জেগে থাকার বিষয়ে যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করুন
“জাগিয়া থাক, ও প্রার্থনা কর।”—মথি ২৬:৪১.
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
কীভাবে আমাদের প্রার্থনা দেখায় যে, আমরা জেগে আছি?
কোন কোন উপায়ে আমরা দেখাতে পারি যে, আমরা আমাদের পরিচর্যায় জেগে রয়েছি?
পরীক্ষার সময়ে আমাদের জেগে থাকা কেন গুরুত্বপূর্ণ এবং কীভাবে আমরা জেগে থাকতে পারি?
১, ২. (ক) জেগে থাকার বিষয়ে যিশুর উদাহরণ সম্বন্ধে কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হতে পারে? (খ) যিশুর নিখুঁত উদাহরণ কি পাপী মানুষের জন্য ব্যবহারিক? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।
আপনি হয়তো ভাবতে পারেন: ‘জেগে থাকার বিষয়ে যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করা কি আসলেই সম্ভব? কারণ, যিশু ছিলেন সিদ্ধ ব্যক্তি! অধিকন্তু, যিশু একই সময়ে স্পষ্টভাবে ভবিষ্যৎ—এমনকী তাঁর নিজের দিন হাজার বছরকে ছাপিয়েও—দেখতে সমর্থ ছিলেন! তাঁর কি আসলেই জেগে থাকার প্রয়োজন ছিল?’ (মথি ২৪: ৩৭-৩৯; ইব্রীয় ৪:১৫) আসুন আমরা প্রথমে এই প্রশ্নগুলো বিবেচনা করি, যাতে আমরা দেখতে পারি যে, এই বিষয়টা কতটা প্রাসঙ্গিক এবং জরুরি।
২ এক নিখুঁত উদাহরণ কি পাপী মানুষদের জন্য সাহায্যকারী? হ্যাঁ, কারণ একজন উত্তম শিক্ষক ও তাঁর উদাহরণ থেকে শেখা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, কল্পনা করুন যে, একজন ব্যক্তি ধনুর্বিদ্যায় প্রথম শিক্ষা লাভ করছেন। তিনি লক্ষ্যভেদ করার মতো যথেষ্ট ভালোভাবে তির নিক্ষেপ করতে পারেন না কিন্তু তিনি আরও শিক্ষা লাভ করেন এবং প্রচেষ্টা করে চলেন। উন্নতি করার জন্য, তিনি তার নির্দেশকের উদাহরণের প্রতি সতর্কতার সঙ্গে মনোনিবেশ করেন, যিনি একজন দক্ষ তিরন্দাজ। ছাত্র তার শিক্ষকের দাঁড়ানোর ভঙ্গি, তার বাহুযুগলের অবস্থান, ধনুকের গুণের ওপর তার আঙুলের ব্যবহারের প্রতি মনোযোগ দেন। ধীরে ধীরে, সেই দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ নতুন শিক্ষার্থী শেখেন যে, গুণের ওপর কতটা চাপ প্রয়োগ করতে হবে; তিনি বাতাসের গতিপথের প্রতি মনোযোগ দেন এবং প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। তিনি তার নির্দেশককে যা করতে দেখেন, তা অনুকরণ করার মাধ্যমে অবশেষে তার তির তাক করতে পারেন, যাতে তা ধীরে ধীরে লক্ষ্যের একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে আঘাত করতে পারে। একইভাবে, খ্রিস্টান হিসেবে আমরা যিশুর নির্দেশনা অনুসরণ করার এবং তাঁর নিখুঁত উদাহরণ অনুকরণ করার মাধ্যমে উন্নতি করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাই।
৩. (ক) কীভাবে যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তাঁর জেগে থাকার গুণ প্রয়োজন রয়েছে? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?
৩ কিন্তু, জেগে থাকা সম্বন্ধে কী বলা যায়? যিশুর কি আসলেই এই গুণ প্রয়োজন ছিল? হ্যাঁ, ছিল। উদাহরণস্বরূপ, তাঁর পার্থিব জীবনের শেষরাতে, যিশু তাঁর বিশ্বস্ত প্রেরিতদের এই জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আমার সঙ্গে জাগিয়া থাক।” তিনি আরও বলেছিলেন: “জাগিয়া থাক, ও প্রার্থনা কর, যেন পরীক্ষায় না পড়।” (মথি ২৬:৩৮, ৪১) যদিও তিনি সবসময় প্রকাশ করেছিলেন যে, তিনি জেগে আছেন, তবুও বিশেষভাবে সেই কঠিন সময়গুলোতে যিশু জেগে থাকতে এবং যতটা সম্ভব তাঁর স্বর্গীয় পিতার আরও নিকটবর্তী থাকতে চেয়েছিলেন। তিনি জানতেন যে, তাঁর অনুসারীদেরও একই সতর্কতা প্রয়োজন আর তা শুধু সেই সময়ের জন্য নয় কিন্তু ভবিষ্যতের জন্যও। তাই, আসুন আমরা বিবেচনা করে দেখি যে, কেন যিশু চান, যেন আমরা জেগে থাকি। এরপর, আমরা তিনটে উপায় বিবেচনা করব, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা আমাদের রোজকার জীবনে জেগে থাকার বিষয়ে যিশুকে অনুকরণ করতে পারি।
যে-কারণে যিশু চান, যেন আমরা জেগে থাকি
৪. ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আমরা যা জানি না এবং আমাদের যে জেগে থাকা প্রয়োজন, এই দুটো বিষয়ের মধ্যে কোন সংযোগ রয়েছে?
৪ যিশু চান, যেন দুটো কারণে আমরা জেগে থাকি। প্রথম কারণটা হল, ভবিষ্যতে যা ঘটবে, সেই সমস্তকিছু আমরা জানি না। যিশু যখন মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি কি ভবিষ্যতে যা ঘটবে, সেই সমস্তকিছু জানতেন? না, কারণ তিনি নম্রভাবে স্বীকার করেছিলেন: “সেই দিনের ও সেই দণ্ডের তত্ত্ব কেহই জানে না, স্বর্গে দূতগণও জানেন না, পুত্ত্রও জানেন না, কেবল পিতা জানেন।” (মথি ২৪:৩৬) সেই সময়ে যিশু অর্থাৎ ‘পুত্ত্র’ একেবারে সঠিকভাবে জানতেন না যে, এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ কখন আসবে। আজকে, আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান কি সীমিত? অবশ্যই সীমিত! আমরা জানি না যে, ঠিক কখন যিহোবা এই দুষ্ট বিধিব্যস্থার শেষ নিয়ে আসার জন্য তাঁর পুত্রকে পাঠাবেন। যদি আমরা তা জানতে পারতাম, তাহলে আমাদের কি আসলেই জেগে থাকার প্রয়োজন হতো? যিশু যেমন ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, শেষ হঠাৎ করে, অপ্রত্যাশিতভাবে আসবে; তাই আমাদের আগের চেয়ে আরও বেশি করে জেগে থাকতে হবে।—পড়ুন, মথি ২৪:৪৩.
৫, ৬. (ক) ভবিষ্যৎ এবং ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান কীভাবে আমাদের জেগে থাকার প্রয়োজনীয়তার ওপর প্রভাব ফেলে? (খ) শয়তান সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান থাকার কারণে কেন আমাদের জেগে থাকার বিষয়ে আরও দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত?
৫ আরেকটা যে-কারণে যিশু চান, যেন আমরা জেগে থাকি, তা হল ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে এমন অনেক কিছু রয়েছে, যেগুলো আমরা জানি। যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে অনেক অপূর্ব বিষয় জানতেন আর সেগুলো ছিল এমন সত্য, যেগুলো সম্বন্ধে তাঁর চারপাশের অধিকাংশ লোক একেবারেই জানত না। যিশুর মতো আমাদের ততটা জ্ঞান নেই কিন্তু তাঁর কারণেই আমরা ঈশ্বরের রাজ্য এবং নিকট ভবিষ্যতে এটা যা সম্পাদন করতে যাচ্ছে, সেই বিষয়ে অনেক কিছু জানি। আমরা যখন আমাদের চারপাশে তাকাই, তা সেটা স্কুলে, কর্মক্ষেত্রে অথবা আমাদের পরিচর্যার এলাকায়, যেখানেই হোক না কেন, তখন আমরা কি দেখতে পাই না যে, এই অপূর্ব সত্যগুলো সম্বন্ধে অধিকাংশ লোক একেবারে অন্ধকারের মধ্যে রয়েছে? তাহলে, এখানে আমরা জেগে থাকার আরেকটা কারণ সম্বন্ধে দেখতে পাই। যিশুর মতো, আমাদেরও সবসময় সতর্ক থাকতে হবে আর তা ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে আমরা যা জানি, সেগুলো সম্বন্ধে বলার জন্য বিভিন্ন সুযোগ খোঁজার মাধ্যমে। এইরকম প্রতিটা সুযোগই অত্যন্ত মূল্যবান আর আমরা একটা সুযোগও হাতছাড়া করতে চাই না। জীবন ঝুঁকির মুখে রয়েছে!—১ তীম. ৪:১৬.
৬ যিশু আরও এমন কিছু সম্বন্ধে জানতেন, যা তাঁকে জেগে থাকতে পরিচালিত করেছিল। তিনি জানতেন যে, শয়তান তাঁকে প্রলোভনে ফেলার, তাঁকে তাড়না করার এবং তাঁর নীতিনিষ্ঠা ভেঙ্গে ফেলার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। সেই নিষ্ঠুর শত্রু যিশুকে পরীক্ষায় ফেলার ব্যাপারে ‘উপযুক্ত সময়ের’ জন্য সবসময় সজাগ ছিল। (লূক ৪:১৩, জুবিলী বাইবেল।) যিশু কখনো তাঁর সতর্ক মনোভাবকে ধীর হয়ে পড়তে দেননি। তিনি যেকোনো ধরনের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকতে চেয়েছিলেন, তা সেটা প্রলোভন, বিরোধিতা অথবা তাড়না, যা-ই হোক না কেন। আমাদের সম্বন্ধেও কি অনেকটা একই বিষয় বলা যেতে পারে না? আমরা জানি যে, শয়তান এখনও “গর্জ্জনকারী সিংহের ন্যায়, কাহাকে গ্রাস করিবে, তাহার অন্বেষণ করিয়া বেড়াইতেছে।” এই কারণে ঈশ্বরের বাক্য সমস্ত খ্রিস্টানকে জোরালো পরামর্শ দেয়: “তোমরা প্রবুদ্ধ হও, জাগিয়া থাক।” (১ পিতর ৫:৮) কিন্তু, কীভাবে আমরা তা করতে পারি?
যেভাবে প্রার্থনায় জেগে থাকা যায়
৭, ৮. প্রার্থনা সম্বন্ধে যিশু কোন পরামর্শ প্রদান করেছিলেন আর তিনি কোন ধরনের উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?
৭ আধ্যাত্মিকভাবে সতর্ক অথবা জেগে থাকা এবং প্রার্থনার মধ্যে বাইবেল এক জোরালো সংযোগ তুলে ধরে। (কল. ৪:২; ১ পিতর ৪:৭) তাঁর অনুসারীদেরকে তাঁর সঙ্গে জেগে থাকতে বলার অল্পকিছু সময় পরেই যিশু বলেছিলেন: “জাগিয়া থাক, ও প্রার্থনা কর, যেন পরীক্ষায় না পড়।” (মথি ২৬:৪১) তিনি কি এই বুঝিয়েছিলেন যে, সেই পরামর্শ তারা শুধু সেই মুহূর্তে যে-কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছিল, কেবল তখনকার জন্যই সীমাবদ্ধ? না, তাঁর পরামর্শ এমন একটা নীতি, যেটার দ্বারা আমাদের রোজ জীবনযাপন করতে হয়।
৮ যিশু প্রার্থনার ব্যাপারে এক চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছেন। আপনার হয়তো মনে আছে যে, একবার তিনি সারারাত ধরে তাঁর পিতার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। আসুন আমরা দৃশ্যটা কল্পনা করার চেষ্টা করি। (পড়ুন, লূক ৬:১২, ১৩.) সময়টা ছিল বসন্তকাল, খুব সম্ভবত মাছ ধরার নগর কফরনাহূমের কাছাকাছি, যে-অঞ্চলে যিশু প্রায়ই থাকেন। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি একটা পাহাড়ে ওঠেন, যেখান থেকে গালীল সমুদ্র দেখা যায়। তিনি যখন অন্ধকারাচ্ছন্ন ভূদৃশ্য দেখেন, তখন তিনি হয়তো কফরনাহূম এবং কাছাকাছি অন্যান্য গ্রামে তেলের প্রদীপের মিটি মিটি আলো দেখতে পান। কিন্তু, যিশু যখন যিহোবার উদ্দেশে কথা বলেন, তখন তিনি পুরোপুরি তাঁর প্রার্থনার প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেন। কয়েক মিনিট—এরপর কয়েক ঘন্টা—কেটে যায়। দূরে যখন একটার পর একটা আলো নিভে যেতে থাকে অথবা আকাশে চাঁদ এক দিক থেকে অন্যদিকে যেতে থাকে কিংবা ঝোপঝাড়ের মধ্যে নিশাচর প্রাণীরা খাবার খুঁজতে থাকে, তখন তিনি সেই দিকে খুব কমই খেয়াল দেন। তাঁর প্রার্থনার মধ্যে হয়তো একটা বড়ো সিদ্ধান্তের বিষয় রয়েছে, যেটা তাঁকে নিতে হবে আর সেটা হল তাঁর ১২ জন প্রেরিতকে বাছাই করা। আমরা কল্পনা করতে পারি যে, যিশু যখন আন্তরিকভাবে নির্দেশনা ও প্রজ্ঞা চাইছেন, তখন তিনি মন খুলে তাঁর পিতাকে তাঁর প্রত্যেক প্রেরিত সম্বন্ধে সমস্ত চিন্তা ও উদ্বিগ্নতার কথা বলছেন।
৯. যিশু যে সারারাত ধরে প্রার্থনা করেছিলেন, সেই উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৯ যিশুর উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? এই বিষয়টা যে, আমাদের দীর্ঘসময় ধরে প্রার্থনা করতে হবে? না, কারণ তিনি সদয়ভাবে তাঁর শিষ্যদের সম্বন্ধে স্বীকার করেছিলেন: “আত্মা ইচ্ছুক বটে, কিন্তু মাংস দুর্ব্বল।” (মথি ২৬:৪১) তা সত্ত্বেও, আমরা যিশুকে অনুকরণ করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, আমাদেরকে, আমাদের পরিবারকে অথবা আমাদের সহবিশ্বাসীদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে প্রভাবিত করতে পারে এমন যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কি আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে কথা বলি? আমাদের প্রার্থনায় কি আমরা বিশ্বাসী ভাইবোনদের সম্বন্ধে চিন্তা প্রকাশ করি? আমরা কি গৎ বাঁধা অভিব্যক্তি পুনরাবৃত্তি করার চেয়ে বরং হৃদয় থেকে প্রার্থনা করি? এ ছাড়া, লক্ষ করুন যে, যিশু তাঁর পিতার সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে ও একান্তে কথা বলাকে মূল্যবান বলে গণ্য করেছিলেন। বর্তমানের এই ব্যস্ত ও অস্থির জগতে আমরা সহজেই জীবনের কর্মব্যস্ততার মধ্যে এতটাই ডুবে যেতে পারি যে, এর ফলে আমরা অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ভুলে যাই। আমরা যদি গভীর এবং একান্ত প্রার্থনার জন্য যথেষ্ট সময় করে নিই, তাহলে আমরা আধ্যাত্মিকভাবে আরও সতর্ক হব। (মথি ৬:৬, ৭) আমরা যিহোবার আরও নিকটবর্তী হব, তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার ব্যাপারে উৎসুক হব এবং এমন যেকোনোকিছু এড়িয়ে চলব, যা কিনা তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে দুর্বল করে দিতে পারে।—যাকোব ৪:৮.
যেভাবে প্রচার কাজে জেগে থাকা যায়
১০. সাক্ষ্য প্রদান করার সুযোগগুলোর ব্যাপারে যিশু যেভাবে সতর্ক ছিলেন, তা কোন উদাহরণ আমাদের দেখায়?
১০ যিশু সেই কাজের ব্যাপারে জেগে ছিলেন, যা যিহোবা তাঁকে করতে দিয়েছিলেন। এমন কিছু কাজ রয়েছে, যেগুলোতে হয়তো খুব বেশি মনোযোগ না দিলেও এর পরিণতি গুরুতর হয় না। কিন্তু, এমন অনেক কাজ রয়েছে, যেগুলোতে গভীর মনোযোগ এবং সতর্কতা প্রদান করতে হয় আর খ্রিস্টীয় পরিচর্যা নিশ্চিতভাবেই এমন একটা কাজ। সুসমাচার প্রচার করার জন্য সুযোগ খোঁজার মাধ্যমে যিশু তাঁর কাজের ব্যাপারে সবসময় সতর্ক ছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি এবং তাঁর শিষ্যরা যখন দীর্ঘ সকাল ধরে হেঁটে শুখর নামক নগরে পৌঁছেছিলেন, তখন শিষ্যরা খাবার কিনতে গিয়েছিল। বিশ্রাম নেওয়ার জন্য যিশু সেই নগরের একটা কুয়োর পাশে বসেন, তবে তিনি সতর্ক থাকেন এবং সাক্ষ্য দেওয়ার এক সুযোগ খুঁজে পান। একজন শমরীয় নারী জল নিতে আসেন। যিশু চাইলে একটু ঘুমিয়ে নিতে পারতেন। আলোচনা পরিহার করার জন্য তিনি বিভিন্ন যুক্তি চিন্তা করতে পারতেন। কিন্তু, তিনি কথা বলেছিলেন, সেই নারীকে আলোচনায় জড়িত করেছিলেন এবং এক জোরালো সাক্ষ্য প্রদান করেছিলেন, যা সেই নগরের অনেকের জীবনকে প্রভাবিত করেছিল। (যোহন ৪:৪-২৬, ৩৯-৪২) আমরা কি যিশুর জেগে থাকার উদাহরণকে আরও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুকরণ করতে পারি, হতে পারে রোজকার জীবনে যে-লোকেদের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়, তাদের কাছে সুসমাচার জানানোর সুযোগগুলোর ব্যাপারে আরও বেশি করে সতর্ক থাকার প্রচেষ্টা করার মাধ্যমে?
১১, ১২. (ক) সেই ব্যক্তিদের প্রতি যিশু কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, যারা তাঁকে তাঁর কাজ থেকে বিক্ষিপ্ত করতে চেয়েছিল? (খ) তাঁর কাজের ব্যাপারে যিশু কোন ভারসাম্যপূর্ণ মনোভাব প্রদর্শন করেছিলেন?
১১ মাঝে মাঝে, শুভাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তিরা যিশুকে তাঁর কাজ থেকে বিক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করেছিল। কফরনাহূমে, জনতা অলৌকিকভাবে যিশুর আরোগ্য করার কাজ দেখে এতটাই প্রভাবিত হয়েছিল যে, তারা তাঁকে সেখানে তাদের সঙ্গে রেখে দিতে চেয়েছিল। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু, যিশুর কার্যভার ছিল “ইস্রায়েল-কুলের” সমস্ত ‘হারান মেষের’ কাছে প্রচার করা, কেবল সেই একটা নগরে নয়। (মথি ১৫:২৪) তাই, তিনি সেই লোকদের বলেছিলেন: “অন্য অন্য নগরে আমাকে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিতে হইবে; কেননা সেই জন্যই আমি প্রেরিত হইয়াছি।” (লূক ৪:৪০-৪৪) স্পষ্টতই, যিশুর জীবন তাঁর পরিচর্যাকে কেন্দ্র করে ছিল। তিনি কোনোকিছুকেই তাঁকে বিক্ষিপ্ত করার সুযোগ দেননি।
১২ যিশু কি তাঁর কাজের ওপর এতটাই মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন যে তিনি একজন গোঁড়া ব্যক্তি অথবা একজন সন্ন্যাসী ছিলেন? তিনি কি তাঁর পরিচর্যায় এতটাই মগ্ন ছিলেন যে এর ফলে তিনি পরিবারের ব্যবহারিক প্রয়োজনগুলো থেকে পৃথক ছিলেন? না, ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়ে যিশু এক নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন। তিনি জীবন উপভোগ করেছিলেন, তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে মনোরম সময় কাটিয়ে আনন্দিত ছিলেন। তিনি পরিবারগুলোকে মূল্যবান বলে গণ্য করেছিলেন, সেগুলোর চাহিদা ও সমস্যাগুলোর প্রতি গভীর সহমর্মিতা দেখিয়েছিলেন এবং স্বচ্ছন্দে ছোটো ছেলে-মেয়েদের প্রতি তাঁর স্নেহ প্রকাশ করেছিলেন।—পড়ুন, মার্ক ১০:১৩-১৬.
১৩. যখন রাজ্যের প্রচার কাজের বিষয়টা আসে, তখন জেগে থাকার এবং ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়ে কীভাবে আমরা যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি?
১৩ জেগে থাকার বিষয়ে যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করার সময় কীভাবে আমরা একইরকম ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্রচেষ্টা করতে পারি? আমরা যেন এই জগৎকে আমাদের নিজেদের কাজ থেকে বিক্ষিপ্ত করার সুযোগ না দিই। এমনকী শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন হয়তো আমাদের পরিচর্যায় ধীর হয়ে পড়ার অথবা তারা যেটাকে এক স্বাভাবিক জীবন বলে মনে করে, সেটার চেষ্টা করার ব্যাপারে আমাদেরকে চাপ দিতে পারে। কিন্তু, আমরা যদি যিশুকে অনুকরণ করি, তাহলে রূপকভাবে বললে আমরা আমাদের পরিচর্যাকে খাদ্য হিসেবে গণ্য করব। (যোহন ৪:৩৪) আমাদের কাজ আমাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে পুষ্ট করে ও সেইসঙ্গে আমাদের জন্য পরমানন্দ নিয়ে আসে। তবে, আত্মধার্মিক অথবা সন্ন্যাসীদের মতো মনোভাব দেখিয়ে আমরা কখনোই চরমপন্থী হতে চাই না। যিশুর মতো আমরা সুখী বা “ধন্য ঈশ্বরের” আনন্দিত ও ভারসাম্যপূর্ণ দাস হতে চাই।—১ তীম. ১:১১.
যেভাবে পরীক্ষার সময়ে জেগে থাকা যায়
১৪. পরীক্ষার সময়ে, আমাদের কোন প্রবণতার প্রতিরোধ করতে হবে এবং কেন?
১৪ আমরা যেমন দেখেছি যে, জেগে থাকার বিষয়ে যিশুর সবচেয়ে জরুরি পরামর্শগুলোর মধ্যে কিছু পরামর্শ সেই সময়ে দেওয়া হয়েছিল, যখন তিনি কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ছিলেন। (পড়ুন, মার্ক ১৪:৩৭.) আমরা যখন দুঃখকষ্টের মুখোমুখি হই, তখন তাঁর উদাহরণ আমাদের আরও বেশি প্রয়োজন হয়। পরীক্ষার সময়ে, অনেকের এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ সত্য ভুলে যাওয়ার প্রবণতা থাকে, যেটা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, হিতোপদেশ বই এই সম্বন্ধে দু-বার উল্লেখ করে: “একটী পথ আছে, যাহা মানুষের দৃষ্টিতে সরল; কিন্তু তাহার পরিণাম মৃত্যুর পথ।” (হিতো. ১৪:১২; ১৬:২৫) আমরা যদি আমাদের নিজেদের চিন্তাভাবনার ওপর নির্ভর করি, বিশেষভাবে যখন আমরা গুরুতর সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হই, তাহলে আমরা হয়তো নিজেদেরকে ও যাদেরকে আমরা ভালোবাসি, তাদেরকে বিপদের মুখে ফেলি।
১৫. কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে পরিবারের একজন মস্তক হয়তো কোন প্রলোভনের মুখোমুখি হতে পারেন?
১৫ উদাহরণস্বরূপ, পরিবারের একজন মস্তক হয়তো “আপনার সম্পর্কীয় লোকদের” জন্য বস্তুগত বিষয়গুলো জোগাতে গিয়ে প্রচণ্ড চাপের মুখোমুখি হতে পারেন। (১ তীম. ৫:৮) তিনি হয়তো এমন একটা চাকরি ধরার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারেন, যেটার কারণে তিনি খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেওয়ার, পারিবারিক উপাসনায় নেতৃত্ব দেওয়ার এবং পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করার বিষয়টা বার বার বাদ দিতে পারেন। তিনি যদি পুরোপুরি মানুষের চিন্তাভাবনার ওপর নির্ভর করেন, তাহলে এইরকম এক কাজ হয়তো ন্যায্য, এমনকী ন্যায়সংগত বলে মনে হতে পারে। কিন্তু, এটা হয়তো আধ্যাত্মিক অসুস্থতা অথবা মৃত্যু নিয়ে আসতে পারে। হিতোপদেশ ৩:৫, ৬ পদের পরামর্শ অনুসরণ করা কতই না উত্তম! শলোমন বলেছিলেন: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।”
১৬. (ক) নিজের প্রজ্ঞার ওপর নির্ভর না করে বরং যিহোবার প্রজ্ঞার ওপর নির্ভর করার বিষয়ে যিশু কোন উদাহরণ স্থাপন করেছেন? (খ) কঠিন সময়ে যিহোবার ওপর নির্ভর করার বিষয়ে কীভাবে অনেক পরিবারের মস্তক যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করছে?
১৬ যিশু যখন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন, তখন তিনি নিজ বিবেচনার ওপর নির্ভর করার বিষয়টাকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বিষয়টা একটু চিন্তা করে দেখুন! পৃথিবীর সর্বকালের সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তি উত্তর দেওয়ার জন্য নিজ প্রজ্ঞার ওপর নির্ভর করেননি। উদাহরণস্বরূপ, শয়তান যখন তাঁকে প্রলোভিত করার চেষ্টা করেছিল, তখন যিশু এই কথাগুলো বলে বার বার উত্তর দিয়েছিলেন: “লেখা আছে।” (মথি ৪:৪, ৭, ১০) প্রলোভন প্রতিহত করার জন্য তিনি তাঁর পিতার প্রজ্ঞার ওপর নির্ভর করেছিলেন, সেই নম্রতা দেখিয়েছিলেন, যা শয়তান ঘৃণা করে এবং যেটা তার মধ্যে একেবারেই নেই। আমরাও কি তা-ই করি? পরিবারের যে-মস্তক যিশুকে অনুকরণ করেন, তিনি ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা নিজেকে পরিচালিত হতে দেন আর তা বিশেষভাবে কঠিন সময়গুলোতে। সারা পৃথিবীর হাজার হাজার পরিবারের মস্তক ঠিক তা-ই করে থাকে। তারা দৃঢ়ভাবে ঈশ্বরের রাজ্য এবং বিশুদ্ধ উপাসনাকে তাদের জীবনে প্রথমে রাখে, এমনকী বস্তুগত বিষয়গুলোরও আগে রাখে। এভাবে, তারা তাদের পরিবারগুলোর সর্বোত্তম যত্ন নিয়ে থাকে। বস্তুগত চাহিদাগুলো জোগানোর ব্যাপারে তাদের প্রচেষ্টার ওপর আশীর্বাদ করার মাধ্যমে যিহোবা সাড়া দিয়ে থাকেন, যেমনটা তাঁর বাক্যে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে।—মথি ৬:৩৩.
১৭. কী আপনাকে যিশুর জেগে থাকার বিষয়টা অনুকরণ করতে অনুপ্রাণিত করে?
১৭ নিঃসন্দেহে, জেগে থাকার বিষয়ে যিশু সম্ভাব্য সর্বোত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন। তাঁর উদাহরণ, ব্যবহারিক, উপকারজনক এবং এমনকী জীবনরক্ষাকারী। মনে রাখবেন যে, শয়তান আপনাকে আধ্যাত্মিকভাবে নিদ্রাচ্ছন্ন করে ফেলার ব্যাপারে সচেষ্ট, যেটা হল দুর্বল বিশ্বাস, উদাসীনভাবে উপাসনা করা এবং নীতিনিষ্ঠার ব্যাপারে আপোশ করার মতো এক অবস্থা। (১ থিষল. ৫:৬) তাকে কৃতকার্য হতে দেবেন না! জেগে থাকুন, যেমনটা যিশু ছিলেন আর তা আপনার প্রার্থনায়, আপনার পরিচর্যায় এবং পরীক্ষার সঙ্গে মোকাবিলা করার সময়। এই কাজগুলো করার মাধ্যমে আপনি এমনকী এখনই এই মৃতপ্রায় বিধিব্যবস্থার শেষ সময়ে এক সমৃদ্ধ, আনন্দিত এবং পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন উপভোগ করতে পারবেন। এ ছাড়া, জেগে থাকার বিষয়টা এটাও নিশ্চিত করবে যে, আপনার প্রভু যখন এই বিধিব্যবস্থার শেষ নিয়ে আসবেন, তখন তিনি আপনাকে জাগ্রত এবং সক্রিয় অবস্থায় ও তাঁর পিতার ইচ্ছা পালনরত অবস্থায় দেখতে পাবেন। আপনার বিশ্বস্ত জীবনধারার জন্য আপনাকে পুরস্কৃত করতে পেরে যিহোবা কত আনন্দিতই না হবেন!—প্রকা. ১৬:১৫.
[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিশু কুয়োর ধারে একজন নারীর কাছে প্রচার করেছিলেন। রোজ প্রচার করার জন্য আপনি কোন সুযোগগুলো করে নেন?
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনার পরিবারের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের যত্ন নেওয়া দেখায় যে, আপনি জেগে রয়েছেন