তারা যিহোবার ইচ্ছা পালন করেছিলেন
পিতামাতার বিশ্বাস পুরস্কৃত হয়েছিল
ইস্রায়েলীয়দের জন্য একটি পুত্রসন্তানের জন্ম মহা আনন্দের কারণস্বরূপ ছিল। এর অর্থ ছিল যে বংশের ধারা চলতে থাকবে এবং ভূমির উত্তরাধিকার পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কিন্তু প্রায় সা.শ.পূ. ১৫৯৩ সালে, একটি পুত্রের জন্ম দেওয়া ইব্রীয়দের কাছে আশীর্বাদের চেয়ে বেশি করে অভিশাপ বলেই মনে হয়েছে। কেন? কারণ মিশরের ফরৌণ তার অধীনস্থ অঞ্চলের যিহূদী জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি সম্পর্কে ভীত হয়ে তাদের সমস্ত নবজাত পুত্রসন্তানদের মেরে ফেলার আদেশ দিয়েছিলেন।—যাত্রাপুস্তক ১:১২, ১৫-২২.
এটি ছিল ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের সেই জঘন্য আক্রমণের সময় যখন অম্রম ও যোকেবদ এক ইব্রীয় বিবাহিত দম্পতি, একটি সুন্দর শিশু পুত্রের পিতামাতা হয়েছিলেন। এটি কল্পনা করা সহজ যে যখন তারা ফরৌণের আদেশ স্মরণ করেছিলেন তখন কিভাবে তাদের সেই আনন্দ আতঙ্কে ম্লান হয়ে গিয়েছিল। তবুও, অম্রম ও যোকেবদ যখন তাদের শিশুপুত্রের দিকে তাকিয়েছিলেন, তারা তাকে পরিত্যাগ না করার জন্য দৃঢ়ভাবে স্থিরসংকল্প করেছিলেন, তার পরিণতি যাই হোক না কেন।—যাত্রাপুস্তক ২:১, ২; ৬:২০.
বিশ্বাসে কাজ করা
অম্রম ও যোকেবদ তিন মাস তাদের শিশুকে গোপনে রেখেছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ২:২) কিন্তু, এটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, যেহেতু ইব্রীয় এবং মিশ্রীয়রা খুব কাছাকাছি বাস করত। যে কেউ, ফরৌণের আদেশ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানা যাবে তাকে সম্ভবত মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে—এবং শিশুটিকেও মরতে হবে। তাহলে, এই উৎসর্গীকৃত পিতামাতা তাদের পুত্র ও নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য কী করতে পারতেন?
যোকেবদ কিছু নল খাগড়ার ডালপাতা একত্রিত করছিলেন। বাঁশের মতই সেই নল খাগড়া একটি শক্ত শর এবং এটির প্রায় একটি আঙ্গুলের মত মোটা ত্রি-পার্শ্বীয় ডাল রয়েছে। এটি উচ্চতায় হয়ত ছয় মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। মিশ্রীয়রা কাগজ, মাদুর, পাল, চটি ও হালকা ওজনের নৌকা তৈরি করতে এই গাছ ব্যবহার করত।
যোকেবদ সেই ডাল দিয়ে তার শিশুটিকে রাখার মত পর্যাপ্ত মাপের একটি পেটরা তৈরি করছিলেন। তিনি পরে ঐ পেটরাটি আঁটসাঁট ও জলরোধক করার জন্য তেল ও আলকাতরা লেপে দিয়েছিলেন। তারপর যোকেবদ তার শিশুকে সেই পাত্রের ভিতর রেখেছিলেন ও নীল নদীর তীরস্থিত নলবনে সেটি রেখে দিয়েছিলেন।—যাত্রাপুস্তক ২:৩.
শিশুটি দৃষ্টিগোচর হয়
যোকেবদের কন্যা, মরিয়ম পরে কী ঘটবে তা দেখার জন্য কাছাকাছি কোন নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে ছিল। অতঃপর ফরৌণের কন্যা স্নানার্থে নীল নদীতে এসেছিলেন।a যোকেবদ খুব সম্ভবত জানতেন যে নীল নদীর এই অংশেই রাজকন্যা সচরাচর আসেন আর তিনি উদ্দেশ্যপূর্ণভাবেই সেই পেটরা এমন এক স্থানে রেখে যান, যেন খুব সহজেই তা দৃষ্টিগোচর হতে পারে। যাইহোক, নলবনের মধ্যে সেই পেটরাটি শীঘ্রই ফরৌণের কন্যার দৃষ্টিতে এসেছিল এবং তিনি তার সহচরীদের একজনকে তা তুলে আনতে বলেছিলেন। তিনি যখন এর ভিতরে ক্রন্দনরত শিশুটি দেখতে পান, তিনি করুণা অনুভব করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এটি ছিল এক ইব্রীয় শিশু। কিন্তু, এত সুন্দর একটি শিশুকে তিনি কিভাবে হত্যা করতে দিতে পারেন? মানবীয় দয়া ছাড়াও, ফরৌণের কন্যা হয়ত মিশ্রীয়দের এই জনপ্রিয় বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন যে একজনের পক্ষে স্বর্গে প্রবেশাধিকার নির্ভর করে জীবিত অবস্থায় তার দয়াপূর্ণ কাজের নথির উপর।b—যাত্রাপুস্তক ২:৫, ৬.
মরিয়ম, যে দূর থেকে লক্ষ্য করছিল, ফরৌণের কন্যার সম্মুখে এসেছিল। সে জিজ্ঞাসা করেছিল “আমি গিয়া কি আপনার নিমিত্ত এই ছেলেকে দুদ দেবার জন্য স্তন্যদাত্রী একটী ইব্রীয় স্ত্রীলোককে আপনার নিকটে ডাকিয়া আনিব?” রাজকন্যা উত্তর দিয়েছিলেন: “যাও।” মরিয়ম দৌড়ে তার মায়ের কাছে গিয়েছিল। শীঘ্রই, যোকেবদ ফরৌণের কন্যার সম্মুখে এসে দাঁড়িয়েছিল। রাজকন্যা তাকে বলেছিলেন, “তুমি এই ছেলেটীকে লইয়া আমার নিমিত্ত দুগ্ধ পান করাও; আমি তোমাকে বেতন দিব।” এটি এইরূপ হতে পারে যে, ইতিমধ্যে ফরৌণের কন্যা বুঝতে পেরেছিলেন যে যোকেবদই ছিলেন সেই শিশুর মা।—যাত্রাপুস্তক ২:৭-৯.
যোকেবদ তার সন্তানকে রেখেছিলেন যে অবধি সে মাতৃস্তন পান করেছিল।c সত্য ঈশ্বর, যিহোবা সম্পর্কে শেখাতে এটি তাকে অনেক মহামূল্য সুযোগগুলি প্রদান করেছিল। তারপর যোকেবদ সেই শিশুকে ফরৌণের কন্যার কাছে ফেরত নিয়ে গিয়েছিলেন, যিনি বালকটির নাম মোশি রেখেছিলেন, যার অর্থ “জল থেকে রক্ষা পাওয়া।”—যাত্রাপুস্তক ২:১০, পাদটীকা, NW.
আমাদের জন্য শিক্ষা
অম্রম ও যোকেবদ তাদের পুত্রকে বিশুদ্ধ উপাসনার নীতিগুলি শেখাতে, এই সংক্ষিপ্ত সুযোগের সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছিলেন। বতর্মান দিনের পিতামাতাদেরও অনুরূপ করা উচিত। বস্তুতপক্ষে, এটি হচ্ছে আদেশস্বরূপ যেন তারা সেইরকমই করেন। শয়তান দিয়াবল, “গর্জ্জনকারী সিংহের ন্যায়, কাহাকে গ্রাস করিবে, তাহার অন্বেষণ করিয়া বেড়াইতেছে।” (১ পিতর ৫:৮) সে মহামূল্যবান যুবক-যুবতীদের তার শিকারে পরিণত করতে ভালবাসবে—বালক ও বালিকাদের—যাদের যিহোবার উত্তম সেবক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের এই কোমল বয়স তার পক্ষ থেকে কোন সহানুভূতিকে জাগিয়ে তোলে না! এই বিষয়টির পরিপ্রেক্ষিতে, বিজ্ঞ পিতামাতা তাদের শিশু সন্তানদের সত্য ঈশ্বর, যিহোবাকে ভয় করার জন্য শিক্ষিত করেন।—হিতোপদেশ ২২:৬; ২ তীমথিয় ৩:১৪, ১৫.
ইব্রীয় ১১:২৩ পদে অম্রম ও যোকেবদের তাদের শিশুর জীবনের প্রথম তিন মাস তাকে গোপন রাখার প্রচেষ্টা বিশ্বাসের এক কার্য হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এই উভয় ঈশ্বর-ভয়শীল পিতামাতা তাদের সন্তানকে পরিত্যাগ করতে অস্বীকার করার মাধ্যমে যিহোবার রক্ষা করার ক্ষমতায় নির্ভরতা দেখিয়েছিলেন আর এইজন্য তারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। আমাদেরও যিহোবার ব্যবস্থা ও নীতির প্রতি দৃঢ় আনুগত্য প্রদর্শন করা উচিত, এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে যে যিহোবা আমাদের উপর যা কিছুই ঘটতে অনুমোদন করুন না কেন, তা পরিশেষে আমাদেরই অনন্ত মঙ্গল ও সুখ আনবে।—রোমীয় ৮:২৮.
[পাদটীকাগুলো]
a মিশ্রীয়রা নীল নদীকে প্রজনন দেব হিসাবে উপাসনা করত। তারা বিশ্বাস করত যে, ফলপ্রসূতা ও এমনকি দীর্ঘজীবী করার ক্ষমতাও এই জলের ছিল।
b মিশ্রীয়েরা বিশ্বাস করত যে মৃত্যুতে এক ব্যক্তির আত্মা, ওসিরিসের উপস্থিতিতে এই ইতিবাচক বাক্য আবৃত্তি করবে যেমন “আমি কোন ব্যক্তিকে দুঃখ দিইনি,” “আমি কোন স্তন্যপায়ী শিশুর মুখ থেকে দুধ কেড়ে নিইনি” আর “আমি ক্ষুধার্তকে রুটি ও তৃষ্ণার্তকে পানীয় দিয়েছি।”
c প্রাচীনকালে, সাধারণতঃ বর্তমান দিনের চেয়ে আরও দীর্ঘদিন ধরে বহু সন্তানদের স্তন্যদুগ্ধ পান করান হত। শমূয়েল সম্ভবত কমপক্ষে তিন বছর বয়স এবং ইস্হাক প্রায় পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত মাতৃস্তন্য পান করেছিল।