচ্ছায় যিহোবার আত্মার বিরুদ্ধে কাজ করেছিলেন। (যোহন ১৭:১২; ২ থিষলনীকীয় ২:৩) এরা সেই “ভীরু” ব্যক্তিদের মধ্যে পড়ে যারা রূপক অগ্নিহ্রদে চিরকালের মতো ধ্বংস হয়ে যাবে। (প্রকাশিত বাক্য ২১:৮) না, আমরা কখনও এইরকম লোক হতে চাই না!
৬. শয়তান দিয়াবল আমাদের দিয়ে কোন্ কাজ করাতে চায়?
৬ শয়তান দিয়াবল চায় যেন আমরা বিনাশের জন্য সরে পড়ি। ‘সুনিপুণ চাতুরীতে’ ওস্তাদ হওয়ায় সে জানে যে এইরকম ধ্বংসাত্মক কাজ আমাদের ধীরে ধীরে বিনাশের দিকে নিয়ে যায়। (ইফিষীয় ৬:১১, পাদটীকা, NW) সরাসরি তাড়না করে সে যদি তার উদ্দেশ্য হাসিল করতে না পারে, তাহলে সত্য খ্রীষ্টানদের বিশ্বাসকে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য সে আরও ধূর্ত চাল খাটায়। সে যিহোবার সাহসী, উদ্যোগী সাক্ষিদের মুখ বন্ধ করে দিতে চায়। আসুন আমরা দেখি যে পৌল যাদের উদ্দেশে লিখেছিলেন, সেই ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের বিরুদ্ধে সে কোন্ কৌশল ব্যবহার করেছিল।
সরে পড়ার জন্য খ্রীষ্টানদের যেভাবে চাপ দেওয়া হয়েছিল
৭. (ক) যিরূশালেম মণ্ডলীর ইতিহাস কী ছিল? (খ) পৌলের কিছু পাঠক-পাঠিকাদের আধ্যাত্মিক অবস্থা কেমন ছিল?
৭ সাক্ষ্য প্রমাণ দেখায় যে পৌল প্রায় সা.কা. ৬১ সালে ইব্রীয়দের কাছে তার এই চিঠিটা লিখেছিলেন। যিরূশালেম মণ্ডলী ইতিমধ্যেই অনেক খারাপ পরিস্থিতি ভোগ করেছিল। যীশুর মৃত্যুর পর প্রচণ্ড তাড়নার ঢেউ বয়ে গিয়েছিল এবং সেই শহরের অনেক খ্রীষ্টানরা ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শান্তির সময়ও এসেছিল যখন খ্রীষ্টানদের সংখ্যা অনেক বেড়েছিল। (প্রেরিত ৮:৪; ৯:৩১) সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার তাড়না এবং কষ্টকর সময় এসেছিল। পৌল যখন ইব্রীয়দের কাছে এই চিঠি লিখেছিলেন তখন সেই মণ্ডলীতে তুলনামূলকভাবে শান্তির সময় ছিল বলে মনে হয়। তবে, সেখানে বিভিন্ন ধরনের চাপ ছিল। যীশু যখন যিরূশালেমের ধ্বংসের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তখন থেকে প্রায় ত্রিশ বছর কেটে গিয়েছিল। আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো ভেবেছিলেন যে শেষ আসতে শুধু শুধু এত দেরি হচ্ছে এবং তারা বেঁচে থাকতে থাকতে শেষ আসবে না। অন্যরা, বিশেষ করে নতুন বিশ্বাসীদের ওপর তখনও পর্যন্ত কোন বড় তাড়না আসেনি বলে পরীক্ষার সময় যে ধৈর্যের দরকার, সেই সম্বন্ধে তারা কিছু জানতেন না বললেই চলে। (ইব্রীয় ১২:৪) শয়তান নিশ্চয়ই এইরকম অবস্থার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। সে কোন্ ‘সুনিপুণ চাতুরীগুলো’ ব্যবহার করেছিল?
৮. নতুন খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর প্রতি অনেক যিহূদী কোন্ মনোভাব দেখিয়েছিল?
৮ যিরূশালেম ও যিহূদিয়ার যিহূদী সমাজ নতুন খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীকে অবজ্ঞার চোখে দেখত। পৌলের চিঠি পড়ে, আমরা উদ্ধত যিহূদী ধর্মীয় নেতারা এবং তাদের অনুসারীরা খ্রীষ্টানদেরকে যে বিদ্রূপ করেছিল তার কিছুটা ধারণা পাই। তারা হয়তো বলেছিল: ‘যিরূশালেমে আমাদের শত শত বছরের পুরনো বড় মন্দির আছে! আমাদের একজন মহান মহাযাজক আছেন এবং তার অধীনে আরও অনেক যাজকেরা কাজ করছেন। প্রতিদিন হোমবলি উৎসর্গ করা হয়। আমাদের কাছে ব্যবস্থা আছে যা স্বর্গদূতেরা মোশিকে দিয়েছিলেন আর যখন সেই ব্যবস্থা পালন করা হয়েছিল তখন সীনয় পর্বতে বড় বড় আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছিল। আর পূর্বপুরুষদের ধর্ম, যিহূদীধর্ম থেকে সরে আসা এই খ্রীষ্টানেরা নিজেরা এক নতুন দল গড়ে তুলেছে, আমাদের যিহূদী ধর্মের কাছে এরা কিছুই নয়!’ এই ঘৃণাপূর্ণ কথাবার্তা খ্রীষ্টানদের ওপর কীরকম প্রভাব ফেলেছিল? পৌলের চিঠি থেকে বোঝা যায় যে কিছু ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের ওপর এটা খুবই খারাপ প্রভাব ফেলেছিল। পৌলের চিঠি একেবারে ঠিক সময়েই তাদের সাহায্যে এসেছিল।
যে কারণে তাদের কখনও বিনাশের জন্য সরে পড়া উচিত ছিল না
৯. (ক) ইব্রীয়দের কাছে লেখা চিঠির মূল বিষয়বস্তু কী? (খ) কোন্ অর্থে খ্রীষ্টানেরা যিরূশালেমের চেয়েও ভাল এক মন্দিরে সেবা করেছিলেন?
৯ বিনাশের জন্য সরে না পড়ার পিছনে পৌল যিহূদিয়ার ভাইবোনদের যে দুটো কারণ সম্বন্ধে বলেছিলেন, আসুন আমরা সেগুলো পরীক্ষা করে দেখি। প্রথমটা হল খ্রীষ্টীয় উপাসনা পদ্ধতির শ্রেষ্ঠত্ব, যা ইব্রীয়দের কাছে লেখা তার চিঠির মূল বিষয়বস্তু। পুরো চিঠিতে পৌল এই বিষয়টা নিয়েই আলোচনা করেছেন। যিরূশালেমে যে মন্দির ছিল তা ছিল যিহোবার আত্মিক মন্দিরের এক নমুনা মাত্র যা “অহস্তকৃত।” (ইব্রীয় ৯:১১) ওই খ্রীষ্টানদের যিহোবার আত্মিক মন্দিরে শুদ্ধ উপাসনা করার সুযোগ ছিল। তারা আরও ভাল চুক্তির অধীনে সেবা করতে পেয়েছিলেন, যে নতুন চুক্তির বিষয়ে অনেক দিন ধরে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল এবং যেটার মধ্যস্থ ছিলেন মোশির চেয়েও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, স্বয়ং যীশু খ্রীষ্ট।—যিরমিয় ৩১:৩১-৩৪.
১০, ১১. (ক) যীশুর বংশ বিবরণ কেন তাঁকে আধ্যাত্মিক মন্দিরে মহাযাজক হিসেবে সেবা করার জন্য অযোগ্য করে না? (খ) কোন্ অর্থে যীশু যিরূশালেম মন্দিরের মহাযাজকের চেয়ে মহান ছিলেন?
১০ এছাড়াও ওই খ্রীষ্টানদের আরও ভাল এক মহাযাজক, যীশু খ্রীষ্ট ছিলেন। তিনি হারোণের বংশ থেকে আসেননি, কোন অসিদ্ধ রীতি অনুযায়ীও যাজক হননি। বরং তিনি “মল্কীষেদকের রীতি অনুসারে” মহাযাজক ছিলেন। (গীতসংহিতা ১১০:৪) মল্কীষেদকের বংশ বিবরণ সম্বন্ধে বাইবেল কিছু বলে না। বাইবেল শুধু বলে যে তিনি ছিলেন প্রাচীন শালেমের রাজা ও মহাযাজক। একইভাবে যীশু খ্রীষ্টের মহাযাজক পদ কোন অসিদ্ধ মানব পূর্বপুরুষের কাছ থেকে নয় কিন্তু স্বর্গের প্রভু যিহোবা ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছিল। যিহোবা ঈশ্বর নিজে তাঁকে যাজকপদ দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। মল্কীষেদকের মতো যীশু শুধু মহাযাজক নন কিন্তু চিরকালীন রাজা।—ইব্রীয় ৭:১১-২১.
১১ এছাড়াও, যিরূশালেম মন্দিরের মহাযাজকের মতো যীশুকে বছর বছর হোমবলি উৎসর্গ করতে হতো না। তাঁর হোমবলি ছিল তাঁর নিজের সিদ্ধ জীবন, যা তিনি চিরকালের জন্য একবারই উৎসর্গ করেছেন। (ইব্রীয় ৭:২৭) মন্দিরে যে সমস্ত হোমবলি উৎসর্গ করা হতো তা যীশু যা উৎসর্গ করেছিলেন তার ছায়া মাত্র ছিল। যারা বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন তারা যাতে তাদের পাপ থেকে সত্যিকারের ক্ষমা পান সেইজন্যই এই সিদ্ধ বলিদানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এছাড়াও, পৌলের কথাগুলো খুবই উৎসাহজনক কারণ তা দেখায় যে এই মহাযাজকও হলেন যীশু, যাঁকে যিরূশালেমের খ্রীষ্টানরা চিনতেন। তিনি ছিলেন নম্র, দয়ালু এবং “আমাদের দুর্ব্বলতাঘটিত দুঃখে দুঃখিত” একজন ব্যক্তি। (ইব্রীয় ৪:১৫; ১৩:৮) ওই অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের খ্রীষ্টের অধীনে যাজক হিসেবে কাজ করার আশা ছিল! কীভাবে তারা কলুষিত যিহূদীধর্মের “দুর্ব্বল অকিঞ্চন” বিষয়ের দিকে আবার সরে পড়ার কথা ভাবতে পারতেন?—গালাতীয় ৪:৯.
১২, ১৩. (ক) কখনও সরে না পড়ার পিছনে দ্বিতীয় কোন্ কারণের কথা পৌল বলেছেন? (খ) ধৈর্য ধরার বিষয়ে ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের আগেকার ঘটনা কেন তাদেরকে বিনাশের জন্য সরে না পড়তে উৎসাহ দিয়েছিল?
১২ ইব্রীয়রা যাতে কখনও বিনাশের জন্য সরে না পড়ে তার দ্বিতীয় কারণও পৌল বলেছিলেন, যা ছিল তাদের নিজেদের ধৈর্যের বিবরণ। তিনি লিখেছিলেন: “পূর্ব্বকার সেই সময় স্মরণ কর, যখন তোমরা দীপ্তিপ্রাপ্ত হইয়া নানা দুঃখভোগরূপ ভারী সংগ্রাম সহ্য করিয়াছিলে।” পৌল তাদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে তারা তিরস্কার ও ক্লেশে “কৌতুকাস্পদ” হয়েছিলেন। কেউ কেউ জেলে গিয়েছিলেন; অন্যেরা তাদের দুঃখে দুঃখী হয়েছিলেন ও তাদের সাহায্য করেছিলেন। হ্যাঁ, তাদের বিশ্বাস ও ধৈর্য সত্যিই দেখার মতো ছিল। (ইব্রীয় ১০:৩২-৩৪) কিন্তু, কেন পৌল তাদের এই দুঃখের অভিজ্ঞতাগুলোকে ‘স্মরণ করতে’ বলেছিলেন? তা করলে কি তারা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বেন না?
১৩ বরং, “পূর্ব্বকার সেই সময় স্মরণ” করা ইব্রীয়দের মনে করিয়ে দেবে যে কীভাবে যিহোবা তাদেরকে পরীক্ষার সময় শক্তি জুগিয়েছিলেন। তাঁর সাহায্যে তারা শয়তানের অনেক বাধাকে প্রতিরোধ করেছিলেন। পৌল লিখেছিলেন: “ঈশ্বর অন্যায়কারী নহেন; তোমাদের কার্য্য, এবং . . . তাঁহার নামের প্রতি প্রদর্শিত তোমাদের প্রেম, এই সকল তিনি ভুলিয়া যাইবেন না।” (ইব্রীয় ৬:১০) হ্যাঁ, যিহোবা তাদের বিশ্বস্ত কাজগুলো মনে রেখেছিলেন, তাঁর বিশাল স্মৃতির ভাণ্ডারে জমা করে রেখেছিলেন। মনে করে দেখুন যে স্বর্গে ধন সঞ্চয় করার বিষয়ে যীশু আমাদেরকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। এই ধন কেউ চুরি করতে পারবে না; কোন পোকা বা মরচে সেগুলো ক্ষয় করতে পারবে না। (মথি ৬:১৯-২১) আসলে, এই ধনগুলো একমাত্র তখনই ধ্বংস হবে যদি কোন খ্রীষ্টান বিনাশের জন্য সরে পড়েন। এর ফলে তিনি স্বর্গে যে ধন সঞ্চয় করেছেন তা নষ্ট হয়ে যাবে। ইব্রীয় খ্রীষ্টানেরা যেন কখনও সেই পথে চলতে শুরু না করে তার জন্য কী জোরালো যুক্তিই না পৌল দিয়েছিলেন! তাদের বিশ্বস্ত পরিচর্যার বছরগুলোকে তারা কেন মাটি করবেন? এর চেয়ে বরং ধৈর্য বজায় রাখা আরও অনেক অনেক গুণ ভাল আর তা করাই ঠিক।
কেন আমাদের কখনও বিনাশের জন্য সরে পড়া উচিত নয়
১৪. প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের মতো আমরা কোন্ ধরনের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হই?
১৪ আজকে সত্য খ্রীষ্টানদেরও সরে না পড়ার পিছনে একইরকম জোরালো কারণ রয়েছে। প্রথমে, আমরা বিশুদ্ধ উপাসনা পদ্ধতি দিয়ে যিহোবা আমাদের যে আশীর্বাদ করেছেন তা মনে করে দেখি। প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের মতো আমরাও এমন সময়ে বাস করছি যেখানে বিভিন্ন বড় বড় ধর্মের লোকেরা আমাদেরকে টিটকারি দেয় বা উপহাস করে, তাদের উপাসনার বড় বড় জায়গাগুলো সম্বন্ধে গর্ব করে কথা বলে। তারা বলে যে তাদের ধর্মই সবচেয়ে পুরনো ও তাদের রীতিনীতি প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। কিন্তু যিহোবা আমাদের আশ্বাস দেন যে তিনি আমাদের উপাসনাকে গ্রহণ করেন। সত্যি বলতে কী, আজকে আমরা সেই আশীর্বাদগুলো উপভোগ করি যা প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের ছিল না। আপনি হয়তো ভাবছেন, ‘তা আবার কীভাবে হতে পারে?’ কারণ আত্মিক মন্দির যখন কার্যকর হয়েছিল তখন তারা বেঁচে ছিলেন। সা.কা. ২৯ সালে খ্রীষ্ট তাঁর বাপ্তিস্মের পর মহাযাজক হয়েছিলেন। আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ ঈশ্বরের পুত্রের অলৌকিক কাজও দেখেছিলেন। এমনকি তাঁর মৃত্যুর পরও কিছু অলৌকিক কাজ হয়েছিল। কিন্তু, ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, এই বরগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।—১ করিন্থীয় ১৩:৮.
১৫. আজকে খ্রীষ্টানেরা কোন্ ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতার সময়ে বাস করছেন আর তা আমাদের জন্য কী অর্থ রাখে?
১৫ আজকে আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যখন যিহিষ্কেল ৪০-৪৮ অধ্যায়েa দেওয়া যিহোবার আত্মিক মন্দির সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্বাণী বড় আকারে পরিপূর্ণ হচ্ছে। এর মাধ্যমে আমরা বিশুদ্ধ উপাসনাকে পুনর্স্থাপন করতে ঈশ্বরের ব্যবস্থাকে দেখেছি। ওই আত্মিক মন্দির সকল প্রকার ধর্মীয় কলুষতা ও প্রতিমাপূজাকে পরিষ্কার করেছে। (যিহিষ্কেল ৪৩:৯; মালাখি ৩:১-৫) এই পরিষ্কারের কাজ আমাদের যে উপকারগুলো করেছে তা একবার ভেবে দেখুন।
১৬. প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানেরা কোন্ হতাশাজনক পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছিলেন?
১৬ প্রথম শতাব্দীতে, সংগঠিত খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর ভবিষ্যৎ অন্ধকার ছিল বলে মনে হয়েছিল। যীশু ভাববাণী করেছিলেন যে এটা নতুন বোনা গমের জমির মতো হবে যেখানে আগাছার বীজও বোনা হবে আর পরে যখন চারা জন্মাবে তখন আগাছা থেকে গম আলাদা করা যাবে না। (মথি ১৩:২৪-৩০) আর ঠিক তাই হয়েছিল। প্রথম শতাব্দীর শেষ দিকে, বৃদ্ধ প্রেরিত যোহন শেষ ব্যক্তি হিসেবে কলুষতাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন কিন্তু ধর্মভ্রষ্টতা ইতিমধ্যেই জাঁকিয়ে বসেছিল। (২ থিষলনীকীয় ২:৬; ১ যোহন ২:১৮) প্রেরিতদের মৃত্যুর পরপরই এক নতুন যাজকগোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছিল, যারা পালের ওপর অত্যাচার করেছিল এবং যারা বিশেষ ধরনের পোশাক পরত। ধর্মভ্রষ্টতা কুষ্ঠরোগের মতো সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছিল। বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানদের তা কতই না হতাশ করেছিল! তারা দেখেছিলেন যে বিশুদ্ধ উপাসনার নতুন ব্যবস্থা কলুষতায় ভরে গিয়েছিল। খ্রীষ্ট মণ্ডলী গঠন করার একশ বছরেরও কম সময়ের মধ্যেই তা হয়েছিল।
১৭. কোন্ অর্থে আধুনিক দিনের খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী প্রথম শতাব্দীর মণ্ডলীর চেয়েও বেশি দিন টিকে আছে?
১৭ এখন এর উল্টো অবস্থাটা বিবেচনা করুন। প্রেরিতদের মৃত্যুর পর যতদিন পর্যন্ত বিশুদ্ধ উপাসনা টিকে ছিল, আজকে তার চেয়েও বেশি সময় ধরে টিকে আছে! সেই ১৮৭৯ সালে যখন এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যা ছাপানো হয়েছিল তখন থেকেই যিহোবা আমাদের উপাসনাকে দিন দিন আশীর্বাদ করেছেন আর এই বিশুদ্ধ উপাসনা বেড়েই চলেছে। যিহোবা ও যীশু খ্রীষ্ট ১৯১৮ সালে আত্মিক মন্দিরকে পরিষ্কার করার জন্য মন্দিরে প্রবেশ করেছিলেন। (মালাখি ৩:১-৫) সেই ১৯১৯ সাল থেকে যিহোবা ঈশ্বরের উপাসনা পদ্ধতি বিশোধিত হয়েছে। বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী এবং নীতিগুলো আমাদের কাছে আরও পরিষ্কার হয়েছে। (হিতোপদেশ ৪:১৮) কিন্তু, এই সমস্ত কিছুর পিছনে কৃতিত্ব কার? এই অসিদ্ধ মানুষদের নয়। একমাত্র যিহোবা এবং মণ্ডলীর মস্তক তাঁর পুত্রই এই কলুষিত সময়ে তাঁর লোকেদেরকে কলুষতা থেকে রক্ষা করতে পারেন। আর আজকে যিহোবা আমাদের বিশুদ্ধ উপাসনায় অংশ নেওয়ার যে সুযোগ করে দিয়েছেন তার জন্য আসুন আমরা যেন কখনও যিহোবাকে ধন্যবাদ দিতে ভুলে না যাই। আর আসুন আমরা এই সংকল্প নিই যে আমরা কখনও বিনাশের জন্য সরে পড়ব না!
১৮. কখনও বিনাশের জন্য সরে না পড়ার কোন্ কারণ আমাদের আছে?
১৮ ভয় পেয়ে বিপথে যাওয়া আমাদেরও উচিত নয়। সেই ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের মতো বিপথে না যাওয়ার জন্য আমাদেরও কারণ রয়েছে আর তা হল আমাদের নিজেদের ধৈর্যের বিবরণ। আমরা কয়েক বছর ধরে যিহোবাকে সেবা করছি বা বহু বছর ধরে করে আসছি যেটাই হোক না কেন, আমরা খ্রীষ্টীয় কাজের এক নথি গড়ে তুলেছি। আমরা অনেকেই তাড়না সহ্য করেছি, হতে পারে তা জেল খাটা, নিষেধাজ্ঞা, নিষ্ঠুরতা অথবা সম্পত্তির ক্ষতি! অনেকেই পরিবারের বিরোধিতা, উপহাস, বিদ্রূপ এবং উদাসীনতার শিকার হয়েছেন। আমরা সবাই ধৈর্য ধরেছি, জীবনের বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতি ও পরীক্ষা সত্ত্বেও আমরা যিহোবাকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করে যাচ্ছি। তা করে আমরা ধৈর্যের এক নথি গড়ে তুলেছি যা যিহোবা কখনও ভুলে যাবেন না আর তা স্বর্গে ধনের এক ভাণ্ডার। অতএব, এটা পরিষ্কার যে কলুষিত পুরনো বিধিব্যবস্থা যা আমরা পিছনে ফেলে এসেছি তার দিকে সরে পড়ার সময় এখন নয়! আমাদের সব কঠোর পরিশ্রমকে আমরা কেন মাটি করব? আর বিশেষ করে যখন আজকে এই কথাটা সত্য যে শেষের আগে “আর অতি অল্প কাল বাকী অছে।”—ইব্রীয় ১০:৩৭.
১৯. আমাদের পরের প্রবন্ধে কোন্ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে?
১৯ হ্যাঁ, আসুন আমরা দৃঢ়সংকল্প হই যে “আমরা বিনাশের জন্য সরিয়া পড়িবার লোক নহি”! বরং আসুন আমরা “প্রাণের রক্ষার জন্য বিশ্বাসের লোক” হই। (ইব্রীয় ১০:৩৯) কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে এই বর্ণনা আমাদের বেলায় খাটে আর তা করার জন্য আমাদের খ্রীষ্টান ভাইবোনদের আমরা কীভাবে সাহায্য করতে পারি? আমাদের পরের প্রবন্ধে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
-
-
আসুন আমরা বিশ্বাসের লোক হই১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ | ডিসেম্বর ১৫
-
-
আসুন আমরা বিশ্বাসের লোক হই
“আমরা . . . প্রাণের রক্ষার জন্য বিশ্বাসের লোক।”—ইব্রীয় ১০:৩৯.
১. কেন বলা যেতে পারে যে যিহোবার প্রত্যেক বিশ্বস্ত দাসের বিশ্বাসই মূল্যবান?
পরের বার আপনি যখন যিহোবার উপাসকদের কিংডম হলে আসবেন, আপনার আশেপাশের লোকেদের দিকে একটু চোখ বুলিয়ে নিন। বিভিন্ন দিক দিয়ে তারা যে বিশ্বাস দেখান তা নিয়ে একটু ভাবুন। আপনি সেখানে বৃদ্ধ লোকেদের দেখতে পাবেন যারা অনেক বছর ধরে ঈশ্বরের সেবা করে চলেছেন, অল্পবয়সী যুবক-যুবতীদের পাবেন যারা রোজ বন্ধুবান্ধবদের চাপকে মোকাবিলা করে থাকে এবং বাবামাদের দেখবেন যারা তাদের ছেলেমেয়েদের ঈশ্বর-ভয়শীল লোক হিসেবে মানুষ করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে থাকেন। এছাড়াও মণ্ডলীর প্রাচীনেরা এবং পরিচারক দাসেরা আছেন যারা অনেক দায়িত্ব পালন করেন। হ্যাঁ, আপনি সব বয়সের আধ্যাত্মিক ভাইবোনদের দেখতে পাবেন, যারা যিহোবাকে সেবা করার জন্য সবধরনের বাধাকে মোকাবিলা করেন। প্রত্যেকের বিশ্বাস কতই না মূল্যবান!—১ পিতর ১:৭.
২. ইব্রীয় ১০ ও ১১ অধ্যায়ে পৌলের পরামর্শ কেন আমাদের দিনের জন্যও উপকারজনক?
২ খুব কম অসিদ্ধ লোকেরাই প্রেরিত পৌলের মতো করে বিশ্বাসের গুরুত্বকে বুঝতে পেরেছেন। আসলে, তিনি বলেছিলেন যে প্রকৃত বিশ্বাস ‘প্রাণকে রক্ষা করে।’ (ইব্রীয় ১০:৩৯) কিন্তু, পৌল জানতেন যে বিশ্বাসহীন এই জগতে বিশ্বাসের ওপর আক্রমণ করা হয় এবং তা ক্ষয় পায়। তিনি যিরূশালেম ও যিহূদিয়ার ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের জন্য খুবই চিন্তিত ছিলেন, যারা তখন তাদের বিশ্বাস বজায় রাখার জন্য প্রাণপণ লড়াই করছিলেন। ইব্রীয় ১০ এবং ১১ অধ্যায়ের কিছু কিছু বিষয় পড়ার সময় আসুন আমরা কিছু উপায়গুলো দেখি, যা পৌল তাদের বিশ্বাসকে গড়ে তোলার জন্য কাজে লাগিয়েছিলেন। তাহলেই আমরা দেখতে পাব যে আমরা কীভাবে আমাদের মধ্যে এবং আমাদের আশেপাশে যারা আছেন তাদের মধ্যে শক্তিশালী বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারি।
একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস দেখান
৩. ইব্রীয় ১০:৩৯ পদে পৌলের কথাগুলো কীভাবে দেখায় যে বিশ্বাসী ভাইবোনেদের প্রতি তার বিশ্বাস ছিল?
৩ সবচেয়ে প্রথমে যে বিষয়টা আমরা দেখতে পাই তা হল তার শ্রোতাদের প্রতি পৌল ভাল মনোভাব দেখিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “পরন্তু আমরা বিনাশের জন্য সরিয়া পড়িবার লোক নহি, বরং প্রাণের রক্ষার জন্য বিশ্বাসের লোক।” (ইব্রীয় ১০:৩৯) পৌল তার বিশ্বস্ত খ্রীষ্টান ভাইবোনদের ভাল দিকগুলো নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, তাদের খারাপ দিক নিয়ে নয়। এছাড়াও লক্ষ্য করে দেখুন যে তিনি “আমরা” শব্দটা ব্যবহার করেছেন। পৌল একজন ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু তাই বলে তিনি তার পাঠকদের হেয় করে কিছু বলেননি, যাতে মনে হয় যে তিনি তাদের চেয়ে অনেক গুণ বেশি ধার্মিক। (উপদেশক ৭:১৬ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) বরং তিনি তাদের সঙ্গে নিজেকেও জড়িয়েছিলেন। তিনি অন্তর থেকে বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন যে তিনি ও তার বিশ্বস্ত খ্রীষ্টান পাঠক-পাঠিকারা সবাই ভয়াবহ বাধার মুখোমুখি হবেন, তারা সাহসের সঙ্গে বিনাশের জন্য সরে পড়াকে প্রত্যাখ্যান করবেন এবং নিজেদেরকে বিশ্বাসের লোক বলে প্রমাণ করবেন।
৪. কোন্ কোন্ কারণে পৌল তার খ্রীষ্টান ভাইবোনদের ওপর বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন?
৪ কীভাবে পৌল এইরকম বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন? তিনি কি ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের দোষগুলোকে উপেক্ষা করেছিলেন? না, তিনি তাদের আধ্যাত্মিক ভুলগুলো এড়াতে সাহায্য করার জন্য নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর পরামর্শ দিয়েছিলেন। (ইব্রীয় ৩:১২; ৫:১২-১৪; ৬:৪-৬; ১০:২৬, ২৭; ১২:৫) তারপরও, তার ভাইদের ওপর বিশ্বাস দেখানোর অন্তত দুটো উপযুক্ত কারণ পৌলের ছিল। (১) যিহোবাকে অনুকরণ করে পৌল ঈশ্বরের লোকেদের যিহোবার মতো করেই দেখার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। আর তার মানে ছিল শুধু তাদের ভুলগুলোকে ধরা নয় কিন্তু তাদের ভাল গুণগুলোকে দেখা এবং ভবিষ্যতে তারা ভাল কাজ করতে পারবেন সেই বিষয়ে আস্থা রাখা। (গীতসংহিতা ১৩০:৩; ইফিষীয় ৫:১) (২) পবিত্র আত্মার শক্তির ওপর পৌলের গভীর বিশ্বাস ছিল। তিনি জানতেন, কোন খ্রীষ্টান যদি বিশ্বস্তভাবে যিহোবাকে সেবা করার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করেন, তাহলে কোন বাধা, মানুষের কোন দুর্বলতা “পরাক্রমের উৎকর্ষ” দান করা থেকে যিহোবাকে বিরত করবে না। (২ করিন্থীয় ৪:৭; ফিলিপীয় ৪:১৩) তাই খ্রীষ্টান ভাইবোনদের ওপর পৌল যে বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন তা অকারণ, ভুল কিংবা অন্ধ ছিল না। এটা খুব মজবুত ছিল এবং এর ভিত্তি ছিল শাস্ত্র।
৫. পৌল যে বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন তা আমরাও কীভাবে দেখাতে পারি এবং এর ফল হয়তো কী হবে?
৫ পৌল যে বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন তা নিশ্চয়ই অন্যদেরকেও প্রভাবিত করেছিল। পৌলের এই কথায় যিরূশালেম ও যিহূদিয়ার মণ্ডলীগুলো নিশ্চয়ই অনেক উৎসাহ পেয়েছিল। বিরোধী যিহূদীদের প্রচণ্ড ঘৃণা ও উদ্ধত তাচ্ছিল্যের মুখেও ইব্রীয় খ্রীষ্টানেরা এই কথা শুনে অনেক সাহায্য পেয়েছিলেন আর এর ফলে তারা বিশ্বাসের লোক হওয়ার জন্য মন থেকে সংকল্প নিতে পেরেছিলেন। আজকে আমরাও কি একে অন্যের জন্য একইরকম করতে পারি? অন্যের দোষ ধরা ও ব্যক্তিত্বের খারাপ দিকগুলো বের করা খুব সহজ। (মথি ৭:১-৫) কিন্তু তারপরও আমরা একে অন্যকে আরও অনেক বেশি সাহায্য করতে পারি যদি আমরা প্রত্যেকের মধ্যে যে অতুলনীয় বিশ্বাস আছে তা মন দিয়ে লক্ষ্য করি ও মূল্যবান বলে মনে করি। এইরকম উৎসাহ পেলে বিশ্বাস আরও বাড়বে।—রোমীয় ১:১১, ১২.
সঠিকভাবে ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করা
৬. ইব্রীয় ১০:৩৮ পদে পৌল যে কথাগুলো লিখেছেন সেগুলো আসলে কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে?
৬ এছাড়া, পৌল সঠিকভাবে শাস্ত্র ব্যবহার করেও তার খ্রীষ্টান ভাইবোনদের বিশ্বাসকে গড়ে তুলেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তিনি লিখেছিলেন: “‘কিন্তু আমার ধার্ম্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস হেতুই বাঁচিবে, আর যদি সরিয়া পড়ে, তবে আমার প্রাণ তাহাতে প্রীত হইবে না।’” (ইব্রীয় ১০:৩৮) পৌল এখানে হবক্কূক ভাববাদীর কথা উদ্ধৃত করেছিলেন।a পৌলের সময়ের পাঠক-পাঠিকারা অর্থাৎ ইব্রীয় খ্রীষ্টানেরা হয়তো এই কথাগুলো জানতেন, কারণ তারা ভবিষ্যদ্বাণীর এই বইগুলোর সঙ্গে খুব ভালভাবে পরিচিত ছিলেন। সা.কা. ৬১ সালের দিকে যিরূশালেম ও এর আশেপাশের এলাকার খ্রীষ্টানদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করাই ছিল তার লক্ষ্য আর হবক্কূকের বই থেকে বলা ঠিকও ছিল। কেন?
৭. হবক্কূক কখন তার ভাববাণীর বই লিখেছিলেন আর তখন যিহূদার অবস্থা কেমন ছিল?
৭ সাধারণ কাল পূর্ব ৬০৭ সালে যিরূশালেম ধ্বংসের ঠিক কুড়ি বছর আগে হবক্কূক তার বই লিখেছিলেন। দর্শনে ভাববাদী “নিষ্ঠুর ও ত্বরান্বিত জাতি” কল্দীয়দের (অথবা বাবিলনীয়দের) দেখেছিলেন যারা যিহূদাকে হঠাৎ আক্রমণ করতে আসছে এবং যিরূশালেমকে ধ্বংস করছে, লোকেদের ও জাতিগুলোকে শেষ করে দিচ্ছে। (হবক্কূক ১:৫-১১) কিন্তু একশ বছরেরও বেশি আগে সেই যিশাইয়ের সময় থেকে এইরকম ধ্বংসের বিষয় বলা হয়েছে। হবক্কূকের সময়ে ভাল রাজা যোশিয়ের পর যিহোয়াকীম রাজা হয়েছিলেন এবং যিহূদাতে আবারও দুষ্টতা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। যারা যিহোবার নামে ডাকত তাদের ওপর যিহোয়াকীম অত্যাচার, এমনকি তাদেরকে হত্যা পর্যন্ত করেছিলেন। (২ বংশাবলি ৩৬:৫; যিরমিয় ২২:১৭; ২৬:২০-২৪) অতএব, এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে ভাববাদী হবক্কূক প্রচণ্ড দুঃখে কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা করেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, কত কাল?”—হবক্কূক ১:২.
৮. কেন হবক্কূকের উদাহরণ প্রথম শতাব্দীর ও আজকের খ্রীষ্টানদের জন্য সাহায্যজনক বলে প্রমাণিত হয়?
৮ কত তাড়াতাড়ি যিরূশালেম ধ্বংস হতে যাচ্ছে সেই বিষয়ে হবক্কূক কিছুই জানতেন না। একইভাবে, প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানেরাও জানতেন না যে কখন যিহূদী বিধিব্যবস্থা শেষ হবে। আজকে আমরাও “সেই দিনের ও সেই দণ্ডের তত্ত্ব” জানি না যে কখন এই দুষ্ট ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যিহোবা বিচার আনবেন। (মথি ২৪:৩৬) তাই আসুন আমরা দেখি যে যিহোবা হবক্কূককে যে উত্তর দিয়েছিলেন তাতে কীভাবে দুটো বিষয় ছিল। প্রথমে তিনি ভাববাদীকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে যথাসময়ে শেষ আসবে। মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে কিছুটা দেরি হচ্ছে বলে মনে হলেও, ঈশ্বর বলেছিলেন যে “যথাকালে বিলম্ব করিবে না।” (হবক্কূক ২:৩) দ্বিতীয়ত, যিহোবা হবক্কূককে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন: “ধার্ম্মিক ব্যক্তি আপন বিশ্বাস দ্বারা বাঁচিবে।” (হবক্কূক ২:৪) এটা কত সহজ অথচ কত গম্ভীর সত্য! ধ্বংস কখন আসবে সেটা বড় বিষয় নয় কিন্তু আমরা জীবনে বিশ্বাস দেখিয়ে চলছি কিনা সেটা হল বড় বিষয়।
৯. যিহোবার প্রাচীন দাসেরা কীভাবে তাদের বিশ্বস্ততার জন্য রক্ষা পেয়েছিলেন (ক) সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে? (খ) সা.কা. ৬৬ সালের পরে? (গ) কেন আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করা খুবই জরুরি?
৯ সাধারণ কাল পূর্ব ৬০৭ সালে যিরূশালেমকে যখন লুট করা হয়েছিল, তখন যিরমিয়, তার সচিব বারূক, এবদ-মেলক এবং বিশ্বস্ত রেখবীয়রা হবক্কূকের কাছে করা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাকে পূর্ণ হতে দেখেছিলেন। তারা যিরূশালেমের ভয়ানক ধ্বংস থেকে ‘বেঁচে গিয়েছিলেন।’ কেন? যিহোবা তাদের বিশ্বস্ততার পুরস্কার দিয়েছিলেন। (যিরমিয় ৩৫:১-১৯; ৩৯:১৫-১৮; ৪৩:৪-৭; ৪৫:১-৫) একইভাবে, প্রথম শতাব্দীর ইব্রীয় খ্রীষ্টানেরা নিশ্চয়ই পৌলের পরামর্শ ঠিক মতো শুনেছিলেন কারণ সা.কা. ৬৬ সালে রোমীয় সেনাবাহিনী যখন যিরূশালেমকে আক্রমণ করেছিল এবং অজানা কারণে আবার চলে গিয়েছিল তখন ওই খ্রীষ্টানেরা বিশ্বস্তভাবে যীশুর সাবধানবাণীতে কান দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। (লূক ২১:২০, ২১) আর তারা তাদের বিশ্বস্ততার জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন। একইভাবে, যখন শেষ আসবে তখন আমরাও যদি বিশ্বস্ত থাকি, তাহলে আমরাও বেঁচে যাব। তাই এখনই আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করা কতই না জরুরি বিষয়!
যারা বিশ্বাসে চলেছিলেন তাদের উদাহরণে মনোযোগ দেওয়া
১০. মোশির বিশ্বাসের কথা পৌল কীভাবে বর্ণনা করেছেন আর আমরা কীভাবে মোশির মতো বিশ্বাস দেখাতে পারি?
১০ এছাড়াও পৌল যারা বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন তাদের উদাহরণ দিয়ে অন্যদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছিলেন। ইব্রীয় ১১ অধ্যায় পড়ার সময় দেখুন যে বাইবেলের সেই উদাহরণগুলোকে পৌল কত জীবন্তভাবে তুলে ধরেছেন। যেমন তিনি বলেন যে মোশি “যিনি অদৃশ্য, তাঁহাকে যেন দেখিয়াই স্থির থাকিলেন।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (ইব্রীয় ১১:২৭) অন্য কথায়, যিহোবা মোশির কাছে এত বাস্তব ছিলেন যেন তিনি অদৃশ্য ঈশ্বরকে দেখতে পেয়েছিলেন। আমাদের সম্বন্ধেও কি এই একই বিষয় বলা যেতে পারে? যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে বলা সহজ কিন্তু সেই সম্পর্ক গড়ে তোলার ও তা শক্তিশালী করার জন্য অনেক কাজ করতে হয়। সেই কাজই আমাদের করা দরকার! যিহোবা কি আমাদের কাছে এতটা বাস্তব যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়, এমনকি সেগুলো খুবই ছোট বিষয় বলে মনে হলেও আমরা ভেবে দেখি যে ঈশ্বর তা পছন্দ করবেন কিনা? এইরকম বিশ্বাস আমাদেরকে চরম বিরোধিতার সময়েও ধৈর্য ধরতে সাহায্য করবে।
১১, ১২. (ক) কোন্ পরিস্থিতিতে হনোকের বিশ্বাস পরীক্ষিত হয়েছিল? (খ) হনোক কোন্ উৎসাহজনক পুরস্কার পেয়েছিলেন?
১১ হনোকের বিশ্বাসের কথাও ভেবে দেখুন। তিনি যে বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন তা আমরা কল্পনাও করতে পারব না। হনোককে তখনকার দুষ্ট লোকেদের বিরুদ্ধে কঠিন বিচারের বার্তা ঘোষণা করতে হয়েছিল। (যিহূদা ১৪, ১৫) এই বিশ্বস্ত ব্যক্তি এত প্রচণ্ড ও নৃশংস তাড়নার মুখোমুখি হয়েছিলেন যে যিহোবা “তাঁহাকে লোকান্তরে লইয়া গেলেন” অর্থাৎ শত্রুরা যাতে তাকে হত্যা করতে না পারে সেইজন্য ঈশ্বর হনোককে মরতে অনুমতি দিয়েছিলেন। তাই হনোক যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তা তিনি পরিপূর্ণ হতে দেখেননি। কিন্তু, তিনি যে পুরস্কার পেয়েছিলেন তা হয়তো সমস্ত কিছু দেখার চেয়েও ভাল ছিল।—ইব্রীয় ১১:৫; আদিপুস্তক ৫:২২-২৪.
১২ পৌল বলেন: “লোকান্তরে নীত হইবার পূর্ব্বে তাঁহার [হনোকের] পক্ষে এই সাক্ষ্য দেওয়া হইয়াছিল যে, তিনি ঈশ্বরের প্রীতির পাত্র ছিলেন।” (ইব্রীয় ১১:৫) এই কথার মানে কী ছিল? হনোক মৃত্যুতে ঘুমিয়ে পড়ার আগে হয়তো কিছু দর্শন দেখেছিলেন—হয়তো তিনি দেখেছিলেন যে পৃথিবী পরমদেশ হয়েছে, যেখানে শীঘ্রই তাকে পুনরুত্থিত করা হবে। যে কোনভাবেই হোক, যিহোবা হনোককে জানিয়েছিলেন যে তিনি তার বিশ্বস্ত কাজে খুবই খুশি ছিলেন। হনোক যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করেছিলেন। (হিতোপদেশ ২৭:১১ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) হনোকের জীবনের কথা চিন্তা করলে তা কি আপনার হৃদয়কে স্পর্শ করে না? আপনি কি আপনার জীবনে এমন বিশ্বাস দেখাতে চান? তাহলে এই উদাহরণগুলো নিয়ে চিন্তা করুন; তাদেরকে বাস্তব ব্যক্তি হিসেবে ভাবুন। সবসময় বিশ্বাসে বেঁচে থাকার সংকল্প নিন। এছাড়াও মনে রাখবেন যে যাদের বিশ্বাস রয়েছে তারা, যিহোবা কখন তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করবেন সেই তারিখ অথবা সময়সীমা মাথায় রেখে তাঁকে সেবা করেন না। বরং, এই সংকল্প নিন যে শুধু শেষ আসা পর্যন্তই নয় কিন্তু চিরকাল আমরা যিহোবাকে সেবা করব! তা করার মানে হল সবচেয়ে ভাল উপায়ে জীবন কাটানো এখন এবং আগামী নতুন পৃথিবীতে।
বিশ্বাসে যেভাবে আরও শক্তিশালী হওয়া যায়
১৩, ১৪. (ক) ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫ পদে লেখা পৌলের কথাগুলো কীভাবে আমাদের সভাগুলোকে আনন্দপূর্ণ করে তুলতে সাহায্য করতে পারে? (খ) খ্রীষ্টীয় সভাতে যাওয়ার মূল কারণ কী?
১৩ ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার জন্য পৌল তাদের অনেক বাস্তব উপায় দেখিয়েছিলেন। তার মধ্যে শুধু দুটো নিয়ে এখন আলোচনা করা যাক। ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫ পদের পরামর্শ সম্ভবত আমরা জানি, যেখানে আমাদেরকে সবসময় খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে মিলিত হতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, মনে রাখবেন যে ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় লেখা পৌলের এই কথাগুলো বোঝায় না যে শুধু সভাতে আসাই যথেষ্ট। বরং পৌল সভাগুলোকে একে অন্যকে আরও ভাল করে জানার, ঈশ্বরকে মনপ্রাণ দিয়ে সেবা করার জন্য একে অন্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং একে অন্যকে সাহস যোগানোর সুযোগ হিসেবে নিতে বলেছেন। আমরা সেখানে কেবল কিছু পাওয়ার আশায় নয় কিন্তু কিছু দিতেও যাই। আর এটাই আমাদের সভাগুলোকে আনন্দপূর্ণ করে তোলে।—প্রেরিত ২০:৩৫.
১৪ তবে, আমরা মূলত যিহোবা ঈশ্বরকে উপাসনা করার জন্যই খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে আসি। আমরা প্রার্থনা ও গানে যোগ দিয়ে, খুব মন দিয়ে শুনে এবং “ওষ্ঠাধরের ফল” অর্থাৎ আমাদের মন্তব্য ও সভার বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিয়ে যিহোবার প্রশংসা করি। (ইব্রীয় ১৩:১৫) এই উপায়গুলোর কথা যদি আমরা মনে রাখি এবং প্রত্যেকটা সভায় সেই অনুযায়ী কাজ করে যাই, তবে প্রতি বার আমাদের বিশ্বাস শক্তিশালী হবে।
১৫. পৌল কেন ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের তাদের প্রচার কাজকে অটলভাবে ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং আজকেও কেন এই পরামর্শ উপযুক্ত?
১৫ বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার আরেকটা উপায় হল প্রচার কাজ। পৌল লিখেছিলেন: “আইস, আমাদের প্রত্যাশার অঙ্গীকার [সকলের কাছে ঘোষণা করি] অটল করিয়া ধরি, কেননা যিনি প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন, তিনি বিশ্বস্ত।” (ইব্রীয় ১০:২৩) কেউ যখন হাল ছেড়ে দিতে বসেন তখন আপনি হয়তো তাকে কোন কিছু শক্তভাবে আঁকড়ে ধরার পরামর্শ দিতে পারেন। কোন সন্দেহ নেই যে শয়তান ইব্রীয় খ্রীষ্টানদেরকে প্রচার কাজ বন্ধ করার জন্য চাপ দিয়েছিল এবং আজকেও সে ঈশ্বরের লোকেদের চাপ দিচ্ছে। এইরকম চাপের মুখে আমাদের কী করা উচিত? পৌল কী করেছিলেন তা ভেবে দেখুন।
১৬, ১৭. (ক) পৌল প্রচার করার জন্য কোথা থেকে সাহস পেয়েছিলেন? (খ) আমাদের খ্রীষ্টীয় পরিচর্যার কিছু কিছু দিকে আমরা যদি ভয় পেয়ে থাকি, তাহলে আমাদের কোন্ কোন্ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
১৬ থিষলনীকীর খ্রীষ্টানদেরকে পৌল লিখেছিলেন: “ফিলিপীতে পূর্ব্বে দুঃখভোগ ও অপমান ভোগ করিলে পর, তোমরা জান, আমরা আমাদের ঈশ্বরে সাহসী হইয়া অতিশয় প্রাণপণে তোমাদের কাছে ঈশ্বরের সুসমাচারের কথা বলিয়াছিলাম।” (১ থিষলনীকীয় ২:২) ফিলিপীতে পৌল ও তার সঙ্গীরা কীভাবে “অপমান ভোগ” করেছিলেন? কয়েকজন পণ্ডিত ব্যক্তির কথা অনুসারে, পৌল যে গ্রিক শব্দ ব্যবহার করেছেন তার মানে অসম্মানজনক, লজ্জাজনক অথবা হিংসাত্মক আচরণ। ফিলিপীর শাসনকর্তা তাদেরকে মারধোর করেছিল, জেলে ভরেছিল এবং তাদের হাড়িকাঠে দিয়েছিল। (প্রেরিত ১৬:১৬-২৪) সেই দুঃখজনক ঘটনা পৌলকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল? পৌল কি ভয় পেয়ে মিশনারি যাত্রায় এর পরে যে শহরে যাওয়ার কথা ছিল অর্থাৎ থিষলনীকীতে যাওয়া থেকে পিছিয়ে পড়েছিলেন? না, তিনি ‘সাহসী হয়েছিলেন।’ তিনি ভয়কে জয় করেছিলেন এবং সাহসের সঙ্গে প্রচার করে চলেছিলেন।
১৭ পৌল কোথা থেকে এই সাহস পেয়েছিলেন? নিজের থেকে? না, তিনি বলেছিলেন যে তিনি ‘ঈশ্বরের কাছ থেকে’ সাহস পেয়েছিলেন। বাইবেল অনুবাদকদের সাহায্যকারী একটা বই বলে যে এই উক্তিটা হয়তো এভাবে অনুবাদ করা যেতে পারে, “ঈশ্বর আমাদের মন থেকে ভয় দূর করে দিয়েছেন।” তাই, আপনি যদি প্রচার করার জন্য সাহস জুটাতে না পারেন অথবা কোন কারণে ভয় পাচ্ছেন বলে মনে করেন, তাহলে যিহোবার কাছে সাহস চেয়ে প্রার্থনা করুন না কেন? আপনার মন থেকে ভয় দূর করার জন্য তাঁকে বলুন। এই কাজে আপনাকে সাহসী করে তোলার জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করুন। সেইসঙ্গে কিছু বাস্তব পদক্ষেপ নিন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি এমন কোন ভাই বা বোনের সঙ্গে কাজ করুন যিনি সেই ধরনের প্রচার কাজে দক্ষ, যা করতে হয়তো আপনি ভয় পান। তা হতে পারে, কোন বাণিজ্যিক এলাকায় বা রাস্তায় সাক্ষ্য দেওয়া, যে কোন সুযোগে লেকেদের সঙ্গে কথা বলা অথবা টেলিফোনে প্রচার করা। আপনার সঙ্গী হয়তো প্রথমে কথা বলতে পারেন। যদি তাই হয়, তাহলে মন দিয়ে দেখুন যে তিনি কীভাবে কথা বলছেন, তার কাছ থেকে শিখুন। আর এরপর সাহস জুটিয়ে তার মতো করে কথা বলার চেষ্টা করুন।
১৮. আমরা যদি সাহস জুটিয়ে প্রচার করি, তাহলে কোন্ আশীর্বাদ লাভ করতে পারি?
১৮ আপনি যদি সাহস জুটিয়ে প্রচার করেন, তাহলে চিন্তা করুন যে এর ফল কী হতে পারে। আপনি যখন চেষ্টা করে এবং নিরাশ না হন, তখন আপনি অন্যদের সত্য জানিয়ে ভাল অভিজ্ঞতা পাবেন, যা কিনা চুপ করে থাকলে আপনার হতো না। (২৫ পৃষ্ঠা দেখুন।) আপনার কাছে কঠিন মনে হয় এমন কিছু করে আপনি যিহোবাকে খুশি করতে পেরেছেন জেনে আপনি পরিতৃপ্তি পাবেন। ভয়কে কাটিয়ে ওঠার জন্য আপনি তাঁর আশীর্বাদ ও সাহায্য নিজে অনুভব করতে পারবেন। আপনার বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হবে। আসলে, আপনি যখন অন্যদের মধ্যে বিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য কাজ করেন তখন আপনি আপনার নিজের বিশ্বাসকেও শক্তিশালী করে তোলেন।—যিহূদা ২০, ২১.
১৯. “বিশ্বাসের লোক”-দের জন্য কোন্ বিরাট পুরস্কার মজুত রয়েছে?
১৯ আমরা চাই আপনি যেন নিজের ও আপনার আশেপাশে যারা আছেন তাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে চলতে পারেন। ঈশ্বরের বাক্যকে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করে, বাইবেল থেকে বিশ্বাসের উদাহরণ পড়ে এবং সেগুলোকে জীবন্ত করে তুলে, খ্রীষ্টীয় সভাগুলোর জন্য তৈরি হয়ে ও অংশ নিয়ে ও সকলের কাছে প্রচার করার মূল্যবান সুযোগকে অটলভাবে ধরে রেখে আপনি নিজের ও অন্যদের বিশ্বাসকে গড়ে তুলতে পারেন। আপনি যখন এই কাজগুলো করবেন তখন এটা জেনে নিশ্চিন্ত থাকুন যে আপনি সত্যিই “বিশ্বাসের লোক।” এছাড়াও, মনে রাখবেন যে যারা এইরকম লোক তারা বিরাট পুরস্কার পাবেন। তারা “প্রাণের রক্ষার জন্য বিশ্বাসের লোক।”b আপনার বিশ্বাস যেন দিন দিন বৃদ্ধি পায় এবং যিহোবা ঈশ্বর যেন আপনাকে চিরকাল বাঁচিয়ে রাখেন!
[পাদটীকাগুলো]
a পৌল সেপটুয়াজিন্ট বাইবেল থেকে হবক্কূক ২:৪ পদের কথাগুলো উদ্ধৃত করেছিলেন, যা হল: “যদি কেউ সরে পড়ে, তবে আমার প্রাণ তার ওপর প্রীত হবে না।” আজকে যে সমস্ত ইব্রীয় পাণ্ডুলিপি রয়েছে সেগুলোর কোনটাতেই এই কথাগুলো নেই। কেউ কেউ মনে করেন, যে সমস্ত প্রাচীন ইব্রীয় পাণ্ডুলিপি থেকে সেপটুয়াজিন্ট অনুবাদ করা হয়েছিল সেগুলো এখন আর পাওয়া যায় না। যাইহোক না কেন, পৌল ঈশ্বরের আত্মার অনুপ্রেরণায় এই কথাগুলো লিখেছিলেন। তাই এর লেখক হলেন স্বয়ং ঈশ্বর।
b যিহোবার সাক্ষিদের জন্য ২০০০ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ হবে: “আমরা . . . সরিয়া পড়িবার লোক নহি, বরং . . . বিশ্বাসের লোক।”—ইব্রীয় ১০:৩৯.
-