ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w০৪ ৮/১৫ পৃষ্ঠা ১৭-২১
  • যিহোবা আমাদের ‘সঙ্কটকালে দৃঢ় দুর্গ’

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • যিহোবা আমাদের ‘সঙ্কটকালে দৃঢ় দুর্গ’
  • ২০০৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • প্রার্থনার শক্তি
  • ঈশ্বরের আত্মা আমাদের সহায়
  • মণ্ডলী—ঈশ্বরের প্রেমের এক অভিব্যক্তি
  • এক ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখুন
  • কিভাবে আপনি ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারেন
    জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে
  • প্রার্থনায় ঈশ্বরের নিকটবর্তী হোন
    বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়?
  • যিহোবা দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার করেন
    ২০০৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • “সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর” যিহোবার ওপর নির্ভর করুন
    ২০১১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
২০০৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w০৪ ৮/১৫ পৃষ্ঠা ১৭-২১

যিহোবা আমাদের ‘সঙ্কটকালে দৃঢ় দুর্গ’

“ধার্ম্মিকদের পরিত্রাণ সদাপ্রভু হইতে, তিনি সঙ্কটকালে তাহাদের দৃঢ় দুর্গ।” —গীতসংহিতা ৩৭:৩৯.

১, ২. (ক) যিশু তাঁর শিষ্যদের জন্য কী প্রার্থনা করেছিলেন? (খ) তাঁর লোকেদের বিষয়ে ঈশ্বরের ইচ্ছা কী?

যিহোবা হলেন সর্বশক্তিমান। তাঁর বিশ্বস্ত উপাসকদের তিনি যেভাবে চান, সেভাবে রক্ষা করার শক্তি তাঁর রয়েছে। তিনি এমনকি তাঁর লোকেদের জগতের বাকি সকলের কাছ থেকে দৈহিকভাবে আলাদা রাখতে এবং তাদের এক নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে রাখতে পারেন। কিন্তু, তাঁর শিষ্যদের সম্বন্ধে যিশু তাঁর স্বর্গীয় পিতার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন: “আমি নিবেদন করিতেছি না যে, তুমি তাহাদিগকে জগৎ হইতে লইয়া যাও, কিন্তু তাহাদিগকে সেই পাপাত্মা হইতে রক্ষা কর।”—যোহন ১৭:১৫.

২ যিহোবা আমাদের বেছে নিয়েছেন “জগৎ হইতে” নিয়ে যাওয়ার জন্য নয়। এর পরিবর্তে, এটা তাঁর ইচ্ছা যে আমরা এই জগতের সাধারণ লোকেদের মধ্যে বাস করি, যাতে অন্যদের কাছে তাঁর আশার এবং সান্ত্বনার বার্তা সম্বন্ধে ঘোষণা করতে পারি। (রোমীয় ১০:১৩-১৫) কিন্তু, যিশু যেমন তাঁর প্রার্থনায় পরোক্ষভাবে উল্লেখ করেছিলেন যে, এই জগতে বাস করার মাধ্যমে আমরা ‘পাপাত্মার’ প্রভাবাধীন। অবাধ্য মানবজাতি এবং দুষ্ট আত্মিকবাহিনী অনেক বেদনা এবং নিদারুণ যন্ত্রণা নিয়ে আসে আর খ্রিস্টানরা এই সংকট বা দুর্দশা থেকে মুক্ত নয়।—১ পিতর ৫:৯.

৩. এমনকি যিহোবার বিশ্বস্ত উপাসকদেরও কোন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে কিন্তু ঈশ্বরের বাক্যে আমরা কোন সান্ত্বনা পেতে পারি?

৩ এই ধরনের পরীক্ষার মধ্যে কিছু সময়ের জন্য নিরুৎসাহিত হয়ে পড়া খুবই স্বাভাবিক। (হিতোপদেশ ২৪:১০) বাইবেলের বিবরণে সেই সমস্ত বিশ্বস্ত ব্যক্তির বহু ঘটনা রয়েছে, যারা দুর্দশা ভোগ করেছে। “ধার্ম্মিকের বিপদ অনেক,” গীতরচক গেয়েছিলেন “কিন্তু সেই সকল হইতে সদাপ্রভু তাহাকে উদ্ধার করেন।” (গীতসংহিতা ৩৪:১৯) হ্যাঁ, এমনকি “ধার্ম্মিকের” প্রতিও মন্দ বিষয়গুলো ঘটে থাকে। গীতরচক দায়ূদের মতো কখনও কখনও, আমরা হয়তো এমনকি ‘অবসন্ন ও অতিশয় ক্ষুণ্ণ হইতে’ পারি। (গীতসংহিতা ৩৮:৮) তা সত্ত্বেও, এটা জানা সান্ত্বনাদায়ক যে, “সদাপ্রভু ভগ্নচিত্তদের নিকটবর্ত্তী, তিনি চূর্ণমনাদের পরিত্রাণ করেন।”—গীতসংহিতা ৩৪:১৮; ৯৪:১৯.

৪, ৫. (ক) হিতোপদেশ ১৮:১০ পদের সঙ্গে মিল রেখে ঈশ্বরের সুরক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে? (খ) কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপ কী, যা আমরা ঈশ্বরের সাহায্য পাওয়ার জন্য নিতে পারি?

৪ যিশুর প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে যিহোবা প্রকৃতপক্ষেই আমাদের রক্ষা করেন বা আমাদের ওপর লক্ষ রাখেন। তিনি ‘সঙ্কটকালে দৃঢ় দুর্গ।’ (গীতসংহিতা ৩৭:৩৯) হিতোপদেশের বই অনুরূপ অভিব্যক্তি ব্যবহার করে, যখন এটি বলে: “সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] নাম দৃঢ় দুর্গ; ধার্ম্মিক তাহারই মধ্যে পলাইয়া রক্ষা পায়।” (হিতোপদেশ ১৮:১০) এই শাস্ত্রপদ যিহোবার সৃষ্ট প্রাণীদের প্রতি তাঁর কোমল চিন্তা সম্বন্ধে এক মৌলিক সত্য প্রকাশ করে। ঈশ্বর বিশেষত সেই সমস্ত ধার্মিক ব্যক্তিকে সুরক্ষা প্রদান করেন, যারা সক্রিয়ভাবে তাঁকে খোঁজে, ঠিক যেন আমরা আশ্রয়ের জন্য দৃঢ় দুর্গের দিকে ধাবিত হই।

৫ দুর্দশামূলক সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হলে সুরক্ষার জন্য কীভাবে আমরা যিহোবার দিকে ধাবিত হতে পারি? আসুন আমরা তিনটে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বিবেচনা করি, যা আমরা যিহোবার সাহায্য পাওয়ার জন্য নিতে পারি। প্রথমত, আমাদের স্বর্গীয় পিতার কাছে আমাদের প্রার্থনা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, তাঁর পবিত্র আত্মার সঙ্গে মিল রেখে আমাদের কাজ করা উচিত। আর তৃতীয়ত, আমাদের দুর্দশার সময় স্বস্তি দিতে পারে এমন সহখ্রিস্টানদের সঙ্গে মেলামেশা করার চেষ্টা করে আমাদের যিহোবার ব্যবস্থার প্রতি বশীভূত থাকতে হবে।

প্রার্থনার শক্তি

৬. সত্য খ্রিস্টানরা প্রার্থনাকে কীভাবে দেখে?

৬ কিছু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, হতাশা এবং চাপের চিকিৎসা হিসেবে প্রার্থনা করার সুপারিশ করে থাকে। যদিও এটা হয়তো সত্য যে, প্রার্থনাতুল্য ধ্যানের এক শান্ত মুহূর্ত চাপ থেকে স্বস্তি দিতে পারে কিন্তু একই কথা প্রকৃতির নির্দিষ্ট কোনো শব্দ অথবা এমনকি পিঠ মালিশ করা সম্বন্ধেও বলা যেতে পারে। সত্য খ্রিস্টানরা প্রার্থনাকে কেবল ভাল বোধ করার এক চিকিৎসা হিসেবে দেখে এটিকে ছোটো করে না। আমরা প্রার্থনাকে সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সশ্রদ্ধ ভাববিনিময় হিসেবে দেখি। প্রার্থনার সঙ্গে ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভক্তি এবং আস্থা জড়িত। হ্যাঁ, প্রার্থনা হল আমাদের উপাসনার অংশ।

৭. আস্থা সহকারে প্রার্থনা করার অর্থ কী এবং এই ধরনের প্রার্থনা কীভাবে দুর্দশা সহ্য করতে আমাদের সাহায্য করে?

৭ আমাদের প্রার্থনা অবশ্যই যিহোবার ওপর আস্থাবোধ অথবা নির্ভরতা সহকারে হতে হবে। প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “তাঁহার উদ্দেশে আমরা এই সাহস প্রাপ্ত হইয়াছি যে, যদি তাঁহার ইচ্ছানুসারে কিছু যাচ্ঞা করি, তবে তিনি আমাদের যাচ্ঞা শুনেন।” (১ যোহন ৫:১৪) সর্বোচ্চ সত্তা, একমাত্র সত্য এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যিহোবা আসলে তাঁর উপাসকদের আন্তরিক প্রার্থনার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেন। শুধু এই বিষয়টা জানাই সান্ত্বনাদায়ক যে, আমরা যখন আমাদের উদ্বেগ এবং সমস্যাগুলোর কথা আমাদের প্রেমময় পিতার কাছে বলি, তখন তিনি আমাদের কথা শোনেন।—ফিলিপীয় ৪:৬.

৮. বিশ্বস্ত খ্রিস্টানরা যখন প্রার্থনায় যিহোবার সান্নিধ্যে আসে, তখন কেন তাদের কখনও লজ্জাবোধ করা অথবা অযোগ্য মনে করা উচিত নয়?

৮ বিশ্বস্ত খ্রিস্টানরা যখন প্রার্থনায় যিহোবার সান্নিধ্যে আসে, তখন তাদের কখনও লজ্জাবোধ করা, অযোগ্য মনে করা অথবা আস্থার অভাববোধ করা উচিত নয়। এটা ঠিক যে, আমরা যখন নিজেদের নিয়ে হতাশ অথবা সমস্যার দ্বারা জর্জরিত হয়ে পড়ি, তখন আমরা হয়তো সবসময় প্রার্থনায় যিহোবার সান্নিধ্যে আসতে চাই না। এইরকম সময়গুলোতে আমাদের মনে রাখা উচিত যে, যিহোবা “আপন দুঃখীদের প্রতি করুণা” দেখান আর তাই তিনি “অবনতদিগকে সান্ত্বনা করেন।” (যিশাইয় ৪৯:১৩; ২ করিন্থীয় ৭:৬) বিশেষ করে যন্ত্রণা এবং দুর্দশার সময়েই আস্থা সহকারে আমাদের দৃঢ় দুর্গ হিসেবে আমাদের স্বর্গীয় পিতার কাছে আসা প্রয়োজন।

৯. আমরা যখন প্রার্থনায় ঈশ্বরের সান্নিধ্যে আসি, তখন বিশ্বাস কোন ভূমিকা পালন করে?

৯ প্রার্থনার বিশেষ সুযোগ থেকে পুরোপুরিভাবে উপকার লাভ করার জন্য আমাদের অবশ্যই প্রকৃত বিশ্বাস রাখতে হবে। বাইবেল বলে, “যে ব্যক্তি ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহার ইহা বিশ্বাস করা আবশ্যক যে ঈশ্বর আছেন, এবং যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।” (ইব্রীয় ১১:৬) বিশ্বাস শুধু এটা মেনে নেওয়ার চেয়ে আরও বেশি কিছু যে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব রয়েছে অর্থাৎ “ঈশ্বর আছেন।” প্রকৃত বিশ্বাসে সঙ্গে ঈশ্বরের প্রতি আমাদের বাধ্য জীবনধারার জন্য পুরস্কৃত করার বিষয়ে তাঁর ক্ষমতা ও ইচ্ছার ওপর দৃঢ় বিশ্বাস জড়িত। “ধার্ম্মিকগণের প্রতি প্রভুর [“যিহোবার,” NW] চক্ষু আছে; তাহাদের বিনতির প্রতি তাঁহার কর্ণ আছে।” (১ পিতর ৩:১২) আমাদের জন্য যিহোবার প্রেমময় চিন্তা সম্বন্ধে সবসময় সচেতন থাকা আমাদের প্রার্থনায় বিশেষ অর্থ এনে দেয়।

১০. আমরা যদি যিহোবার কাছ থেকে আধ্যাত্মিক পুষ্টি লাভ করতে চাই, তা হলে আমাদের প্রার্থনা কেমন হওয়া উচিত?

১০ যিহোবা আমাদের প্রার্থনা শোনেন, যখন আমরা তা পূর্ণহৃদয়ে করি। গীতরচক লিখেছিলেন: “আমি সর্ব্বান্তঃকরণে ডাকিয়াছি; হে সদাপ্রভু, আমাকে উত্তর দেও।” (গীতসংহিতা ১১৯:১৪৫) অনেক ধর্মের রীতিগত প্রার্থনার মতো, আমাদের প্রার্থনা নেহাত কর্তব্য অথবা অর্ধহৃদয়ের নয়। আমরা যখন “সর্ব্বান্তঃকরণে” যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি, তখন আমাদের কথাগুলো অর্থে এবং উদ্দেশ্যে পরিপূর্ণ থাকে। এইরকম আন্তরিক প্রার্থনার পরে আমরা স্বস্তিবোধ করতে শুরু করি, যা “সদাপ্রভুতে আপনার ভার” অর্পণ করার মাধ্যমে আসে। বাইবেলের প্রতিজ্ঞা অনুসারে, ‘তিনিই আমাদিগকে ধরিয়া রাখিবেন।’—গীতসংহিতা ৫৫:২২; ১ পিতর ৫:৬, ৭.

ঈশ্বরের আত্মা আমাদের সহায়

১১. কোন একটা উপায়ে যিহোবা আমাদের উত্তর দেন, যখন আমরা তাঁর সাহায্যের জন্য ‘যাচ্ঞা করিয়া’ চলি?

১১ যিহোবা কেবল প্রার্থনা শ্রবণকারীই নন কিন্তু সেইসঙ্গে উত্তরদাতাও। (গীতসংহিতা ৬৫:২) দায়ূদ লিখেছিলেন: “সঙ্কটের দিনে আমি তোমাকে ডাকিব, কেননা তুমি আমাকে উত্তর দিবে।” (গীতসংহিতা ৮৬:৭) একইভাবে, যিশু তাঁর শিষ্যদের যিহোবার সাহায্যের জন্য ‘যাচ্ঞা করিয়া’ চলতে উৎসাহিত করেছিলেন কারণ “স্বর্গস্থ পিতা যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করিবেন।” (লূক ১১:৯-১৩) হ্যাঁ, ঈশ্বরের সক্রিয় শক্তি তাঁর লোকেদের জন্য এক সহায় অথবা সান্ত্বনাকারী হিসেবে কাজ করে।—যোহন ১৪:১৬.

১২. সমস্যাগুলোকে যখন চরম বলে মনে হয়, তখন ঈশ্বরের আত্মা কীভাবে সাহায্য করতে পারে?

১২ এমনকি আমরা যখন বিভিন্ন পরীক্ষার মুখোমুখি হই, তখনও ঈশ্বরের আত্মা আমাদের “পরাক্রমের উৎকর্ষ” দিয়ে পরিপূর্ণ করতে পারে। (২ করিন্থীয় ৪:৭) প্রেরিত পৌল, যিনি অনেক চাপপূর্ণ পরিস্থিতি সহ্য করেছিলেন, তিনি আস্থার সঙ্গে বলেছিলেন: “যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁহাতে আমি সকলই করিতে পারি।” (ফিলিপীয় ৪:১৩) একইভাবে, আজকে অনেক খ্রিস্টান তাদের বিনতির উত্তর হিসেবে আধ্যাত্মিক এবং আবেগগত শক্তি পুনরায় লাভ করেছে বলে মনে করে। প্রায়ই ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার সাহায্য লাভ করার পর দুর্দশামূলক সমস্যাগুলো বেশির ভাগ সময়ই ততটা চরম বলে মনে হয় না। ঈশ্বরদত্ত এই শক্তির জন্য আমরাও প্রেরিত যেমন বলেছিলেন, তেমনই বলতে পারি: “আমরা সর্ব্বপ্রকারে ক্লিষ্ট হইতেছি, কিন্তু সঙ্কটাপন্ন হই না; হতবুদ্ধি হইতেছি, কিন্তু নিরাশ হই না; তাড়িত হইতেছি, কিন্তু পরিত্যক্ত হই না; অধঃক্ষিপ্ত হইতেছি, কিন্তু বিনষ্ট হই না।”—২ করিন্থীয় ৪:৮, ৯.

১৩, ১৪. (ক) যিহোবা তাঁর লিখিত বাক্যের মাধ্যমে কীভাবে আমাদের দৃঢ় দুর্গ প্রমাণিত হয়েছেন? (খ) কীভাবে বাইবেলের নীতিগুলো প্রয়োগ করা আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য করেছে?

১৩ এ ছাড়াও, পবিত্র আত্মা ঈশ্বরের লিখিত বাক্যকে অনুপ্রাণিত করেছে এবং আমাদের উপকারের জন্য সংরক্ষিত করেছে। যিহোবা তাঁর বাক্যের মাধ্যমে কীভাবে দুর্দশার সময়ে আমাদের দৃঢ় দুর্গ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে? একটা উপায় হল, আমাদের জন্য ব্যবহারিক প্রজ্ঞা এবং চিন্তা করার ক্ষমতা জোগানোর মাধ্যমে। (হিতোপদেশ ৩:২১-২৪, NW) বাইবেল আমাদের মানসিক ক্ষমতাকে প্রশিক্ষিত করে এবং আমাদের যুক্তি করার ক্ষমতাকে উন্নত করে। (রোমীয় ১২:১, NW) ঈশ্বরের বাক্য নিয়মিত পড়া এবং অধ্যয়ন ও সেইসঙ্গে সেগুলো কাজে লাগানোর মাধ্যমে আমরা আমাদের “জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল অভ্যাস প্রযুক্ত সদসৎ বিষয়ের বিচারণে পটু” করতে পেরেছি। (ইব্রীয় ৫:১৪) ব্যক্তিগতভাবে আপনি হয়তো দেখেছেন যে আপনি যখন বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন, তখন বাইবেলের নীতিগুলো কীভাবে আপনাকে বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছে। বাইবেল আমাদের চতুরতা প্রদান করে, যা দুর্দশামূলক সমস্যাগুলোর জন্য ব্যবহারিক সমাধান পেতে আমাদের সাহায্য করতে পারে।—হিতোপদেশ ১:৪.

১৪ ঈশ্বরের বাক্য আমাদের শক্তির আরেকটা উৎস জুগিয়ে থাকে আর সেটা হল, পরিত্রাণের প্রত্যাশা। (রোমীয় ১৫:৪) বাইবেল আমাদের বলে যে, মন্দ বিষয়গুলো অনির্দিষ্টকাল ধরে ঘটতেই থাকবে না। আমরা যে-ক্লেশই ভোগ করি না কেন, তা ক্ষণস্থায়ী। (২ করিন্থীয় ৪:১৬-১৮) আমরা “সেই অনন্ত জীবনের আশাযুক্ত, যাহা মিথ্যাকথনে অসমর্থ ঈশ্বর অতি পূর্ব্ব কালে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন।” (তীত ১:২) যিহোবার প্রতিজ্ঞাত উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে সবসময় সচেতন থেকে আমরা যদি সেই প্রত্যাশায় আনন্দ করি, তা হলে আমরা ক্লেশের মধ্যেও ধৈর্য ধরতে পারব।—রোমীয় ১২:১২; ১ থিষলনীকীয় ১:৩.

মণ্ডলী—ঈশ্বরের প্রেমের এক অভিব্যক্তি

১৫. খ্রিস্টানরা কীভাবে একজন অন্যের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ হতে পারে?

১৫ যিহোবার কাছ থেকে আরেকটা যে-ব্যবস্থা আমাদের দুর্দশার সময়ে সাহায্য করতে পারে, সেটা হল খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে আমরা যে-সাহচর্য উপভোগ করি। বাইবেল বলে: “বন্ধু সর্ব্বসময়ে প্রেম করে, ভ্রাতা দুর্দ্দশার জন্য জন্মে।” (হিতোপদেশ ১৭:১৭) ঈশ্বরের বাক্য মণ্ডলীর সকলকে পরস্পরকে সম্মান করতে এবং ভালবাসতে উৎসাহ দেয়। (রোমীয় ১২:১০) প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “কেহই স্বার্থ চেষ্টা না করুক, বরং প্রত্যেক জন পরের মঙ্গল চেষ্টা করুক।” (১ করিন্থীয় ১০:২৪) এই ধরনের মনোভাব থাকা, আমাদের নিজেদের পরীক্ষাগুলোর চেয়ে বরং অন্যদের প্রয়োজনগুলোর প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে আমাদের সাহায্য করতে পারে। আমরা যখন অন্যদের জন্য নিজেদের বিলিয়ে দিই, তখন আমরা শুধু তাদের সাহায্যই করি না কিন্তু সেইসঙ্গে আমরা কিছুটা হলেও আনন্দ এবং পরিতৃপ্তি লাভ করি, যা আমাদের বোঝাগুলোকে আরও হালকা করে তোলে।—প্রেরিত ২০:৩৫, NW.

১৬. কীভাবে প্রত্যেক খ্রিস্টান উৎসাহমূলক হতে পারেন?

১৬ আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে পরিপক্ব নারী-পুরুষরা অন্যদের শক্তিশালী করার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আর তা করার জন্য তারা নিজেদের এমন ব্যক্তি করে তোলে, যাতে তাদের কাছে সহজেই আসা যায় এবং তাদের সহজেই পাওয়া যায়। (২ করিন্থীয় ৬:১১-১৩) মণ্ডলী প্রকৃতই আশীর্বাদ লাভ করে যখন সকলে যুবক-যুবতীদের প্রশংসা করার, নতুন বিশ্বাসী ব্যক্তিদের গড়ে তোলার এবং বিষণ্ণদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য সময় করে নেয়। (রোমীয় ১৫:৭) এ ছাড়া, ভ্রাতৃপ্রেম আমাদের একে অন্যের প্রতি সন্দেহের মনোভাব এড়াতে সাহায্য করবে। আমাদের সহজেই এই উপসংহারে আসা উচিত নয় যে, ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো আধ্যাত্মিক দুর্বলতার লক্ষণ। পৌল উপযুক্তভাবে খ্রিস্টানদের ‘বিষণ্ণদের প্রতি সান্ত্বনার বাক্য বলতে’ অনুরোধ করেছিলেন। (১ থিষলনীকীয় ৫:১৪, NW) বাইবেল দেখায় যে, এমনকি বিশ্বস্ত খ্রিস্টানরাও দুর্দশা ভোগ করে।—প্রেরিত ১৪:১৫.

১৭. খ্রিস্টীয় ভ্রাতৃত্বের বন্ধন শক্তিশালী করার কোন সুযোগগুলো আমাদের রয়েছে?

১৭ খ্রিস্টীয় সভা পরস্পরকে সান্ত্বনা এবং উৎসাহ দেওয়ার জন্য আমাদের এক চমৎকার সুযোগ করে দেয়। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) এই প্রেমময় ভাববিনিময় শুধু খ্রিস্টীয় সভাগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং, ঈশ্বরের লোকেরা অনিয়মিত পরিস্থিতিগুলোতে এই ধরনের গঠনমূলক মেলামেশা করার সুযোগগুলো খুঁজে থাকে। যখন দুর্দশামূলক পরিস্থিতিগুলো দেখা দেয়, তখন আমরা সহজেই পরস্পরকে সাহায্য করব কারণ ইতিমধ্যেই বন্ধুত্বের দৃঢ় বন্ধন গড়ে উঠেছে। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “যেন দেহের মধ্যে বিচ্ছেদ না হয়, বরং অঙ্গ সকল যেন পরস্পরের জন্য . . . চিন্তা করে। আর এক অঙ্গ দুঃখ পাইলে তাহার সহিত সকল অঙ্গই দুঃখ পায়, এবং এক অঙ্গ গৌরব প্রাপ্ত হইলে তাহার সহিত সকল অঙ্গই আনন্দ করে।”—১ করিন্থীয় ১২:২৫, ২৬.

১৮. হতাশ বোধ করলে আমাদের কোন মনোভাব এড়িয়ে চলা উচিত?

১৮ কখনও কখনও, সহখ্রিস্টানদের সঙ্গে মেলামেশা উপভোগ করার ব্যাপারে আমরা হতাশ বোধ করতে পারি। এই ধরনের অনুভূতির সঙ্গে আমাদের লড়াই করা উচিত, যাতে আমরা সেই সহবিশ্বাসীরা যে-সান্ত্বনা এবং সাহায্য দিতে পারে, তা থেকে নিজেদের বঞ্চিত না করি। বাইবেল আমাদের সাবধান করে: “যে পৃথক্‌ হয় সে নিজ অভীষ্ট চেষ্টা করে, এবং সমস্ত বুদ্ধিকৌশলের বিরুদ্ধে উচ্চণ্ড হয়।” (হিতোপদেশ ১৮:১) আমাদের ভাই ও বোনেরা আমাদের জন্য ঈশ্বরের প্রেমময় চিন্তার এক অভিব্যক্তি। আমরা যদি সেই প্রেমময় ব্যবস্থাকে উপলব্ধি করি, তা হলে আমরা দুর্দশার সময় স্বস্তি পাব।

এক ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখুন

১৯, ২০. শাস্ত্র কীভাবে আমাদের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা পরিত্যাগ করতে সাহায্য করে?

১৯ নিরুৎসাহিত এবং দুঃখার্ত হলে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা করা খুবই সহজ। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিকূল অবস্থার সময় কেউ কেউ হয়তো তাদের নিজেদের আধ্যাত্মিকতা নিয়ে সন্দেহ শুরু করতে পারে এবং এই উপসংহারে আসতে পারে যে, তাদের দুঃখকষ্ট হল ঈশ্বরের অনুনমোদনের লক্ষণ। কিন্তু, মনে রাখবেন যে যিহোবা “মন্দ বিষয়ের” দ্বারা কাউকে পরীক্ষা করেন না। (যাকোব ১:১৩) বাইবেল বলে, “[ঈশ্বর] অন্তরের সহিত দুঃখ দেন না, মনুষ্য-সন্তানগণকে শোকার্ত্ত করেন না।” (বিলাপ ৩:৩৩) এর বিপরীতে, তাঁর দাসেরা যখন কষ্টভোগ করে, তখন যিহোবা অত্যন্ত দুঃখিত হন।—যিশাইয় ৬৩:৮, ৯; সখরিয় ২:৮.

২০ যিহোবা হলেন, “করুণা-সমষ্টির পিতা এবং সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর।” (২ করিন্থীয় ১:৩) তিনি আমাদের জন্য চিন্তা করেন এবং তিনি উপযুক্ত সময়ে আমাদের উন্নীত করবেন। (১ পিতর ৫:৬, ৭) আমাদের জন্য ঈশ্বরের স্নেহ সম্বন্ধে সবসময় সচেতন থাকা আমাদের ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখতে, এমনকি আনন্দ করতে সাহায্য করবে। যাকোব লিখেছিলেন: “হে আমার ভ্রাতৃগণ, তোমরা যখন নানাবিধ পরীক্ষায় পড়, তখন তাহা সর্ব্বতোভাবে আনন্দের বিষয় জ্ঞান করিও।” (যাকোব ১:২) কেন? তিনি উত্তর দেন: “কারণ পরীক্ষাসিদ্ধ হইলে পর সে জীবনমুকুট প্রাপ্ত হইবে, তাহা প্রভু [“যিহোবা,” NW] তাহাদিগকেই দিতে অঙ্গীকার করিয়াছেন, যাহারা তাঁহাকে প্রেম করে।”—যাকোব ১:১২.

২১. আমরা যে-সমস্যাগুলোর মুখোমুখিই হই না কেন, যিহোবা সেই সমস্ত ব্যক্তিকে কোন নিশ্চয়তা দেন, যারা তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত প্রমাণিত হয়?

২১ যিশু যেমন আমাদের সাবধান করেছিলেন যে, জগতে আমাদের ক্লেশ হবে। (যোহন ১৬:৩৩) কিন্তু, বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে যে, “কি ক্লেশ? কি সঙ্কট? কি তাড়না? কি দুর্ভিক্ষ? কি উলঙ্গতা? কি প্রাণ-সংশয়?” কোনোকিছুই যিহোবার প্রেম এবং তাঁর পুত্রের প্রেম থেকে আমাদের পৃথক করতে পারবে না। (রোমীয় ৮:৩৫, ৩৬, ৩৯) এটা জানা কত সান্ত্বনাদায়ক যে, যেকোনো দুর্দশার মুখোমুখিই আমরা হই না কেন, তা ক্ষণস্থায়ী! এর মধ্যে, মানুষের দুঃখকষ্টের শেষ আসার জন্য অপেক্ষা করার সময় আমাদের প্রেমময় পিতা যিহোবা আমাদের প্রতি লক্ষ রাখেন। আমরা যদি সুরক্ষার জন্য তাঁর দিকে ধাবিত হই, তা হলে তিনি “ক্লিষ্টের জন্য উচ্চ দুর্গ, সঙ্কটের সময়ে উচ্চ দুর্গ” বলে প্রমাণিত হবেন।—গীতসংহিতা ৯:৯.

আমরা কী শিখেছি?

• এই দুষ্ট জগতে বাস করার সময় খ্রিস্টানদের কী আশা করা উচিত?

• কীভাবে আমাদের ঐকান্তিক প্রার্থনা, আমরা যখন পরীক্ষার মুখোমুখি হই, তখন শক্তিশালী বলে প্রমাণিত হয়?

• কীভাবে ঈশ্বরের আত্মা এক সহায়?

• পরস্পরকে সাহায্য করার জন্য আমরা কী করতে পারি?

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবাকে আমাদের এমনভাবে খুঁজতে হবে ঠিক যেন আমরা এক দৃঢ় দুর্গের দিকে ধাবিত হচ্ছি

[২০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আধ্যাত্মিকভাবে পরিপক্ব ব্যক্তিরা অন্যদের প্রশংসা করার এবং উৎসাহ দেওয়ার জন্য প্রতিটা সুযোগকে কাজে লাগায়

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৫)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার