জীবন ও পরিচর্যা সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-র রেফারেন্স
ডিসেম্বর ২-৮
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | প্রকাশিত বাক্য ৭-৯
“অগণিত বিস্তর লোক যিহোবার আশীর্বাদ লাভ করে”
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৯৯৭ অনু. ১, ইংরেজি
বিস্তর লোক
তাই এই প্রশ্ন উত্থাপিত হয়: “বিস্তর লোক” যদি সেই লোকেদের বোঝায়, যারা পরিত্রাণ লাভ করার পর পৃথিবীতে থাকবে, তা হলে কীভাবে বলা যেতে পারে, তারা ‘ঈশ্বরের সিংহাসনের সম্মুখে ও মেষ শাবকের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছে’? (প্রকা ৭:৯) বাইবেলে “দাঁড়াইয়া” থাকার অবস্থাকে কখনো কখনো সেই ব্যক্তির কাছ থেকে অনুগ্রহ কিংবা অনুমোদন লাভ করার ধারণাকে বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে, যার সামনে কোনো ব্যক্তি বা দল দাঁড়িয়ে রয়েছে। (গীত ১:৫; ৫:৫; হিতো ২২:২৯; লূক ১:১৯) প্রকাশিত বাক্য বইয়ের আগের অধ্যায় বর্ণনা করে, ‘পৃথিবীর রাজারা ও মহতেরা ও সহস্রপতিগণ ও ধনবানেরা ও বিক্রমিবর্গ এবং সমস্ত দাস ও স্বাধীন লোকেরা’ “যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, তাঁহার সম্মুখ হইতে এবং মেষশাবকের ক্রোধ হইতে” নিজেদের লুকানোর চেষ্টা করছে, “কেননা তাঁহাদের ক্রোধের মহাদিন আসিয়া পড়িল, আর কে দাঁড়াইতে পারে?” (প্রকা ৬:১৫-১৭; লূক ২১:৩৬) তাই এখান থেকে বোঝা যায়, “বিস্তর লোক” সেই ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত, যাদেরকে সেই ক্রোধের সময় রক্ষা করা হবে এবং যারা ঈশ্বর ও মেষশাবকের অনুমোদন লাভ করার মাধ্যমে তাদের সামনে “দাঁড়াইয়া” থাকতে পেরেছে।
অন্তর্দৃষ্টি-২ ১১২৭ অনু. ৪, ইংরেজি
ক্লেশ
যিরূশালেম ধ্বংসের প্রায় তিন দশক পর, সমস্ত ধরনের জাতি, বংশ ও প্রজাদের নিয়ে গঠিত বিস্তর লোকের বিষয়ে প্রেরিত যোহনকে বলা হয়েছিল যে, “ইহারা সেই লোক, যাহারা সেই মহাক্লেশের মধ্য হইতে আসিয়াছে।” (প্রকা ৭:১৩, ১৪) এক বিস্তর লোক যে “সেই মহাক্লেশের মধ্য হইতে আসিয়াছে,” তা দেখায়, তারা এটা থেকে রক্ষা পেয়েছে। এই বিষয়টা প্রেরিত ৭:৯, ১০ পদে পাওয়া একই ধরনের কথা থেকেও প্রতিষ্ঠিত হয়, যেটা বলে: “ঈশ্বর [যোষেফের] সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন, এবং তাঁহার সমস্ত ক্লেশ হইতে তাঁহাকে উদ্ধার করিলেন।” যোষেফকে যে তার সমস্ত ক্লেশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল, সেটার অর্থ শুধু এই নয় যে, তাকে ক্লেশ সহ্য করার শক্তি দেওয়া হয়েছিল বরং সেইসঙ্গে তিনি যে দুর্দশা ভোগ করছিলেন, সেগুলো থেকে উদ্ধার লাভ করেছিলেন।
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৯৯৬-৯৯৭, ইংরেজি
বিস্তর লোক
তাদের শনাক্তিকরণ। ‘বিস্তর লোকের’ শনাক্তিকরণের চাবিকাঠি প্রকাশিত বাক্য বইয়ের ৭ অধ্যায়ে তাদের বিষয়ে যে-বিবরণ রয়েছে, সেটার মধ্যে এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য শাস্ত্রপদে রয়েছে। প্রকাশিত বাক্য ৭:১৫-১৭ পদ বলে, ঈশ্বর ‘ইহাদের উপরে আপন তাম্বু বিস্তার করেন,’ তাদের “জীবন-জলের উনুইয়ের” দিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ঈশ্বর “ইহাদের সমস্ত নেত্রজল” মুছে দেন। প্রকাশিত বাক্য ২১:২-৪ পদেও আমরা একইরকম বিবরণ পাই: “মনুষ্যদের সহিত ঈশ্বরের আবাস,” তিনি ‘তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দেন’ এবং ‘মৃত্যু আর নাই।’ সেখানে যে-দর্শন দেখানো হয়েছিল, সেটা স্বর্গের কোনো ব্যক্তির বিষয়ে নয়, যেখান থেকে ‘নূতন যিরূশালেম নামিয়া আসিতেছে’ বরং পৃথিবীর কোনো ব্যক্তির বিষয়ে, যিনি একজন মানুষ।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
প্রকাশিত বাক্যের পরিপূর্ণতা ১১৫ অনু. ৪, ইংরেজি
ঈশ্বরের ইস্রায়েলকে মুদ্রাঙ্কিত করা
৪ কোনো সন্দেহ নেই, এই চার জন স্বর্গদূত, স্বর্গদূতদের চারটে দলকে চিত্রিত করে। যিহোবা তাঁর নিরূপিত সময় না আসা পর্যন্ত এই স্বর্গদূতদের ব্যবহার করে বিচার কার্যকর হওয়াকে আটকে রেখেছেন। এই স্বর্গদূতেরা যখন ঈশ্বরের ক্রোধের বায়ু একসঙ্গে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম দিক থেকে ছেড়ে দেবে, তখন ধ্বংসের পরিমাণ ভয়াবহ হবে। যিহোবা চার বায়ু ব্যবহার করে যেভাবে প্রাচীন এলমীয়দের উড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং সংহার করেছিলেন, এটাও সেইরকমই হবে কিন্তু অনেক ব্যাপক আকারে। (যিরমিয় ৪৯:৩৬-৩৮) এটা হবে এক প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাস, যা সেই “ঘূর্ণ্যবায়ুর” চেয়ে অনেক বেশি ধ্বংসাত্মক, যেটার দ্বারা যিহোবা অম্মোন জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিলেন। (আমোষ ১:১৩-১৫) যিহোবার ক্রোধের দিনে, তিনি যখন চিরকালের জন্য নিজের শাসন করার অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, তখন পৃথিবীতে শয়তানের সংগঠনের কোনো অংশই দাঁড়াতে পারবে না।—গীতসংহিতা ৮৩:১৫, ১৮; যিশাইয় ২৯:৫, ৬.
অন্তর্দৃষ্টি-১ ১২, ইংরেজি
আবদ্দোন
অগাধলোকের দূত আবদ্দোন—তিনি কে?
কিন্তু প্রকাশিত বাক্য ৯:১১ পদে “আবদ্দোন” শব্দটা ‘অগাধলোকের দূতের’ নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই নামের গ্রিক রূপ হল, আপল্লুযোন যেটার অর্থ “বিনাশক।” ঊনবিংশ শতাব্দীতে এটা দেখানোর অনেক প্রচেষ্টা করা হয়েছিল যে, এই শাস্ত্রপদটা সম্রাট ভেস্পাসিয়ান, মহম্মদ ও এমনকী নেপোলিয়ানের মতো ব্যক্তি-বিশেষের প্রতি প্রযোজ্য আর এই স্বর্গদূতকে সাধারণত শয়তানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু, একটা বিষয় লক্ষ করা উচিত, যে-স্বর্গদূতের কাছে অগাধলোকের চাবি আছে, তাকে প্রকাশিত বাক্য ২০:১-৩ পদে স্বর্গ থেকে আসা ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে দেখানো হয়েছে, যার শয়তানের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই এবং যিনি শয়তানকে বেঁধে অগাধলোকে নিক্ষেপ করেন। প্রকাশিত বাক্য ৯:১১ পদের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে দি ইন্টারপ্রিটারস্ বাইবেল বলে: “কিন্তু, আবদ্দোন শয়তানের নয় বরং ঈশ্বরের স্বর্গদূত, যিনি ঈশ্বরের আদেশ অনুসারে ধ্বংসকার্য করেন।”
ইব্রীয় শাস্ত্র-এর যে অংশ সবেমাত্র বিবেচনা করা হল, সেখান থেকে এটা স্পষ্ট, শিওল ও মৃত্যুর সঙ্গে আবদ্দোনের সাদৃশ্য রয়েছে। প্রকাশিত বাক্য ১:১৮ পদে খ্রিস্ট যিশু বলেছেন: “আমি যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে জীবন্ত; আর মৃত্যুর ও পাতালের চাবি আমার হস্তে আছে।” অগাধলোকের উপর তাঁর ক্ষমতা সম্বন্ধে লূক ৮:৩১ পদে বর্ণনা করা রয়েছে। তাঁর যে ধ্বংস করার ক্ষমতা রয়েছে, এমনকী শয়তানকে ধ্বংস করারও ক্ষমতা রয়েছে, সেটার প্রমাণ ইব্রীয় ২:১৪ পদে রয়েছে, যেটি বলে যে, যিশু রক্তমাংসের ভাগী হয়েছেন, যাতে “মৃত্যু দ্বারা মৃত্যুর কর্ত্তৃত্ববিশিষ্ট ব্যক্তিকে অর্থাৎ দিয়াবলকে শক্তিহীন করেন।” প্রকাশিত বাক্য ১৯:১১-১৬ পদে স্পষ্টভাবে তাঁকে ঈশ্বর নিযুক্ত বিনাশক বা ঘাতক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।—দেখুন, আপল্লুযোন।
ডিসেম্বর ৯-১৫
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | প্রকাশিত বাক্য ১০-১২
“‘দুই সাক্ষীকে’ বধ করা হয় ও আবারও জীবিত করা হয়”
পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
প্রকাশিত বাক্য ১১ অধ্যায়ে উল্লেখিত দুই সাক্ষি কে?
প্রকাশিত বাক্য ১১:৩ পদে দুই সাক্ষির কথা বলা হয়েছে, যারা ১,২৬০ দিন পর্যন্ত ভবিষ্যদ্বাণী করবে। এরপর এই বিবরণ বলে, পশু “তাঁহাদিগকে জয় করিয়া বধ করিবে।” কিন্তু “সাড়ে তিন দিন” পর, এই দুই সাক্ষিকে জীবনে ফিরিয়ে আনা হবে আর তা দেখে প্রত্যক্ষদর্শীরা সকলে অত্যন্ত অবাক হয়ে যাবে।—প্রকা. ১১:৭, ১১.
এই দুই সাক্ষি কে? এই বিবরণের বিভিন্ন বিষয় আমাদেরকে তাদের শনাক্ত করতে সাহায্য করে। প্রথমত, আমাদেরকে বলা হয়েছে, তারা “দুই জিতবৃক্ষ ও দুই দীপবৃক্ষস্বরূপ।” (প্রকা. ১১:৪) এটা আমাদের ভাববাদী সখরিয়ের ভবিষ্যদ্বাণীতে বর্ণিত দীপবৃক্ষ এবং দুই জিত বৃক্ষের কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই জিত বৃক্ষগুলো ‘দুই তৈল-কুমারকে [‘অভিষিক্তকে,’ বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন]’ অর্থাৎ দেশাধ্যক্ষ সরুব্বাবিল ও মহাযাজক যিহোশূয়কে চিত্রিত করেছিল, “যাঁহারা সমস্ত ভূমণ্ডলের প্রভুর সম্মুখে দাঁড়াইয়া থাকেন।” (সখ. ৪:১-৩, ১৪) দ্বিতীয়ত, এই দুই সাক্ষি এমন চিহ্নকার্য সম্পাদন করছে বলে বর্ণনা করা হয়েছে, যেগুলো মোশি এবং এলিয়ের সম্পাদিত চিহ্নকার্যের মতো।—প্রকাশিত বাক্য ১১:৫, ৬ পদকে গণনাপুস্তক ১৬:১-৭, ২৮-৩৫ পদ এবং ১ রাজাবলি ১৭:১; ১৮:৪১-৪৫ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।
উল্লেখিত দুটো বিষয়ের মধ্যে কোন মিল রয়েছে? প্রতিটা ক্ষেত্রে, ঈশ্বরের সেই অভিষিক্ত ব্যক্তিদের সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, যারা কঠিন পরীক্ষার সময়ে সত্য উপাসনায় নেতৃত্ব নিয়েছিল। তাই, প্রকাশিত বাক্য বইয়ের ১১ অধ্যায়ের পরিপূর্ণতা স্বরূপ, ১৯১৪ সালে স্বর্গে ঈশ্বরের রাজ্য প্রতিষ্ঠা হওয়ার সময়ে যে-অভিষিক্ত ভাইয়েরা প্রচার কাজে নেতৃত্ব নিয়েছিল, তারা “চটপরিহিত হইয়া” সাড়ে তিন বছর প্রচার করেছিল।
চট পরিহিত অবস্থায় প্রচার করার শেষে, যখন এই অভিষিক্ত ব্যক্তিদের তুলনামূলকভাবে অল্পসময়ের জন্য অর্থাৎ রূপকভাবে বললে সাড়ে তিন দিনের জন্য জেলে বন্দি করা হয়েছিল, তখন তাদেরকে রূপকভাবে হত্যা করা হয়েছিল। যারা ঈশ্বরের লোকেদের শত্রু, তাদের চোখে সেই ব্যক্তিদের কাজ মৃত হয়ে পড়েছিল আর এর ফলে বিরোধীরা অনেক আনন্দিত হয়েছিল।—প্রকা. ১১:৮-১০.
কিন্তু, ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতা স্বরূপ, সাড়ে তিন দিনের শেষে সেই দুই সাক্ষিকে জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। এই অভিষিক্ত ব্যক্তিরা কেবল জেল থেকে ছাড়াই পায়নি, কিন্তু একইসঙ্গে যারা বিশ্বস্ত ছিল, তারা তাদের প্রভু যিশু খ্রিস্টের মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছ থেকে একটা বিশেষ নিয়োগ লাভ করেছিল। ১৯১৯ সালে, তারা সেই ব্যক্তিদের মধ্যে ছিল, যাদের “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস” হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল, যাতে সেই দাস শেষকালে ঈশ্বরের লোকেদের আধ্যাত্মিক চাহিদার যত্ন নিতে পারে।—মথি ২৪:৪৫-৪৭; প্রকা. ১১:১১, ১২.
আগ্রহজনক বিষয়টা হল, এই ঘটনাগুলোকে প্রকাশিত বাক্য ১১:১, ২ পদে এমন এক সময়ের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, যে-সময়ে আত্মিক মন্দির পরিমাপ করা হবে। মালাখি ৩ অধ্যায়ে আত্মিক মন্দির সম্বন্ধে একইরকম এক পরীক্ষার বিষয়ে উল্লেখ করা আছে। আর এই পরীক্ষার পর পরিষ্করণের সময় আসবে। (মালাখি ৩:১-৪) কতদিন ধরে এই পরীক্ষা এবং পরিষ্করণের কাজ চলেছিল? এটা ১৯১৪ সাল থেকে ১৯১৯ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত চলেছিল। প্রকাশিত বাক্য বইয়ের ১১ অধ্যায়ে উল্লেখিত ১,২৬০ দিন (৪২ মাস) এবং রূপক সাড়ে তিন দিন, উভয়ই এই সময়কালের অন্তর্ভুক্ত।
যিহোবা যে নিজস্ব প্রজাবর্গকে সৎক্রিয়ার জন্য শুচি করার উদ্দেশ্যে এই আধ্যাত্মিক পরিষ্করণের ব্যবস্থা করেছেন, সেইজন্য আমরা কতই-না আনন্দিত! (তীত ২:১৪) এ ছাড়া, যে-বিশ্বস্ত অভিষিক্ত ব্যক্তিরা সেই পরীক্ষার সময়ে নেতৃত্ব নিয়েছিল আর এভাবে রূপক দুই সাক্ষি হিসেবে সেবা করেছিল, তাদের স্থাপিত উদাহরণ আমরা উপলব্ধি করি।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
অন্তর্দৃষ্টি-২ ৮৮০-৮৮১, ইংরেজি
গোটানো পুস্তক
রূপক ব্যবহার। বাইবেলে বেশ কয়েক বার “পুস্তক” বা গোটানো পুস্তককে রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। যিহিষ্কেল ও সখরিয়, দু-জনেই দুই দিকে লেখা গোটানো পুস্তক দেখেছিলেন। যেহেতু গোটানো পুস্তকের সাধারণত এক দিকেই লেখা হতো, তাই এই গোটানো পুস্তকগুলোর দুই দিকে লেখা, সেগুলোতে লিখিত বিচারবার্তার তাৎপর্য, ব্যাপকতা ও গুরুত্বকে ইঙ্গিত করতে পারে। (যিহি ২:৯–৩:৩; সখ ৫:১-৪) প্রকাশিত বাক্য বইয়ের দর্শনে, যিনি সিংহাসনে বসে আছেন, তাঁর ডান হাতে একটা গোটানো পুস্তক রয়েছে, যেটাতে সাতটা সিলমোহর লাগানো রয়েছে, যাতে ঈশ্বরের মেষশাবক সেটা না খোলা পর্যন্ত কেউ সেটার ভিতরে লিখিত বিষয় দেখতে না পারে। (প্রকা ৫:১, ১২; ৬:১, ১২-১৪) পরবর্তীকালে একটা দর্শনে যোহনকে একটা গোটানো পুস্তক দিয়ে সেটা খেয়ে ফেলার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এটার স্বাদ ছিল মিষ্টি কিন্তু সেটা তার পেটকে তেতো করে তুলেছিল। এই গোটানো পুস্তকে সিলমোহর লাগানো ছিল না, যাতে এটার অর্থ বোঝা যায়। এটার বার্তা বুঝতে পেরেছিলেন বলে তা যোহনের কাছে “মিষ্ট” লেগেছিল কিন্তু তাকে তিক্ত বিষয়গুলো ভবিষ্যদ্বাণী করতে হয়েছিল, ঠিক যেমনটা তাকে করতে বলা হয়েছিল। (প্রকা ১০:১-১১) যিহিষ্কেলেরও একইরকম অভিজ্ঞতা হয়েছিল, যখন তাকে এমন এক গোটানো পুস্তক দেওয়া হয়েছিল, যেটার মধ্যে “বিলাপ, খেদোক্তি ও সন্তাপের কথা” ছিল।—যিহি ২:১০.
অন্তর্দৃষ্টি-২ ১৮৭ অনু.৭-৯, ইংরেজি
প্রসব বেদনা
প্রকাশিত বাক্য বইয়ে প্রেরিত যোহন দর্শনে একজন স্বর্গীয় স্ত্রীলোককে দেখেন, যিনি “ব্যথিতা হইয়া” ও ‘সন্তান প্রসবের জন্য ব্যথা খাইয়া’ চিৎকার করছেন। যে-সন্তানের জন্ম হল, তিনি “এক পুত্ত্রসন্তান . . . ; যিনি লৌহদণ্ড দ্বারা সমস্ত জাতিকে শাসন করিবেন।” নাগ তাকে গ্রাস করার প্রচেষ্টা করা সত্ত্বেও সেই স্ত্রীলোকের পুত্র “ঈশ্বরের ও তাঁহার সিংহাসনের নিকটে নীত হইলেন।” (প্রকা ১২:১, ২, ৪-৬) সেই পুত্রকে ঈশ্বরের কাছে নিয়ে আসার অর্থ, ঈশ্বর তাঁকে নিজের পুত্র হিসেবে গ্রহণ করলেন, ঠিক যেমন প্রাচীন কালে রীতি ছিল, নবজাত সন্তানকে তার বাবার কাছে নিয়ে আসা হতো, যাতে তিনি তাকে গ্রহণ করেন। (দেখুন জন্ম।) এর অর্থ, সেই “স্ত্রীলোক” ঈশ্বরের ‘স্ত্রী,’ “ঊর্দ্ধ্বস্থ যিরূশালেম,” খ্রিস্ট ও তাঁর আত্মিক ভাইদের “জননী।”—গালা ৪:২৬; ইব্রীয় ২:১১, ১২, ১৭.
অবশ্য স্বর্গীয় “স্ত্রীলোক” হলেন সিদ্ধ আর কোনো আক্ষরিক বেদনা ছাড়াই সন্তানের জন্ম হয়। তাই, প্রসব বেদনা রূপকভাবে ইঙ্গিত করে, সেই “স্ত্রীলোক” বুঝতে পারেন যে, প্রসব হওয়ার সময় কাছে এসে গিয়েছে; খুব শীঘ্র তিনি সন্তানের জন্ম দেবেন।—প্রকা ১২:২.
সেই “পুত্ত্রসন্তান” কে? তিনি “লৌহদণ্ড দ্বারা সমস্ত জাতিকে শাসন” করবেন। গীতসংহিতা ২:৬-৯ পদে ঈশ্বরের মশীহ রাজার বিষয়ে এটাই ভবিষ্যদ্বাণী করা ছিল। কিন্তু পৃথিবীতে খ্রিস্টের জন্ম, মৃত্যু ও পুনরুত্থানের অনেক পরে যোহন এই দর্শন দেখেছিলেন। তাই এই দর্শন খুব সম্ভবত, ঈশ্বরের পুত্র যিশু খ্রিস্টের হাতে মশীহ রাজ্যের জন্মকে নির্দেশ করে। যিশু পুনরুত্থিত হওয়ার পর “ঈশ্বরের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইলেন, এবং তদবধি অপেক্ষা করিতেছেন, যে পর্য্যন্ত তাঁহার শত্রুগণ তাঁহার পাদপীঠ না হয়।”—ইব্রীয় ১০:১২, ১৩; গীত ১১০:১; প্রকা ১২:১০.
ডিসেম্বর ১৬-২২
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | প্রকাশিত বাক্য ১৩-১৬
“ভয়ংকর পশুগুলোকে ভয় পাবেন না”
প্রহরীদুর্গ ১২ ৬/১৫ ৮-৯ অনু. ৬
যিহোবা হলেন “নিগূঢ়তত্ত্বপ্রকাশক”
৬ প্রথম শতাব্দীর শেষের দিকে, পুনরুত্থিত যিশু প্রেরিত যোহনকে আশ্চর্যজনক কয়েকটা ধারাবাহিক দর্শন দেখিয়েছিলেন। (প্রকা. ১:১) সেগুলোর মধ্যে একটা দর্শনে যোহন দিয়াবলকে, যাকে নাগ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, এক বিশাল সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ১২:১৮–১৩:১, ২.) এ ছাড়া, যোহন সমুদ্র থেকে এক অদ্ভুত পশুকে উঠতে এবং দিয়াবলের কাছ থেকে মহৎ কর্তৃত্ব লাভ করতে দেখেন। পরবর্তী সময়ে, একজন স্বর্গদূত যোহনকে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, একটা সিন্দূরবর্ণ পশু, যেটা প্রকাশিত বাক্য ১৩:১ পদে বর্ণিত পশুর এক প্রতিমা, সেটার সপ্ত মস্তক “সপ্ত রাজা” বা সরকারকে চিত্রিত করে। (প্রকা. ১৩:১৪, ১৫; ১৭:৩, ৯, ১০) যোহন যে-সময়ে এগুলো লিখছিলেন, সেই সময়ের মধ্যে এদের পাঁচ জন পতিত হয়ে গিয়েছিল আর এক জন ক্ষমতায় ছিল এবং আরেকজন সেই সময় “পর্যন্ত আইসে নাই।” সেই রাজ্যগুলোর বা বিশ্বশক্তিগুলোর পরিচয় কী? আসুন আমরা প্রকাশিত বাক্য বইয়ে বর্ণিত পশুর প্রত্যেকটা মস্তক সম্বন্ধে বিবেচনা করে দেখি। এ ছাড়া, আমরা দেখব যে, দানিয়েলের লেখাগুলো কীভাবে আমাদেরকে সেই রাজ্যগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটা সম্বন্ধে, এমনকী সেগুলো অস্তিত্বে আসার কয়েক শতাব্দী আগেই, গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছিল।
প্রকাশিত বাক্যের পরিপূর্ণতা ১৯৪ অনু. ২৬, ইংরেজি
দুটো ভয়ংকর পশুর মোকাবিলা করা
২৬ এটা কী হতে পারে? অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি অর্থাৎ প্রথম পশুর সপ্তম মস্তক, কিন্তু এক বিশেষ ভূমিকায়! দর্শনে একে আলাদা পশু হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা আমাদেরকে আরও স্পষ্টভাবে দেখতে সাহায্য করে যে, এটা কীভাবে একাই বিশ্বশক্তি হিসেবে কাজ করে। একই সময়ে বিদ্যমান দুটো স্বাধীন অথচ একে অপরের সহযোগী রাজনৈতিক শক্তি নিয়ে এই দুই শিং বিশিষ্ট রূপক পশু গঠিত। “মেষশাবকের ন্যায়” দুটো শিং ইঙ্গিত দেয় যে, এটা নিজে কোমল ও অহিংসক আর এটার সরকার উন্নত ধরনের এবং সমস্ত জগৎ এটার উপর আস্থা রাখবে। কিন্তু এটা এই অর্থে “নাগের ন্যায়” কথা বলে, যখন এটার শাসনকে মেনে নেওয়া হয় না, তখন এটা চাপ ও হুমকি আর এমনকী নির্মম দৌরাত্ম্যকে ব্যবহার করে থাকে। এটা ঈশ্বরের মেষশাবকের শাসনের অধীনে ঈশ্বরের রাজ্যের বশীভূত হতে উৎসাহিত করে না বরং মহানাগের অর্থাৎ শয়তানের শাসনের বশীভূত হতে উৎসাহ দেয়। এটা জাতীয়তাবাদী বিভেদ ও ঘৃণাকে তুলে ধরে, যা প্রথম পশুর উপাসনা করার দিকে পরিচালিত করে।
প্রকাশিত বাক্যের পরিপূর্ণতা ১৯৫ অনু. ৩০-৩১, ইংরেজি
দুটো ভয়ংকর পশুর মোকাবিলা করা
৩০ ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহ আমাদের সেই পশুর প্রতিমাকে শনাক্ত করতে সাহায্য করে, যেটা হল ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা প্রস্তাবিত, সমর্থিত এক সংগঠন, যেটা প্রথমে রাষ্ট্রপুঞ্জ (লিগ অব নেশন্স) নামে পরিচিত ছিল। পরে এটা প্রকাশিত বাক্য বইয়ের ১৭ অধ্যায়ে আরেকটা রূপ নিয়ে আবির্ভূত হয় আর সেটা হল, এক জীবন্ত সিন্দূরবর্ণ পশু, যেটা স্বাধীনভাবে অস্তিত্বে রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে গঠিত এই সংগঠন এই অর্থে ‘কথা কহে’ যে, এটা গর্বের সঙ্গে দাবি করে, একমাত্র এই সংগঠনই মানবজাতির জন্য শান্তি ও সুরক্ষা আনতে সক্ষম। কিন্তু আসলে এটা এমন স্থানে পরিণত হয়েছে, যেখানে সদস্য দেশগুলো একে অপরকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে ও অপমান করে। যখন কোনো দেশ অথবা লোক এটার কর্তৃত্বের সামনে মাথা নত করে না, তখন তাকে বহিষ্কার করার অথবা জীবনকে দুর্বিষহ করে ফেলার হুমকি দেয়। রাষ্ট্রপুঞ্জ সত্যিই সেই দেশগুলোকে বহিষ্কার করেছিল, যারা এটার মতাদর্শ মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছিল। মহাক্লেশের শুরু হওয়ার সময় এই পশুর প্রতিমার সামরিক “শৃঙ্গ” এক ধ্বংসাত্মক ভূমিকা পালন করবে।—প্রকাশিত বাক্য ৭:১৪; ১৭:৮, ১৬.
৩১ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে পশুর প্রতিমা—যা এখন জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসংঘ (ইউনাইটেড নেশন্স) হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে—ইতিমধ্যে অনেককে হত্যা করেছে। উদাহরণ স্বরূপ, ১৯৫০ সালে ইউএন সেনাবাহিনী উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ চলাকালীন হস্তক্ষেপ করে আর ইউএন সেনাবাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে উত্তর কোরিয়া ও চিনের প্রায় ১৪,২০,০০০ জনকে হত্যা করেছিল। একইভাবে, ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৬৪ সালের মধ্যে ইউএন সেনাবাহিনী কঙ্গোয় (কিনশাসা) সক্রিয় ছিল। এ ছাড়া, জগতের নেতারা, যাদের মধ্যে পোপ পল ৬ষ্ঠ ও জন পল ২য়, বার বার বলে এসেছেন, এই পশুর প্রতিমাই হল বিশ্বশান্তির শেষ ও একমাত্র আশা। মানবজাতি যদি পশুর প্রতিমাকে সেবা না করে এবং এটাকে প্রতিরোধ করে, তা হলে মানবজাতি নিজেকেই ধ্বংস করে ফেলবে। এভাবে রূপক অর্থে তারা সেই সমস্ত মানুষকে বধ করে, যারা সেই পশুর প্রতিমাকে গ্রহণ করতে ও সেটার ভজনা প্রত্যাখ্যান করে।—দ্বিতীয় বিবরণ ৫:৮, ৯.
প্রকাশিত বাক্য বইয়ের দ্বিতীয় বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো
১৩:১৬, ১৭. “ক্রয় বিক্রয় করিবার” মতো রোজকার কাজকর্মগুলো চালিয়ে যাওয়ার সময় আমরা হয়তো বিভিন্ন কষ্টের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, সেই পশুকে আমাদের জীবনে শাসন করতে দেওয়ার চাপের কাছে আমাদের নতিস্বীকার করা উচিত নয়। ‘হস্তে কিম্বা ললাটে সেই পশুর ছাব’ ধারণ করার অর্থ হবে, পশুটাকে আমাদের কাজকর্মকে নিয়ন্ত্রণ করতে দেওয়া অথবা আমাদের চিন্তাভাবনাকে এটার দ্বারা প্রভাবিত হতে দেওয়া।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
প্রকাশিত বাক্য বইয়ের দ্বিতীয় বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো
১৬:১৩-১৬. ‘অশুচি আত্মারা [“অনুপ্রাণিত অভিব্যক্তিগুলো,” NW]’ মন্দ দূতদের অপপ্রচারকে চিত্রিত করে, যেগুলো এই উদ্দেশ্যে করা হয়ে থাকে যে, পৃথিবীর রাজারা যাতে ঈশ্বরের রোষের সপ্ত বাটি ঢালার দ্বারা প্রভাবিত না হয় বরং এর পরিবর্তে, তারা কৌশলে যিহোবার বিরোধিতা করে।—মথি ২৪:৪২, ৪৪.
“তোমাদের মুক্তি সন্নিকট”!
৯ মহাক্লেশের সময়টা ‘রাজ্যের সুসমাচার’ প্রচার করার সময় নয়। তখন আর রাজ্যের বার্তা প্রচার করার সময় থাকবে না। বরং সেটা হবে “শেষ” উপস্থিত হওয়ার সময়! (মথি ২৪:১৪) ঈশ্বরের লোকেরা সাহসের সঙ্গে সেই স্পষ্ট বিচারের বার্তা জানাবে, যা সকল লোককে প্রভাবিত করবে। সেই বার্তা এইরকম হতে পারে, শয়তানের দুষ্ট জগৎ পুরোপুরি ধ্বংস হতে যাচ্ছে। বাইবেলে এই বার্তাকে শিলাবর্ষণের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। বাইবেল বলে: “আকাশ হইতে মনুষ্যদের উপরে বৃহৎ বৃহৎ শিলাবর্ষণ হইল, তাহার এক একটী এক এক তালন্ত পরিমিত; এই শিলা-বৃষ্টিরূপ আঘাত প্রযুক্ত মনুষ্যেরা ঈশ্বরের নিন্দা করিল; কারণ সেই আঘাত অতিশয় ভারী।”—প্রকা. ১৬:২১.
ডিসেম্বর ২৩-২৯
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | প্রকাশিত বাক্য ১৭-১৯
“ঈশ্বরের যুদ্ধ অন্যান্য সমস্ত যুদ্ধের শেষ নিয়ে আসবে”
প্রহরীদুর্গ ০৮ ৪/১ ৮ অনু. ৩-৪, ইংরেজি
আরমাগিদোন—সমস্ত যুদ্ধকে শেষ করার জন্য ঈশ্বরের যুদ্ধ
দুষ্ট লোকেরা যত দিন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে, ধার্মিক লোকেরা তত দিন পর্যন্ত শান্তি ও নিরাপত্তা উপভোগ করতে পারবে না। (হিতোপদেশ ২৯:২; উপদেশক ৮:৯) সত্যি বলতে কী, দুর্নীতি ও মন্দতা তত দিন দূর করতে পারব না, যত দিন পৃথিবীতে দুর্নীতিগ্রস্ত ও মন্দ লোকেরা থাকবে। তাই স্থায়ী শান্তি ও ন্যায়বিচার নিয়ে আসার জন্য এক মূল্য প্রদান করতে হবে—মন্দ ব্যক্তিদের দূর করতে হবে। শলোমন লিখেছেন, “দুষ্ট ধার্ম্মিকদের মুক্তির মূল্যস্বরূপ।”—হিতোপদেশ ২১:১৮.
যেহেতু ঈশ্বরই হলেন বিচারক, তাই আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, দুষ্টদের বিরুদ্ধে প্রত্যেকটা বিচার ন্যায্য হবে। অব্রাহাম জিজ্ঞেস করেছিলেন, “সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা কি ন্যায়বিচার করিবেন না?” অব্রাহাম বুঝতে পেরেছিলেন, যিহোবা সবসময় ঠিক! (আদিপুস্তক ১৮:২৫) এ ছাড়া, বাইবেল আমাদের আশ্বাস দেয়, দুষ্টদের ধ্বংস করে যিহোবা খুশি হন না; কেবলমাত্র শেষ উপায় হিসেবেই তিনি তা করে থাকেন।—যিহিষ্কেল ১৮:৩২; ২ পিতর ৩:৯.
অন্তর্দৃষ্টি-১ ১১৪৬ অনু. ১, ইংরেজি
ঘোড়া
প্রেরিত যোহন এক রূপক দর্শনে দেখেন, গৌরবান্বিত যিশু খ্রিস্ট সাদা ঘোড়ায় চড়ে আসছেন আর তাঁর সঙ্গে এক সেনাবাহিনী রয়েছে, যারা সকলে সাদা ঘোড়ায় বসে রয়েছেন। এই দর্শনের মাধ্যমে যোহনের কাছে প্রকাশ করা হয়েছিল যে, খ্রিস্ট তাঁর ঈশ্বর ও পিতা যিহোবার হয়ে সমস্ত শত্রুর বিরুদ্ধে যে-যুদ্ধ পরিচালনা করবেন, সেটা হবে ধার্মিক ও ন্যায্য যুদ্ধ। (প্রকা ১৯:১১, ১৪) এর আগে, রাজা হিসেবে খ্রিস্টের পদক্ষেপ নেওয়ার ও এরপর যে-বিপর্যয়গুলো আসে, সেগুলো বিভিন্ন ঘোড়া ও তাদের আরোহীদের দ্বারা চিত্রিত করা হয়েছে।—প্রকা ৬:২-৮.
প্রকাশিত বাক্যের পরিপূর্ণতা ২৮৬ অনু. ২৪, ইংরেজি
যোদ্ধা ও রাজা আরমাগিদোনের যুদ্ধে জয় লাভ করেন
২৪ সমুদ্র থেকে উঠে আসা সাতটা মাথা ও দশটা শিং বিশিষ্ট পশু, যা শয়তানের রাজনৈতিক সংগঠনকে চিত্রিত করে, সেটাকে এবং এটার সঙ্গে সঙ্গে মিথ্যা ভাববাদীকে অর্থাৎ সপ্তম বিশ্বশক্তিকে পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। (প্রকাশিত বাক্য ১৩:১, ১১-১৩; ১৬:১৩) এটাকে ‘জীবন্ত’ অবস্থায় অর্থাৎ পৃথিবীতে সংগঠিতভাবে ঈশ্বরের লোকেদের বিরোধিতা করার সময়ই তাদের “‘অগ্নি’ হ্রদে” নিক্ষেপ করা হবে। এটা কি কোনো আক্ষরিক অগ্নিময় হ্রদ? না, ঠিক যেমন সেই পশু ও ভাববাদীরাও আক্ষরিক নয়। এটা হল সম্পূর্ণ ও শেষ ধ্বংসের চিহ্ন, যেখান থেকে কেউ ফিরে আসতে পারে না। এইখানেই পরবর্তীকালে মৃত্যু ও পাতালকে এবং সেইসঙ্গে দিয়াবলকে নিক্ষেপ করা হবে। (প্রকাশিত বাক্য ২০:১০, ১৪) নিশ্চিতভাবেই, এটা নরক নয়, যেখানে মন্দ লোকেদের চিরকাল ধরে যন্ত্রণা কষ্ট দেওয়া হবে কারণ এই ধরনের কোনো স্থান সম্বন্ধে চিন্তা করাও যিহোবার কাছে ঘৃণ্য বিষয়।—যিরমিয় ১৯:৫; ৩২:৩৫; ১ যোহন ৪:৮, ১৬.
প্রকাশিত বাক্যের পরিপূর্ণতা ২৮৬ অনু. ২৫, ইংরেজি
যোদ্ধা ও রাজা আরমাগিদোনের যুদ্ধে জয় লাভ করেন
২৫ অন্য সকলে, যারা সরকারের সঙ্গে সরাসরি জড়িত নয় কিন্তু তবুও এই দুর্নীতিগ্রস্ত মানবসমাজের এক অসংশোধনীয় অংশ, তারাও ‘সেই অশ্বারোহী ব্যক্তির মুখ হইতে নির্গত তরবারি দ্বারা হত হয়।’ যিশু তাদের মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য হিসেবে ঘোষণা করবেন। যেহেতু তাদের সময়ে অগ্নিহ্রদের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়নি, তাই আমরা কি এমনটা আশা করতে পারি যে, তারা পুনরুত্থিত হবে? কোথাও এই কথা বলা হয়নি যে, যিহোবা বিচার অনুসারে সেই সময় যাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে, তারা পুনরুত্থিত হবে। যিশু নিজে যেমন বলেছিলেন, যারা ‘মেষ’ নয়, তারা সকলে “দিয়াবলের ও তাহার দূতগণের জন্য যে অনন্ত অগ্নি প্রস্তুত করা গিয়াছে, তাহার মধ্যে” অর্থাৎ “অনন্ত দণ্ডে” যাবে। (মথি ২৫:৩৩, ৪১, ৪৬) এভাবে “ভক্তিহীন মনুষ্যদের বিচার ও বিনাশের দিন,” এটার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাবে।—২ পিতর ৩:৭; নহূম ১:২, ৭-৯; মালাখি ৪:১.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
প্রকাশিত বাক্যের পরিপূর্ণতা ২৪৭-২৪৮ অনু. ৫-৬, ইংরেজি
এক অপূর্ব রহস্যের সমাধান হয়
৫ সেই ‘পশু ছিল।’ হ্যাঁ, এটা ১৯২০ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জ (লিগ অব নেশন্স) হিসেবে অস্তিত্বে ছিল এবং ৬৩টা দেশ এটার অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে জাপান, জার্মানি ও ইটালি তাদের সদস্যপদ প্রত্যাহার করে এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে বের করে দেওয়া হয়। ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জার্মানির নাৎসি শাসক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করে। জগতের শান্তি বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়ার পর রাষ্ট্রপুঞ্জ (লিগ অব নেশন্স) প্রায় অগাধলোকে বা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় চলে যায়। ১৯৪২ সালের মধ্যে এটা বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই সময়ের আগে কিংবা পরে নয়, কিন্তু ঠিক সেই কঠিন সময়েই যিহোবা তাঁর লোকেদের এই দর্শনের পূর্ণাঙ্গ অর্থ বুঝতে সাহায্য করেছেন! নতুন জগৎ ঈশতান্ত্রিক সম্মেলন-এ ভাই এন এইচ নর ভবিষ্যদ্বাণীর আলোকে ঘোষণা করতে পেরেছিলেন, ‘সেই পশু এখন নাই।’ এরপর তিনি জিজ্ঞেস করেন, “রাষ্ট্রপুঞ্জ (লিগ অব নেশন্স) কি গর্তেই থাকবে?” প্রকাশিত বাক্য ১৭:৮ পদ উদ্ধৃতি করে তিনি উত্তর দেন: “জগতের দেশগুলোর সংগঠন আবার উঠবে।” আর সেটাই ঘটেছে, যা যিহোবার ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্যের সত্যতাকে তুলে ধরে!
অগাধলোক থেকে উঠে আসা
৬ সেই সিন্দূরবর্ণ পশু সত্যিই অগাধলোক থেকে উঠে আসে। ১৯৪৫ সালের ২৬ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোয় ৫০টা দেশ ভোট দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চার্টার অব দি ইউনাইটেড নেশন্স গ্রহণ করেছিল। সেই সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল “আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা।” লিগ অব নেশন্স ও ইউনাইটেড নেশন্স-এর মধ্যে অনেক সাদৃশ্য ছিল। এই বিষয়ে দ্যা ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া বলে: “কোনো কোনো দিক দিয়ে ইউনাইটেড নেশন্স প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত লিগ অব নেশন্স-এর মতোই। . . . যে-দেশগুলো নিয়ে ইউনাইটেড নেশন্স গঠিত হয়েছিল, সেগুলোর অধিকাংশ দেশ নিয়েই লিগ অব নেশন্স–ও গঠিত। লিগ অব নেশন্স-এর মতোই ইউনাইটেড নেশন্স-ও বিভিন্ন দেশের মধ্যে শান্তি স্থাপন করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ইউনাইটেড নেশন্স-এর বিভিন্ন কমিটির কাজও লিগ অব নেশন্স-এর কমিটিগুলোর মতোই।” তাই, ইউনাইটেড নেশন্স হল, আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠা সেই সিন্দূরবর্ণ পশু। এটার সদস্য সংখ্যা ১৯০, যা লিগ অব নেশন্স-এর সদস্য সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি, যেটা ছিল মাত্র ৬৩; এ ছাড়া, এটার দায়িত্বও এর পূর্বসূরির চেয়ে অনেক বেশি।
প্রহরীদুর্গ ১২ ৬/১৫ ১৮ অনু. ১৭
“যাহা যাহা শীঘ্র ঘটিবে,” তা যিহোবা প্রকাশ করেন
১৭ কিন্তু, মিথ্যা ধর্ম এমনি এমনিই বিলুপ্ত হয়ে যাবে না। বেশ্যা প্রবল শক্তির অধিকারী থাকবে এবং যে-রাজারা ক্ষমতায় রয়েছে, তাদের হৃদয়ে ঈশ্বর প্রবৃত্তি না দেওয়া পর্যন্ত তাদেরকে তার ইচ্ছার প্রতি বশীভূত রাখার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ১৭:১৬, ১৭.) যিহোবা খুব শীঘ্র রাষ্ট্রসংঘের দ্বারা চিত্রিত শয়তানের ব্যবস্থার রাজনৈতিক সংগঠনকে পরিচালিত করবেন, যেন তা মিথ্যা ধর্মকে আক্রমণ করে। তারা এর প্রভাব দূর করে দেবে এবং এর ধনসম্পদ লুটে নেবে। কয়েক দশক আগে এইরকম এক ঘটনাকে অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল। আজকে, এই বেশ্যা সিন্দূরবর্ণ পশুর ওপর টলায়মান অবস্থায় আছে। তা সত্ত্বেও, সে তার আসন থেকে ধীরে ধীরে পিছলে পড়ে যাবে না। তার পতন হবে আকস্মিক এবং ভয়ানক।—প্রকা. ১৮:৭, ৮, ১৫-১৯.
ডিসেম্বর ৩০–জানুয়ারি ৫
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | প্রকাশিত বাক্য ২০-২২
“দেখ, আমি সকলই নূতন করিতেছি”
প্রকাশিত বাক্যের পরিপূর্ণতা ৩০১ অনু. ২, ইংরেজি
এক নতুন আকাশ ও এক নতুন পৃথিবী
২ যোহনের সময়ের চেয়ে শত শত বছর আগে যিহোবা যিশাইয়কে বলেছিলেন: “কারণ দেখ, আমি নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর সৃষ্টি করি; এবং পূর্ব্বে যাহা ছিল, তাহা স্মরণে থাকিবে না, আর মনে পড়িবে না।” (যিশাইয় ৬৫:১৭; ৬৬:২২) এই ভবিষ্যদ্বাণী সেই সময় প্রাথমিকভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল, যখন বাবিলে ৭০ বছর নির্বাসিত থাকার পর খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৭ সালে বিশ্বস্ত যিহুদিরা যিরূশালেমে ফিরে এসেছিল। সেই পুনর্স্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে তারা এক “নূতন আকাশমণ্ডলের” অর্থাৎ নতুন সরকারের অধীনে এক ‘নূতন পৃথিবী’ অর্থাৎ এক শুদ্ধ সমাজ গড়ে তুলেছিল। কিন্তু প্রেরিত পিতর এই ভবিষ্যদ্বাণীর আরেকটা পূর্ণতা সম্বন্ধে উল্লেখ করে বলেছিলেন: “কিন্তু তাঁহার প্রতিজ্ঞা অনুসারে আমরা এমন নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর অপেক্ষায় আছি, যাহার মধ্যে ধার্ম্মিকতা বসতি করে।” (২ পিতর ৩:১৩) যোহন দেখান যে, এই ভবিষ্যদ্বাণী প্রভুর দিনে পূর্ণ হয়েছে। “প্রথম আকাশ ও প্রথম পৃথিবী,” যেটা হল শয়তানের বিধিব্যবস্থা ও সেইসঙ্গে শয়তান ও মন্দদূতদের প্রভাবাধীনে থাকা সরকারগুলো লুপ্ত হবে। অশান্ত “সমুদ্র” অর্থাৎ মন্দ ও বিদ্রোহী মানবজাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে। আর এটার জায়গায় “নূতন আকাশমণ্ডল ও নূতন পৃথিবী” আসবে অর্থাৎ এক নতুন সরকারের—ঈশ্বরের রাজ্যের—অধীনে এক পার্থিব সমাজ হবে।—তুলনা করুন, প্রকাশিত বাক্য ২০:১১.
প্রহরীদুর্গ ১৪ জানুয়ারি-মার্চ ১১ অনু. ২-৪
“দেখ, আমি সকলই নূতন করিতেছি”
“[ঈশ্বর] তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন।” (প্রকাশিত বাক্য ২১:৪) কোন ধরনের নেত্রজল বা চোখের জল মুছে দেওয়া হবে? আনন্দাশ্রু অথবা আমাদের চোখকে সুরক্ষা করার জন্য যে-জলীয় অংশ থাকে, তা নয়। ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা সেই অশ্রুকে নির্দেশ করে, যা দুঃখকষ্ট ও বেদনার কারণে আসে। ঈশ্বর শুধু বাইরে থেকে মানুষের অশ্রু মুছে দেবেন না; বরং তিনি অনাকাঙ্ক্ষিত অশ্রুর মূল কারণ অর্থাৎ দুঃখকষ্ট ও বেদনা সরিয়ে ফেলার মাধ্যমে, তা পুরোপুরি মুছে দেবেন।
“মৃত্যু আর হইবে না।” (প্রকাশিত বাক্য ২১:৪) মৃত্যু ছাড়া আর কোন শত্রুর কারণেই-বা মানুষকে এত বেশি চোখের জল ফেলতে হয়েছে? যিহোবা বাধ্য মানুষদের মৃত্যুর কবল থেকে মুক্ত করবেন। কীভাবে? মৃত্যুর আসল কারণ দূর করে দেওয়ার মাধ্যমে আর তা হল: আদমের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাপ। (রোমীয় ৫:১২) যিহোবা, যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ভিত্তিতে বাধ্য মানুষদের সিদ্ধ অবস্থায় নিয়ে যাবেন। এরপর, শেষ শত্রু অর্থাৎ মৃত্যুকে “ধ্বংস করা হবে।” (১ করিন্থীয় ১৫:২৬, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন) তখন বিশ্বস্ত মানবজাতি নিখুঁত স্বাস্থ্য নিয়ে চিরকাল বেঁচে থাকতে সক্ষম হবে আর এটাই ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ছিল।
“ব্যথাও আর হইবে না।” (প্রকাশিত বাক্য ২১:৪) কোন ধরনের ব্যথা আর থাকবে না? পাপ এবং অসিদ্ধতার কারণে মানুষকে যে-মানসিক, আবেগগত ও শারীরিক ব্যথা ভোগ করতে হয়, যা মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে, সেগুলো আর থাকবে না।
যিহোবা, সত্যের ঈশ্বর
১৪ যিহোবা তাঁর বাক্যে আমাদের যা বলেন সেটাকে আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। তিনি নিজের সম্বন্ধে যা বলেন তিনি ঠিক তা-ই এবং তিনি যা বলেন ঠিক তা-ই করবেন। ঈশ্বরের উপর নির্ভর করার প্রতিটা কারণ আমাদের রয়েছে। আমরা এই কথা বিশ্বাস করতে পারি, যখন যিহোবা বলেন যে, “যাহারা ঈশ্বরকে জানে না ও যাহারা আমাদের প্রভু যীশুর সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হয় না, তাহাদিগকে সমুচিত দণ্ড দিবেন।” (২ থিষলনীকীয় ১:৮) আমরা যিহোবার এই কথাগুলোও বিশ্বাস করতে পারি, যখন তিনি বলেন যে, যারা ধার্মিকতা অনুধাবন করে তাদের তিনি ভালোবাসেন, যারা বিশ্বাস অনুশীলন করে তাদের তিনি অনন্তজীবন দেবেন এবং ব্যথা, যন্ত্রণা এবং এমনকী মৃত্যুকে তিনি নির্মূল করবেন। যিহোবা এই শেষ প্রতিজ্ঞার নির্ভরযোগ্যতার উপর জোর দিয়েছিলেন, প্রেরিত যোহনকে এই নির্দেশনা দেওয়ার দ্বারা: “লিখ, কেননা এ সকল কথা বিশ্বসনীয় ও সত্য।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৪, ৫; হিতোপদেশ ১৫:৯; যোহন ৩:৩৬.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
অন্তর্দৃষ্টি-২ ২৪৯ অনু. ২, ইংরেজি
জীবন
ঈশ্বর আদমকে যে-আজ্ঞা দিয়েছিলেন, তাতে তিনি বুঝিয়েছিলেন যে, আদম যদি তাঁর বাধ্য হন, তা হলে তিনি মারা যাবেন না। (আদি ২:১৭) বাধ্য মানবজাতির প্রতিও তা-ই হবে, যখন মানুষের শেষ শত্রু মৃত্যুকে দূর করে দেওয়া হবে, তখন মানুষের দেহে আর কোনো পাপ থাকবে না, যা মৃত্যু ডেকে আনবে। তারা আর কখনোই মারা যাবে না। (১ করি ১৫:২৬) খ্রিস্টের রাজত্বের শেষে মৃত্যুকে দূর করা হবে আর প্রকাশিত বাক্য বই দেখায়, তাঁর রাজত্ব ১,০০০ বছর দীর্ঘ হবে। যারা খ্রিস্টের সঙ্গে রাজা ও যাজক হবে, তাদের বিষয়ে এখানে বলা আছে যে, তারা “জীবিত হইয়া সহস্র বৎসর খ্রীষ্টের সহিত রাজত্ব করিল।” “ঐ সহস্র বৎসর সম্পূর্ণ না হইলে” যে-“অবশিষ্ট মৃতেরা” জীবিত হবে না, তারা নিশ্চয়ই সেই ব্যক্তিরা, যারা হাজার বছরের শেষে তবে শয়তান অগাধলোক থেকে মুক্ত হওয়ার এবং মানবজাতির উপর চূড়ান্ত পরীক্ষা নিয়ে আসার আগে জীবিত থাকবে। হাজার বছরের শেষে পৃথিবীর মানুষেরা সিদ্ধতায় পৌঁছাবে, ঠিক যেমন পাপ করার আগে আদম ও হবা ছিলেন। সেই সময় তারা প্রকৃতপক্ষে সিদ্ধ জীবন উপভোগ করবে। এরপর শয়তানকে যখন কিছু সময়ের জন্য অগাধলোক থেকে মুক্ত করা হবে, তখন যারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে, তারা চিরকাল ধরে সেই জীবন উপভোগ করবে।—প্রকা ২০:৪-১০.
অন্তর্দৃষ্টি-২ ১৮৯-১৯০, ইংরেজি
অগ্নিহ্রদ
এই শব্দটা কেবলমাত্র প্রকাশিত বাক্য বইয়েই পাওয়া যায় আর এটা পুরোপুরিভাবে রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। বাইবেল নিজেই এই প্রতীকের অর্থ ব্যাখ্যা করে, যখন এটি বলে: “তাহাই, অর্থাৎ সেই অগ্নিহ্রদ, দ্বিতীয় মৃত্যু।”—প্রকাশিত বাক্য ২০:১৪; ২১:৮.
এই অগ্নিহ্রদের রূপক বৈশিষ্ট্য আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যখন আমরা প্রকাশিত বাক্য বইয়ে যে যে জায়গায় এটার উল্লেখ রয়েছে, সেগুলোর প্রসঙ্গ বিবেচনা করি। এই বইয়ে বলা হয়েছে, মৃত্যুকে অগ্নিহ্রদে নিক্ষেপ করা হবে। (প্রকা ১৯:২০; ২০:১৪) স্পষ্টতই, মৃত্যুকে আক্ষরিকভাবে আগুনে পোড়ানো যায় না। শুধু তা-ই নয়, শয়তান, যে একজন অদৃশ্য আত্মিক প্রাণী, তাকে এই হ্রদে নিক্ষেপ করা হবে। আত্মিক প্রাণী হওয়ায় আক্ষরিক আগুন দ্বারা তার ক্ষতি করা সম্ভব নয়।—প্রকা ২০:১০; তুলনা করুন, যাত্রা ৩:২ ও বিচার ১৩:২০.
যেহেতু অগ্নিহ্রদ ‘দ্বিতীয় মৃত্যুকে’ চিত্রিত করে এবং যেহেতু প্রকাশিত বাক্য ২০:১৪ পদ বলে যে, ‘মৃত্যু ও পাতালকে’ সেখানে নিক্ষেপ করা হবে, তাই এটা স্পষ্ট যে, এই হ্রদ আদমের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে আসা মৃত্যুকে চিত্রিত করতে পারে না (রোমীয় ৫:১২), আর এটা পাতালকেও (কবর) বোঝায় না। অতএব, এটা নিশ্চয়ই অন্য কোনো ধরনের মৃত্যুর প্রতীক, এমন কিছু যেখান থেকে ফিরে আসা যায় না, কারণ কোথাও এমনটা বলা নেই যে, “হ্রদ” তার মধ্যে থাকা লোকেদের ফিরিয়ে দিচ্ছে, যেভাবে আদমজাত মৃত্যু ও পাতাল (কবর) ফিরিয়ে দিচ্ছে। (প্রকা ২০:১৩) তাই, যাদের নাম “জীবনপুস্তুকে” লেখা নেই অর্থাৎ যারা অনুতাপহীনভাবে ঈশ্বরের শাসন করার অধিকারের বিরোধিতা করে থাকে, তাদের অগ্নিহ্রদে নিক্ষেপ করা হবে, যেটার অর্থ চিরকালের জন্য ধ্বংস বা দ্বিতীয় মৃত্যু।—প্রকা ২০:১৫.