ঈশ্বরকে প্রেম করার অর্থ কী?
প্রায় ছয় হাজার বছর আগে, প্রথম মানব শিশু জন্ম গ্রহণ করেছিল। তার জন্মের পরে তার মা হবা বলেছিল: “সদাপ্রভুর সহায়তায় আমার নরলাভ হইল।” (আদিপুস্তক ৪:১) তার এই মন্তব্য প্রকাশ করে যে, যদিও ইতিমধ্যেই তাদের বিদ্রোহের জন্য মৃত্যু ঘোষণা করা হয়েছিল, হবা এবং তার স্বামী আদম তখনও যিহোবার ঈশ্বরত্ব সম্পর্কে সচেতন ছিল। পরে তারা দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেয়। বালক দুটির নাম দেওয়া হয়েছিল কয়িন ও হেবল।
বেড়ে ওঠার সাথে সাথে সেই পুত্রেরা নিঃসন্দেহে যিহোবার প্রেম সম্বন্ধে অনেক কিছু শিক্ষা করেছিল, কেবলমাত্র তাঁর সৃষ্টি নিরীক্ষণ করার দ্বারা। তারা প্রকৃতির সুন্দর বর্ণময়তা এবং প্রাণীজগৎ ও উদ্ভিদের বিবিধতা উপভোগ করেছিল। ঈশ্বর কেবল তাদের জীবনই দেননি, কিন্তু তিনি তাদের জীবনে আনন্দ খুঁজে পাওয়ার ক্ষমতাও দিয়েছিলেন।
তারা শিখেছিল যে তাদের পিতামাতা সিদ্ধরূপে সৃষ্ট হয়েছিল এবং মানবজাতির জন্য যিহোবার আদি উদ্দেশ্য ছিল যেন তারা অনন্তকাল বেঁচে থাকে। সম্ভবত আদম ও হবা সুন্দর এদন উদ্যান সম্পর্কে তাদের কাছে বর্ণনা করেছিল এবং হয়ত এও ব্যাখ্যা করতে হয়েছিল যে কেন তারা এইধরনের পরমদেশীয় গৃহ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিল। কয়িন ও হেবল হয়ত আদিপুস্তক ৩:১৫ পদে লিপিবদ্ধ ঐশিক ভবিষ্যদ্বাণীটি সম্পর্কেও অবগত ছিল। ওই ভবিষ্যদ্বাণীর মাধ্যমে যিহোবা যারা তাঁকে প্রেম করে ও তাঁর প্রতি বিশ্বস্ততা প্রমাণ করে তাদের উপকারের জন্য নিরূপিত সময়ে বিষয়বস্তু উপযুক্তভাবে স্থাপন করার বিষয়ে তাঁর উদ্দেশ্য সম্পর্কে ব্যক্ত করেছিলেন।
যিহোবা এবং তাঁর গুণাবলি সম্পর্কে শেখা কয়িন ও হেবলের মধ্যে অবশ্যই যিহোবার অনুগ্রহ পাওয়ার ইচ্ছাকে উৎপন্ন করেছিল। সুতরাং তারা যিহোবাকে উপহার উৎসর্গ কারার দ্বারা তাঁর কাছে উপস্থিত হয়েছিল। বাইবেলের বিবরণ বলে: “কালানুক্রমে কয়িন উপহাররূপে সদাপ্রভুর উদ্দেশে ভূমির ফল উৎসর্গ করিল। আর হেবলও আপন পালের প্রথমজাত কএকটী পশু ও তাহাদের মেদ উৎসর্গ করিল।”—আদিপুস্তক ৪:৩, ৪.
ঈশ্বরের অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য তাদের ইচ্ছা তাঁর সাথে এক সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। কয়িন ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এক চরম অবস্থায় পৌঁছায়, যেখানে হেবল ঈশ্বরের প্রতি ক্রমাগত আন্তরিক প্রেমের দ্বারা পরিচালিত হতে থাকে। যিহোবার ব্যক্তিত্ব ও তাঁর উদ্দেশ্যগুলি সম্পর্কে প্রথমেই জ্ঞান অর্জন করা ব্যতীত হেবল কখনও ঈশ্বরের সাথে এইধরনের সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারত না।
আপনিও যিহোবাকে জানতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, বাইবেলে আপনি শিখতে পারেন যে ঈশ্বর হলেন প্রকৃত ব্যক্তি, কেবল এক প্রাণহীন শক্তি নন যিনি উদ্দেশ্যবিহীন অথবা অপ্রয়োজনীয়ভাবে সৃষ্টি করে চলেছেন। (তুলনা করুন যোহন ৭:২৮; ইব্রীয় ৯:২৪; প্রকাশিত বাক্য ৪:১১.) বাইবেল আরও শেখায় যে যিহোবা হলেন “স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে ও সত্যে মহান্।”—যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬.
“বলিদান অপেক্ষা আজ্ঞাপালন উত্তম”
কয়িন ও হেবলের বিবরণে যেমন ব্যাখ্যা করা হয়েছে ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞান থাকা ও তাঁর সাথে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখার ইচ্ছাই যথেষ্ট নয়। এটি সত্য যে, দুই ভাই উপহার নিয়ে ঈশ্বরের সামনে উপস্থিত হয়েছিল। কিন্তু, “সদাপ্রভু হেবলকে ও তাহার উপহার গ্রাহ্য করিলেন; কিন্তু কয়িনকে ও তাহার উপহার গ্রাহ্য করিলেন না; এই নিমিত্ত কয়িন অতিশয় ক্রুদ্ধ হইল, তাহার মুখ বিষণ্ণ হইল।”—আদিপুস্তক ৪:৩-৫.
কেন যিহোবা কয়িনের উপহার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন? তার উপহারের গুণগত মানের ক্ষেত্রে কি কোন ভুল ছিল? যিহোবা কি অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন এই কারণে যে কয়িন পশু বলির পরিবর্তে “ভূমির ফল” উৎসর্গ করেছিল? সম্ভবত না। কারণ পরবর্তী সময়ে, ঈশ্বর আনন্দের সাথে তাঁর অনেক উপাসকদের কাছ থেকে শস্য ও অন্যান্য ভূমির ফলের উৎসর্গ গ্রহণ করেছিলেন। (লেবীয়পুস্তক ২:১-১৬) স্পষ্টতই তাহলে, কয়িনের হৃদয়ে অসন্তুষ্টিজনক কিছু ছিল। যিহোবা কয়িনের হৃদয় পড়তে পেরেছিলেন ও তাকে সাবধান করেছিলেন: “তুমি কেন ক্রোধ করিয়াছ? তোমার মুখ কেন বিষণ্ণ হইয়াছে? যদি সদাচরণ কর, তবে কি গ্রাহ্য হইবে না? আর যদি সদাচরণ না কর, তবে পাপ দ্বারে গুঁড়ি মারিয়া রহিয়াছে। তোমার প্রতি তাহার বাসনা থাকিবে।”—আদিপুস্তক ৪:৬, ৭.
ঈশ্বরের প্রতি প্রকৃত প্রেম নিছক উৎসর্গ করার চেয়েও বেশি কিছু বোঝায়। তাই যিহোবা কয়িনকে উৎসাহিত করেছিলেন ‘সদাচরণ করতে।’ ঈশ্বর বাধ্যতা চেয়েছিলেন। ঈশ্বরের প্রতি এইধরনের বাধ্যতা কয়িনকে সৃষ্টিকর্তার সাথে এক প্রেমময় সম্পর্কের উত্তম ভিত্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারত। বাইবেল এই বাক্যগুলির দ্বারা বাধ্যতার মূল্যের উপর জোর দেয়: “সদাপ্রভুর রবে অবধান করিলে যেমন, তেমন কি হোমে ও বলিদানে সদাপ্রভু প্রসন্ন হন? দেখ, বলিদান অপেক্ষা আজ্ঞাপালন উত্তম, এবং মেষের মেদ অপেক্ষা অবধান করা উত্তম।”—১ শমূয়েল ১৫:২২.
এই ধারণাটি পরবর্তী সময়ে ১ যোহন ৫:৩ পদের কথাগুলির দ্বারা আরও উত্তমভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল: “ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই, যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি; আর তাঁহার আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়।” তাঁর কর্তৃত্বের অধীনে নিজেদের বশীভূত করার চেয়ে যিহোবার প্রতি প্রেম দেখানোর জন্য আর কোন উত্তম পন্থা নেই। এর অর্থ বাইবেলের নৈতিক মানের প্রতি বাধ্যতা। (১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০) এর অর্থ হল যা কিছু উত্তম তা প্রেম করা ও যা কিছু মন্দ তা ঘৃণা করা।—গীতসংহিতা ৯৭:১০; ১০১:৩; হিতোপদেশ ৮:১৩.
ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশ হল আমাদের প্রতিবেশীদের প্রেম করা। বাইবেল আমাদের বলে: “যদি কেহ বলে, আমি ঈশ্বরকে প্রেম করি, আর আপন ভ্রাতাকে ঘৃণা করে, সে মিথ্যাবাদী; কেননা যাহাকে দেখিয়াছে, আপনার সেই ভ্রাতাকে যে প্রেম না করে, সে যাঁহাকে দেখে নাই, সেই ঈশ্বরকে প্রেম করিতে পারে না।”—১ যোহন ৪:২০.
ঈশ্বরের সাথে অন্তরঙ্গতা সম্ভব
কেউ কেউ হয়ত বলতে পারে ‘আমি যিহোবাকে উপাসনা করি। আমি তাঁর নিয়মের বাধ্য। আমি আমার সহ-মানবদের সাথে ন্যায্য ব্যবহার করি। আমি এই সমস্ত কিছুই করে থাকি। তবুও, আমি প্রকৃতভাবে ঈশ্বরের সাথে ঘনিষ্ঠতা অনুভব করি না। আমি তাঁর প্রতি এক গভীর প্রেম অনুভব করি না আর তা আমাকে দোষী করে তোলে।’ আবার কেউ কেউ হয়ত মনে করে যে তারা যিহোবার সাথে এইধরনের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক অর্জনের যোগ্য নয়।
প্রায় ৩৭ বছর যিহোবার প্রতি উৎসর্গীকৃত সেবা করার পর এক খ্রীষ্টান লিখেছিলেন: “আমার জীবনে অনেক সময় আমি অনুভব করেছি যে যিহোবাকে উপাসনা করার ক্ষেত্রে আমি আন্তরিকতাশূন্য ছিলাম, যা হতে পারে হয়ত আমি এমনকি যিহোবাকে হৃদয় থেকে সেবা করিনি বলে। কিন্তু আমি জানতাম যে যিহোবাকে সেবা করা সঠিক কাজ ছিল আর আমি তা বন্ধ করতে আমাকে প্রশ্রয় দিতে পারি না। কিন্তু, প্রত্যেকবার আমি পড়তাম, কেউ বলছে যে সেই পুরুষ বা মহিলার হৃদয় যিহোবার প্রতি প্রেমে পূর্ণ, আমি আশ্চর্য হতাম, ‘আমার ক্ষেত্রে কী ভুল আছে, কেন আমি কখনও এইভাবে ভাবতে পারি না?’” কিভাবে আমরা ঈশ্বরের সাথে অন্তরঙ্গতা স্থাপন করতে পারি?
যখন আপনি সত্যই কাউকে ভালবাসেন, আপনি প্রায়ই সেই ব্যক্তি সম্পর্কে চিন্তা করে থাকেন। আপনার এক দৃঢ় ইচ্ছা থাকে তার সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য কারণ আপনি তার জন্য চিন্তা করেন। যত বেশি আপনি তাকে দেখেন, তার সাথে কথা বলেন ও তার সম্বন্ধে চিন্তা করেন, তার প্রতি আপনার প্রেম তত বৃদ্ধি পায়। এই নীতিটি ঈশ্বরের প্রতি আপনার প্রেম উৎপন্ন করার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
গীতসংহিতা ৭৭:১২ পদে অনুপ্রাণিত লেখক বলেন: “আমি তোমার সমস্ত কর্ম্ম ধ্যানও করিব, তোমার ক্রিয়া সকল আলোচনা করিব।” ঈশ্বরের প্রতি প্রেম উৎপন্ন করার জন্য ধ্যান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিশেষভাবে সত্য এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে যে তিনি অদৃশ্য। কিন্তু যত বেশি আপনি তাঁর সম্বন্ধে চিন্তা করবেন ততই তিনি আপনার কাছে বাস্তব হয়ে উঠবেন। আর কেবল তখনই আপনি তাঁর সাথে এক আন্তরিক ও স্নেহপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবেন—কারণ তিনি আপনার কাছে বাস্তব।
যিহোবার পথ ও ব্যবহার সম্পর্কে বারংবার ধ্যান করার ক্ষেত্রে আপনার প্রবণতা নির্ভর করবে আপনি কতখানি তাঁর কথা শোনেন। নিয়মিত তাঁর বাক্য বাইবেল পড়া ও অধ্যয়ন করার দ্বারা আপনি তা শুনতে পারেন। গীতরচক সেই ব্যক্তিকে সুখী বলে বর্ণনা করেন যিনি “সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় আমোদ করে, তাঁহার ব্যবস্থা দিবারাত্র ধ্যান করে।”—গীতসংহিতা ১:১, ২.
অপর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে প্রার্থনা। এই কারণে বাইবেল আমাদের বারবার প্রার্থনা করার জন্য উৎসাহিত করে—“সর্ব্বসময়ে,” ‘প্রার্থনার নিমিত্ত অবকাশ,’ “প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাক,” এবং “অবিরত প্রার্থনা কর।” (ইফিষীয় ৬:১৮; ১ করিন্থীয় ৭:৫; রোমীয় ১২:১২; ১ থিষলনীকীয় ৫:১৭) যিহোবার কাছে আমাদের অবিরত প্রার্থনা তার কাছে আমাদের প্রিয় করে তুলবে ও তিনি শোনেন এই নিশ্চয়তা আমাদের তাঁর ঘনিষ্ঠ করবে। এই বিষয়টি গীতরচকের দ্বারা নিশ্চিত হয়েছিল যখন তিনি ঘোষণা করেন: “আমি সদাপ্রভুকে প্রেম করি, কারণ তিনি শুনেন আমার রব ও আমার বিনতি। তিনি আমার প্রতি কর্ণপাত করিয়াছেন, তজ্জন্য আমি যাবজ্জীবন তাঁহাকে ডাকিব।”—গীতসংহিতা ১১৬:১, ২.
প্রেমের ঈশ্বরকে অনুকরণ করা
যিহোবা আমাদের প্রতি মঙ্গলময়। মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা হওয়ায় তাঁকে প্রকৃতই অনেক বিষয় বিবেচনা করতে ও সেই সকলের প্রতি যত্ন নিতে হয়। তবুও, বাইবেল আমাদের বলে যে তিনি এত মহিমান্বিত হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মনুষ্য সৃষ্টির প্রতি তিনি চিন্তা করেন। তিনি আমাদের ভালবাসেন। (১ পিতর ৫:৬, ৭) গীতরচক তার এই বাক্যগুলির দ্বারা এই বিষয়টি নিশ্চিত করেন: “হে সদাপ্রভু, আমাদের প্রভু, সমস্ত পৃথিবীতে তোমার নাম কেমন মহিমান্বিত। আমি তোমার অঙ্গুলি-নির্ম্মিত আকাশমণ্ডল, তোমার স্থাপিত চন্দ্র ও তারকামালা নিরীক্ষণ করি, [বলি], মর্ত্ত্য কি যে, তুমি তাহাকে স্মরণ কর? মনুষ্য-সন্তান বা কি যে, তুমি তাহার তত্ত্বাবধান কর?”—গীতসংহিতা ৮:১, ৩, ৪.
কিভাবে যিহোবা মরনশীল মনুষ্যদের স্মরণে রাখেন? বাইবেল উত্তর দেয়: “আমাদিগেতে ঈশ্বরের প্রেম ইহাতেই প্রকাশিত হইয়াছে যে, ঈশ্বর আপনার একজাত পুত্ত্রকে জগতে প্রেরণ করিয়াছেন, যেন আমরা তাঁহা দ্বারা জীবন লাভ করিতে পারি। ইহাতেই প্রেম আছে; আমরা যে ঈশ্বরকে প্রেম করিয়াছিলাম, তাহা নয়; কিন্তু তিনিই আমাদিগকে প্রেম করিলেন, এবং আপন পুত্ত্রকে আমাদের পাপার্থক প্রায়শ্চিত্ত হইবার জন্য প্রেরণ করিলেন।”—১ যোহন ৪:৯, ১০.
কিভাবে এই পাপার্থক প্রায়শ্চিত্ত ঈশ্বরের প্রেমের সর্বমহান প্রমাণ? আসুন আমরা বিবেচনা করি এদন উদ্যানে কী ঘটেছিল? আদম ও হবা এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্মুখীন হয়েছিল যে চিরকাল সিদ্ধ জীবনের প্রত্যাশা নিয়ে যিহোবার নিয়মের বশীভূত থাকবে অথবা পরিণতিস্বরূপ মৃত্যুসহ যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। তারা বিদ্রোহ করাকে মনোনীত করেছিল। (আদিপুস্তক ৩:১-৬) এটি করার দ্বারা তারা সমস্ত মনুষ্যজাতির জন্যও মৃত্যুদণ্ড এনেছিল। (রোমীয় ৫:১২) তারা অনধিকারীভাবে আমাদের নিজেদের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগকে কেড়ে নিয়েছিল। আমাদের কারও এই বিষয়ে কথা বলার কোন সুযোগ ছিল না।
কিন্তু, তার দুর্দশাপূর্ণ অবস্থা উপলব্ধি করে যিহোবা প্রেমের সাথে মরনশীল মানুষকে স্মরণে রেখেছিলেন। তাঁর পুত্র, যীশু খ্রীষ্টের বলিদানমূলক মৃত্যুর মাধ্যমে যিহোবা আমাদের প্রত্যেকের জন্য বৈধ ভিত্তি সরবরাহ করেছেন নিজেদের জন্য জীবন অথবা মৃত্যু, বাধ্যতা অথবা বিদ্রোহিতা মনোনীত করার ক্ষেত্রে। (যোহন ৩:১৬) এটি এমন যেন, যিহোবা আমাদের জন্য বিচারালয়ে আমাদের নিজেদের দিন ধার্য করেছেন—রূপকভাবে বললে এদনে ফিরে যাওয়া ও আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার এক সুযোগ। এটি হচ্ছে প্রদর্শিত প্রেমের এক সর্বমহান প্রকাশ।
কল্পনা করুন যিহোবা কত যন্ত্রণা সহ্য করেছিলেন যখন তিনি তাঁর প্রথমজাত পুত্রকে এক অপরাধীর মত তিরস্কৃত, তাড়িত এবং প্রেকবিদ্ধ হতে দেখেছিলেন। আর ঈশ্বর তা সহ্য করেছিলেন আমাদের জন্য। আমাদের প্রেম করার জন্য যিহোবা কর্তৃক গৃহীত প্রথম সক্রিয় পদক্ষেপের প্রতি আমাদের সচেতনতা অনুরূপভাবে তাঁকে প্রেম করতে আমাদের প্রবৃত্ত করা এবং তাঁকে অন্বেষণ করার জন্য আমাদের উদ্দীপ্ত করা উচিত। (যাকোব ১:১৭; ১ যোহন ৪:১৯) বাইবেল আমাদের আমন্ত্রণ জানায় “সদাপ্রভুর ও তাঁহার শক্তির অনুসন্ধান কর, নিয়ত তাঁহার শ্রীমুখের অন্বেষণ কর। স্মরণ কর তাঁহার কৃত আশ্চর্য্য কর্ম্ম সকল, তাঁহার অদ্ভুত লক্ষণ ও তাঁহার মুখের শাসন সকল।”—গীতসংহিতা ১০৫:৪, ৫.
ঈশ্বরের সাথে এক ব্যক্তিগত সংযোগ ও প্রেমপূর্ণ সম্পর্ক থাকা, তাঁর বন্ধু হওয়া অবাস্তব কিছু নয়। এটি অর্জনযোগ্য। সত্যই আমরা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেমকে মানবিক সম্পর্কের সাথে সমকক্ষরূপে বর্ণনা করতে পারি না। আমরা আমাদের সাথী, পিতামাতা, জ্ঞাতি, সন্তান অথবা বন্ধুদের প্রতি যে ভালবাসা অনুভব করে থাকি তা ঈশ্বরের প্রতি যে প্রেম তার থেকে পৃথক। (মথি ১০:৩৭; ১৯:২৯) যিহোবার প্রতি প্রেমের অন্তর্ভুক্ত হল আমাদের ভক্তি, উপাসনা এবং তাঁর প্রতি এক শর্তহীন উৎসর্গীকরণ। (দ্বিতীয় বিবরণ ৪:২৪) অন্য কোন সম্পর্ক এইপ্রকার অর্থপ্রকাশ করে না। তবুও, আমরা ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধাশীলভাবে, সম্ভ্রম সহকারে দৃঢ় ও গভীর অনুরাগ গড়ে তুলতে পারি।—গীতসংহিতা ৮৯:৭.
কয়িন ও হেবলের মত, অসিদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও, আপনার পক্ষে আপনার সৃষ্টিকর্তাকে প্রেম করা সম্ভব। কয়িন তার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, শয়তানের সাথে যোগ দিয়েছিল এবং প্রথম মানব হত্যাকারীতে পরিণত হয়েছিল। (১ যোহন ৩:১২) এর বিপরীতে, হেবলকে যিহোবা স্মরণ করবেন এক বিশ্বস্ত ও ধার্মিক ব্যক্তিরূপে ও আগত পরমদেশে জীবন দ্বারা পুরস্কৃত করবেন।—ইব্রীয় ১১:৪.
আপনার সামনেও মনোনয়নের এক বিষয় রয়েছে। ঈশ্বরের আত্মা ও তাঁর বাক্যের সহায়তায় আপনি সত্যই “তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ, ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া” ঈশ্বরকে প্রেম করতে পারবেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৫) পরিবর্তে, যিহোবা আপনাকে ক্রমাগতভাবে প্রেম করতে থাকবেন যেহেতু “যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।”—ইব্রীয় ১১:৬.
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
হেবলের উৎসর্গ ঈশ্বরের দ্বারা গৃহীত হয়েছিল