অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৮
গান ১ যিহোবার গুণাবলি
“সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা” এবং করুণাময় ঈশ্বরের উপর নির্ভর করুন!
“সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা কি ন্যায়বিচার করিবেন না?”—আদি. ১৮:২৫.
আমরা কী শিখব?
এই প্রবন্ধে আমরা যিহোবার করুণা ও ন্যায়বিচার সম্বন্ধে গভীর বিষয়গুলো জানতে পারব। আমরা এও জানতে পারব, নতুন জগতে যখন অধার্মিক লোকদের পুনরুত্থিত করা হবে, তখন আমরা কী আশা রাখতে পারি।
১. যিহোবা অব্রাহামকে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখিয়েছিলেন, যেটা থেকে আমরা সান্ত্বনা লাভ করতে পারি?
হাজার হাজার বছর আগে যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত সেবক অব্রাহামকে বলেছিলেন যে, তিনি সদোম ও ঘমোরা নগরকে ধ্বংস করে দেবেন। এটা শুনে অব্রাহাম অনেক চিন্তিত হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পারেননি, ঈশ্বর কেন এমনটা করতে যাচ্ছেন। তাই, তিনি ঈশ্বরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আপনি কি দুষ্টের সহিত ধার্ম্মিককেও সংহার করিবেন? . . . সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা কি ন্যায়বিচার করিবেন না?” তখন যিহোবা প্রেম ও ধৈর্য দেখিয়ে অব্রাহামকে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখিয়েছিলেন, যেটা থেকে বর্তমানে আমরা অনেক উপকার পেতে পারি এবং সান্ত্বনা লাভ করতে পারি। সেটা হল, যিহোবা কখনো ধার্মিক লোকদের ধ্বংস করবেন না।—আদি. ১৮:২৩-৩৩.
২. কেন আমরা বলতে পারি যে, যিহোবা ন্যায়বিচার করেন এবং করুণা দেখান?
২ কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা ন্যায়বিচার করেন এবং করুণা দেখান? কারণ যিহোবা লোকদের “হৃদয় দেখেন।” (১ শমূ. ১৬:৭, NW) তিনি জানেন, “প্রত্যেক মানুষের হৃদয় কেমন।” (১ রাজা. ৮:৩৯; ১ বংশা. ২৮:৯, NW) এটা কতই-না চমৎকার এক বিষয়! যিহোবার প্রজ্ঞার সঙ্গে আমাদের প্রজ্ঞার কোনো তুলনাই হয় না। তাই, যিহোবার কিছু সিদ্ধান্তের পিছনে থাকা কারণ আমরা পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারি না। সেইজন্য প্রেরিত পৌল ঈশ্বরের বিষয়ে লিখেছিলেন: “তাঁর বিচার পুরোপুরি বোঝা যায় না।”—রোমীয় ১১:৩৩.
৩-৪. আমাদের মনে কোন কোন প্রশ্ন আসতে পারে এবং এই প্রবন্ধে আমরা কী জানতে পারব? (যোহন ৫:২৮, ২৯)
৩ এটা জানার পরও আমাদের মনে হয়তো অব্রাহামের মতো এইরকম প্রশ্ন আসতে পারে: ‘যিহোবা কি সেই ব্যক্তিদেরও পুনরুত্থিত করবেন, যাদের তিনি ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, যেমন সদোম ও ঘমোরার লোকদের? তারাও কি সেই “অধার্মিক” ব্যক্তিদের মধ্যে থাকবে, যাদের যিহোবা পুনরুত্থিত করবেন?’—প্রেরিত ২৪:১৫.
৪ আসুন আমরা দেখি, পুনরুত্থানের বিষয়ে আমরা কী জানি। সম্প্রতি যোহন ৫:২৮, ২৯ পদের বিষয়ে আমরা আগে যা জানতাম, তাতে কিছু রদবদল করা হয়েছে। (পড়ুন।) আমরা জানতে পেরেছি, ‘অনন্তজীবনের’ জন্য এবং ‘বিচারের’ জন্য পুনরুত্থিত হওয়ার অর্থ কী।a এই নতুন বোধগম্যতার উপর ভিত্তি করে আরও কিছু রদবদল করা হয়েছে, যেগুলো আমরা এই প্রবন্ধে এবং পরের প্রবন্ধ জানতে পারব। আমরা এও জানতে পারব, যিহোবার ন্যায়বিচার সম্বন্ধে আমরা কী জানি আর কী জানি না।
আমরা কী জানি না?
৫. আমাদের প্রকাশনায় আগে সদোম ও ঘমোরার লোকদের বিষয়ে কী বলা হয়েছিল?
৫ অতীতে আমাদের প্রকাশনায় বলা হয়েছিল যে, যিহোবা সেই অধার্মিক লোকদের কী করবেন, যাদের তিনি ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। আমরা বলেছিলাম, সেই অধার্মিক লোকদের ভবিষ্যতে পুনরুত্থিত করা হবে না, যাদের মধ্যে সদোম ও ঘমোরার লোকেরাও রয়েছে। কিন্তু, অনেক প্রার্থনা এবং অধ্যয়ন করার পর আমরা বুঝতে পেরেছি, আমরা এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না। কেন?
৬. (ক) কিছু ঘটনার বিষয়ে বলুন, যেখানে যিহোবা অধার্মিক লোকদের ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। (খ) এই ঘটনাগুলোর বিষয়ে আমরা কী জানি না?
৬ বাইবেলে এমন অনেক ঘটনা রয়েছে, যেখানে যিহোবা অধার্মিক লোকদের ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। যেমন, নোহ এবং তার পরিবারকে ছেড়ে যিহোবা সমস্ত লোককে জলপ্লাবনের দ্বারা ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। তিনি ইজরায়েলীয়দের মাধ্যমে প্রতিজ্ঞাত দেশে থাকা সাতটা জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া, যিহোবা এক স্বর্গদূতের মাধ্যমে এক রাতেই ১,৮৫,০০০ অশূরীয় সৈন্যকে শেষ করে দিয়েছিলেন। (আদি. ৭:২৩; দ্বিতীয়. ৭:১-৩; যিশা. ৩৭:৩৬, ৩৭) কিন্তু প্রশ্ন হল, বাইবেলে কি এর কোনো প্রমাণ রয়েছে যে, যিহোবা এই সমস্ত লোককে চিরকালের জন্য ধ্বংস করে দিয়েছেন এবং তিনি এই ব্যক্তিদের মধ্যে কাউকেই পুনরুত্থিত করবেন না? না, বাইবেলে এই বিষয়ে কোনো প্রমাণ দেওয়া হয়নি। তাই আসুন, এই বিষয়ে আরও জানার চেষ্টা করি।
৭. জলপ্লাবনে ধ্বংস হওয়া ব্যক্তিদের সম্বন্ধে এবং কনানে থাকা খারাপ লোকদের সম্বন্ধে আমরা কী জানি না? ( ছবিটা দেখুন।)
৭ আমরা জানি না, যিহোবা যে-ব্যক্তিদের ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, তাদের প্রত্যেকের বিষয়ে তিনি কী চিন্তা করেছিলেন। আমরা এও জানি না, তারা যিহোবাকে জানার এবং অনুতপ্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল কি না। যেমন, জলপ্লাবনের সময়ের বিষয়ে বাইবেলে বলা রয়েছে, নোহ “ঈশ্বরের সঠিক পথ সম্বন্ধে প্রচার করেছিলেন।” (২ পিতর ২:৫) কিন্তু এটিতে বলা নেই যে, তিনি সেই সময়কার প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে প্রচার করেছিলেন। একইভাবে, কনান দেশের সেই সাতটা জাতি সম্বন্ধে আমরা জানি না যে, সেই খারাপ লোকেরা যিহোবাকে জানার এবং নিজেদের সংশোধন করার সুযোগ পেয়েছিল কি না।
নোহ এবং তার পরিবার একসঙ্গে মিলে জাহাজ তৈরি করছে। আমরা জানি না, জলপ্লাবন আসার আগে জাহাজ তৈরি করার পাশাপাশি নোহ পৃথিবীতে থাকা সমস্ত লোকের কাছে প্রচার করেছিলেন কি না (৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)
৮. সদোম ও ঘমোরার লোকদের বিষয়ে আমরা কী জানি না?
৮ সদোম ও ঘমোরার লোকদের বিষয়ে কী বলা যায়? লোট সেই লোকদের মাঝে থাকতেন এবং তিনি একজন ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু, তিনি কি সেখানকার প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে প্রচার করেছিলেন? এই বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। এটা ঠিক যে, সদোমে থাকা সমস্ত লোক খারাপ ছিল। কিন্তু, তাদের মধ্যে কি প্রত্যেকেই এটা জানত যে, তারা যেটা করছে সেটা ভুল? মনে করে দেখুন, সদোমের যে-লোকেরা লোটের বাড়িতে আসা অতিথিদের সঙ্গে খারাপ কাজ করতে চেয়েছিল, সেই লোকদের মধ্যে অল্পবয়সি থেকে শুরু করে বৃদ্ধ লোকেরা ছিল। তাদের মধ্যে অনেকে সেই খারাপ পরিবেশে বড়ো হয়ে উঠেছিল, তাই তারা হয়তো জানতই না যে, তারা কত জঘন্য কাজ করার কথা চিন্তা করছে। (আদি. ১৯:৪; ২ পিতর ২:৭) তাহলে, করুণার ঈশ্বর যিহোবা কি সেই সমস্ত লোককে একেবারের জন্য ধ্বংস করে দিয়েছেন এবং তাদের আর কখনো পুনরুত্থিত করবেন না? এটা ঠিক যে, তারা খারাপ লোক ছিল। তাই যিহোবা অব্রাহামকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, সদোমে দশ জনও ধার্মিক লোক নেই। (আদি. ১৮:৩২) তাদের খারাপ কাজের জন্য যিহোবা তাদের শাস্তি দিয়েছিলেন। তাই আমরা কি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, নতুন জগতে ‘যে-অধার্মিক’ লোকদের পুনরুত্থিত করা হবে, তাদের মধ্যে সদোমের এক জন ব্যক্তিও থাকবে না? না, আমরা নিশ্চিতভাবে তা বলতে পারি না!
৯. আমরা শলোমনের বিষয়ে কী জানি না?
৯ বাইবেলে এমন অনেক ব্যক্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, যারা প্রথমে ধার্মিক ছিল, কিন্তু পরে অধার্মিক হয়ে গিয়েছিল। এমনই একজন ব্যক্তি ছিলেন রাজা শলোমন। তিনি যিহোবার সমস্ত আজ্ঞা খুব ভালোভাবে জানতেন আর যিহোবা তাকে প্রচুর আশীর্বাদ করেছিলেন। কিন্তু, পরে শলোমন অনেক মিথ্যা দেবতার উপাসনা করতে শুরু করেছিলেন। এতে যিহোবা প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিলেন এবং পুরো ইজরায়েল জাতিকে অনেক বছর ধরে এটার খারাপ পরিণতি ভোগ করতে হয়েছিল। তবে বাইবেল বলে, শলোমনকে “দায়ূদ-নগরে কবর” দেওয়া হয়েছিল। শলোমনের পূর্বপুরুষেরা, যাদের মধ্যে দায়ূদও ছিলেন, তারা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। (১ রাজা. ১১:৫-৯, ৪৩; ২ রাজা. ২৩:১৩, NW) শলোমনকে যেহেতু তার পূর্বপুরুষদের সঙ্গে কবর দেওয়া হয়েছিল, তার মানে কি আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, যিহোবা তাকে পুনরুত্থিত করবেন? বাইবেলে কোথাও এমনটা লেখা নেই। বাইবেলে লেখা আছে, “যে-ব্যক্তি মারা গিয়েছে, সে তার পাপের ক্ষমা পেয়েছে।” (রোমীয় ৬:৭, পাদটীকা।) কিন্তু এর মানে এই নয়, যে-লোকেরা মারা গিয়েছে, তাদের প্রত্যেককে যিহোবা পুনরুত্থিত করবেন। একমাত্র যিহোবাই মৃত ব্যক্তিদের জীবন ফিরিয়ে দিতে পারেন। তিনি যাকে চান, তাকে এই উপহার দেন, যাতে সে চিরকাল তাঁর সেবা করতে পারে। (ইয়োব ১৪:১৩, ১৪; যোহন ৬:৪৪) তিনি কি শলোমনকে এই উপহার দেবেন? এটা তো একমাত্র যিহোবাই জানেন। কিন্তু আমরা নিশ্চিত, যিহোবা যা করবেন, সেটা একেবারে সঠিক হবে।
আমরা কী জানি?
১০. বিচার করার সময়ে যিহোবা কেমন অনুভব করেন? (যিহিষ্কেল ৩৩:১১) (ছবিও দেখুন।)
১০ যিহিষ্কেল ৩৩:১১ পদ পড়ুন। যিহোবা আমাদের জানিয়েছেন, বিচার করার সময়ে তিনি কেমন অনুভব করেন। প্রেরিত পিতর পবিত্র শক্তির সাহায্যে ভাববাদী যিহিষ্কেলের কথাগুলো বলেছিলেন। পিতর বলেছিলেন: “[যিহোবা] চান না, কেউ ধ্বংস হয়ে যাক।” (২ পিতর ৩:৯) এটা জেনে আমরা কতই-না সান্ত্বনা পাই যে, যিহোবা কাউকে চিরকালের জন্য ধ্বংস করতে চান না। তিনি হলেন করুণার ঈশ্বর এবং যখন সম্ভব, তখন তিনি করুণা দেখান।
অধার্মিক লোকদের যখন পুনরুত্থিত করা হবে, তখন অনেক লোককে পুনরুত্থিত করা হবে এবং তারা যিহোবা সম্বন্ধে শেখার সুযোগ পাবে (১০ অনুচ্ছেদ দেখুন)
১১. (ক) কাদের পুনরুত্থিত করা হবে না? (খ) কেন আমরা তা বলতে পারি?
১১ আমরা আরেকটা বিষয় জানি: কাদের পুনরুত্থিত করা হবে না। বাইবেলে এমন কিছু ব্যক্তির নাম রয়েছে, যাদের পুনরুত্থিত করা হবে না।b যেমন, যিশুর কথা থেকে বোঝা যায়, ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদাকে পুনরুত্থিত করা হবে না। (মার্ক ১৪:২১, যোহন ১৭:১২)c কেন? কারণ তিনি জেনে-শুনে যিহোবা এবং তাঁর পুত্রের বিরুদ্ধে পাপ করেছিলেন।d (মার্ক ৩:২৯) যিশু বলেছিলেন, কিছু ধর্মগুরুকেও পুনরুত্থিত করা হবে না কারণ তারা তাঁর বিরোধিতা করেছিল। (মথি ২৩:৩৩) এ ছাড়া, প্রেরিত পৌল বলেছিলেন, সেই ব্যক্তিদেরও পুনরুত্থিত করা হবে না, যারা বিশ্বাস থেকে সরে পড়েছিল এবং অনুতপ্ত হয়নি।—ইব্রীয় ৬:৪-৮; ১০:২৯.
১২. আমরা যিহোবার করুণা সম্বন্ধে কী জানি? কিছু উদাহরণ দিন।
১২ আসুন আমরা দেখি, যিহোবা কতটা করুণাময়। আমরা যেমনটা দেখলাম, ‘যিহোবা চান না, কেউ ধ্বংস হয়ে যাক।’ কীভাবে যিহোবা এই কথাটা প্রমাণ করেছিলেন? যারা গুরুতর পাপ করেছিল, তাদের সঙ্গে যিহোবা কীভাবে আচরণ করেছিলেন? রাজা দায়ূদ ব্যভিচার করেছিলেন এবং একজন ব্যক্তিকে খুন করিয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি যখন মন থেকে অনুতপ্ত হয়েছিলেন, তখন যিহোবা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। (২ শমূ. ১২:১-১৩) রাজা মনঃশি তার জীবনে অনেক খারাপ খারাপ কাজ করেছিলেন, কিন্তু তিনি যখন অনুতপ্ত হয়েছিলেন, তখন যিহোবা তাকে করুণা দেখিয়েছিলেন এবং ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। (২ বংশা. ৩৩:৯-১৬) এখান থেকে আমরা শিখতে পারি, যিহোবা যখন করুণা দেখানোর কোনো কারণ খুঁজে পান, তখন তিনি করুণা দেখান। তাই আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, যে-লোকেরা গুরুতর পাপ করেছিল, কিন্তু পরে তাদের পাপ স্বীকার করেছিল এবং অনুতপ্ত হয়েছিল, তাদের যিহোবা পুনরুত্থিত করবেন।
১৩. (ক) কেন যিহোবা নীনবীর লোকদের প্রতি করুণা দেখিয়েছিলেন? (খ) পরবর্তী সময়ে যিশু নীনবীর লোকদের বিষয়ে কী বলেছিলেন?
১৩ আমরা আরেকটা বিষয় জানি। আমরা জানি, যিহোবা নীনবীর লোকদের প্রতি করুণা দেখিয়েছিলেন। তাদের বিষয়ে যিহোবা যোনাকে বলেছিলেন, “তাহাদের দুষ্টতা আমার সম্মুখে উঠিয়াছে।” কিন্তু, পরে তারা খারাপ কাজগুলো করা ছেড়ে দিয়েছিল এবং অনুতপ্ত হয়েছিল। এটা দেখে যিহোবা তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তবে, যোনা খুব রেগে গিয়েছিলেন এবং নীনবীর লোকদের প্রতি একটুও করুণা দেখাননি। তখন যিহোবা যোনাকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, নীনবীর লোকেরা “দক্ষিণ হস্ত হইতে বাম হস্তের প্রভেদ জানে না” অর্থাৎ তারা জানে না, কোনটা সঠিক ও কোনটা ভুল। সত্যিই, যিহোবার চিন্তাভাবনা যোনার চেয়ে কত আলাদা ছিল! (যোনা ১:১, ২; ৩:১০; ৪:৯-১১) পরবর্তী সময়ে যিশু এই উদাহরণের সাহায্যে শিখিয়েছিলেন যে, যিহোবা হলেন একজন করুণাময় ঈশ্বর এবং তিনি সবসময় ন্যায়বিচার করেন। নীনবীর লোকেরা অনুতপ্ত হয়েছিল, তাই যিশু বলেছিলেন, ‘বিচারের সময় নীনবীর লোকেরাও পুনরুত্থিত হবে।’—মথি ১২:৪১.
১৪. যখন অধার্মিক লোকদের ‘বিচারের’ জন্য পুনরুত্থিত করা হবে, তখন নীনবীর লোকদের কী হবে?
১৪ নীনবীর লোকদের “বিচারের সময়” পুনরুত্থিত করা হবে। এখানে কোন ধরনের ‘বিচার’ সম্বন্ধে বলা হয়েছে? যিশু বলেছিলেন, ভবিষ্যতে মৃত ব্যক্তিদের ‘বিচারের’ জন্য পুনরুত্থিত করা হবে। (যোহন ৫:২৯) যিশু হাজার বছরের রাজত্বের সময়ের কথা বলছিলেন, যখন তিনি ‘ধার্মিক ও অধার্মিক উভয় প্রকার লোকদের পুনরুত্থিত’ করবেন। (প্রেরিত ২৪:১৫) অধার্মিক লোকদের ‘বিচারের’ জন্য পুনরুত্থিত করা হবে। এর মানে হল, পরমদেশে পুনরুত্থিত করার পর তাদের ঈশ্বর সম্বন্ধে শেখানো হবে আর তারপর তাদের বিচার করা হবে। যিহোবা ও যিশু এই বিষয়ে লক্ষ রাখবেন যে, তারা কেমন আচার-আচরণ করছে এবং তারা নিজেদের পরিবর্তন করছে কি না আর সেই অনুযায়ী তাদের বিচার করবেন। সেইসময় নীনবীর লোকদের মধ্যে কেউ যদি যিহোবাকে উপাসনা করতে না চায়, তা হলে তিনি তাকে শেষ করে দেবেন। (যিশা. ৬৫:২০) কিন্তু, যারা যিহোবাকে উপাসনা করার সিদ্ধান্ত নেবে, তারা চিরকাল বেঁচে থাকার সুযোগ পাবে।—দানি. ১২:২.
১৫. (ক) কেন আমাদের জোর গলায় বলা উচিত নয় যে, সদোম ও ঘমোরাতে যে-লোকেরা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, তারা আর পুনরুত্থিত হবে না? (খ) যিহূদা ৭ অধ্যায়ে লেখা কথাগুলো থেকে আমরা কী বুঝতে পারি? (“যিহূদার কথাগুলোর মানে কী ছিল?” বক্স দেখুন।)
১৫ যিশু বলেছিলেন, তাঁর দিনে যারা তাঁর শিক্ষা গ্রহণ করেনি এবং তাঁর কথা শুনতে চায়নি, “বিচারদিনে” তাদের অবস্থা সদোম ও ঘমোরার লোকদের চেয়েও খারাপ হবে। (মথি ১০:১৪, ১৫; ১১:২৩, ২৪; লূক ১০:১২) যিশু কি এটা বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, সদোম ও ঘমোরার লোকদের চেয়েও তাঁর দিনের লোকেরা খারাপ ছিল? আমরা হয়তো তা-ই মনে করতে পারি। কিন্তু যিশুর কথাগুলো থেকে বোঝা যায়, সদোম ও ঘমোরার লোকদের জন্য আশা রয়েছে। তাদের বিষয়ে বলার সময়ে যিশু ‘বিচারদিন’ শব্দটা ব্যবহার করেছিলেন। আর লক্ষ করুন, নীনবীর লোকদের বিষয়ে বলার সময়েও যিশু “বিচারের সময়” শব্দগুলো ব্যবহার করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে, তারা সত্যিই পুনরুত্থিত হবে। তাই আমরা বলতে পারি, সদোম ও ঘমোরার কিছু লোককে পুনরুত্থিত করা হতে পারে। আরেকটা বিষয় লক্ষ করুন। নীনবীর লোকদের মতো সদোম ও ঘমোরার লোকেরাও অনেক খারাপ কাজ করত। নীনবীর লোকেরা অনুতপ্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল, কিন্তু সদোম ও ঘমোরার লোকেরা কোনো সুযোগই পায়নি। এ ছাড়া যিশু বলেছিলেন, ‘যারা মন্দ কাজ করেছে, তাদের বিচারের’ জন্য পুনরুত্থিত করা হবে। (যোহন ৫:২৯) এই কারণেও আমরা বলতে পারি, সদোম ও ঘমোরার কিছু লোককে পুনরুত্থিত করা হতে পারে। তাই, আমরা হয়তো তাদের যিহোবা ও যিশু সম্বন্ধে শেখানোর সুযোগ পাব।
১৬. কীভাবে যিহোবা স্থির করবেন, তিনি কাকে পুনরুত্থিত করবেন আর কাকে পুনরুত্থিত করবেন না? (যিরমিয় ১৭:১০)
১৬ যিরমিয় ১৭:১০ পদ পড়ুন। এই পদে আরেকটা বিষয় বলা রয়েছে, যেটা আমরা জানি। আমরা জানি, যিহোবা ‘অন্তঃকরণের অনুসন্ধান করেন, মর্ম্মের পরীক্ষা করেন।’ ভবিষ্যতে যিহোবা যখন স্থির করবেন, কাকে পুনরুত্থিত করা হবে, তখন তিনি প্রত্যেক মানুষকে “আপন আপন আচরণানুসারে আপন আপন কর্ম্মের ফল” দেবেন। প্রয়োজনের সময়ে যিহোবা কড়া হন, আবার প্রয়োজনের সময়ে তিনি করুণাও দেখান। তাই, কোনো ব্যক্তির বিষয়ে আমাদের ধরে নেওয়া উচিত নয় যে, তিনি পুনরুত্থিত হবেন না। এমনটা আমরা শুধুমাত্র তাদের ক্ষেত্রে বলতে পারি, যাদের বিষয়ে বাইবেলে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।
‘সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা ন্যায়বিচার করবেন’
১৭. যে-লোকেরা মারা গিয়েছে, তাদের কী হবে?
১৭ আদম ও হবা যখন থেকে শয়তানের পক্ষ নিয়েছিলেন এবং যিহোবার বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন, তখন থেকে আজ পর্যন্ত কোটি কোটি লোক মারা গিয়েছে। মৃত্যু হল আমাদের “শত্রু” আর সে অসংখ্য লোকের জীবন কেড়ে নিয়েছে। (১ করি. ১৫:২৬) কিন্তু যারা মারা গিয়েছে, তাদের কী হবে? ১,৪৪,০০০ জন ব্যক্তির মধ্যে যারা মারা গিয়েছে, তারা ইতিমধ্যেই স্বর্গে জীবন লাভ করেছে। কিন্তু, তাদের মধ্যে যারা এখনও পৃথিবীতে বেঁচে রয়েছে, তারাও স্বর্গে অনন্তজীবন লাভ করবে। (প্রকা. ১৪:১) এ ছাড়া, পৃথিবীতে এক বড়ো আকারে ‘ধার্মিক লোকদের পুনরুত্থিত’ করা হবে, যারা যিহোবাকে ভালোবাসে। তারা যদি খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্বের সময়ে এবং চূড়ান্ত পরীক্ষায় বিশ্বস্ত থাকে, তা হলে তারা পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার সুযোগ পাবে। (দানি. ১২:১৩; ইব্রীয় ১২:১) হাজার বছর চলাকালীন ‘অধার্মিক লোকদেরও’ পুনরুত্থিত করা হবে। তাদের মধ্যে সেই লোকেরা থাকবে, যারা কখনো যিহোবার সেবা করেনি অথবা যারা মন্দ কাজ করত। তারা নিজেদের সংশোধন করার এবং যিহোবাকে সেবা করার সুযোগ পাবে। (লূক ২৩:৪২, ৪৩) কিন্তু, কিছু লোক খুবই দুষ্ট ছিল। তারা জেনে-শুনে যিহোবা এবং তাঁর উদ্দেশ্যের বিরুদ্ধে গিয়েছিল। তাই, যিহোবা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, তিনি তাদের পুনরুত্থিত করবেন না।—লূক ১২:৪, ৫.
১৮-১৯. (ক) কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা ন্যায়বিচার করবেন? (যিশাইয় ৫৫:৮, ৯) (খ) পরের প্রবন্ধে কী নিয়ে আলোচনা করা হবে?
১৮ আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা সবসময় ন্যায়বিচার করেন। অব্রাহামও এই বিষয়টা ভালোভাবে জানতেন। তিনি জানতেন, ‘সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা ন্যায়বিচার করবেন’ এবং তিনি খুবই করুণাময়। তিনি সমস্ত কিছুই জানেন আর যা সঠিক, তা-ই করেন। যিহোবা তাঁর পুত্রকেও ন্যায়বিচার করতে শিখিয়েছেন এবং বিচার করার সমস্ত দায়িত্ব তাঁকে দিয়েছেন। (যোহন ৫:২২) তাঁরা দু-জনেই মানুষের হৃদয় পড়তে পারেন এবং জানেন, প্রত্যেক ব্যক্তি ভিতর থেকে কেমন। (মথি ৯:৪) তাই, যিহোবা ও যিশু সবসময় ‘ন্যায়বিচার করবেন।’
১৯ আসুন আমরা নিশ্চিত থাকি, যিহোবা সমস্ত কিছুই জানেন এবং এটা মনে রাখি, আমরা কখনোই অন্যদের বিচার করার যোগ্য নই। একমাত্র যিহোবাই এটার যোগ্য। (পড়ুন, যিশাইয় ৫৫:৮, ৯.) তাই, আমরা আস্থা রাখতে পারি, যিহোবা অবশ্যই ন্যায়বিচার করবেন আর আমাদের রাজা যিশুও তাঁর পিতার মতো ন্যায়বিচার করবেন এবং করুণা দেখাবেন। (যিশা. ১১:৩, ৪) কিন্তু, যিহোবা ও যিশু মহাক্লেশের সময়ে কীভাবে লোকদের বিচার করবেন? এই বিষয়ে আমরা কী জানি আর কী জানি না? পরের প্রবন্ধে এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।
গান ৫৭ সবার কাছে প্রচার করি
b আদম, হবা ও কয়িনকে পুনরুত্থিত করা হবে কি হবে না, তা জানার জন্য ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১২ পৃষ্ঠায় দেওয়া পাদটীকা দেখুন।
c যোহন ১৭:১২ পদে যিহূদাকে “বিনাশসন্তান” বলা হয়েছে। এটা থেকে বোঝা যায়, তাকে চিরকালের জন্য ধ্বংস করা হয়েছে এবং তাকে পুনরুত্থিত করা হবে না।