অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৬
যিহোবা গ্যারান্টি দিয়েছেন, পরমদেশ অবশ্যই আসবে
“যে ব্যক্তি পৃথিবীতে আপনাকে আশীর্ব্বাদ করিবে, সে সত্যের ঈশ্বরের নামে আপনাকে আশীর্ব্বাদ করিবে।”—যিশা. ৬৫:১৬.
গান ৩ দৃঢ় দুর্গ তুমি ও বিশ্বাসভূমি
সারাংশa
১. যিশাইয় ইজরায়েলীয়দের কোন বার্তা জানাতে চেয়েছিলেন?
ভাববাদী যিশাইয় বলেছিলেন, যিহোবা হলেন ‘সত্যের ঈশ্বর।’ যে-শব্দকে ‘সত্য’ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটার মানে হল “আমেন।” (যিশা. ৬৫:১৬) আর “আমেন” শব্দের মানে হল, “তা-ই হোক” অথবা “অবশ্যই।” বাইবেলে যখনই যিহোবা ও যিশুর ক্ষেত্রে “আমেন” শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে, তখন সেটা এই বিষয়টার গ্যারান্টি দেয়, যেটা বলা হয়েছে, সেটা সত্য। তার মানে, যিশাইয় ইজরায়েলীয়দের এই বার্তা জানাতে চেয়েছিলেন, যিহোবা ভবিষ্যতের বিষয়ে যে-প্রতিজ্ঞাই করেন না কেন, সেগুলো সবই পূরণ হয়। আর যিহোবা তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞা পূরণ করার মাধ্যমে এই কথাটা সত্য বলে প্রমাণ করেছেন।
২. (ক) ভবিষ্যতের বিষয়ে যিহোবা যে-প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেটার উপর কেন আমরা বিশ্বাস করতে পারি? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলোর জানতে পারব?
২ আমরাও কি এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি যে, ভবিষ্যতের বিষয়ে যিহোবার করা প্রতিজ্ঞা অবশ্যই পূরণ হবে? যিশাইয়ের দিন থেকে প্রায় ৮০০ বছর পর প্রেরিত পৌল বুঝিয়েছিলেন, কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা সবসময় তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করেন। তিনি বলেছিলেন: ‘ঈশ্বর মিথ্যা বলতে পারেন না।’ (ইব্রীয় ৬:১৮) আপনি কি কখনো আম গাছে জাম ধরতে দেখেছেন? এটা অসম্ভব, তাই না? একইভাবে, সত্যের ঈশ্বর যিহোবার মুখ থেকে কখনো মিথ্যা কথা বের হতে পারে না, এটাও অসম্ভব। তাই, আমরা যিহোবার বলা সমস্ত কথা আর সেইসঙ্গে ভবিষ্যতের বিষয়ে বলা তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞার উপর বিশ্বাস করতে পারি। এই প্রবন্ধে আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে পারব: ভবিষ্যতের বিষয়ে যিহোবা কোন প্রতিজ্ঞা করেছেন? আর যিহোবা কোন গ্যারান্টি দিয়েছেন যে, তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করবেন?
যিহোবা কোন প্রতিজ্ঞা করেছেন?
৩. (ক) কোন প্রতিজ্ঞা যিহোবার উপাসকদের কাছে খুবই মূল্যবান? (প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪) (খ) এই প্রতিজ্ঞার বিষয়ে শুনে কিছু লোক হয়তো কী বলে?
৩ এখন আমরা যে-প্রতিজ্ঞার বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, সেটা সারা পৃথিবীতে থাকা যিহোবার উপাসকদের কাছে খুবই মূল্যবান। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.) যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, এমন একটা সময় আসবে, যখন “মৃত্যু আর থাকবে না; শোক বা আর্তনাদ বা ব্যথা আর থাকবে না।” এই প্রতিজ্ঞা আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে। আমরা অনেকেই লোকদের কাছে প্রচার করার সময়ে এই প্রতিজ্ঞা পড়ি আর বলি, পরমদেশে জীবন কেমন হবে। কিন্তু, এই প্রতিজ্ঞা শুনে কেউ কেউ হয়তো বলে, “এটা শুনতে তো খুবই ভালো লাগছে, কিন্তু মনে হয় না, এগুলো আদৌ হবে।”
৪. (ক) যিহোবা আগে থেকে কী জানতেন? (খ) যিহোবা প্রতিজ্ঞা করার পাশাপাশি আর কী করেছেন?
৪ যিহোবা যখন প্রেরিত যোহনের মাধ্যমে পরমদেশের বিষয়ে এই প্রতিজ্ঞা লিখিয়েছিলেন, তখন তিনি জানতেন যে, আমরা ভবিষ্যতে লোকদের কাছে তাঁর রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করার সময়ে তাঁর এই প্রতিজ্ঞার বিষয়ে বলব। যিহোবা এও জানতেন, তিনি “নূতন ঘটনা” সম্বন্ধে যে-প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেটা বিশ্বাস করা অনেকের জন্য কঠিন হবে। (যিশা. ৪২:৯; ৬০:২; ২ করি. ৪:৩, ৪) তাহলে, কীভাবে আমরা নিজেরা বিশ্বাস করতে পারি এবং অন্যদের বিশ্বাস করাতে পারি যে, প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪ পদে লেখা কথাগুলো অবশ্যই পরিপূর্ণ হবে? যিহোবা শুধু এই চমৎকার প্রতিজ্ঞাই করেননি, কিন্তু তিনি এই প্রতিজ্ঞার উপর বিশ্বাস করার কিছু উপযুক্ত কারণও দিয়েছেন। সেই কারণগুলো কী?
যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করার গ্যারান্টি দিয়েছেন
৫. বাইবেলের কোন পদগুলোতে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার উপর বিশ্বাস করার কারণগুলো বলা হয়েছে আর সেই কারণগুলো কী?
৫ পরমদেশের বিষয়ে যিহোবার করা প্রতিজ্ঞার উপর বিশ্বাস করার অনেক কারণ রয়েছে। এটা আমরা পরবর্তী শাস্ত্রপদগুলোর উপর মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে জানতে পারি, “যিনি সিংহাসনে বসে আছেন, সেই ঈশ্বর বললেন: ‘দেখো! আমি সমস্ত কিছু নতুন করছি।’ তিনি আরও বললেন: ‘লেখো, কারণ এই কথাগুলো বিশ্বাসযোগ্য ও সত্য।’ আর তিনি আমাকে বললেন: ‘এই কথাগুলো সম্পন্ন হল! আমিই আলফা ও ওমেগা অর্থাৎ শুরু ও শেষ।’”—প্রকা. ২১:৫, ৬ক.
৬. প্রকাশিত বাক্য ২১:৫, ৬ পদে যে-কথাগুলো লেখা আছে, সেগুলো থেকে কেন ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার উপর আমাদের বিশ্বাস বেড়ে যায়?
৬ বাইবেলের এই পদগুলো থেকে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার উপর আমাদের বিশ্বাস কেন বেড়ে যায়? আমাদের একটা বইয়ে এই পদগুলোর বিষয়ে লেখা আছে: “এটা এমন যেন যিহোবা নিজে একটা কাগজে সই করে বিশ্বস্ত মানুষকে এই গ্যারান্টি দিচ্ছেন যে, তিনি ভবিষ্যতে তাদের অবশ্যই আশীর্বাদ করবেন।”b প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪ পদে আমরা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা সম্বন্ধে পড়ি আর ৫ ও ৬ পদে আমরা পড়ি, ঈশ্বর তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করার গ্যারান্টি দিচ্ছেন, এমন যেন তিনি এটার নীচে সই করছেন। যিহোবা গ্যারান্টি দেওয়ার সময়ে যে-বিষয়গুলো বলেছেন, আসুন তা এক এক করে দেখি।
৭. প্রকাশিত বাক্য ২১:৫ পদের কথাগুলো কে বলতে শুরু করছেন আর কেন এই তথ্য গুরুত্বপূর্ণ?
৭ ঈশ্বর যে-গ্যারান্টি দিয়েছেন, সেটা এভাবে শুরু হয়: “আর যিনি সিংহাসনে বসে আছেন, সেই ঈশ্বর বললেন।” (প্রকা. ২১:৫ক) প্রকাশিত বাক্য বইয়ে এমন তিনটে ঘটনার বিষয়ে বলা হয়েছে, যেখানে দর্শনে যিহোবা কথা বলছেন। এটা সেগুলোর মধ্যে একটা। এই গ্যারান্টি কোনো শক্তিশালী স্বর্গদূত কিংবা স্বর্গে যাওয়ার পর যিশু দেননি বরং যিহোবা নিজে দিয়েছেন। এর ফলে, এই পদের পরে যা লেখা আছে, সেগুলোর উপর আমরা বিশ্বাস করার আরও উপযুক্ত কারণ পাই। কেন? কারণ যিহোবা “মিথ্যা বলতে পারেন না।” (তীত ১:২) সত্যিই, প্রকাশিত বাক্য ২১:৫, ৬ পদে লেখা কথাগুলো একেবারে বিশ্বাসযোগ্য!
“দেখো! আমি সমস্ত কিছু নতুন করছি।”
৮. কীভাবে যিহোবা এই বিষয়ে নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে, তাঁর প্রতিজ্ঞা অবশ্যই পূরণ হবে? (যিশাইয় ৪৬:১০)
৮ এখন আসুন, আমরা “দেখো!” শব্দের উপর মনোযোগ দিই। (প্রকা. ২১:৫) যে-ইব্রীয় শব্দকে “দেখো!” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটা প্রকাশিত বাক্য বইয়ে অনেক বার এসেছে। বাইবেল সম্বন্ধে তথ্য দেয় এমন একটা বই এই শব্দের বিষয়ে বলে, এই শব্দটা প্রায়ই “পরবর্তী কথাগুলোর উপর মনোযোগ আকর্ষণ করানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।” তাহলে, ঈশ্বর “দেখো!” বলার পর কী বলেছেন? তিনি বলেছেন: “আমি সমস্ত কিছু নতুন করছি।” যদিও এই প্রতিজ্ঞা ভবিষ্যতে পূরণ হবে, কিন্তু ঈশ্বর জানেন যে, তিনি অবশ্যই তা পূরণ করবেন। তাই তিনি এটা বলেননি, “আমি সমস্ত কিছু নতুন করব,” বরং তিনি বলেছেন, “আমি সমস্ত কিছু নতুন করছি।” এটা এমন যেন এই প্রতিজ্ঞা এখন থেকেই পূরণ হতে শুরু করে দিয়েছে।—পড়ুন, যিশাইয় ৪৬:১০.
৯. (ক) “আমি সমস্ত কিছু নতুন করছি,” এই শব্দগুলো থেকে যিহোবার কোন দুটো কাজের বিষয়ে জানা যায়? (খ) বর্তমানে ‘যে-আকাশ’ ও “পৃথিবী” রয়েছে, সেটার কী হবে?
৯ এখন আসুন, আমরা যিহোবার বলা এই কথাগুলো আরও ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করি: “আমি সমস্ত কিছু নতুন করছি।” (প্রকা. ২১:৫) প্রকাশিত বাক্য বইয়ের ২১ অধ্যায়ে লেখা এই কথাগুলোর উপর মনোযোগ দিলে আমরা যিহোবার দুটো কাজের বিষয়ে জানতে পারি। প্রথমে, তিনি ‘আগের আকাশমণ্ডল এবং আগের পৃথিবীকে’ শেষ করে দেবেন। এরপর, তিনি এগুলোর জায়গায় “এক নতুন আকাশমণ্ডল এবং এক নতুন পৃথিবী” নিয়ে আসবেন। (প্রকা. ২১:১) “আগের আকাশমণ্ডল” শব্দগুলো মানুষের সরকারগুলোকে বোঝায়, যেগুলো শয়তান এবং তার মন্দ স্বর্গদূতেরা নিয়ন্ত্রণ করছে। (মথি ৪:৮, ৯; ১ যোহন ৫:১৯) বাইবেলে প্রায়ই “পৃথিবী” শব্দটা পৃথিবীতে থাকা লোকদের বোঝানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। (আদি. ১১:১; গীত. ৯৬:১) তাই, “আগের পৃথিবী” শব্দগুলো বর্তমানে এই পৃথিবীতে থাকা দুষ্ট লোকদের বোঝায়। যিহোবা “আগের আকাশমণ্ডল” এবং ‘আগের পৃথিবীকে’ মেরামত করবেন না বরং পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করে দেবেন। এরপর, তিনি এগুলোর জায়গায় “এক নতুন আকাশমণ্ডল ও নতুন পৃথিবী” নিয়ে আসবেন অর্থাৎ এক নতুন সরকার এবং ধার্মিক লোকদের এক নতুন সমাজ।
১০. যিহোবা কী নতুন করবেন?
১০ এখন আসুন আমরা লক্ষ করি, যিহোবা যে-বিষয়গুলোকে “নতুন” করবেন, সেগুলোর বিষয়ে তিনি কী বলেছেন। তিনি এমনটা বলেননি, “আমি সমস্ত কিছু নতুন করে সৃষ্টি করছি।” এর পরিবর্তে তিনি বলেছেন, “আমি সমস্ত কিছু নতুন করছি।” (প্রকা. ২১:৫) এর মানে, যিহোবা পৃথিবী এবং মানুষের পরিস্থিতি এতটাই ভালো করে দেবেন যে, তা একদম নতুনের মতো হয়ে যাবে। ভাববাদী যিশাইয় যেমনটা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, পুরো পৃথিবী এদন উদ্যানের মতো সুন্দর হয়ে যাবে আর সমস্ত মানুষ নিখুঁত হয়ে যাবে। এটা এমন যেন আমরা সবাই এক নতুন জীবন লাভ করব। যারা হাঁটতে পারে না, শুনতে পায় না এবং দেখতে পায় না, তারা সবাই সুস্থ হয়ে যাবে। এমনকী যারা মারা গিয়েছে, তাদেরও পুনরুত্থিত করা হবে।—যিশা. ২৫:৮; ৩৫:১-৭.
“এই কথাগুলো বিশ্বাসযোগ্য ও সত্য . . . এই কথাগুলো সম্পন্ন হল!”
১১. যিহোবা যোহনকে কী করতে বলেছিলেন আর কেন?
১১ ঈশ্বর তাঁর কথাগুলোর উপর বিশ্বাস করানোর জন্য আর কী বলেছেন? তিনি যোহনকে বলেছিলেন: “লেখো, কারণ এই কথাগুলো বিশ্বাসযোগ্য ও সত্য।” (প্রকা. ২১:৫) যিহোবা যোহনকে শুধুমাত্র সেই কথাগুলো ‘লিখতেই’ বলেননি বরং এটা লেখার পিছনে থাকা কারণও বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “এই কথাগুলো বিশ্বাসযোগ্য ও সত্য।” আমরা কতই-না খুশি যে, যোহন যিহোবার কথা শুনেছিলেন এবং সেগুলো ‘লিখেছিলেন।’ এই কারণে আজ আমরা পরমদেশের বিষয়ে যিহোবার করা প্রতিজ্ঞা পড়তে পারছি আর সেই আশীর্বাদগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে পারছি, যেগুলো আমরা ভবিষ্যতে পাব।
১২. কেন এটা বলার পিছনে যিহোবার সঠিক কারণ রয়েছে যে, “এই কথাগুলো সম্পন্ন হল”?
১২ এরপর ঈশ্বর বলেছেন: “এই কথাগুলো সম্পন্ন হল!” (প্রকা. ২১:৬) যিহোবা এই কথাগুলো এমনভাবে বলেছেন যেন পরমদেশ নিয়ে আসার প্রতিজ্ঞা ইতিমধ্যে পূরণ হয়ে গিয়েছে। আর তিনি এমনটা বলতেই পারেন কারণ কেউ তাঁকে তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে না। এরপর যিহোবা আরও কিছু বলেছেন, যেটার কারণে এই বিষয়টা আরও দৃঢ় হয়ে যায় যে, তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা অবশ্যই পূরণ করবেন। সেই কথাগুলো কী?
“আমিই আলফা ও ওমেগা।”
১৩. কেন যিহোবা বলেছিলেন, “আমিই আলফা ও ওমেগা”?
১৩ আগে যেমনটা বলা হয়েছে, যোহনকে দর্শন দেখানোর সময়ে যিহোবা তিন বার নিজে তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। (প্রকা. ১:৮; ২১:৫, ৬; ২২:১৩) আর তিন বারই যিহোবা বলেছিলেন, “আমিই আলফা ও ওমেগা” অর্থাৎ ‘আমিই শুরু ও শেষ।’ “আলফা” হল গ্রিক বর্ণমালার প্রথম অক্ষর এবং ওমেগা হল শেষ অক্ষর। যিহোবা যখন নিজেকে আলফা ও ওমেগা বলেছিলেন, তখন এক অর্থে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, তিনি যে-কাজটা শুরু করেন, সেটা তিনি অবশ্যই শেষ করেন।
যিহোবা যখন কিছু শুরু করেন, তখন তা শেষও করেন (১৭, ১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)
১৪. (ক) উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন, কখন যিহোবা “আলফা” বলেছিলেন এবং কখন “ওমেগা” বলবেন। (খ) আদিপুস্তক ২:১-৩ পদে কোন গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে?
১৪ আদম ও হবাকে সৃষ্টি করার পর ঈশ্বর স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে, পৃথিবী ও মানুষের জন্য তাঁর উদ্দেশ্য কী। বাইবেল বলে: “ঈশ্বর তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিলেন; ঈশ্বর কহিলেন, তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর।” (আদি. ১:২৮) এভাবে, যিহোবা যখন তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলেছিলেন, তখন সেটা একটা শুরু ছিল। এটা এমন যেন সেইসময় যিহোবা বলেছিলেন, “আলফা।” ভবিষ্যতে, আদম ও হবার নিখুঁত সন্তানদের মাধ্যমে এই পৃথিবী পূর্ণ হবে, সবাই ঈশ্বরের বাধ্য হবে এবং এই পৃথিবী এক সুন্দর পরমদেশে পরিণত হবে। পরবর্তী সময়ে, যিহোবার উদ্দেশ্য যখন পরিপূর্ণ হবে, তখন তিনি যেন বলবেন, “ওমেগা।” যিহোবা যখন শুরুতে “আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী এবং তদুভয়স্থ সমস্ত বস্তুব্যূহ” সৃষ্টি করার কাজ শেষ করেছিলেন, তখন তিনি একটা গ্যারান্টি দিয়েছিলেন। এটা আমরা আদিপুস্তক ২:১-৩ পদে পাই। (পড়ুন।) যিহোবা সপ্তম দিনকে পবিত্র বলেছিলেন। এর মানে হল, যিহোবা সপ্তম দিনকে আলাদা রেখেছেন, যাতে তিনি পৃথিবী ও মানুষের জন্য তাঁর উদ্দ্যেশ্য পূরণ করতে পারেন। তাই, যখন তিনি সপ্তম দিনকে পবিত্র বলেছিলেন, তখন তিনি যেন এই গ্যারান্টি দিচ্ছিলেন যে, সপ্তম দিনের শেষে তাঁর উদ্দেশ্য ইতিমধ্যেই পরিপূর্ণ হয়ে যাবে।
১৫. কেন শয়তান হয়তো ভেবেছিল যে, যিহোবার উদ্দেশ্য কখনো পরিপূর্ণ হবে না?
১৫ আদম ও হবা যখন বিদ্রোহ করেছিলেন, তখন তারা পাপী হয়ে গিয়েছিলেন আর এভাবে তারা উত্তরাধিকারসূত্রে পাপ ও মৃত্যু তাদের সন্তানদের দিয়েছিলেন। (রোমীয় ৫:১২) এই কারণে শয়তান হয়তো ভেবেছিল যে, যিহোবার উদ্দেশ্য কখনো পরিপূর্ণ হবে না আর এই পৃথিবীতে নিখুঁত মানুষ থাকবে না, যারা যিহোবার বাধ্য হয়ে থাকবে। শয়তান হয়তো মনে করেছিল, যিহোবা আর কখনো “ওমেগা” বলতে পারবেন না আর এই ক্ষেত্রে তিনি কিছুই করতে পারবেন না। তিনি একটাই কাজ করতে পারেন, তিনি আদম ও হবাকে মেরে ফেলতে পারেন এবং এক নিখুঁত দম্পতিকে সৃষ্টি করতে পারেন, যারা তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করবে। কিন্তু, যিহোবা যদি এমনটা করতেন, তা হলে শয়তান তাঁকে মিথ্যা প্রমাণ করার একটা সুযোগ পেয়ে যেত। কেন? কারণ আদিপুস্তক ১:২৮ পদ বলে, যিহোবা আদম ও হবাকে বলেছিলেন যে, তিনি তাদের সন্তানদের মাধ্যমে এই পৃথিবীকে পূর্ণ করবেন।
১৬. কেন শয়তান হয়তো ভেবেছিল যে, সে এটা প্রমাণ করতে পারবে, যিহোবা যা বলেন, তা পূরণ করতে পারেন না?
১৬ শয়তানের মনে হয়তো আরেকটা চিন্তা এসেছিল। সে হয়তো চিন্তা করেছিল, যিহোবা আদম ও হবাকে সন্তান জন্ম দিতে দেবেন, কিন্তু তাদের সন্তানেরা কখনো নিখুঁত হতে পারবে না। (উপ. ৭:২০; রোমীয় ৩:২৩) এভাবে শয়তান হয়তো প্রমাণ করত, যিহোবা যা বলেন, তা পূরণ করতে পারেন না। কেন? কারণ এর ফলে যিহোবার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হত না অর্থাৎ এই পৃথিবী পরমদেশে পরিণত হত না আর নিখুঁত মানুষ এই পৃথিবীতে থাকত না, যারা যিহোবার বাধ্য হত।
১৭. (ক) শয়তান এবং মানুষ যিহোবার বিরুদ্ধে যে-বিদ্রোহ করেছিল, সেটা কীভাবে যিহোবা সমাধান করেছেন? (খ) অবশেষে কী হবে? (ছবিও দেখুন।)
১৭ শয়তান, আদম ও হবা যখন বিদ্রোহ করেছিল, তখন যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার যে-উপায়টা বের করেছিলেন, সেটা দেখে শয়তান হয়তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিল। (গীত. ৯২:৫) যিহোবা আদম ও হবাকে সন্তান জন্ম দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। এভাবে তিনি প্রমাণ করেছিলেন, তিনি সত্যি কথা বলেন, মিথ্যে বলেন না। শুধু তা-ই নয়, ব্যর্থ হওয়ার পরিবর্তে যিহোবার জয় হয়েছিল কারণ তিনি তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য একটা ‘বংশের’ ব্যবস্থা করেছিলেন, যিনি আদম ও হবার সন্তানদের উদ্ধার করার জন্য নিজের জীবন বলি হিসেবে দিতেন। (আদি. ৩:১৫; ২২:১৮) শয়তান হয়তো কখনো চিন্তাও করেনি যে, যিহোবা এত সুন্দর এক ব্যবস্থা করবেন। কেন? কারণ শয়তান এক নম্বরের স্বার্থপর, কিন্তু যিহোবা নিঃস্বার্থ প্রেমের উপর ভিত্তি করে এই ব্যবস্থা করেছেন। (মথি ২০:২৮; যোহন ৩:১৬) যিহোবার এই ব্যবস্থার মাধ্যমে কী সম্ভব হবে? খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্বের শেষে এই পৃথিবী এক সুন্দর পরমদেশে পরিণত হয়ে যাবে এবং আদম ও হবার নিখুঁত সন্তানদের মাধ্যমে ভরে যাবে আর তারা সবাই যিহোবার বাধ্য হবে। শুরুতে যিহোবা মানুষ ও পৃথিবীর জন্য যে-উদ্দেশ্য স্থির করেছিলেন, সেটা পরিপূর্ণ হবে। তখন যিহোবা যেন বলবেন, “ওমেগা।”
কীভাবে আমরা পরমদেশের প্রতিজ্ঞার উপর বিশ্বাস বাড়াতে পারি?
১৮. যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞার উপর বিশ্বাস করার কোন তিনটে কারণ দিয়েছেন? (এ ছাড়া, “যিহোবার প্রতিজ্ঞার উপর বিশ্বাস করার তিনটে কারণ” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)
১৮ এই প্রবন্ধে আমরা শিখলাম, কেন আমরা বিশ্বাস করতে পারি যে, যিহোবা এই পৃথিবীকে পরমদেশে পরিণত করবেন। কিন্তু যারা এটার উপর বিশ্বাস করে না, তাদের আমরা কীভাবে বোঝাতে পারি যে, যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞা অবশ্যই পূরণ করবেন? আমরা তাদের তিনটে কারণ বলতে পারি। প্রথম কারণটা হল, যিহোবা নিজে এই প্রতিজ্ঞা করেছেন। প্রকাশিত বাক্য বইয়ে লেখা আছে: “যিনি সিংহাসনে বসে আছেন, সেই ঈশ্বর বললেন: ‘দেখো! আমি সমস্ত কিছু নতুন করছি।’” যিহোবার কাছে এত প্রজ্ঞা ও শক্তি রয়েছে যে, তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে পারেন আর এমনটা তিনি করতেও চান। দ্বিতীয় কারণটা হল, যিহোবা জানেন, তাঁর প্রতিজ্ঞা অবশ্যই পূরণ হবে। তাই, তিনি এই কথাগুলো এমনভাবে বলেছেন যেন তা ইতিমধ্যেই পূরণ হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেছেন, “এই কথাগুলো বিশ্বাসযোগ্য ও সত্য . . . এই কথাগুলো সম্পন্ন হল!” তৃতীয় কারণটা হল, যিহোবা যা শুরু করেন, তিনি তা শেষও করেন। সেইজন্য তিনি বলেছেন, “আমিই আলফা ও ওমেগা।” খুব শীঘ্রই যিহোবা এটা প্রমাণ করে দেবেন, শয়তান মিথ্যাবাদী আর তার পরিকল্পনা কখনোই সফল হবে না।
১৯. কেউ যখন পরমদেশের বিষয়ে করা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার উপর বিশ্বাস করে না, তখন আপনি কী করতে পারেন?
১৯ প্রতি বার প্রচার করার সময়ে আমরা যখন লোকদের যিহোবার এই গ্যারান্টির বিষয়ে জানাই, তখন তাঁর প্রতিজ্ঞার উপর আমাদের নির্ভরতা আরও বেড়ে যায়। তাই, পরবর্তী সময়ে আপনি যখন কাউকে প্রকাশিত বাক্য ২১:৪ পদ পড়ে শোনাবেন যে, ঈশ্বর পরমদেশে কী কী করবেন আর তিনি যখন আপনাকে বলবেন, ‘এটা শুনতে তো খুব ভালো লাগছে, কিন্তু আদৌ কি এটা হবে?’ তখন আপনি কী বলবেন? তখন আপনি চাইলে তাকে ৫ ও ৬ পদ পড়ে বোঝাতে পারেন। তাকে বলুন, যিহোবা নিজে এই প্রতিজ্ঞা পূরণ করার গ্যারান্টি দিয়েছেন, এমন যেন সেটার নীচে তিনি নিজে সই করেছেন।—যিশা. ৬৫:১৬.
গান ১৪৭ অনন্তজীবনের প্রতিজ্ঞা
a যিহোবা পরমদেশ নিয়ে আসার বিষয়ে তাঁর প্রতিজ্ঞা অবশ্যই পূরণ করবেন। এই প্রবন্ধে আমরা এই গ্যারান্টির বিষয়ে আলোচনা করব। আমরা যখন লোকদের এই গ্যারান্টির বিষয়ে বলি, তখন যিহোবার প্রতিজ্ঞার উপর আমাদের নির্ভরতা বেড়ে যায়।