আপনি কি তাদের মর্যাদাকে সম্মান করেন?
জীবজন্তুর মত জড়ো করে এবং অবিশ্বাস্য নোংরা ও দুর্গন্ধের মধ্যে বন্দী করে আফ্রিকার অধিবাসীদের পণ্যদ্রব্যের মত জাহাজে চাপিয়ে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে অন্ততপক্ষে অর্ধেকই গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর পূর্বেই মারা যাবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছিল। পরিবারের সদস্যদের নিষ্ঠুরভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল যাতে আর কখনই পরস্পরের সাথে দেখা না হয়। সহমানবের প্রতি মানুষের অমানবিক আচরণের সব চাইতে অন্ধকারময় অধ্যায়গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ক্রীতদাস বাণিজ্য। অন্যান্য এইধরনের অধ্যায়গুলি ঘটেছিল যখন ক্ষমতাপন্ন বিজয়ীরা অরক্ষিত স্থানীয় লোকেদের নিষ্ঠুরভাবে নিয়ন্ত্রণাধীনে এনেছিলেন।
শারীরিক উৎপীড়নের তুলনায় একজন ব্যক্তিকে মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করা আরও পাশবিক হতে পারে। এটি মানুষের উদ্দীপনার ক্ষেত্রে ধ্বংসাত্মক। যদিও অধিকাংশ দেশগুলিতে দাসপ্রথা লোপ পেয়েছে কিন্তু মানুষের মর্যাদা নিঃশেষ করার চেষ্টা চলে এসেছে, সম্ভবত আরও কৌশলী উপায়ে।
অন্যদিকে, সত্য খ্রীষ্টানেরা ‘তাদের প্রতিবাসীকে নিজেদের মত প্রেম করা’ সম্বন্ধীয় যীশু খ্রীষ্টের উপদেশের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করেন। সুতরাং, তারা নিজেদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমি কি অন্যদের আত্মমর্যাদাকে সম্মান করি?’—লূক ১০:২৭.
মর্যাদা প্রদর্শিত হয়েছে
একটি অভিধান অনুযায়ী মর্যাদা হল গুণ অথবা যোগ্য, সম্মানিত বা উচ্চমূল্য হিসাবে গণ্য হওয়া। নিখিল বিশ্বের সার্বভৌম, যিহোবা ঈশ্বরের পদমর্যাদার কতই না উপযুক্ত বর্ণনা! প্রকৃতপক্ষে, শাস্ত্র বারংবার যিহোবা এবং তাঁর সার্বভৌমত্বকে মর্যাদার সাথে যুক্ত করে। মোশি, যিশাইয়, যিহিষ্কেল, দানিয়েল, প্রেরিত যোহন এবং অন্যান্যেরা পরাৎপর ও তাঁর স্বর্গীয় বিচারসভা সম্বন্ধীয় অনুপ্রাণিত দর্শনগুলি পাওয়ার সুযোগ লাভ করেছিলেন আর তাদের বর্ণনাগুলি অবিরতভাবে বিস্ময়কর মহত্ব ও মর্যাদাকে চিত্রিত করে। (যাত্রাপুস্তক ২৪:৯-১১; যিশাইয় ৬:১; যিহিষ্কেল ১:২৬-২৮; দানিয়েল ৭:৯; প্রকাশিত বাক্য ৪:১-৩) একটি প্রশংসা প্রার্থনায় রাজা দায়ূদ বলেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, মহত্ত্ব, পরাক্রম, গৌরব, জয় ও প্রতাপ তোমারই; কেননা স্বর্গে ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে, সকলই তোমার।” (১ বংশাবলি ২৯:১১) প্রকৃতপক্ষে, স্বয়ং যিহোবা ঈশ্বরের চেয়ে কেউই অধিক সম্মান এবং শ্রদ্ধার যোগ্য নন।
তাঁর প্রতিমূর্তিতে এবং সাদৃশ্যে মানুষ সৃষ্টি করায়, যিহোবা মানুষকে কিছু পরিমাণ যোগ্যতা, আত্ম-সম্মান আর মর্যাদা প্রদান করেছিলেন। (আদিপুস্তক ১:২৬) অতএব অন্যদের সাথে আমাদের আচার ব্যবহারে, প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার প্রাপ্য সম্মান এবং শ্রদ্ধা করা প্রয়োজন। আমরা যখন তা করি, ফলস্বরূপ আমরা মানব মর্যাদার উৎস যিহোবা ঈশ্বরকে স্বীকার করছি।—গীতসংহিতা ৮:৪-৯.
পারিবারিক সম্পর্কের মধ্যে মর্যাদা
প্রেরিত পিতর, যিনি বিবাহিত ছিলেন, অনুপ্রাণিত হয়ে খ্রীষ্টীয় স্বামীদের পরামর্শ দিয়েছিলেন, তারা যেন তাদের স্ত্রীদের ‘দুর্ব্বল পাত্র বলিয়া . . . সমাদর করে।’ (১ পিতর ৩:৭; মথি ৮:১৪) “অপরপক্ষে,” প্রেরিত পৌল পরামর্শ দিয়েছিলেন “স্ত্রীর উচিত যেন সে স্বামীকে ভয় [“গভীর শ্রদ্ধা,” “NW”] করে।” (ইফিষীয় ৫:৩৩) অতএব, বিবাহে একজনের সাথীর আত্মমর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মান হল বাইবেলের একটি চাহিদা। কোন্ উপায়ে তা দেখানো যেতে পারে?
জল যেমন একটি বৃদ্ধিরত চারাগাছকে সজীব করে, তেমনি প্রকাশ্যে এবং একান্তে স্বামী-স্ত্রীর সদয় কথাবার্তা এবং স্নেহশীল ভাবভঙ্গি, তাদের অন্তরঙ্গ সম্পর্ককে বৃদ্ধি করতে পারে। পরিবর্তে, কর্কশ, অপমানজনক মৌখিক আক্রমণ অথবা আন্তরিকতাহীন মন্তব্য, তীব্র ব্যঙ্গোক্তি যা প্রায়ই টেলিভিশনের ধারাবাহিক রম্য অনুষ্ঠানগুলিতে শোনা যায় তা ধ্বংসাত্মক। এগুলি হয়ত ক্ষতিকর অযোগ্যতা, হতাশা এবং বিরক্তিবোধ এমনকি মানসিক যন্ত্রণার কারণ হতে পারে যার থেকে সহজে উপশম পাওয়া যায় না।
এছাড়াও অন্যদের ব্যক্তিগত মর্যাদাকে সম্মান করার অর্থ হল তাদের কোন পূর্বকল্পিত স্থানে বসানোর চেষ্টা অথবা অন্যদের সাথে পক্ষপাতদুষ্ট তুলনা না করে, তারা যেধরনের ঠিক সেভাবেই তাদের গ্রহণ করা। এটি স্বামী-স্ত্রীদের মধ্যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে ভাববিনিময় ও অভিব্যক্তিগুলির প্রকাশ খোলাখুলি এবং সাবলীলভাবে করা হয় আর কারও সমালোচিত অথবা তিরস্কৃত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না, সেখানে অন্তরঙ্গতা বৃদ্ধি পাবে। যখন একজন ব্যক্তি বিবাহে স্বাভাবিক হতে পারেন, তখন গৃহ সত্যই নির্দয়, রূঢ় বাইরের জগতের কাছ থেকে এক আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়।
সন্তানেরা পিতামাতাদের সম্মান এবং তাদের বাধ্য থাকার ক্ষেত্রে শাস্ত্রীয় আজ্ঞার অধীনস্থ। ঠিক তেমনি বিজ্ঞ এবং প্রেমময় পিতামাতারা তাদের সন্তানদের মর্যাদাকে উপলব্ধি করলে ভাল করবেন। উত্তম আচরণের জন্য উষ্ণ প্রশংসা করার সাথে প্রয়োজনে ধৈর্যপূর্বক শাসন “প্রভুর . . . চেতনা” প্রদানকে শক্তিশালী করতে উত্তম কাজ করে। অবিরত সমালোচনা, চিৎকার করা এবং “মূর্খ” অথবা “নির্বোধ,” এইধরনের অবমাননাকর শ্লেষোক্তি তাদের কেবল বিরক্তই করবে।—ইফিষীয় ৬:৪.
একজন খ্রীষ্টীয় প্রাচীন এবং পিতা, যিনি তিনটি ছেলে ও তিনটি মেয়েকে লালনপালন করছেন, তিনি বলেন: “কিংডম হলে আমরা যতটা সম্ভব নীরবে প্রয়োজনীয় শাসন করতাম। সাধারণত একটু স্পর্শ করা অথবা গম্ভীর হওয়া, চোখ রাঙিয়ে তাকানোই যথেষ্ট ছিল। যদি আরও কঠোর শাসনের প্রয়োজন হত, আমরা একান্তে আমাদের গৃহে আর অন্যান্য সন্তানদের কাছ থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে শাসন করতাম। সেই সন্তানেরা এখন বড় হয়েছে, তাই শাসন তাদের ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুযায়ী প্রত্যেককে ঈশ্বরের বাক্যের প্রেমময়, বিজ্ঞ পরামর্শ দেওয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে। আমরা এই ব্যক্তিগত বিষয়গুলিতে গোপনীয়তা রক্ষা করতে চেষ্টা করি আর এভাবেই প্রত্যেক সন্তানের নিজস্বতা এবং মর্যাদার অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাই।”
পরিবারের মধ্যে কথায় এবং কাজে উত্তম আচরণের প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করা যায় না। “দয়া করে,” “ধন্যবাদ,” “আমাকে ক্ষমা কর” এবং “আমি দুঃখিত” এইধরনের শব্দগুলি ঘনিষ্ঠতার কারণে অগ্রাহ্য করা উচিত নয়। একজন ব্যক্তির তার নিজের এবং অন্যের মর্যাদার প্রতি সম্মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে উত্তম আচরণ অপরিহার্য।
খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে
“হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সকল, আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব,” যীশু বলেছিলেন। (মথি ১১:২৮) উৎপীড়িত, বিষণ্ণ ব্যক্তিরা এমনকি ছোট ছোট সন্তানেরা সকলে নির্বিঘ্নে যীশুর নিকটবর্তী হয়েছিল। তারা সেই সময়ের উদ্ধত এবং আত্মধার্মিক পাদ্রি আর নেতাদের দ্বারা অবজ্ঞাত ছিল। কিন্তু তারা যীশুর মধ্যে এমন কাউকে পেয়েছিল যিনি তাদের উপযুক্ত মর্যাদা দিয়েছিলেন।
যীশুকে অনুকরণ করে, আমরাও আমাদের সহবিশ্বাসীদের জন্য সতেজতার এক উৎস হতে চাই। এটি আমাদের কথা এবং কাজগুলির মাধ্যমে তাদেরকে গড়ে তোলার জন্য সুযোগগুলির অনুসন্ধান করাকে বোঝায়। আমাদের কথোপকথনে সদয় এবং ইতিবাচক মন্তব্য করে আন্তরিকভাবে উদার হওয়া সর্বদাই যথাযথ। (রোমীয় ১:১১, ১২; ১ থিষলনীকীয় ৫:১১) আমরা কী বলি এবং কিভাবে বলি সেই বিষয়ে সচেতন থেকে আমরা দেখাই যে অন্যদের অনুভূতির প্রতি আমরা সংবেদনশীল। (কলসীয় ৪:৬) এছাড়াও খ্রীষ্টীয় সভাগুলিতে যথাযথ পোশাক ও ভদ্র আচরণ, ঈশ্বর ও তাঁর উপাসনা এবং আমাদের সহউপাসকদের মর্যাদার প্রতি গভীর সম্মানকে প্রতিফলিত করে।
যীশু যখন এমনকি লোকেদের পরিচর্যা করছিলেন তখনও তিনি তাদের মর্যাদাকে সম্মান করেছিলেন। অন্যদের ক্ষতি অথবা তাদেরকে হেয় করার দ্বারা তিনি কখনই নিজেকে বড় করতে চাননি। যখন একজন কুষ্ঠ রোগী সুস্থ হওয়ার জন্য তাঁর কাছে আসেন, যীশু লোকটিকে অশুচি এবং অযোগ্য বলে বিদায় করে দেননি, কিংবা তাঁর নিজের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়ে এক নাটকীয় দৃশ্য তৈরি করেননি। বরঞ্চ, যখন কুষ্ঠ রোগীটি যীশুকে মিনতি করেছিলেন, “প্রভু, যদি আপনার ইচ্ছা হয়, তবে আমাকে শুচি করিতে পারেন”, তিনি কুষ্ঠ রোগীটির প্রতি এই বলে সম্মান দেখিয়েছিলেন, “আমার ইচ্ছা।” (লূক ৫:১২, ১৩) যাদের প্রয়োজন তাদের শুধু সাহায্য করাই নয় কিন্তু তারা যে ভারস্বরূপ নয় বরঞ্চ আকাঙ্ক্ষিত এবং প্রীতির পাত্র সে সম্বন্ধে তাদের পুনর্নিশ্চিত করা আমাদের জন্য কতই না চমৎকার! জগতে সাধারণত লাজুক, বিষণ্ণ এবং অক্ষম ব্যক্তিরা উপেক্ষিত, প্রত্যাখ্যাত অথবা অবমানিত হন। কিন্তু যখন তারা তাদের খ্রীষ্টীয় ভাই এবং বোনেদের মাঝে থাকেন তাদের প্রকৃত সহভাগিতা এবং স্বীকৃতি পাওয়া উচিত। আমরা অবশ্যই এই মনোভাব বজায় রাখতে আমাদের অংশটুকু করব।
যীশু তাঁর শিষ্যদের “আপনার নিজস্ব” হিসাবে প্রেম করেছিলেন ও তাদের দুর্বলতা এবং অদ্ভুত ব্যক্তিত্ব সত্ত্বেও “তাহাদিগকে শেষ পর্য্যন্ত প্রেম করিলেন।” (যোহন ১৩:১) তিনি তাদের মধ্যে তাঁর পিতার প্রতি এক বিশুদ্ধ হৃদয় এবং সর্বান্তকরণ ভক্তি লক্ষ্য করেছিলেন। অনুরূপভাবে, সহউপাসকেরা কেবল আমাদের মতানুযায়ী কাজ করেন না বলে অথবা তাদের অভ্যাস বা ব্যক্তিত্ব হয়ত আমাদের ভুলভাবে উত্ত্যক্ত করে বলে আমাদের কখনও তাদের প্রতি মন্দ মনোভাব পোষণ করা উচিত নয়। ভাইদের মর্যাদার প্রতি সম্মান তাদের ভালবাসতে এবং তারা যেধরনের সেভাবেই গ্রহণ করতে আমাদের পরিচালিত করবে, এই আস্থা উৎপন্ন করে যে তারাও যিহোবাকে প্রেম করেন এবং সঠিক অভিপ্রায় নিয়ে সেবা করেন।—১ পিতর ৪:৮-১০.
প্রাচীনদের, বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত যে তারা যেন সেই ব্যক্তিদের অসংগত উদ্বেগের কারণ না হন যারা তাদের যত্নাধীনে রয়েছেন। (১ পিতর ৫:২, ৩) মণ্ডলীর একজন সদস্য যিনি পাপে পতিত হয়েছেন তার সাথে সাক্ষাতের সময় প্রাচীনেরা ভাল করবেন যদি তারা তাদের কথাবার্তায় দয়া এবং বিবেচনা সহ কোমল হন এবং বিব্রতকর প্রশ্ন এড়িয়ে চলেন। (গালাতীয় ৬:১) এমনকি যখন দৃঢ় অনুযোগ অথবা শাসন যথোপযুক্ত, তখনও তারা অন্যায়কারীর ন্যায্য মর্যাদা ও আত্মসম্মানের প্রতি অবিরত শ্রদ্ধা দেখাবেন।—১ তীমথিয় ৫:১, ২.
ব্যক্তিগত মর্যাদা বজায় রাখা
ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি এবং সাদৃশ্যে সৃষ্ট হওয়ায়, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ঈশ্বরের মহিমাময় গুণাবলি যার অন্তর্ভুক্ত তাঁর মর্যাদা যথাসম্ভব প্রতিফলিত করতে হবে। (আদিপুস্তক ১:২৬) অনুরূপভাবে, ভারসাম্যপূর্ণ ব্যক্তিগত মর্যাদা এবং আত্ম-সম্মানের জন্য “প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে” আজ্ঞাটির প্রতি বোধগম্যতার প্রয়োজন। (মথি ২২:৩৯) বাস্তবিকপক্ষে আমরা যদি চাই অন্যেরা আমাদের সম্মান করুক এবং মর্যাদা দিক, তাহলে আমাদের দেখাতে হবে যে আমরা এটির যোগ্য।
আত্মসম্মান এবং ব্যক্তিগত মর্যাদাকে বজায় রাখার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল শুদ্ধ বিবেক বজায় রাখা। এক কলুষিত বিবেক এবং অপরাধের তীব্র যন্ত্রণা সহজেই অযোগ্যতা, নৈরাশ্য ও বিষণ্ণতার অনুভূতির দিকে পরিচালিত করে। তাই, একজন ব্যক্তি যদি কোন গুরুতর ভুল করে থাকেন, তার অনুতপ্ত হওয়া এবং প্রাচীনদের কাছ থেকে আধ্যাত্মিক সাহায্যের অন্বেষণ করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত যেন “প্রভুর [“যিহোবার,” “NW”] সম্মুখ হইতে তাপশান্তির সময়” উপভোগ করতে পারেন। সতেজতার অন্তর্ভুক্ত হল একজনের ব্যক্তিগত মর্যাদা এবং আত্মসম্মান পুনর্স্থাপন করা।—প্রেরিত ৩:২০.
এছাড়াও, আমাদের বাইবেল প্রশিক্ষিত বিবেককে কলঙ্কিত বা দুর্বল করতে কোন কিছুকে অনুমোদন না করে তা রক্ষা করার জন্য আমাদের অবিরত প্রচেষ্টা করে চলা উত্তম। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে—ভোজন, পান, ব্যবসা, আমোদপ্রমোদ, বিপরীত লিঙ্গের সাথে আচরণে আত্মসংযম অনুশীলন শুদ্ধ বিবেক বজায় রাখতে আমাদের সাহায্য করবে এবং আমাদের জীবনে ঈশ্বরের গৌরব ও মর্যাদা প্রতিফলিত করতে সক্ষম করবে।—১ করিন্থীয় ১০:৩১.
আমাদের ভুলগুলির দ্বারা সৃষ্ট অপরাধবোধ যদি মুছে না যায় তাহলে কী হবে? অথবা অপব্যবহারের স্মৃতিগুলি ক্রমাগতভাবে বহন করা যদি বেদনাদায়ক হয় তাহলে কী? এগুলি আমাদের ব্যক্তিগত মর্যাদা খর্ব করে এবং তীব্র হতাশা নিয়ে আসে। গীতসংহিতা ৩৪:১৮ পদে রাজা দায়ূদের বাক্যগুলি কতই না সান্ত্বনাদায়ক: “সদাপ্রভু ভগ্নচিত্তদের নিকটবর্ত্তী, তিনি চূর্ণমনাদের পরিত্রাণ করেন”! যখন তাদের হতাশা ও অযোগ্যতার অনুভূতিগুলির সাথে মোকাবিলা করতে হয়, তখন যিহোবা তাঁর দাসেদের শক্তি প্রদান করে সংরক্ষিত করতে প্রস্তুত এবং ইচ্ছুক। আত্মসম্মান এবং ব্যক্তিগত মর্যাদা পুনর্স্থাপন করার ক্ষেত্রে তাঁর নিকট সনির্বন্ধ অনুনয়ের পাশাপাশি যারা আধ্যাত্মিকভাবে যোগ্য যেমন খ্রীষ্টীয় পিতামাতা, প্রাচীনেরা এবং মণ্ডলীর অন্যান্য পরিপক্ব ব্যক্তিদের কাছে সাহায্যের অন্বেষণ হল ব্যবহারিক উপায়।—যাকোব ৫:১৩-১৫.
অপরপক্ষে, ব্যক্তিগত মর্যাদা এবং ঔদ্ধত্যের মধ্যবর্তী রেখাকে অতিক্রম করার বিরুদ্ধে আমাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন। শাস্ত্রীয় পরামর্শটি হল “আপনার বিষয়ে যেমন বোধ করা উপযুক্ত, কেহ তদপেক্ষা বড় বোধ না করুক; কিন্তু ঈশ্বর যাহাকে যে পরিমাণে বিশ্বাস বিতরণ করিয়াছেন, তদনুসারে সে সুবোধ হইবারই চেষ্টায় আপনার বিষয়ে বোধ করুক।” (রোমীয় ১২:৩) যদিও আত্মসম্মান গড়ে তোলা যথার্থ, তবুও আমরা আমাদের স্বীয় যোগ্যতার উপর অত্যধিক জোর দিতে অথবা কেউ কেউ অন্যদের সম্মুখে খ্যাতি অর্জনের জন্য যে স্বার্থপর ও চরম প্রচেষ্টাগুলি করে, মানব মর্যাদাকে সেগুলির সাথে বিভ্রান্ত করতে চাই না।
হ্যাঁ, অন্যের মর্যাদাকে সম্মান করা হল এক খ্রীষ্টীয় চাহিদা। আমাদের পরিবারের সদস্যেরা এবং আমাদের সহখ্রীষ্টানেরা সকলেই আমাদের শ্রদ্ধা, সম্মান এবং উচ্চমূল্য পাওয়ার যোগ্য ও উপযুক্ত। যিহোবা আমাদের প্রত্যেককে কিছু পরিমাণ মর্যাদা এবং শ্রদ্ধা প্রদান করেছেন যা আমাদের স্বীকার করা এবং বজায় রাখা উচিত। কিন্তু সর্বোপরি, আমাদের অবশ্যই স্বর্গীয় পিতা, যিহোবা ঈশ্বরের অতুলনীয় মর্যাদা এবং মহত্বের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা উৎপন্ন করতে হবে।
[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]
তরুণেরা অক্ষমদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে পারে