অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৪
গান ৮ যিহোবা আমাদের আশ্রয়
“বেছে নাও যে, তোমরা কার সেবা করবে”
“আমি এবং আমার পরিবার, আমরা যিহোবার সেবা করব।”—যিহো. ২৪:১৫.
আমরা কী শিখব?
আমরা সেই বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দেব, যেগুলোর কারণে আমরা যিহোবার সেবা করা বেছে নিয়েছি।
১. আমরা যদি প্রকৃতই সুখী হতে চাই, তা হলে আমাদের কী করা উচিত এবং কেন? (যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮)
আমাদের স্বর্গীয় পিতা আমাদের খুব ভালোবাসেন। তিনি চান আমরা যেন এখন ও সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে জীবন উপভোগ করি। (উপ. ৩:১২, ১৩) তিনি আমাদের অসাধারণ দক্ষতা দিয়েছেন, তবে তিনি আমাদের এমনভাবে সৃষ্টি করেননি যে, আমরা একে অন্যের উপর কর্তৃত্ব করি অথবা কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল, এটা আমরা নিজেরাই স্থির করি। (উপ. ৮:৯; যির. ১০:২৩) যিহোবা জানেন, আমরা যদি তাঁর মান অনুযায়ী জীবনযাপন করি এবং তাঁর সেবা করি, তা হলেই আমরা প্রকৃত সুখী হতে পারব।—পড়ুন, যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮.
২. শয়তান কোন দাবি করেছে আর শয়তানের দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য যিহোবা কী করেছেন?
২ শয়তান দাবি করেছে যে, মানুষ যিহোবাকে ছাড়াই আনন্দে থাকতে পারে এবং একে অন্যের উপর কর্তৃত্ব করে সফল হতে পারে। (আদি. ৩:৪, ৫) শয়তানের এই দাবি যে মিথ্যা, তা প্রমাণ করার জন্য যিহোবা কিছু সময়ের জন্য মানুষকে নিজেদের উপর কর্তৃত্ব করার অধিকার দিয়েছেন। আর বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, এর পরিণতি কত খারাপ হয়েছে। অন্যদিকে, বাইবেলে এমন অনেক পুরুষ এবং নারীর উদাহরণ দেওয়া রয়েছে, যারা যিহোবার সেবা করে অনেক আনন্দ লাভ করেছিল। তাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম উদাহরণ হলেন যিশু খ্রিস্ট। আসুন, আমরা এটা জানার চেষ্টা করি, যিশু কেন যিহোবার সেবা করা বেছে নিয়েছিলেন। এরপর আমরা জানব, যিহোবা কেন আমাদের উপাসনা পাওয়ার যোগ্য। আর শেষে আমরা এটা দেখব যে, আমরা কোন কোন কারণে যিহোবার সেবা করা বেছে নিয়েছি।
কেন যিশু যিহোবার সেবা করা বেছে নিয়েছিলেন?
৩. শয়তান যিশুকে কী বলেছিল, কিন্তু যিশু কী করা বেছে নিয়েছিলেন?
৩ যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তাঁকে বেছে নিতে হত যে, তিনি কার সেবা করবেন। যেমন, তাঁর বাপ্তিস্মের কিছু সময় পর শয়তান তাঁকে জগতের সমস্ত রাজ্য দেখিয়েছিল এবং বলেছিল, তিনি যদি এক বার তার উপাসনা করেন, তা হলে সে এই সমস্ত কিছু তাঁকে দিয়ে দেবে। তখন যিশু তাকে বলেছিলেন, “দূর হও শয়তান! কারণ লেখা আছে: ‘তোমার ঈশ্বর যিহোবাকেই উপাসনা করবে এবং একমাত্র তাঁকেই পবিত্র সেবা প্রদান করবে।’” (মথি ৪:৮-১০) যিশু কেন যিহোবার সেবা করা বেছে নিয়েছিলেন? আসুন আমরা কিছু কারণ লক্ষ করি।
৪-৫. যিশু কোন কারণগুলোর জন্য যিহোবার সেবা করা বেছে নিয়েছিলেন?
৪ যে-প্রধান কারণে যিশু যিহোবার সেবা করা বেছে নিয়েছিলেন, সেটা হল, তিনি যিহোবাকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন এবং তাঁর সঙ্গে যিহোবার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। (যোহন ১৪:৩১) এ ছাড়া, তিনি এই কারণেও যিহোবার সেবা করা বেছে নিয়েছিলেন, কারণ একমাত্র যিহোবাই উপাসনা পাওয়ার যোগ্য। (যোহন ৮:২৮, ২৯; প্রকা. ৪:১১) যিশু জানেন, যিহোবা সবাইকে জীবন দিয়েছেন এবং তিনি হলেন বিশ্বাসযোগ্য এবং করুণাময় ঈশ্বর। (গীত. ৩৩:৪; ৩৬:৯; যাকোব ১:১৭) শুধু তা-ই নয়, যিহোবা যিশুকে সবসময় সত্যি কথা বলেছেন। আর যিশু জানেন যে, তাঁর কাছে যা-কিছু রয়েছে, সেই সমস্ত কিছু যিহোবা তাঁকে দিয়েছেন। (যোহন ১:১৪) যিশু শয়তানকেও ভালোভাবে জানতেন। তিনি জানতেন, শয়তানের কারণে মৃত্যু এসেছে আর সে মিথ্যাবাদী, লোভী ও স্বার্থপর। (যোহন ৮:৪৪) তাই, তিনি কখনোই শয়তানের মতো হতে চাননি এবং যিহোবার বিরুদ্ধে যেতে চাননি।—ফিলি. ২:৫-৮.
৫ যিশু আরেকটা কারণে যিহোবার সেবা করা বেছে নিয়েছিলেন। যিশু জানতেন, তিনি যদি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকেন, তা হলে এর কতই-না ভালো ফল আসবে! (ইব্রীয় ১২:২) তিনি তাঁর পিতার নামকে পবিত্র করতে পারবেন এবং শয়তানের কারণে যে-পাপ ও মৃত্যু এসেছে, সেটা থেকে আমাদের মুক্ত করতে পারবেন।
যিহোবা কেন আমাদের উপাসনা পাওয়ার যোগ্য?
৬-৭. (ক) বর্তমানে অনেক লোক কেন যিহোবার উপাসনা করে না? (খ) কেন একমাত্র যিহোবাই আমাদের উপাসনা পাওয়ার যোগ্য?
৬ বর্তমানে, অনেক লোক যিহোবার সেবা করে না কারণ তারা তাঁকে জানে না। তারা জানে না যে, যিহোবার কত চমৎকার গুণ রয়েছে এবং তিনি তাদের জন্য কী কী করেছেন। এই লোকেরা ঠিক এথেন্সের লোকদের মতো, যাদের কাছে পৌল প্রচার করেছিলেন।—প্রেরিত ১৭:১৯, ২০, ৩০, ৩৪.
৭ পৌল এথেন্সের লোকদের বলেছিলেন যে, সত্য ঈশ্বর ‘লোকদের জীবন ও শ্বাস এবং সমস্ত কিছু দেন। কারণ তাঁর মাধ্যমেই আমরা জীবন, গতি ও সত্তা লাভ করেছি।’ এ ছাড়া, পৌল বলেছিলেন, ঈশ্বর হলেন আমাদের সৃষ্টিকর্তা, “তিনি এক ব্যক্তি থেকে সমস্ত জাতির লোককে তৈরি করেছেন।” তাই, একমাত্র যিহোবাই উপাসনা পাওয়ার যোগ্য।—প্রেরিত ১৭:২৫, ২৬, ২৮.
৮. যিহোবা কী করেন না? বুঝিয়ে বলুন।
৮ যিহোবা আমাদের সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি নিখিলবিশ্বের শাসক। তিনি চাইলে তাঁর উপাসনা করার জন্য আমাদের জোর করতে পারতেন, কিন্তু তিনি এমনটা করেন না এবং কখনো করবেনও না। এর পরিবর্তে, তিনি চান যেন আমরা মন থেকে তাঁর উপাসনা করি। এর জন্য তিনি কী করেছেন? যিহোবা এই বিষয়টার অনেক প্রমাণ দিয়েছেন যে, তিনি অস্তিত্বে রয়েছেন এবং তিনি প্রত্যেক ব্যক্তিকে অনেক ভালোবাসেন। আর তিনি চান যেন যত বেশি সম্ভব লোক তাঁর বন্ধু হয় এবং তাঁর সেবা করে। (১ তীম. ২:৩, ৪) তাই, তিনি আমাদের প্রশিক্ষণ দেন, যাতে আমরা লোকদের সুসমাচার জানাই এবং তাদের এটা বলি যে, যিহোবা ভবিষ্যতে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য কী করতে চলেছেন। (মথি ১০:১১-১৩; ২৮:১৯, ২০) তিনি মণ্ডলীরও ব্যবস্থা করেছেন, যাতে আমরা একসঙ্গে মিলে তাঁর উপাসনা করি এবং তিনি প্রাচীনদের নিযুক্ত করেছেন, যারা প্রেমের সঙ্গে আমাদের যত্ন নেন।—প্রেরিত ২০:২৮.
৯. কেন আমরা বলতে পারি, যিহোবা সমস্ত মানুষকে অনেক ভালোবাসেন?
৯ যিহোবা সেই লোকদেরও ভালোবাসেন, যারা এটা বিশ্বাস করে না যে, একজন ঈশ্বর রয়েছেন। একটু চিন্তা করুন, মানব ইতিহাসের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত এমন লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি রয়েছে, যারা নিজেদের মান অনুযায়ী জীবনযাপন করে এবং নিজেরাই স্থির করে যে, তাদের জন্য কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল। কিন্তু তা সত্ত্বেও, যিহোবা তাদের সেই সমস্ত কিছু দিয়ে এসেছেন, যেগুলোর ফলে তারা বেঁচে থাকতে পারে এবং জীবন উপভোগ করতে পারে। (মথি ৫:৪৪, ৪৫; প্রেরিত ১৪:১৬, ১৭) শুধু তা-ই নয়, যিহোবার কারণেই মানুষেরা বন্ধু তৈরি করতে পারে, বিয়ে করে সন্তানের জন্ম দিতে পারে এবং নিজের কাজে আনন্দ লাভ করতে পারে। (গীত. ১২৭:৩; উপ. ২:২৪) এই প্রমাণগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবা সমস্ত মানুষকে খুব ভালোবাসেন। (যাত্রা. ৩৪:৬) এখন আসুন আমরা এমন কিছু কারণের উপর মনোযোগ দিই যে, কেন আমরা যিহোবার সেবা করা বেছে নিয়েছি এবং তিনি আমাদের কোন কোন আশীর্বাদ দেন।
কেন আমরা যিহোবার সেবা করা বেছে নিয়েছি?
১০. (ক) কেন আমরা যিহোবার সেবা করি? (মথি ২২:৩৭) (খ) কীভাবে যিহোবা আপনার প্রতি ধৈর্য ধরেছেন? (গীতসংহিতা ১০৩:১৩, ১৪)
১০ আমরা যিহোবার সেবা করি কারণ আমরা যিশুর মতো তাঁকে অনেক ভালোবাসি এবং তাঁর সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব রয়েছে। (পড়ুন, মথি ২২:৩৭.) আমরা জেনেছি যে, যিহোবা কেমন ঈশ্বর এবং তাঁর কত চমৎকার গুণ রয়েছে। তাই আমরা তাঁর প্রতি আকর্ষিত হই। একটু চিন্তা করুন, যিহোবা আমাদের প্রতি কত ধৈর্য ধরেন! যেমন, ইজরায়েলীয়েরা যখন যিহোবার আজ্ঞা অমান্য করেছিল, তখন যিহোবা তাদের কাছে অনুরোধ করেছিলেন: “তোমরা প্রত্যেক জন আপন আপন কুপথ হইতে ফির।” (যির. ১৮:১১) যিহোবা ধৈর্য ধরে তাদের সঙ্গে আচরণ করেছিলেন। তিনি স্মরণে রাখেন যে, আমরা ধুলো এবং প্রায়ই আমরা ভুল করে ফেলি। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১০৩:১৩, ১৪.) আপনি যখন যিহোবার ধৈর্য এবং তাঁর অন্যান্য অসাধারণ গুণ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন, তখন আপনি কি যিহোবাকে চিরকাল ধরে সেবা করতে অনুপ্রাণিত হন না?
১১. আমরা আর কোন কারণে যিহোবার সেবা করা বেছে নিয়েছি?
১১ আমরা যিহোবার সেবা করি কারণ আমরা জানি, একমাত্র তিনিই উপাসনা পাওয়ার যোগ্য। (মথি ৪:১০) এ ছাড়া, আমরা জানি যে, আমরা যদি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকি, তা হলে এর কতই-না চমৎকার ফল আসবে! আমরা ঈশ্বরের নাম পবিত্র করতে পারব, শয়তানকে মিথ্যা প্রমাণ করতে পারব এবং আমাদের পিতা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করতে পারব। শুধু তা-ই নয়, আমরা যদি বর্তমানে যিহোবার সেবা করা বেছে নিই, তা হলে আমরা চিরকাল ধরে তাঁর সেবা করে চলতে পারব!—যোহন ১৭:৩.
১২-১৩. আমরা জেন ও প্যামের অভিজ্ঞতা থেকে কী শিখতে পারি?
১২ ছোটো থেকেই আমরা যিহোবাকে ভালোবাসতে শিখতে পারি। এরপর আমরা যখন ধীরে ধীরে বড়ো হই, তখন যিহোবার প্রতি আমাদের ভালোবাসা আরও গভীর হয়ে যায়। জেন ও প্যাম নামে দু-জন বোনের অভিজ্ঞতার উপর মনোযোগ দিন।a জেনের বয়স যখন ১১ এবং প্যামের বয়স ১০, তখন তারা দু-জনেই বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করে। তাদের বাবা-মা সাক্ষিদের সঙ্গে অধ্যয়ন করতে চাইত না, কিন্তু তারা জেন ও প্যামকে অধ্যয়ন করার অনুমতি দিয়েছিল। তবে, তাদের একটা শর্ত ছিল। জেন ও প্যামকে প্রতি সপ্তাহে চার্চেও যেতে হবে। জেন বলেন, “সাক্ষিদের সঙ্গে অধ্যয়ন করে আমি অনেক উপকার পেয়েছিলাম। স্কুলে যখন সঙ্গীসাথিরা আমাকে ড্রাগ নেওয়ার অথবা অনৈতিক কাজ করার জন্য বলেছিল, তখন আমি তাদের দৃঢ়ভাবে ‘না’ বলতে পেরেছিলাম।”
১৩ কিছু বছর পর, তারা দু-জনেই প্রকাশক হয়। এর কিছু সময় পর তারা অগ্রগামী সেবা শুরু করে। আর যখন তাদের বাবা-মা বয়স্ক হয়ে যায়, তখন তারা তাদের যত্ন নিতে শুরু করে। যিহোবা তাদের জন্য যা-কিছু করেছেন, সেই বিষয়ে জেন বলেন, “আমি আমার জীবনে এটা অনুভব করেছি যে, যিহোবা কীভাবে তাঁর বন্ধুদের যত্ন নেন। আর যেমনটা ২ তীমথিয় ২:১৯ পদে লেখা রয়েছে, ‘যিহোবা জানেন, কারা তাঁর নিজের লোক।’” সত্যিই, যারা যিহোবাকে ভালোবাসে এবং তাঁর সেবা করা বেছে নেয়, যিহোবা সবসময় তাদের যত্ন নেন!
১৪. কীভাবে আমরা আমাদের কথা ও কাজের মাধ্যমে যিহোবার নামের উপর আসা নিন্দা দূর করতে পারি? (ছবিগুলোও দেখুন।)
১৪ আমরা যিহোবার নামের উপর আসা নিন্দা দূর করতে চাই। তাই, আমরা লোকদের কাছে তাঁর সম্বন্ধে সত্য জানাই। ধরুন, আপনার এক প্রিয় বন্ধু রয়েছে, যে সবার সঙ্গে সদয়ভাবে আচরণ করে, সবাইকে সাহায্য করে এবং দ্রুত ক্ষমা করে দেয়। একদিন আপনি জানতে পারেন, কেউ আপনার সেই বন্ধুর উপর এই মিথ্যা অভিযোগ এনেছে যে, সে খুবই খারাপ লোক এবং একজন বিশ্বাসঘাতক। এই ক্ষেত্রে আপনি কী করবেন? আপনি সবাইকে বলবেন যে, আপনার বন্ধু এমন নয়। একইভাবে, শয়তান এবং যারা তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা যিহোবা সম্বন্ধে মিথ্যা কথা ছড়িয়ে থাকে এবং তাঁর উপর নিন্দা নিয়ে আসে। তাই, আমরা লোকদের যিহোবা সম্বন্ধে সত্যটা বলি এবং তাঁর নামের উপর আসা নিন্দা দূর করি। (গীত. ৩৪:১; যিশা. ৪৩:১০) এভাবে, আমরা আমাদের কথা ও কাজের মাধ্যমে দেখাই যে, আমরা যিহোবাকে ভালোবাসি এবং মনপ্রাণ দিয়ে তাঁর সেবা করতে চাই।
আপনি কি যিহোবার নামের উপর আসা নিন্দা দূর করবেন? (১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)b
১৫. পৌল নিজের জীবনে যে-পরিবর্তনগুলো করেছিলেন, সেগুলোর ফলে তিনি কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন? (ফিলিপীয় ৩:৭, ৮)
১৫ আমরা উদ্যোগের সঙ্গে যিহোবার সেবা করতে চাই এবং তাঁকে খুশি করতে চাই, তাই আমরা নিজেদের জীবনে যেকোনো পরিবর্তন করার জন্য প্রস্তুত থাকি। প্রেরিত পৌলও এমনটাই করেছিলেন। সমাজে তার এক বড়ো পদ এবং খ্যাতি ছিল। কিন্তু, খ্রিস্টের শিষ্য হওয়ার এবং যিহোবার সেবা করার জন্য তিনি এগুলো ত্যাগ করেছিলেন। (গালা. ১:১৪) এই কারণে তিনি প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন এবং স্বর্গে যিশুর সঙ্গে রাজত্ব করার এক বিশেষ সুযোগও পেয়েছিলেন। যিহোবার সেবা করার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে পৌল কখনো আপশোস করেননি এবং আমরাও কখনো আপশোস করব না।—পড়ুন, ফিলিপীয় ৩:৭, ৮.
১৬. আমরা জুলিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে কী শিখতে পারি? (ছবিগুলোও দেখুন।)
১৬ আমরা যদি যিহোবার সেবাকে আমাদের জীবনে প্রথম স্থানে রাখি, তা হলে আমরা বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে অনেক আশীর্বাদ লাভ করব। জুলিয়ার উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। ছোটোবেলায় তিনি চার্চে গান গাইতেন। তার গান শুনে একজন অপেরা গায়ক বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি একজন বড়ো গায়িকা হতে পারবেন। আর তাই তিনি তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। কিছু সময় পর জুলিয়া বিখ্যাত হয়ে যান এবং বড়ো বড়ো জায়গায় গিয়ে গান গাইতে শুরু করেন। এরপর তিনি একটা নাম করা সংগীত অ্যাকাডেমিতে যেতে শুরু করেন। সেখানে একটা ছেলে তাকে ঈশ্বর সম্বন্ধে বলে এবং তাকে জানায় যে, ঈশ্বরের নাম হল যিহোবা। এরপর কী হয়েছিল? জুলিয়া সপ্তাহে দু-বার বাইবেল অধ্যয়ন করা শুরু করেন। কিছুসময় পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি তার সংগীতের ক্যারিয়ার ছেড়ে দিয়ে যিহোবার সেবা করবেন। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া তার জন্য সহজ ছিল না। তিনি বলেন, “অনেক লোক আমাকে বলেছিল যে, আমি আমার দক্ষতা নষ্ট করে দিচ্ছি। কিন্তু, আমি সারাজীবন ধরে যিহোবার সেবা করতে চেয়েছিলাম।” জুলিয়া ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যিহোবার সেবা করছেন। নিজের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি এখন কেমন অনুভব করেন? তিনি বলেন, “আমি এটা ভেবে কতই-না শান্তি পাই যে, আমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আর আমি পুরোপুরি নিশ্চিত, ভবিষ্যতে যিহোবা আমার মনের সমস্ত ইচ্ছা পূরণ করবেন।”—গীত. ১৪৫:১৬.
আমরা যখন যিহোবার সেবাকে আমাদের জীবনে প্রথম স্থানে রাখি, তখন আমাদের জীবন আনন্দে পরিপূর্ণ হয় (১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)c
যিহোবার সেবা করে চলুন
১৭. (ক) যারা এখনও পর্যন্ত যিহোবার সেবা করা বেছে নেয়নি, তাদের কী করা উচিত এবং কেন? (খ) যারা যিহোবার সেবা করে চলছে, তারা কী মনে রাখতে পারে?
১৭ খুব শীঘ্রই এই জগৎ শেষ হতে চলেছে। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “আর ‘অল্পসময় মাত্র’ এবং ‘যিনি আসছেন, তিনি উপস্থিত হবেন, দেরি করবেন না।’” (ইব্রীয় ১০:৩৭) তাই, লোকদের কী করা উচিত? যারা এখনও পর্যন্ত যিহোবাকে সেবা করা বেছে নেয়নি, তাদের খুব শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তারা যিহোবার সেবা করবে কি না, কারণ খুব কম সময় বাকি রয়েছে। (১ করি. ৭:২৯) আর যারা যিহোবার সেবা করে চলছে, তারা মনে রাখতে পারে, তারা যে-সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে, তা কেবল ‘অল্পসময়ের’ জন্য।
১৮. যিশু ও যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী চান?
১৮ যিশু তাঁর শিষ্যদের শুধু এটা বলেননি যে, আমাকে অনুসরণ করো বরং বলেছিলেন যে, আমাকে অনুসরণ করে চলো। (মথি ১৬:২৪) আপনি যদি বছরের পর বছর ধরে যিহোবার সেবা করে থাকেন, তা হলে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন যে, আপনি ভবিষ্যতেও এমনটা করে চলবেন। যিহোবা চান আপনি তাঁকে সেবা করার যে-সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেই সিদ্ধান্তে স্থির থাকার জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা করেন। এমনটা করা সহজ নয়। কিন্তু, তারপরও আমরা যদি তাঁর সেবা করে চলি, তা হলে বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে আমরা প্রচুর আশীর্বাদ পাব এবং প্রকৃত আনন্দ লাভ করব।—গীত. ৩৫:২৭.
১৯. আমরা জিনের অভিজ্ঞতা থেকে কী শিখতে পারি?
১৯ কিছু লোক মনে করে, তারা যদি যিহোবার সেবা করে, তা হলে তারা তাদের জীবনে আনন্দ করতে পারবে না। তুমি যদি একজন অল্পবয়সি হও, তা হলে তোমারও কি এমনটা মনে হয় যে, যিহোবার সেবা করলে তুমি তোমার জীবনে আনন্দ করতে পারবে না? জিন নামে একজন অল্পবয়সি ভাই বলে, “আমার মনে হত, যেহেতু আমি একজন যিহোবার সাক্ষি, তাই আমি আনন্দ করতে পারি না। আমি আমার চারপাশে অল্পবয়সিদের দেখি, তারা পার্টি করে, মেয়েদের সঙ্গে ঘুরতে যায় এবং দৌরাত্ম্যপূর্ণ ভিডিও গেম খেলে। কিন্তু, আমি শুধুমাত্র সভাতে ও প্রচারে যাই।” এইরকম চিন্তাভাবনা জিনের উপর কোন প্রভাব ফেলেছিল? সে বলে, “আমি কিছু সময় অন্য ছেলেদের দেখাদেখি তাদের মতো আনন্দ করতে শুরু করেছিলাম। আমি মণ্ডলীতে একরকম এবং বাইরে আরেক রকম জীবনযাপন করতাম। কিন্তু, আমার মনে কোনো আনন্দ ছিল না। এরপর আমি বাইবেলের সেই কথাগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে শুরু করি, যেগুলো মেনে চললে আমি উপকার লাভ করব এবং আমি স্থির করি যে, আমি সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে যিহোবার সেবা করব। সেই সময় থেকে এখনও পর্যন্ত আমি দেখেছি যে, যিহোবা আমার প্রতিটা প্রার্থনার উত্তর দিয়েছেন।”
২০. আমাদের কোন বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত?
২০ পঁয়ষট্টি গীতের লেখক তার গীতে যিহোবাকে বলেছিলেন, “সুখী সেই ব্যক্তি, যাকে তুমি বেছে নাও এবং নিজের কাছে নিয়ে আস, যাতে সে তোমার প্রাঙ্গণে বাস করে।” (গীত. ৬৫:৪) তাই, আসুন আমরা দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই, যেন আমরা যিহোবার সেবা করে চলি এবং যিহোশূয়ের মতো বলি: “আমি এবং আমার পরিবার, আমরা যিহোবার সেবা করব।”—যিহো. ২৪:১৫.
গান ২৮ যিহোবার বন্ধুত্ব লাভ করা
a কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
b ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: কিছু বিরোধী সম্মেলন স্থানের বাইরে দাঁড়িয়ে আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলছে। একজন মহিলা সেখান থেকে যাওয়ার সময় তাদের দেখছেন। এরপর তিনি পাশে থাকা আমাদের ট্রলির কাছে যান এবং সাক্ষিরা তাকে বাইবেল থেকে সত্য জানায়।
c ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: নাটকের আকারে এখানে দেখানো হয়েছে যে, যিহোবার সেবা করার জন্য জুলিয়া নিজের জীবনে কোন পরিবর্তন করেছিলেন।