অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩৩
গান ৪ যিহোবা প্রেমময় পালক
নিশ্চিত থাকুন, যিহোবা আপনাকে ভালোবাসেন
“আমি তোমার প্রতি চিরস্থায়ী দয়া করিলাম।”—যির. ৩১:৩.
আমরা কী শিখব?
আমরা জানতে পারব, কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন আর এই নিশ্চয়তা আমরা কীভাবে দৃঢ় করতে পারি।
১. কেন আপনি যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন? (ছবিও দেখুন।)
আপনার নিশ্চয়ই সেই দিনটার কথা মনে আছে, যে-দিন আপনি যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। আপনি যত যিহোবা সম্বন্ধে শিখতে শুরু করেছিলেন, তত আপনি তাঁকে ভালোবেসেছিলেন এবং আপনার জীবন তাঁর কাছে উৎসর্গ করেছিলেন। আপনি যিহোবার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, এখন থেকে আপনি তাঁর ইচ্ছাকে নিজের জীবনে প্রথম স্থান দেবেন এবং আপনার সমস্ত হৃদয়, সমস্ত প্রাণ, সমস্ত মন এবং সমস্ত শক্তি দিয়ে তাঁকে ভালোবাসবেন। (মার্ক ১২:৩০) সেইসময় থেকে যিহোবার প্রতি আপনার ভালোবাসা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। কেউ যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করে, “আপনি কি সত্যিই যিহোবাকে ভালোবাসেন?” তা হলে আপনি কী বলবেন? আপনি কোনোরকম ইতস্তত না করেই বলবেন যে, “হ্যাঁ, আমি যিহোবাকে খুব ভালোবাসি। আমি কাউকেই বা কোনো কিছুকে এতটা ভালোবাসি না!”
মনে করে দেখুন, আপনি যখন যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এবং বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন, তখন যিহোবার প্রতি আপনি কতটা ভালোবাসা অনুভব করেছিলেন! (১ অনুচ্ছেদ দেখুন)
২-৩. (ক) আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত হই বলে যিহোবা চান? (যিরমিয় ৩১:৩) (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী জানতে পারব?
২ কেউ যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করে, “আপনি কি নিশ্চিত, যিহোবা আপনাকে ভালোবাসেন?” তা হলে আপনি কী উত্তর দেবেন? আপনি কি এটা ভেবে একটু ইতস্ততবোধ করবেন যে, আপনি যিহোবার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নন? একজন বোন যিনি ছোটোবেলায় তার প্রিয়জনদের কাছ থেকে ভালোবাসা পাননি, তিনি বলেন: “আমি যিহোবাকে খুব ভালোবাসি আর এই বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু, যিহোবা আমাকে ভালোবাসেন কি না, সেই বিষয়ে কখনো কখনো আমার সন্দেহ হয়।” তাই প্রশ্ন হল, কীভাবে আপনি জানতে পারবেন যে, যিহোবা আপনার সম্বন্ধে আসলে কেমন অনুভব করেন?
৩ যিহোবা চান যেন আপনি এই বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত থাকেন যে, তিনি আপনাকে ভালোবাসেন। (পড়ুন, যিরমিয় ৩১:৩.) আসল বিষয়টা হল, যিহোবা আপনাকে তাঁর দিকে আকর্ষণ করেছেন। আপনি যখন যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এবং বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন, তখন আপনি তাঁর কাছ থেকে এক মূল্যবান উপহার পেয়েছিলেন আর সেটা হল, আপনার প্রতি তাঁর অটল প্রেম। এর মানে হল, যিহোবা আপনাকে গভীরভাবে ভালোবাসেন এবং আপনাকে কখনো একা ছেড়ে দেবেন না। যিহোবার এই অটল প্রেমের কারণে তিনি তাঁর বিশ্বস্ত সেবকদের আর সেইসঙ্গে আপনাকে তাঁর “নিজস্ব” সম্পদ হিসেবে দেখেন, তাই আপনি তাঁর কাছে খুবই মূল্যবান। (মালাখি ৩:১৭) প্রেরিত পৌল পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন যে, যিহোবা তাকে ভালোবাসেন। তাই তিনি লিখেছিলেন: “আমি নিশ্চিত, কি মৃত্যু, কি জীবন, কি স্বর্গদূত, কি সরকার, কি বর্তমান বিষয়, কি আসন্ন বিষয়, কি ক্ষমতা, কি উচ্চতা, কি গভীরতা, কি অন্য কোনো সৃষ্ট বস্তু, কিছুই . . . ঈশ্বরের প্রেম থেকে আমাদের আলাদা করতে পারবে না।” (রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯) যিহোবা চান পৌলের মতো আপনিও যেন নিশ্চিত থাকেন যে, তিনি আপনাকে ভালোবাসেন। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কেন আমাদের নিশ্চিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ যে, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন আর এই নিশ্চয়তা আমরা কীভাবে দৃঢ় করতে পারি।
কেন আমাদের নিশ্চিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ যে, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন?
৪. (ক) শয়তান আমাদের কী বিশ্বাস করাতে চায়? (খ) কিন্তু, কীভাবে আমরা শয়তানের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে পারি?
৪ এর ফলে, আমরা শয়তানের “ছলচাতুরীর” বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে পারব। (ইফি. ৬:১১) শয়তান চায় যেন আমরা যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দিই আর এর জন্য সে সব কিছু করতে পারে। শয়তানের ছলচাতুরীর মধ্যে একটা হল, সে আমাদের বিশ্বাস করাতে চায় যে, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন না। কিন্তু, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বাইবেল শয়তানকে একটা সিংহের সঙ্গে তুলনা করে, যে সবসময় এমন পশুকে আক্রমণ করার সুযোগ খোঁজে, যেটা দুর্বল এবং নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। একইভাবে, শয়তানও আমাদের সেইসময় আক্রমণ করে, যখন আমরা আবেগগতভাবে দুর্বল থাকি। যেমন হতে পারে, অতীতের কোনো তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে আমরা কষ্ট পাচ্ছি, বর্তমানে আমরা কোনো কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি অথবা আমরা এই নিয়ে দুশ্চিন্তা করছি যে, ভবিষ্যতে কী হবে। (হিতো. ২৪:১০) এইরকম সময়ে শয়তান আমাদের পরিস্থিতির সুযোগ নেয় এবং আমাদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করে, যাতে আমরা যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দিই। কিন্তু, আমরা যদি এই বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত থাকি যে, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন, তা হলে আমরা শয়তানের ছলচাতুরীর বিরুদ্ধে “দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে” পারব।—১ পিতর ৫:৮, ৯; যাকোব ৪:৭.
৫. কেন আমাদের এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ যে, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন এবং আমাদের মূল্যবান হিসেবে দেখেন?
৫ এর ফলে, আমরা যিহোবার আরও নিকটবর্তী হতে পারব। কেন আমরা এটা বলতে পারি? যিহোবা আমাদের এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন, যাতে আমরা অন্যদের ভালোবাসতে পারি এবং তাদের কাছ থেকে ভালোবাসা পেতে পারি। কেউ যখন আমাদের প্রতি প্রেম দেখায়, তখন আমরাও তার প্রতি প্রেম দেখাতে অনুপ্রাণিত হই। তাই, যত বেশি আমরা নিশ্চিত হব যে, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন, তত বেশি আমরা তাঁকে ভালোবাসতে পারব। (১ যোহন ৪:১৯) আর যত বেশি আমরা যিহোবাকে ভালোবাসব, তত বেশি তিনি আমাদের ভালোবাসবেন। বাইবেল বলে, “ঈশ্বরের নিকটবর্তী হও, তাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্তী হবেন।” (যাকোব ৪:৮) কিন্তু প্রশ্ন হল, কীভাবে আমরা এই বিষয়ে আমাদের নিশ্চয়তাকে দৃঢ় করতে পারি যে, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন?
কীভাবে আমরা নিজেদের এই নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন?
৬. আপনি যদি এই বিষয়ে নিশ্চিত না থাকেন যে, যিহোবা আপনাকে ভালোবাসেন, তা হলে আপনি কী করতে পারেন?
৬ যিহোবার কাছে অবিরত প্রার্থনা করুন আর বলুন, তিনি যেন আপনাকে তাঁর ভালোবাসার নিশ্চয়তা দেন। (লূক ১৮:১; রোমীয় ১২:১২) প্রতিদিন যিহোবার কাছে অনেক বার প্রার্থনা করুন। যিহোবাকে বলুন, আপনি যেন নিজেকে সেই দৃষ্টিতে দেখতে পারেন, যেভাবে তিনি আপনাকে দেখেন। আপনার হৃদয় যদি আপনাকে দোষী করে, তা হলে আপনার পক্ষে এটা বিশ্বাস করা কঠিন বলে মনে হতে পারে যে, যিহোবা আপনাকে ভালোবাসেন। কিন্তু মনে রাখবেন, যিহোবা আমাদের হৃদয়ের চেয়ে মহান। (১ যোহন ৩:১৯, ২০) তিনি আপনাকে আপনার চেয়েও বেশি ভালো করে জানেন। তিনি আপনার মধ্যে সেই ভালো গুণগুলো লক্ষ করেন, যেগুলো হয়তো আপনি নিজের মধ্যে দেখতে পান না। (১ শমূ. ১৬:৭; ২ বংশা. ৬:৩০) তাই, যিহোবার কাছে আপনার “হৃদয় উজাড় করে” দিন আর তাঁকে বলুন, তিনি যেন আপনাকে তাঁর ভালোবাসার নিশ্চয়তা দেন। (গীত. ৬২:৮, NW) এরপর আপনার প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করুন। আসুন দেখি, সেগুলো কী?
৭-৮. গীতসংহিতার পদগুলো থেকে আমরা কীভাবে নিশ্চিত হই যে, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন?
৭ যিহোবা যা বলেছেন, তা বিশ্বাস করুন। যিহোবা বাইবেল লেখকদের মাধ্যমে আমাদের জানিয়েছেন, তিনি আসলে কেমন ঈশ্বর। দায়ূদ একটা গীতে বলেছেন যে, যিহোবা আমাদের কতটা ভালোবাসেন। দায়ূদ লিখেছিলেন, “যিহোবা সেই ব্যক্তিদের কাছে থাকেন, যাদের মন ভেঙে গিয়েছে, তিনি সেই ব্যক্তিদের রক্ষা করেন, যারা নিরুৎসাহিত।” (গীত. ৩৪:১৮, পাদটীকা; NW) আপনি যখন খুবই নিরুৎসাহিত বোধ করেন, তখন আপনার হয়তো নিজেকে একেবারে একা বলে মনে হতে পারে। তবে, এইরকম পরিস্থিতিতে যিহোবা আপনার আরও কাছে থাকেন কারণ তিনি জানেন আপনার তাঁকে খুবই প্রয়োজন। আরও একটা গীতে দায়ূদ লিখেছিলেন, “আমার চোখের জল তোমার কুপায় ভরে রাখো।” (গীত. ৫৬:৮, NW) আপনি যখন কষ্টের মধ্যে থাকেন, তখন যিহোবা আপনার কষ্ট ভালোভাবে বুঝতে পারেন, আপনার প্রতিটা চোখের জল তাঁর কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। এটা এমন যেন তিনি আপনার চোখের জলকে তাঁর কুপায় ভরে রাখছেন, ঠিক যেমন প্রাচীন কালে পথযাত্রীরা তাদের কুপাতে জল ভরে রাখত এবং সেই জলের প্রতিটা ফোঁটা তাদের জন্য খুবই মূল্যবান ছিল। গীতসংহিতা ১৩৯:৩ পদে যিহোবা সম্বন্ধে লেখা আছে, “তুমি [যিহোবা] আমার সমস্ত আচার-আচরণ সম্বন্ধে ভালোভাবে জান।” আপনি যা-কিছু করেন, যিহোবা তা জানেন। কিন্তু, তিনি আপনার ভালো কাজগুলোর উপর বিশেষ মনোযোগ দেন। (ইব্রীয় ৬:১০) কেন? কারণ আপনি তাঁকে খুশি করার জন্য যে-প্রচেষ্টা করেন, সেটা তাঁর কাছে খুবই মূল্যবান।a
৮ বাইবেলের এমন পদগুলো থেকে আমরা কতই-না সান্ত্বনা লাভ করি! এই পদগুলোর মাধ্যমে যিহোবা যেন আপনাকে বলছেন, “আমি তোমাকে খুবই ভালোবাসি এবং তোমার জন্য অনেক চিন্তা করি।” কিন্তু, আমরা যেমনটা আগে দেখলাম, শয়তান আমাদের এটা বিশ্বাস করাতে চায় যে, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন না। তাই, আপনার মনে যদি এইরকম সন্দেহ আসে, ‘যিহোবা কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসেন?’ তা হলে, একটু থেমে চিন্তা করুন, “আমি কাকে বিশ্বাস করব, ‘মিথ্যার পিতাকে’ না কি ‘সত্যের ঈশ্বরকে?’”—যোহন ৮:৪৪; গীত. ৩১:৫.
৯. যারা যিহোবাকে ভালোবাসে, তাদের কাছে তিনি কোন প্রতিজ্ঞা করেছেন? (যাত্রাপুস্তক ২০:৫, ৬)
৯ চিন্তা করুন, যিহোবা তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা দেখে কেমন অনুভব করেন। লক্ষ করুন, যিহোবা মোশিকে এবং ইজরায়েলীয়দের কী বলেছিলেন। (পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ২০:৫, ৬.) যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যারা তাঁকে ভালোবাসে, তাদের প্রতি তিনি অটল প্রেম দেখান। এই কথাগুলো থেকে আমরা নিশ্চিত হই, এমনটা হতেই পারে না যে, কেউ যদি যিহোবাকে ভালোবাসে, তা হলে যিহোবা তার প্রতি ভালোবাসা দেখাবেন না। (নহি. ১:৫) তাই, যদি কখনো আপনার মনে এইরকম সন্দেহ আসে, ‘হয়তো যিহোবা আমাকে ভালোবাসেন না,’ তা হলে একটু থেমে চিন্তা করুন, ‘আমি কি যিহোবাকে ভালোবাসি?’ আপনি যদি যিহোবাকে ভালোবাসেন এবং তাঁকে খুশি করার জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা করেন, তা হলে আপনি পুরোপুরি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, যিহোবাও আপনাকে খুব ভালোবাসেন। (দানি. ৯:৪; ১ করি. ৮:৩) অন্য কথায় বললে, আপনি যদি যিহোবাকে ভালোবাসেন, তা হলে কি আপনার সন্দেহ করা উচিত যে, যিহোবা আপনাকে ভালোবাসেন না? মনে রাখবেন, যিহোবার ভালোবাসা অটল, তিনি কখনো আপনার প্রতি ভালোবাসা দেখানো বন্ধ করবেন না।
১০-১১. মুক্তির মূল্যকে আপনি কীভাবে দেখেন বলে যিহোবা চান? (গালাতীয় ২:২০)
১০ মুক্তির মূল্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন। যিহোবা মানবজাতির জন্য তাঁর পুত্র যিশু খ্রিস্টকে মুক্তির মূল্য হিসেবে দান করেছেন। এটা মানবজাতির জন্য তাঁর দেওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। (যোহন ৩:১৬) কিন্তু, যিহোবা কি এই উপহার ব্যক্তিগতভাবে আপনাকেও দিয়েছেন? হ্যাঁ দিয়েছেন! একটা উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। আপনার হয়তো মনে আছে, যিশুর শিষ্য হওয়ার আগে পৌল কিছু গুরুতর পাপ করেছিলেন। আর খ্রিস্টান হওয়ার পরও তাকে নিজের কিছু দুর্বলতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল। (রোমীয় ৭:২৪, ২৫; ১ তীম. ১:১২-১৪) কিন্তু, এরপরও তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে, যিহোবা ব্যক্তিগতভাবে তার জন্য নিজের পুত্রকে মুক্তির মূল্য হিসেবে দান করেছেন। (পড়ুন, গালাতীয় ২:২০.) কিন্তু মনে রাখবেন, এই কথাগুলো যিহোবা পৌলের মাধ্যমে বাইবেলে লিখিয়েছিলেন। আর বাইবেলে যা-কিছু লেখা হয়েছে, তা এই কারণেই লেখা হয়েছে, যেন আমরা সেগুলো থেকে শিক্ষালাভ করতে পারি। (রোমীয় ১৫:৪) এর মানে হল, যিহোবা চান পৌলের মতো আপনিও যেন নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, যিহোবা ব্যক্তিগতভাবে আপনার জন্য নিজের পুত্রকে মুক্তির মূল্য হিসেবে দান করেছেন। আপনি যখন এই বিষয়ে চিন্তা করবেন, যিহোবা আপনাকে কতই-না এক মূল্যবান উপহার দিয়েছেন, তখন আপনার এই নিশ্চয়তা আরও বেড়ে যাবে যে, তিনি আপনাকে ভালোবাসেন।
১১ আমরা যিহোবাকে এইজন্য ধন্যবাদ দিই যে, তিনি তাঁর পুত্র যিশুকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন যেন তিনি আমাদের জন্য নিজের জীবন দেন। তবে, যিশু আরও একটা কারণে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন যেন তিনি আমাদের ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্য জানাতে পারেন। (যোহন ১৮:৩৭) এই সত্যগুলোর মধ্যে একটা হল, যিহোবা তাঁর সন্তানদের অর্থাৎ আমাদের খুব ভালোবাসেন।
কীভাবে যিশু আমাদের এই নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন যে, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন?
১২. যিহোবা সম্বন্ধে যিশু যা-কিছু বলেছিলেন, সেগুলো কেন আমরা বিশ্বাস করতে পারি?
১২ যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি লোকদের জানিয়েছিলেন যে, যিহোবা আসলে কেমন ঈশ্বর। (লূক ১০:২২) যিহোবা সম্বন্ধে যিশু যা-কিছু বলেছিলেন, সেগুলো আমরা পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারি। কেন? কারণ পৃথিবীতে আসার আগে যিশু যিহোবার সঙ্গে কোটি কোটি বছর ধরে স্বর্গে ছিলেন। (কল. ১:১৫) যিশু নিজে অনুভব করেছিলেন, যিহোবা তাঁকে কতটা ভালোবাসেন এবং তিনি এটাও লক্ষ করেছিলেন যে, যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত ছেলে-মেয়েদেরও কতটা ভালোবাসেন। যিশু লোকদের কীভাবে এই নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন যে, যিহোবা তাদের ভালোবাসেন?
১৩. আমরা যিহোবাকে কীভাবে দেখি বলে যিশু চান?
১৩ যিহোবাকে যিশু যেভাবে দেখেছিলেন, তিনি চান আমরাও যেন যিহোবাকে ঠিক সেভাবেই দেখি। সুসমাচারের বইগুলোতে তিনি যিহোবাকে ১৬০ বারেরও বেশি “পিতা” বলে সম্বোধন করেছিলেন। যিশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রায়ই যিহোবাকে সম্বোধন করে বলতেন যে, তিনি হলেন “তোমাদের পিতা” অথবা “তোমাদের স্বর্গীয় পিতা।” (মথি ৫:১৬; ৬:২৬) যিশু পৃথিবীতে আসার আগে, যিহোবার বিশ্বস্ত সেবকেরা যিহোবাকে “সর্বশক্তিমান,” “সর্বমহান ঈশ্বর,” “মহান সৃষ্টিকর্তা” এবং আরও অন্যান্য উচ্চ উপাধি ব্যবহার করে সম্বোধন করত। কিন্তু, যিশু প্রায়ই তাঁকে শুধুমাত্র আমাদের ‘পিতা’ বলে সম্বোধন করতেন, যেটা দেখায় যে, যিহোবা চান তাঁর সেবকেরা যেন তাঁর সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখে এবং তাঁকে একজন প্রেমময় পিতা হিসেবে দেখে।” যিশুও চান আমরা যেন তাঁর মতো যিহোবাকে আমাদের পিতা হিসেবে দেখি, যিনি তাঁর সন্তানদের অত্যন্ত ভালোবাসেন। আসুন, আমরা বাইবেলে দেওয়া দুটো দৃষ্টান্তের উপর মনোযোগ দিই, যেখানে যিশু যিহোবাকে “পিতা” বলে সম্বোধন করেছিলেন।
১৪. কীভাবে যিশু বুঝিয়েছিলেন যে, যিহোবার চোখে তাঁর প্রতিটা সেবক খুবই মূল্যবান? (মথি ১০:২৯-৩১) (ছবিও দেখুন।)
১৪ আসুন, সবচেয়ে প্রথমে আমরা মথি ১০:২৯-৩১ পদে বলা যিশুর কথাগুলোর উপর মনোযোগ দিই। (পড়ুন।) এখানে যিশু চড়ুই পাখির দৃষ্টান্ত দিয়েছিলেন। কোনো পাখির পক্ষে যিহোবাকে ভালোবাসা কিংবা তাঁর উপাসনা করা সম্ভব নয়। তা সত্ত্বেও, আমাদের পিতার কাছে এক একটা পাখি মূল্যবান। এদের মধ্যে একটাও যদি মাটিতে পড়ে যায়, তা হলে যিহোবা সেটা লক্ষ করেন। চিন্তা করে দেখুন, যিহোবা যদি একটা ছোট্ট পাখিকে এত মূল্যবান বলে মনে করেন, তা হলে তিনি তাঁর বিশ্বস্ত সেবকদের কতই-না ভালোবাসেন, যারা প্রেমের সঙ্গে তাঁর সেবা করে! যিশু এটাও বলেছিলেন, আমাদের পিতা আমাদের মাথার প্রতিটা চুল গুনতে পারেন। যেহেতু যিহোবা আমাদের প্রতিটা খুঁটিনাটি বিষয় ভালোভাবে জানেন, তাই আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত থাকতে পারি যে, তিনি আমাদের জন্য অনেক চিন্তা করেন। এই পদগুলোতে যিশু যা-কিছু বলেছিলেন, তা থেকে তিনি আমাদের এই নিশ্চয়তা দিতে চেয়েছিলেন যে, আমাদের পিতা যিহোবার চোখে তাঁর প্রতিটা সেবক খুবই মূল্যবান।
যিহোবা একটা ছোট্ট পাখিকে এত মূল্যবান বলে মনে করেন যে, এদের মধ্যে একটাও যদি মাটিতে পড়ে যায়, তা হলে তিনি সেটা লক্ষ করেন। তাই চিন্তা করুন, তিনি আপনাকে—তাঁর একজন বিশ্বস্ত সেবককে, কতই-না মূল্যবান বলে মনে করেন, যে তাঁকে ভালোবাসে! (১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)
১৫. যোহন ৬:৪৪ পদে লেখা যিশুর কথাগুলো থেকে আপনি আপনার স্বর্গীয় পিতা সম্বন্ধে কী জানতে পারেন?
১৫ এখন আসুন আমরা আরও একটা উদাহরণের উপর মনোযোগ দিই, যেখানে যিশু যিহোবাকে “পিতা” বলে সম্বোধন করেছিলেন। (পড়ুন, যোহন ৬:৪৪.) এই পদে বলা হয়েছে যে, আপনার স্বর্গীয় পিতা আপনাকে কোমলভাবে সত্যের প্রতি আকর্ষণ করেছেন। তিনি কেন তা করেছেন? কারণ তিনি আপনার মধ্যে সঠিক মনোভাব দেখেছেন। যিশু যখন যোহন ৬:৪৪ পদে লেখা কথাগুলো বলেছিলেন, তখন তিনি হয়তো যিরমিয় ৩১:৩ পদে বলা যিহোবার কথাগুলো উদ্ধৃতি করেছিলেন, যেখানে যিহোবা তাঁর লোকদের উদ্দেশে বলেছিলেন: “আমি তোমার প্রতি চিরস্থায়ী দয়া করিলাম।” (যির. ৩১:৩; তুলনা করুন, হোশেয় ১১:৪.) এই পদটা হল এই প্রবন্ধের মূল শাস্ত্রপদ। যিশুর এই কথাগুলো থেকে বোঝা যায় যে, আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতা সবসময় আমাদের মধ্যে সেই ভালো গুণগুলো লক্ষ করেন, যেগুলো হয়তো আমরাও নিজেদের মধ্যে দেখতে পাই না।
১৬. (ক) যিহোবা সম্বন্ধে যিশু কী শিখিয়েছিলেন এবং কেন আমাদের যিশুর উপর বিশ্বাস করা উচিত? (খ) কীভাবে আমরা এই বিষয়ে আমাদের নিশ্চয়তাকে দৃঢ় করতে পারি যে, যিহোবা হলেন সবচেয়ে উত্তম পিতা? (“সেই পিতা যাঁকে আমাদের সকলের প্রয়োজন” শিরোনামের বাক্স দেখুন।)
১৬ যিশু যখন যিহোবাকে আমাদের পিতা বলেছিলেন, তখন তিনি আসলে এটাই বলতে চেয়েছিলেন যে, “যিহোবা কেবল আমারই পিতা নন, কিন্তু সেইসঙ্গে তোমাদেরও পিতা। তোমরা নিশ্চিত থাকতে পার, তিনি তোমাদের খুব ভালোবাসেন এবং তোমাদের জন্য অনেক চিন্তা করেন।” তাই, আপনার মনে যদি কখনো এইরকম সন্দেহ আসে, ‘যিহোবা কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসেন?’ তাহলে, একটু ভেবে দেখুন, ‘আমার কি যিশুর কথা বিশ্বাস করা উচিত নয়, যিনি পিতাকে সবচেয়ে ভালোভাবে জানেন এবং যিনি সবসময় সত্যি কথা বলে এসেছেন?’—১ পিতর ২:২২.
আপনার নিশ্চয়তাকে ক্রমাগত দৃঢ় করুন
১৭. যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন, এই বিষয়ে কেন আমাদের নিশ্চয়তাকে ক্রমাগত দৃঢ় করতে হবে?
১৭ যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন, এই বিষয়ে ক্রমাগত আমাদের নিশ্চয়তাকে দৃঢ় করতে হবে। যেমন আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি, আমাদের শত্রু শয়তান খুবই ধূর্ত এবং সে সবসময় চেষ্টা করছে যেন আমরা যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দিই। সে আমাদের সংকল্পকে দুর্বল করে দিতে চায়। তাই, সে সবসময় আমাদের এটা বিশ্বাস করাতে চেষ্টা করবে যে, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন না। আসুন, আমরা যেন কখনোই শয়তানের এই মিথ্যা কথায় বিশ্বাস না করি!—ইয়োব ২৭:৫.
১৮. যিহোবা আপনাকে ভালোবাসেন, এই বিষয়ে আপনার নিশ্চয়তাকে ক্রমাগত দৃঢ় করার জন্য আপনি কী করতে পারেন?
১৮ যিহোবা আপনাকে ভালোবাসেন, এই বিষয়ে ক্রমাগত আপনার নিশ্চয়তাকে দৃঢ় করার জন্য প্রার্থনা করে চলুন। যিহোবাকে বলুন, আপনি যেন নিজেকে সেই দৃষ্টিতে দেখতে পারেন, যেভাবে তিনি আপনাকে দেখেন। যিহোবা তাঁর সেবকদের কতটা ভালোবাসেন, সেই বিষয়ে বাইবেল লেখকেরা যা লিখেছিলেন, সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন। এ ছাড়া, এটাও ভেবে দেখুন যে, আমরা যদি যিহোবাকে ভালোবাসি, তা হলে তিনিও আমাদের প্রতি ভালোবাসা দেখাবেন। শুধু তা-ই নয়, এটা নিয়েও গভীরভাবে চিন্তা করুন, যিহোবা ব্যক্তিগতভাবে আপনার জন্য তাঁর প্রিয় পুত্রকে মুক্তির মূল্য হিসেবে দান করেছেন। আর যিশুর উপরও আস্থা রাখুন, যিনি বলেছিলেন, যিহোবা তোমাদের পিতা। এই সমস্ত বিষয় নিয়ে ক্রমাগত চিন্তা করুন। এরপর কেউ যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করে, “আপনি কি নিশ্চিত যে, যিহোবা আপনাকে ভালোবাসেন?” তা হলে, আপনি বলতে পারবেন, “হ্যাঁ, আমি পুরোপুরি নিশ্চিত! আর আমি প্রতিদিন যিহোবার প্রতি আমার ভালোবাসা দেখানোর জন্য যথাসাধ্য করি!”
গান ১৫৪ অনন্ত প্রেম
a খ্রিস্টান হিসেবে জীবনযাপন করার জন্য বাইবেলের নীতি বইয়ে “নিজেদের বিষয়ে সন্দেহ করা” বিভাগে এমন আরও সান্ত্বনাদায়ক শাস্ত্রপদ দেওয়া রয়েছে, যেগুলো পড়ে আপনি নিশ্চিত হবেন যে, যিহোবা আপনাকে ভালোবাসেন।