যিহোবার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হবেই!
“আমি বলিয়াছি, আর আমি সফল করিব; আমি কল্পনা করিয়াছি, আর আমি সিদ্ধ করিব।”—যিশা. ৪৬:১১.
১, ২. (ক) যিহোবা আমাদের কাছে কী প্রকাশ করেছেন? (খ) যিশাইয় ৪৬:১০, ১১ এবং ৫৫:১১ পদ থেকে আমরা কোন প্রতিজ্ঞা সম্বন্ধে জানতে পারি?
বাইবেলের প্রথম বাক্যে সহজসরল অথচ গভীর অর্থপূর্ণ এই উক্তি রয়েছে: “আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি করিলেন।” (আদি. ১:১) ঈশ্বরের সৃষ্ট নিখিলবিশ্বের মধ্যে কেবল অল্প কিছু বিষয় আমরা দেখেছি এবং মহাকাশ, আলো ও মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সম্বন্ধে আমরা সামান্যই বুঝতে পারি। (উপ. ৩:১১) কিন্তু, যিহোবা এই পৃথিবী ও মানুষের জন্য তাঁর উদ্দেশ্য আমাদের কাছে প্রকাশ করেছেন। তিনি মানুষকে নিজের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করেছেন আর তিনি চান যেন তারা এই পৃথিবীতে জীবন উপভোগ করে। (আদি. ১:২৬) তারা তাঁর সন্তান হবে আর তিনি তাদের পিতা হবেন।
২ আদিপুস্তকের তৃতীয় অধ্যায় থেকে আমরা জানতে পারি, যিহোবার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। (আদি. ৩:১-৭) কিন্তু, এমন কোনো সমস্যা নেই, যা যিহোবা সমাধান করতে পারেন না। কেউই তাঁর পথ রোধ করতে পারে না। (যিশা. ৪৬:১০, ১১; ৫৫:১১) আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, একেবারে উপযুক্ত সময়ে যিহোবার আদি উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হবেই!
৩. (ক) কোন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলো বাইবেলের বার্তা বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করে? (খ) কেন আমরা এখন এই শিক্ষাগুলো নিয়ে আলোচনা করব? (গ) কোন প্রশ্নগুলো আমরা বিবেচনা করব?
৩ নিঃসন্দেহে, আমরা পৃথিবী ও মানুষের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য আর সেইসঙ্গে এই উদ্দেশ্যের মধ্যে যিশুর ভূমিকা সম্বন্ধে জানি। এগুলো হল বাইবেলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সত্য আর ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করতে শুরু করার পর আমরা সম্ভবত এই সত্যগুলোই প্রথমে জানতে পেরেছি। এখন আমরা অন্যদের সাহায্য করতে চাই, যাতে তারাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই শিক্ষাগুলো লাভ করতে পারে। তা করার জন্য বছরের এই সময়ে আমরা এক বিশেষ সুযোগ পেয়েছি অর্থাৎ আমরা খ্রিস্টের মৃত্যুর স্মরণার্থ সভায় যোগ দেওয়ার জন্য লোকেদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। (লূক ২২:১৯, ২০) তারা যদি এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে আসে, তা হলে তারা ঈশ্বরের চমৎকার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আরও জানতে পারবে। তাই, এখন কিছু প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করার উপযুক্ত সময় কারণ এই সভাতে যোগ দেওয়ার জন্য লোকেদের উৎসাহিত করতে আমরা এই প্রশ্নগুলো ব্যবহার করতে পারি। এই প্রবন্ধে আমরা তিনটে প্রশ্ন বিবেচনা করব: পৃথিবী ও মানুষের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কী? কোথায় ভুল হয়েছিল? আর কেন যিশুর মুক্তির মূল্য হচ্ছে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হওয়ার চাবিকাঠি?
সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্য কী ছিল?
৪. কীভাবে সৃষ্টি “ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করে”?
৪ যিহোবা হলেন এমন সৃষ্টিকর্তা, যাঁর প্রতি সশ্রদ্ধ ভয় জেগে উঠে। তাঁর সৃষ্ট সমস্ত কিছু উচ্চ মানসম্পন্ন। (আদি. ১:৩১; যির ১০:১২) সৃষ্টির সৌন্দর্য ও শৃঙ্খলা দেখে আমরা কী জানতে পারি? আমরা জানতে পারি, যিহোবার সবচেয়ে ক্ষুদ্র সৃষ্টি থেকে শুরু করে সবচেয়ে বৃহৎ সৃষ্টি সকলই উপকারী। এ ছাড়া, আপনি যখন বিস্ময়কর মানবকোষ সম্বন্ধে চিন্তা করেন অথবা সদ্যোজাত কোনো শিশুকে দেখেন কিংবা এক অপূর্ব সূর্যাস্ত লক্ষ করেন, তখন আপনি কেমন অনুভব করেন? সেই সময়ে আমরা মুগ্ধ হয়ে প্রশংসা করি, কারণ যা সত্যিই সুন্দর তা বোঝার সহজাত ক্ষমতা দিয়ে যিহোবা আমাদের সৃষ্টি করেছেন।—পড়ুন, গীতসংহিতা ১৯:১; ১০৪:২৪.
৫. নিখিলবিশ্বের সমস্ত কিছু যেন একসঙ্গে ভালোমতো কাজ করতে পারে, সেইজন্য যিহোবা কী তৈরি করেছেন?
৫ যিহোবা সতর্কতার সঙ্গে তাঁর সমস্ত সৃষ্টির জন্য সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তিনি প্রাকৃতিক নিয়ম তৈরি করেছেন এবং নৈতিক নিয়মও তৈরি করেছেন। তিনি এসব নিয়ম তৈরি করেছেন যাতে নিখিলবিশ্বের সমস্ত কিছু একসঙ্গে ভালোমতো কাজ করতে পারে। (গীত. ১৯:৭-৯) নিখিলবিশ্বে সমস্ত কিছুর নির্ধারিত স্থান ও কাজ রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর কাছাকাছি থাকে এবং মহাসাগরে জোয়ার-ভাটা হয়। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ছাড়া পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব অসম্ভব। প্রকৃতিতে যিহোবা যে-সমস্ত সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেগুলোর কারণে নিখিলবিশ্বের সব কিছু সুসংগঠিত। এটাই প্রকাশ করে, এই পৃথিবী ও মানুষের জন্য তাঁর একটা উদ্দেশ্য রয়েছে। আমরা প্রচার করার সময়, এই বিস্ময়কর নিখিলবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে জানতে অন্যদের সাহায্য করতে পারি।—প্রকা. ৪:১১.
৬, ৭. যিহোবা আদম ও হবাকে কোন কোন উপহার দিয়েছিলেন?
৬ মানুষের জন্য যিহোবার উদ্দেশ্য ছিল তারা এই পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকবে। (আদি. ১:২৮; গীত. ৩৭:২৯) তিনি হলেন উদার আর তিনি আদম ও হবাকে বিভিন্ন চমৎকার উপহার দান করেছিলেন। (পড়ুন, যাকোব ১:১৭.) যিহোবা তাদের স্বাধীন ইচ্ছা দিয়েছিলেন এবং তিনি তাদের যুক্তি করার, প্রেম প্রকাশ করার ও বন্ধুত্ব উপভোগ করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। সৃষ্টিকর্তা আদমের সঙ্গে কথা বলেছিলেন ও কীভাবে সঠিক বিষয় করতে হবে, সেই সম্বন্ধে তাকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এ ছাড়া, কীভাবে নিজের, পশুপাখির ও ভূমির যত্ন নিতে হবে, আদম সেটাও শিখতে পেরেছিলেন। (আদি. ২:১৫-১৭, ১৯, ২০) যিহোবা আদম ও হবাকে স্বাদ নেওয়ার, স্পর্শ করার, দেখার, শোনার ও ঘ্রাণ নেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছিলেন, যেন তারা সেইসমস্ত উত্তম বিষয় উপভোগ করতে পারে, যেগুলো তিনি তাদের জন্য সৃষ্টি করেছিলেন। এভাবে তারা তাদের অপূর্ব গৃহে জীবন উপভোগ করতে পারতেন। আদম ও হবার জন্য আগ্রহজনক প্রচুর কাজও ছিল। আর তারা চিরকাল ধরে নতুন নতুন বিষয় শিখতে ও আবিষ্কার করতে পারতেন।
৭ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের মধ্যে আর কী ছিল? যিহোবা আদম ও হবাকে সিদ্ধ সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা দিয়েছিলেন। আর সেই সন্তানরা আরও সন্তানের জন্ম দিতে পারত, যতক্ষণ পর্যন্ত পুরো পৃথিবী মানুষে পরিপূর্ণ না হয়। যিহোবা চেয়েছিলেন যেন বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের ভালোবাসেন, ঠিক যেমন তিনি তাঁর প্রথম সিদ্ধ মানবসন্তান আদম ও হবাকে ভালোবেসেছিলেন। তিনি মানবপরিবারকে এই পৃথিবী ও এর মধ্যে থাকা সমস্ত মূল্যবান ও অপূর্ব বিষয় দান করেছিলেন। এটাই তাদের গৃহ হবে আর তাদের কাছ থেকে কখনো সেই গৃহ কেড়ে নেওয়া হবে না।—গীত. ১১৫:১৬.
কোথায় ভুল হয়েছিল?
৮. কেন ঈশ্বর আদম ও হবাকে আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭ পদে উল্লেখিত আজ্ঞা দিয়েছিলেন?
৮ যিহোবা যেভাবে চেয়েছিলেন, সেভাবে সব কিছু ঘটেনি। কী হয়েছিল? যিহোবা আদম ও হবাকে একটা সাধারণ আজ্ঞা দিয়েছিলেন যাতে তারা নিজেদের স্বাধীনতার সীমা বুঝতে পারেন। তিনি বলেছিলেন: “তুমি এই উদ্যানের সমস্ত বৃক্ষের ফল স্বচ্ছন্দে ভোজন করিও; কিন্তু সদসদ্-জ্ঞানদায়ক যে বৃক্ষ, তাহার ফল ভোজন করিও না, কেননা যে দিন তাহার ফল খাইবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে।” (আদি. ২:১৬, ১৭) এই আজ্ঞার অর্থ বোঝা তাদের জন্য কোনো কঠিন বিষয় ছিল না। আর এর বাধ্য হওয়াও তাদের জন্য কঠিন ছিল না কারণ সেই উদ্যানে অন্যান্য সুস্বাদু খাবার প্রচুর পরিমাণে ছিল।
৯, ১০. (ক) যিহোবার বিরুদ্ধে শয়তান কী অভিযোগ করেছিল? (খ) আদম ও হবা কী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
৯ শয়তান দিয়াবল একটা সাপ ব্যবহার করে হবাকে তার পিতা যিহোবার অবাধ্য হওয়ার জন্য প্ররোচিত করেছিল। (পড়ুন, আদিপুস্তক ৩:১-৫; প্রকা. ১২:৯) শয়তান এইরকম একটা বিতর্কের বিষয় উত্থাপন করতে চেয়েছিল, ঈশ্বর তাঁর মানবসন্তানদের সেই ‘উদ্যানের কোন বৃক্ষের ফল খাইবার’ অনুমতি দেননি। যেন সে হবাকে বলতে চাচ্ছিল: ‘তার মানে, তুমি নিজের ইচ্ছেমতো কিছুই করতে পারবে না?’ এরপর সে হবাকে বলেছিল: “কোন ক্রমে মরিবে না।” এটা একটা মিথ্যা কথা ছিল। তারপর, সে হবাকে এটা বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, ঈশ্বরের কথা শোনার কোনো প্রয়োজন তার নেই। শয়তান বলেছিল: “ঈশ্বর জানেন, যে দিন তোমরা তাহা খাইবে, সেই দিন তোমাদের চক্ষু খুলিয়া যাইবে।” শয়তান আসলে এটা বলতে চাচ্ছিল, যিহোবা তাদের সেই ফল খেতে দিতে চান না কারণ সেই ফল খেলে তারা কোনো বিশেষ জ্ঞান লাভ করবেন। সব শেষে, শয়তান এই মিথ্যা প্রতিজ্ঞা করেছিল: “তোমরা ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসদ্-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।”
১০ আদম-হবা কী করবেন, সেই বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। তারা কি ঈশ্বরের বাধ্য হবেন, না কি একটা সাপের কথা শুনবেন? দুঃখের বিষয় হল, তারা ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তারা যিহোবাকে তাদের পিতা হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ও শয়তানের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। তখন তারা যিহোবার সুরক্ষা থেকে নিজেদের পৃথক করেছিলেন।—আদি. ৩:৬-১৩.
১১. কেন যিহোবা আদম ও হবার পাপ উপেক্ষা করতে পারেননি?
১১ ঈশ্বরের আজ্ঞার অবাধ্য হওয়ার পর, আদম ও হবা তাদের সিদ্ধতা হারিয়েছিলেন। আর সেইসঙ্গে তারা ঈশ্বরের শত্রু হয়ে উঠেছিলেন কারণ তিনি দুষ্টতা ঘৃণা করেন। তিনি ‘এমন নির্ম্মলচক্ষু যে মন্দ দেখিতে পারেন না।’ (হবক্. ১:১৩) যিহোবা যদি আদম ও হবার পাপের বিষয়ে কিছু না করতেন, তা হলে তাঁর সমস্ত সৃষ্টির মঙ্গল ঝুঁকির মুখে থাকত। স্বর্গদূতেরা ও মানুষেরা হয়তো এই বিষয়টা নিয়ে সন্দেহ করত, তারা তাঁর কথার উপর নির্ভর করতে পারে কি না। কিন্তু, যিহোবা তাঁর মানের প্রতি বিশ্বস্ত; তিনি কখনো সেগুলো লঙ্ঘন করেন না। (গীত. ১১৯:১৪২) যদিও আদম ও হবার স্বাধীন ইচ্ছা ছিল, কিন্তু তারা যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার পরিণতি এড়াতে পারেননি। অবশেষে তারা মারা গিয়েছিলেন ও যে-ধূলি থেকে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছিল, সেই ধূলিতেই প্রতিগমন করেছিলেন।—আদি. ৩:১৯.
১২. আদমের সন্তানদের কী হয়েছিল?
১২ আদম ও হবা ফল খাওয়ার পর, যিহোবা তাদের আর তাঁর পরিবারের অংশ হিসেবে গ্রহণ করতে পারতেন না। তিনি তাদের এদন উদ্যান থেকে বের করে দিয়েছিলেন এবং তাদের আর কখনো সেখানে ফেরার আশা ছিল না। (আদি. ৩:২৩, ২৪) তাদের সিদ্ধান্তের পরিণতি যিহোবা তাদের ভোগ করতে দিয়েছিলেন। (পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪, ৫.) তাই, তারা আর যিহোবার গুণাবলি নিঁখুতভাবে অনুকরণ করতে পারেননি। আদম এক অপূর্ব ভবিষ্যৎ হারিয়েছিলেন আর তা শুধু তিনি নিজেই নয় বরং তার সন্তানরাও হারিয়েছিল। তার সন্তানদের তিনি কেবল অসিদ্ধতা, পাপ ও মৃত্যু দিতে পেরেছিলেন। (রোমীয় ৫:১২) আদম তাদের চিরকাল বেঁচে থাকার আশা থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। আদম ও হবা কোনো সিদ্ধ সন্তানের জন্ম দিতে পারেননি আর তাদের সন্তানরাও তা পারেনি। যখন থেকে শয়তান আদম ও হবাকে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে নিয়ে গিয়েছিল, তখন থেকে সে সমস্ত মানুষকে একই বিষয় করার জন্য প্ররোচিত করছে।—যোহন ৮:৪৪.
মুক্তির মূল্যের মাধ্যমে ঈশ্বরের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা সম্ভবপর হয়েছে
১৩. মানুষের জন্য যিহোবা কী চেয়েছিলেন?
১৩ মানুষের জন্য যিহোবার ভালোবাসা তখনও ছিল। যদিও আদম ও হবা তাঁকে ত্যাগ করেছিলেন, কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন যেন মানুষেরা তাঁর সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক গড়ে তোলে। আর তিনি এটাও চেয়েছিলেন যেন তাদের মধ্যে কেউ মারা না যায়। (২ পিতর ৩:৯) তাই, ঈশ্বর সঙ্গেসঙ্গে এমন ব্যবস্থা করেছিলেন, যাতে মানুষেরা আবার তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারে। নিজের মানের বিরুদ্ধে না গিয়ে তিনি কীভাবে তা করতে পারতেন? আসুন আমরা তা দেখি।
১৪. (ক) যোহন ৩:১৬ পদ অনুসারে, মানুষকে পাপ ও মৃত্যু থেকে উদ্ধার করার জন্য ঈশ্বর কী করেছেন? (খ) কোন প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আমরা লোকেদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারি?
১৪ যোহন ৩:১৬ পদ পড়ুন। আমরা স্মরণার্থ সভায় যাদের আমন্ত্রণ জানাই, তাদের মধ্যে অনেকে এই পদ মুখস্থ বলতে পারে। কিন্তু, কীভাবে যিশুর বলিদানের মাধ্যমে অনন্তজীবন লাভ করা সম্ভবপর হয়েছে? আমরা যখন স্মরণার্থ সভার জন্য লোকেদের আমন্ত্রণ জানাই, স্মরণার্থ সভায় উপস্থিত থাকি ও পরে তাদের সঙ্গে দেখা করতে যাই, তখন আমরা এই প্রশ্নের উত্তর বুঝতে তাদের সাহায্য করতে পারি। মুক্তির মূল্য সম্বন্ধে তারা যত বেশি বুঝতে পারবে, ততই তারা এটা উপলব্ধি করবে, যিহোবা মানুষকে কতটা ভালোবাসেন আর তিনি কতটা বিজ্ঞ। মুক্তির মূল্য সম্বন্ধে আমরা তাদের সঙ্গে কোন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারি?
১৫. কীভাবে যিশু আদমের চেয়ে আলাদা ছিলেন?
১৫ যিহোবা একজন সিদ্ধ ব্যক্তি জুগিয়েছিলেন, যিনি মুক্তির মূল্য হিসেবে নিজের জীবন দান করতে পারতেন। এই সিদ্ধ ব্যক্তিকে যিহোবার প্রতি অনুগত থাকতে হয়েছিল। তাঁকে মানুষের জন্য নিজের জীবন দিতে ইচ্ছুক হতে হয়েছিল। (রোমীয় ৫:১৭-১৯) যিহোবা তাঁর প্রথম সৃষ্টি যিশুর জীবনকে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে স্থানান্তর করেছিলেন। (যোহন ১:১৪) তাই যিশু ঠিক আদমের মতো একজন সিদ্ধ মানুষ ছিলেন। তবে আদমের বিপরীতে, যিশু সেই মান অনুসরণ করেছিলেন, যা যিহোবা একজন সিদ্ধ মানুষের কাছ থেকে চান। এমনকী সবচেয়ে চরম পরীক্ষার মধ্যেও তিনি ঈশ্বরের কোনো আজ্ঞা লঙ্ঘন করেননি।
১৬. কেন মুক্তির মূল্য হল এক মূল্যবান উপহার?
১৬ যিশু একজন সিদ্ধ মানুষ হিসেবে মৃত্যুবরণ করার মাধ্যমে মানুষকে পাপ ও মৃত্যু থেকে রক্ষা করতে পারতেন। আদমের যেমনটা হওয়া উচিত ছিল, যিশু একেবারে সেটার সমতুল্য ছিলেন। যিশু একজন সিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন, ঈশ্বরের প্রতি পুরোপুরি অনুগত ও বাধ্য ছিলেন। (১ তীম. ২:৬) তিনি আমাদের জন্য মৃত্যুবরণ করেছিলেন আর তাঁর বলিদান সমস্ত পুরুষ, নারী ও শিশুদের চিরকাল বেঁচে থাকার সুযোগ এনে দিয়েছিল। (মথি ২০:২৮) মুক্তির মূল্য হল সেই চাবিকাঠি, যা ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হওয়ার দ্বার খুলে দিয়েছিল।—২ করি. ১:১৯, ২০.
যিহোবা আমাদের জন্য ফিরে আসার দ্বার খুলে দিয়েছেন
১৭. মুক্তির মূল্যের মাধ্যমে কী সম্ভবপর হয়েছে?
১৭ মুক্তির মূল্য জোগানোর জন্য যিহোবা নিজে চরম মূল্য দিয়েছিলেন। (১ পিতর ১:১৯) তিনি আমাদের এতটাই মূল্যবান বলে গণ্য করেছিলেন যে, আমাদের জন্য তিনি নিজের পুত্রের অমূল্য জীবন বলি দিতে ইচ্ছুক ছিলেন। (১ যোহন ৪:৯, ১০) এক অর্থে, আদমের পরিবর্তে যিশু আমাদের পিতা হয়ে উঠেছিলেন। (১ করি. ১৫:৪৫) যিশু আমাদের জন্য শুধু চিরকাল বেঁচে থাকার আশাই সম্ভবপর করেননি কিন্তু সেইসঙ্গে একদিন ঈশ্বরের পরিবারে ফিরে আসার দ্বারও খুলে দিয়েছেন। মুক্তির মূল্যের মাধ্যমে মানুষ আবার সিদ্ধতা অর্জন করবে আর যিহোবা নিজের মানের বিরুদ্ধে না গিয়ে তাঁর পরিবারের অংশ হিসেবে আবারও তাদের গ্রহণ করতে পারবেন। একটু কল্পনা করুন, যিহোবার প্রতি অনুগত ব্যক্তিরা যখন সিদ্ধতা অর্জন করবে, তখন তা কতই-না চমৎকার হবে! অবশেষে, স্বর্গ ও পৃথিবীর সকলে এক পরিবার হিসেবে একতাবদ্ধ হবে। আমরা সকলে ঈশ্বরের সন্তান হব।—রোমীয় ৮:২১.
১৮. কখন যিহোবা “সর্ব্বেসর্ব্বা” হবেন?
১৮ যদিও আমাদের আদি পিতা-মাতা যিহোবাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, কিন্তু তিনি লোকেদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা বন্ধ করেননি এবং তিনি মুক্তির মূল্য জুগিয়েছেন। আর আমরা যদিও অসিদ্ধ, কিন্তু যিহোবার প্রতি অনুগত থাকার ক্ষেত্রে শয়তান আমাদের বিরত করতে পারে না। মুক্তির মূল্যের মাধ্যমে যিহোবা আমাদের সম্পূর্ণ ধার্মিক হয়ে উঠতে সাহায্য করবেন। “যে কেহ পুত্রকে দর্শন করে ও তাঁহাতে বিশ্বাস করে,” তারা সকলে যখন অনন্তজীবন লাভ করবে, তখন জীবন কেমন হবে, সেই বিষয়ে কল্পনা করে দেখুন! (যোহন ৬:৪০) আমাদের প্রেমময় ও বিজ্ঞ পিতা তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করবেন ও মানুষকে সিদ্ধতা অর্জন করতে সাহায্য করবেন। তারপর, যিহোবাই “সর্ব্বেসর্ব্বা” হবেন।—১ করি. ১৫:২৮.
১৯. (ক) মুক্তির মূল্যের জন্য আমাদের কৃতজ্ঞতাবোধ আমাদের কী করতে অনুপ্রাণিত করবে? (“আসুন আমরা যোগ্য ব্যক্তিদের অন্বেষণ করে চলি” শিরোনামের বাক্স দেখুন।) (খ) পরের প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?
১৯ মুক্তির মূল্যের জন্য আমাদের কৃতজ্ঞতাবোধ অন্যদের কাছে এই অমূল্য উপহার সম্বন্ধে জানাতে আমাদের অনুপ্রাণিত করবে। লোকেদের এটা জানা প্রয়োজন, যিহোবা প্রেম দেখিয়ে মানবজাতির জন্য চিরকাল বেঁচে থাকার সুযোগ খুলে দিয়েছেন। কিন্তু, মুক্তির মূল্য এর চেয়েও বেশি কিছু সম্পাদন করে। এটা এদন উদ্যানে শয়তান যে-বিচার্য বিষয় উত্থাপন করেছিল, সেটার মীমাংসা করে। কীভাবে তা করে সেই বিষয়ে আমরা পরের প্রবন্ধে বিবেচনা করব।