যিহোবা তাঁর লোকেদের জীবনের পথে নির্দেশনা দেন
“এই পথ, তোমরা এই পথেই চল।”—যিশা. ৩০:২১.
১, ২. (ক) কোন সতর্কবাণীর কারণে অনেক লোকের জীবন রক্ষা পেয়েছে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) (খ) ঈশ্বরের লোকেরা কোন নির্দেশনা লাভ করে, যা তাদের জীবন রক্ষা করতে পারে?
“থামুন, দেখুন, শুনুন।” ১০০ বছরেরও বেশি আগে, উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন রেলওয়ে ক্রসিংয়ে বড়ো বড়ো সাইনবোর্ডে এই শব্দগুলো লেখা হয়েছিল। কেন? এগুলো লেখা হয়েছিল, যাতে দ্রুতবেগে ছুটে আসা রেলগাড়ির সঙ্গে অন্যান্য গাড়ির ধাক্কা না লাগে। এসব সাইনবোর্ডের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার ফলে অনেক লোকের জীবন রক্ষা পেয়েছে।
২ যিহোবা শুধু সতর্কীকরণ চিহ্ন দেন না, তিনি এর চেয়েও বেশি কিছু করেন। রূপকভাবে বললে, তিনি তাঁর লোকেদের সামনে দাঁড়িয়ে তাদেরকে বিপদ থেকে দূরে রাখেন এবং অনন্তজীবনের দিকে নির্দেশনা দেন। এ ছাড়া, তিনি হলেন একজন প্রেমময় মেষপালকের মতো, যিনি তাঁর মেষদের উপযুক্ত নির্দেশনা দেন ও তাদের সতর্ক করেন, যাতে তারা বিপদজনক পথ এড়িয়ে চলতে পারে।—পড়ুন, যিশাইয় ৩০:২০, ২১.
যিহোবা তাঁর লোকেদের নির্দেশনা দিয়ে এসেছেন
৩. কীভাবে মানবপরিবার এমন এক পথে চলে গিয়েছিল, যা মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করে?
৩ মানব ইতিহাসের শুরু থেকে, যিহোবা মানুষকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়ে এসেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এদন উদ্যানে ঈশ্বর স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন, যা মানবপরিবারকে অনন্তজীবন ও সুখের পথে পরিচালিত করতে পারত। (আদি. ২:১৫-১৭) কিন্তু, আদম-হবা তাদের প্রেমময় পিতার নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। হবা সেই উপদেশ শুনেছিলেন, যা কিনা একটা সাপের কাছ থেকে এসেছে বলে মনে হয়েছিল। আর আদম পরে তার স্ত্রীর কথা শুনেছিলেন। এর ফল কী হয়েছিল? তারা দু-জনেই কষ্টভোগ করেছিলেন এবং পুনরুত্থানের আশা ছাড়াই মারা গিয়েছিলেন। এ ছাড়া, তাদের অবাধ্যতার কারণে পুরো মানবপরিবার এমন এক পথে চলে গিয়েছিল, যা মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করে।
৪. (ক) কেন জলপ্লাবনের পর আরও নির্দেশনা প্রয়োজন হয়েছিল? (খ) নতুন পরিস্থিতির কারণে ঈশ্বরের কোন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছিল?
৪ ঈশ্বর নোহকে জীবনরক্ষাকারী নির্দেশনা দিয়েছিলেন। জলপ্লাবনের পর, যিহোবা মানুষকে রক্ত ভোজন অথবা পান না করার আদেশ দিয়েছিলেন। কেন এই আদেশের প্রয়োজন ছিল? কারণ যিহোবা সেই সময় থেকে তাদেরকে মাংস খাওয়ার অনুমতি দিতে যাচ্ছিলেন। তাই, সেই নতুন পরিস্থিতির কারণে তাদের এই নতুন নির্দেশনা প্রয়োজন হয়েছিল: “সপ্রাণ অর্থাৎ সরক্ত মাংস ভোজন করিও না।” (আদি. ৯:১-৪) এই আজ্ঞা থেকে আমরা জীবন সম্বন্ধে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে পারি, যে-জীবন তাঁরই দান। যেহেতু তিনি হলেন আমাদের সৃষ্টিকর্তা ও জীবনদাতা, তাই জীবন সম্বন্ধে বিভিন্ন আইন দেওয়ার অধিকার তাঁর রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি আদেশ দিয়েছিলেন, যেন মানুষেরা সহমানবকে হত্যা না করে। ঈশ্বর জীবন ও রক্তকে পবিত্র হিসেবে দেখেন আর যে-ব্যক্তি এগুলোর অপব্যবহার করবে, তাকে তিনি শাস্তি দেবেন।—আদি. ৯:৫, ৬.
৫. এখন আমরা কী বিবেচনা করব এবং কেন?
৫ নোহের দিনের পরও, ঈশ্বর ক্রমাগত তাঁর লোকেদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তিনি যেভাবে তাদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন, সেটার কিছু উদাহরণ আমরা এই প্রবন্ধে বিবেচনা করব। এই আলোচনা নতুন জগতে যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করার ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্তকে দৃঢ় করবে।
নতুন জাতি, নতুন নির্দেশনা
৬. কেন ঈশ্বরের লোকেদের জন্য মোশির মাধ্যমে দেওয়া ব্যবস্থার বাধ্য হওয়া প্রয়োজন ছিল আর ইস্রায়েলীয়দের কেমন মনোভাব দেখাতে হতো?
৬ মোশির দিনে, যিহোবা তাঁর লোকেদের তাদের আচরণ ও উপাসনা সম্বন্ধে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কেন? কারণ আবারও পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছিল। দু-শো বছরেরও বেশি সময় ধরে ইস্রায়েলীয়রা মিশরে দাস হিসেবে জীবনযাপন করেছিল। সেখানে তাদের চারপাশের লোকেরা মৃত ব্যক্তিদের উপাসনা করত, প্রতিমাপূজা করত এবং ঈশ্বরকে অসম্মান করে এমন অন্যান্য বিষয়ও করত। মিশরের দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার পর ঈশ্বরের লোকেদের নতুন নির্দেশনা প্রয়োজন হয়েছিল। তারা এমন এক জাতি হয়ে উঠবে, যে-জাতি শুধুমাত্র যিহোবার ব্যবস্থা পালন করে। কিছু তথ্যগ্রন্থ বলে, “ব্যবস্থা” হিসেবে অনুবাদিত ইব্রীয় শব্দটা এমন একটা শব্দের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যেটার অর্থ “নির্দেশ করা, পরিচালনা করা, শিক্ষা দেওয়া।” ব্যবস্থা ইস্রায়েলীয়দের তাদের চারপাশের জাতিগুলোর অনৈতিকতা ও মিথ্যা ধর্ম থেকে সুরক্ষা করেছিল। ইস্রায়েলীয়রা যখন ঈশ্বরের কথা শুনেছিল, তখন তারা তাঁর আশীর্বাদ লাভ করেছিল। কিন্তু তারা যখন তাঁকে অবজ্ঞা করেছিল, তখন তারা চরম পরিণতি ভোগ করেছিল।—পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:১, ২, ১৫.
৭. (ক) কেন যিহোবা তাঁর লোকেদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তা ব্যাখ্যা করুন। (খ) কীভাবে ব্যবস্থা ইস্রায়েলীয়দের জন্য এক পরিচালক দাস হয়ে উঠেছিল?
৭ আরেকটা কারণে নতুন নির্দেশনা প্রয়োজন ছিল। ব্যবস্থা ইস্রায়েলীয়দেরকে যিহোবার উদ্দেশ্যের একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার জন্য অর্থাৎ মশীহ যিশু খ্রিস্টের আসার বিষয়ে প্রস্তুত করেছিল। ব্যবস্থা ইস্রায়েলীয়দের মনে করিয়ে দিয়েছিল, তারা অসিদ্ধ। ব্যবস্থা তাদের এটাও বুঝতে সাহায্য করেছিল, তাদের মুক্তির মূল্য অর্থাৎ এমন এক সিদ্ধ বলিদান প্রয়োজন, যা তাদের পাপ পুরোপুরিভাবে দূর করে দেবে। (গালা. ৩:১৯; ইব্রীয় ১০:১-১০) এ ছাড়া, ব্যবস্থা মশীহের বংশধারাকে সুরক্ষা করেছিল এবং যখন মশীহ এসেছিলেন, তখন তাঁকে শনাক্ত করার ক্ষেত্রে ইস্রায়েলীয়দের সাহায্য করেছিল। হ্যাঁ, ব্যবস্থা এক সাময়িক নির্দেশক বা ‘পরিচালক দাসের’ মতো ছিল, যা লোকেদেরকে খ্রিস্টের দিকে পরিচালিত করেছিল।—গালা. ৩:২৩, ২৪.
৮. মোশির ব্যবস্থার পিছনে যে-নীতিগুলো রয়েছে, সেগুলোর দ্বারা কেন আমাদের পরিচালিত হওয়া উচিত?
৮ খ্রিস্টান হিসেবে আমরাও সেইসমস্ত নির্দেশনা থেকে উপকার লাভ করতে পারি, যেগুলো যিহোবা তাঁর ব্যবস্থার মধ্যে দিয়েছিলেন। কীভাবে? আমরা একটু থামতে পারি এবং ব্যবস্থার পিছনে যে-নীতিগুলো রয়েছে, সেগুলো দেখতে পারি। যদিও আমরা এখন সেইসমস্ত আইনের অধীনে নেই, কিন্তু তারপরও আমরা রোজকার জীবনে ও যিহোবার উপাসনার ক্ষেত্রে আমাদের নির্দেশক হিসেবে সেগুলোর মধ্য থেকে বিভিন্ন আইনের উপর নির্ভর করতে পারি। তিনি বাইবেলের মধ্যে এসব আইন লিখে রেখেছেন, যাতে আমরা সেগুলো থেকে শিখতে পারি, সেগুলোর পিছনে যে-নীতিগুলো রয়েছে, সেই নীতিগুলোর দ্বারা পরিচালিত হতে পারি এবং যিশু সেই ব্যবস্থার চেয়ে আরও মহৎ যে-বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন, সেটার জন্য কৃতজ্ঞ হতে পারি। যিশু কী বলেছিলেন, তা শুনুন: “তোমরা শুনিয়াছ, উক্ত হইয়াছিল, ‘তুমি ব্যভিচার করিও না’। কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে কেহ কোন স্ত্রীলোকের প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাত করে, সে তখনই মনে মনে তাহার সহিত ব্যভিচার করিল।” তাই, আমাদের যে শুধুমাত্র ব্যভিচার এড়িয়ে চলতে হবে এমন নয়, কিন্তু সেইসঙ্গে অনৈতিক চিন্তাভাবনা ও আকাঙ্ক্ষা প্রত্যাখ্যান করতে হবে।—মথি ৫:২৭, ২৮.
৯. কোন নতুন পরিস্থিতিগুলোর কারণে ঈশ্বরের কাছ থেকে নতুন নির্দেশনা প্রয়োজন হয়েছিল?
৯ যিশু মশীহ হিসেবে আসার পর, যিহোবা নতুন নির্দেশনা দিয়েছিলেন এবং তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছিলেন। কেন তা প্রয়োজন ছিল? ৩৩ খ্রিস্টাব্দে যিহোবা ইস্রায়েল জাতিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং তাঁর লোক হওয়ার জন্য খ্রিস্টান মণ্ডলীকে মনোনীত করেছিলেন। তাই, ঈশ্বরের লোকেরা আরও এক বার নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল।
আত্মিক ইস্রায়েলের জন্য নির্দেশনা
১০. কেন খ্রিস্টান মণ্ডলীকে বিভিন্ন নতুন আইন দেওয়া হয়েছিল আর কীভাবে সেগুলো ইস্রায়েলীয়দের দেওয়া আইনগুলো থেকে আলাদা ছিল?
১০ যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের কীভাবে জীবনযাপন করতে হবে ও তাঁর উপাসনা করতে হবে, সেই বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার জন্য মোশির ব্যবস্থা দিয়েছিলেন। প্রথম শতাব্দীর শুরু থেকে ঈশ্বরের লোকেরা কেবল একটা জাতির অন্তর্ভুক্ত ছিল না, বরং তারা বিভিন্ন জাতি ও পটভূমি থেকে এসেছিল। সেই সময় থেকে তাদের আত্মিক ইস্রায়েল বলা হয়। এই ব্যক্তিরা খ্রিস্টান মণ্ডলী গঠন করেছিল আর এক নতুন চুক্তির অধীনে এসেছিল। কীভাবে জীবনযাপন করতে হবে ও যিহোবার উপাসনা করতে হবে, সেই বিষয়ে তিনি তাদের নতুন বা আরও বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সত্যিই, “ঈশ্বর মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” ইজি-টু-রিড ভারশন] করেন না; কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে ও ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়।” (প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫) মোশির ব্যবস্থা মাংসিক ইস্রায়েলকে প্রতিজ্ঞাত দেশের দিকে পরিচালিত করেছিল আর এই ব্যবস্থা পাথরের ফলকের উপর লিখিত ছিল। কিন্তু, আত্মিক ইস্রায়েলের জন্য দেওয়া “খ্রীষ্টের ব্যবস্থা” মূলত হৃদয়ে লিখিত নীতিগুলোর উপর ভিত্তি করে ছিল। খ্রিস্টানরা যেখানেই বাস করুক না কেন, এই ব্যবস্থা তাদের নির্দেশনা দিত ও তারা সেগুলো থেকে উপকৃত হতো।—গালা. ৬:২.
১১. খ্রিস্টীয় জীবনের দুটো দিক কী, যেগুলো “খ্রীষ্টের ব্যবস্থা” দ্বারা প্রভাবিত হয়?
১১ যিশুর মাধ্যমে পাওয়া যিহোবার নির্দেশনা থেকে আত্মিক ইস্রায়েল অনেক উপকৃত হয়েছিল। নতুন চুক্তি প্রবর্তন করার ঠিক আগে, যিশু দুটো গুরুত্বপূর্ণ আজ্ঞা দিয়েছিলেন। এগুলোর মধ্যে একটা আজ্ঞা প্রচার কাজ সম্বন্ধে ছিল। আরেকটা আজ্ঞা, খ্রিস্টানদের কীভাবে জীবনযাপন করা উচিত ও অন্যদের সঙ্গে তাদের কেমন আচরণ করা উচিত, সেই সম্বন্ধে ছিল। এসব নির্দেশনা সকল খ্রিস্টানের জন্য ছিল আর তাই এগুলো বর্তমানেও আমাদের সকলের প্রতি প্রযোজ্য, তা আমরা স্বর্গে অথবা পৃথিবীতে, যেখানেই বেঁচে থাকার আশা করি না কেন।
১২. প্রচার কাজ সম্বন্ধে নতুন বিষয়টা কী ছিল?
১২ অতীতে, বিভিন্ন জাতির লোককে যিহোবার সেবা করার জন্য ইস্রায়েলে আসতে হতো। (১ রাজা. ৮:৪১-৪৩) কিন্তু পরবর্তী সময়ে যিশু যে-আজ্ঞা দিয়েছিলেন, তা আমরা মথি ২৮:১৯, ২০ পদে পাই। (পড়ুন।) যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, যেন তারা সমস্ত লোকের কাছে “গিয়া” প্রচার করে। ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিন, যিহোবা এই ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, সুসমাচার সমস্ত জগতে প্রচার করা হবে। সেই দিন, নতুন মণ্ডলীর প্রায় ১২০ জন সদস্য পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হয়েছিলেন এবং যিহুদি ও ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের কাছে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছিলেন। (প্রেরিত ২:৪-১১) এরপর, প্রচারের এলাকা প্রসারিত করে শমরীয়দের এলাকা যুক্ত করা হয়েছিল। তারপর, ৩৬ খ্রিস্টাব্দে সেই এলাকা আরও প্রসারিত হয়ে অচ্ছিন্নত্বক পরজাতীয়দের এলাকা যুক্ত হয়েছিল। এর অর্থ হল, জগতের সকলের কাছে খ্রিস্টানদের প্রচার করতে হয়েছিল!
১৩, ১৪. (ক) যিশুর ‘নূতন আজ্ঞার’ মধ্যে কোন বিষয়টা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে? (খ) যিশুর উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৩ এ ছাড়া, আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে, সেই বিষয়ে যিশু “এক নূতন আজ্ঞা” দিয়েছিলেন। (পড়ুন, যোহন ১৩:৩৪, ৩৫.) আমাদের প্রতিদিন তাদের প্রতি প্রেম দেখাতে হবে আর সেইসঙ্গে তাদের জন্য নিজেদের জীবন দেওয়ার ব্যাপারেও আমাদের ইচ্ছুক হতে হবে। এই চাহিদা ব্যবস্থার মধ্যে ছিল না।—মথি ২২:৩৯; ১ যোহন ৩:১৬.
১৪ এই ধরনের নিঃস্বার্থ প্রেম দেখানোর সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হলেন যিশু। তিনি তাঁর শিষ্যদের এতটাই ভালোবেসেছিলেন যে, তাদের জন্য তিনি স্বেচ্ছায় মারা গিয়েছিলেন। আর তিনি তাঁর সমস্ত অনুসারীর কাছ থেকে একই বিষয় আশা করেন। তাই, আমাদের ভাই-বোনদের জন্য কষ্টভোগ করতে আর এমনকী তাদের জন্য নিজেদের জীবন দিতেও ইচ্ছুক হতে হবে।—১ থিষল. ২:৮.
বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য নির্দেশনা
১৫, ১৬. ঈশ্বর আমাদের কীভাবে নির্দেশনা দিচ্ছেন আর আমরা এখন কোন নতুন পরিস্থিতিতে রয়েছে?
১৫ যিশু তাঁর অনুসারীদের “উপযুক্ত সময়ে” আধ্যাত্মিক “খাদ্য” প্রদান করার জন্য ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্দাসকে’ নিযুক্ত করেছেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) এই খাদ্যের মধ্যে ঈশ্বরের লোকেদের জন্য সেইসমস্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে, যেগুলো পরিস্থিতি পরিবর্তন হওয়ার কারণে দেওয়া হয়। কেন এটা বলা যায়, আমরা এক নতুন পরিস্থিতিতে রয়েছি?
১৬ আমরা “শেষকালে” বাস করছি আর খুব শীঘ্র আমরা এমন ক্লেশ ভোগ করব, যা আগে কখনো ঘটেনি। (২ তীম. ৩:১; মার্ক ১৩:১৯) এ ছাড়া, শয়তান ও তার মন্দদূতদের স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করা হয়েছে আর তাদের কারণে মানবজাতি অনেক কষ্টভোগ করছে। (প্রকা. ১২:৯, ১২) তা ছাড়া, আমরা এখন পুরো পৃথিবীতে আগের চেয়ে আরও বেশি লোকের কাছে এবং আরও বেশি ভাষায় প্রচার করার মাধ্যমে যিশুর আজ্ঞার বাধ্য হচ্ছি!
১৭, ১৮. আমাদের যে-সমস্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়, সেগুলোর প্রতি আমাদের কীভাবে সাড়া দেওয়া উচিত?
১৭ প্রচার কাজে আমাদের সাহায্য করার জন্য ঈশ্বরের সংগঠন অনেক হাতিয়ার জুগিয়ে থাকে। আপনি কি সেগুলো ব্যবহার করেন? কীভাবে এই হাতিয়ারগুলো সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করা যায়, সেই বিষয়ে সভাগুলো থেকে আমরা বিভিন্ন নির্দেশনা পেয়ে থাকি। আপনি কি এগুলোকে ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা নির্দেশনা হিসেবে দেখেন?
১৮ আমরা যদি ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করতে চাই, তা হলে খ্রিস্টান মণ্ডলীর মাধ্যমে তিনি আমাদের যে-সমস্ত নির্দেশনা দেন, সেগুলোর প্রতি আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। আমরা যদি এখন বাধ্য হই, তা হলে ‘মহাক্লেশের’ সময় নির্দেশনা অনুসরণ করা আমাদের পক্ষে আরও সহজ হবে, যে-সময়ে শয়তানের পুরো দুষ্ট জগৎকে ধ্বংস করা হবে। (মথি ২৪:২১) এরপর, শয়তানের নিয়ন্ত্রণ থেকে পুরোপুরি মুক্ত সেই ধার্মিক নতুন জগতে জীবনযাপন করার জন্য আমাদের নতুন নির্দেশনা প্রয়োজন হবে।
নতুন জগতে আমরা বিভিন্ন পুস্তক লাভ করব, যেগুলোতে পরমদেশে জীবনযাপনের জন্য নতুন নির্দেশনা থাকবে (১৯, ২০ অনুচ্ছেদ দেখুন)
১৯, ২০. কোন পুস্তকগুলো খোলা হবে আর এর ফল কী হবে?
১৯ মোশির দিনে, ইস্রায়েল জাতির নতুন নির্দেশনা প্রয়োজন ছিল আর তাই ঈশ্বর তাদের ব্যবস্থা দিয়েছিলেন। পরে, খ্রিস্টান মণ্ডলীকে “খ্রীষ্টের ব্যবস্থা” অনুসরণ করতে হয়েছিল। একইভাবে, বাইবেল আমাদের জানায়, নতুন জগতে আমরা কিছু পুস্তক লাভ করব, যেগুলোতে নতুন নির্দেশনা থাকবে। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ২০:১২.) খুব সম্ভবত, সেই পুস্তকগুলোতে সেই সময়ে বেঁচে থাকা মানবজাতির জন্য যিহোবার চাহিদা ব্যাখ্যা করা থাকবে। সেগুলো অধ্যয়ন করার মাধ্যমে পুনরুত্থিত ব্যক্তিরা-সহ সকলে এটা জানতে পারবে, ঈশ্বর তাদের কাছ থেকে কী চান। সেই পুস্তকগুলো আমাদেরকে যিহোবার চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে আরও ভালোভাবে জানতে সাহায্য করবে। আমরা তখন বাইবেল সম্বন্ধে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারব আর তাই পরমদেশে আমরা একে অন্যের সঙ্গে প্রেম, সম্মান ও শ্রদ্ধা দেখিয়ে আচরণ করব। (যিশা. ২৬:৯) রাজা যিশু খ্রিস্টের নির্দেশনার অধীনে, আমরা নিজেরা যে কত কিছু শিখব এবং অন্যদের কত কিছু শেখাতে পারব, তা একটু কল্পনা করে দেখুন!
২০ আমরা যদি “পুস্তকসমূহে লিখিত” নির্দেশনা অনুসরণ করি এবং চূড়ান্ত পরীক্ষার সময়ে যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকি, তা হলে তিনি ‘জীবন-পুস্তকে’ আমাদের নাম স্থায়ীভাবে লিখবেন। তখন আমরা অনন্তজীবন লাভ করতে পারব! তাই, বাইবেল যা বলে তা পড়ার জন্য আমাদের থামতে হবে, আমাদের জন্য সেটার অর্থ কী তা বোঝার জন্য আমাদের দেখতে হবে এবং এখন ঈশ্বরের নির্দেশনার বাধ্য হওয়ার মাধ্যমে আমাদের শুনতে হবে। আমরা যদি এই বিষয়গুলো করি, তা হলে আমরা মহাক্লেশের সময়ে রক্ষা পাওয়ার এবং আমাদের বিজ্ঞ ও প্রেমময় ঈশ্বর যিহোবা সম্বন্ধে চিরকাল ধরে শিক্ষা লাভ করার আশা করতে পারি।—উপ. ৩:১১; রোমীয় ১১:৩৩.