ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯৭ ২/১ পৃষ্ঠা ৯-১৩
  • ‘ঈশ্বর আমাদিগকে এমন প্রেম করিয়াছেন’

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • ‘ঈশ্বর আমাদিগকে এমন প্রেম করিয়াছেন’
  • ১৯৯৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • “ঈশ্বর প্রেম”
  • কেন মুক্তির মূল্য?
  • মূল্য কতটা মহান ছিল?
  • যা এটিকে সম্ভব করে
  • মুক্তির মূল্য—ঈশ্বরের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার
    বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়?
  • খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্য—পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরের পথ
    ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • যিহোবার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হবেই!
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৭
  • মানবজাতির পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বর যা করেছেন
    জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে
আরও দেখুন
১৯৯৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯৭ ২/১ পৃষ্ঠা ৯-১৩

‘ঈশ্বর আমাদিগকে এমন প্রেম করিয়াছেন’

“ঈশ্বর যখন আমাদিগকে এমন প্রেম করিয়াছেন, তখন আমরাও পরস্পর প্রেম করিতে বাধ্য।”—১ যোহন ৪:১১.

১. ২৩শে মার্চ সূর্যাস্তের পর, কেন লক্ষ লক্ষ লোকেরা বিশ্বের চতুর্দিকের কিংডম হল এবং অন্যান্য সভার স্থানগুলিতে একত্রিত হবে?

১৯৯৭ সালের ২৩শে মার্চ, রবিবার, সূর্যাস্তের পর, নিঃসন্দেহে জগদ্ব্যাপী ১,৩০,০০,০০০ এরও বেশি লোক যিহোবার সাক্ষীদের দ্বারা ব্যবহৃত কিংডম হল এবং অন্যান্য সভার স্থানগুলিতে একত্রিত হবে। কেন? কারণ মানবজাতির প্রতি ঈশ্বরের প্রেমের সেই সর্বমহৎ অভিব্যক্তি তাদের হৃদয়কে স্পর্শ করেছে। ঈশ্বরের প্রেমের মহৎ প্রমাণের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করিয়ে যীশু খ্রীষ্ট বলেন: “ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।”—যোহন ৩:১৬.

২. ঈশ্বরের প্রেমের প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত কোন্‌ প্রশ্নগুলি আমাদের প্রত্যেকে নিজেদের উপকারজনকভাবে জিজ্ঞাসা করতে পারি?

২ যখন আমরা ঈশ্বরের প্রদর্শিত প্রেম সম্বন্ধে বিবেচনা করি, তখন নিজেদের জিজ্ঞাসা করা উত্তম যে, ‘ঈশ্বর যা করেছেন তা কি আমি সত্যিই উপলব্ধি করি? যে ভাবে আমি আমার জীবনকে ব্যবহার করছি তা কি সেই উপলব্ধিবোধের প্রমাণ দেয়?

“ঈশ্বর প্রেম”

৩. (ক) ঈশ্বরের পক্ষে প্রেম প্রদর্শন করা কেন অসাধারণ কিছু নয়? (খ) কিভাবে ক্ষমতা এবং প্রজ্ঞা তাঁর সৃষ্টি কাজের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়?

৩ ঈশ্বরের পক্ষে প্রেম প্রদর্শন করা অসাধারণ কিছু নয় কারণ “ঈশ্বর প্রেম।” (১ যোহন ৪:৮) প্রেম হল তাঁর প্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। যখন তিনি মানুষের বাসস্থানার্থে পৃথিবীকে প্রস্তুত করছিলেন, তখন পর্বতসমূহকে উত্তোলন করা এবং হ্রদ ও সমুদ্রগুলিতে জল সংগৃহীত করা ছিল তাঁর ক্ষমতার এক বিস্ময়কর প্রদর্শন। (আদিপুস্তক ১:৯, ১০) যখন ঈশ্বর জল-চক্র এবং অক্সিজেন-চক্রকে সক্রিয় করেন, যখন তিনি অসংখ্য অণুজীব এবং বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ সৃষ্টি করেছিলেন যা পৃথিবীর রাসায়নিক উপাদানগুলিকে এমনভাবে পরিবর্তিত করে যাতে মানুষেরা তাদের জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য শরীরের মধ্যে তা শোষণ করতে পারে, যখন তিনি পৃথিবী গ্রহের দিন এবং মাসের দৈর্ঘের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করতে আমাদের মধ্যে জৈবিক সময়-নিয়ন্ত্রণকারী স্থাপন করেন, তখন এইগুলি তাঁর মহান প্রজ্ঞাকে প্রকাশ করেছিল। (গীতসংহিতা ১০৪:২৪; যিরমিয় ১০:১২) কিন্তু, পার্থিব সৃষ্টিতে এমনকি আরও অধিক উল্লেখযোগ্যতা হল ঈশ্বরের প্রেমের প্রমাণ।

৪. পার্থিব সৃষ্টিতে, ঈশ্বরের প্রেমের কোন্‌ প্রমাণ আমাদের সকলের দেখা এবং উপলব্ধি করা উচিত?

৪ আমাদের তালু আমাদের কাছে ঈশ্বরের প্রেম সম্বন্ধে প্রকাশ করে যখন আমরা রসাল, পাকা ফলে কামড় দিই যা স্পষ্টতই কেবলমাত্র আমাদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য নয়, বরঞ্চ আমাদের আনন্দদানের জন্যও তৈরি করা হয়েছে। আমাদের চক্ষু বিস্ময়কর সূর্যাস্ত, এক পরিষ্কার রাত্রে নক্ষত্র-খচিত আকাশ, বিভিন্ন প্রকার ও উজ্জ্বল বর্ণের ফুল, শিশু জীবজন্তুদের খেলা এবং বন্ধুদের উষ্ণ হাসিতে এর অভ্রান্ত প্রমাণ দেখে থাকে। যখন আমরা বসন্তের ফুলগুলির মিষ্টি গন্ধযুক্ত শ্বাস নিই, তখন আমাদের নাসিকা সেই সম্বন্ধে আমাদের অবগত করে। যখন আমরা জলপ্রপাতের শব্দ, পাখিদের গান এবং প্রিয়জনদের স্বর শুনি, তখন আমাদের কর্ণ তা উপলব্ধি করে। আমরা তা অনুভব করি যখন এক প্রিয়জন আমাদের উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে। নির্দিষ্ট কিছু জীবজন্তুকে এমন কিছু বস্তু দেখার, শোনার ও ঘ্রাণ নেওয়ার সক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে যা মানুষ পারে না। কিন্তু ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্ট মানবজাতির, এমন এক উপায়ে ঈশ্বরের প্রেমকে উপলব্ধি করার ক্ষমতা রয়েছে যা কোন পশুর নেই।—আদিপুস্তক ১:২৭.

৫. যিহোবা কিভাবে আদম ও হবার প্রতি পর্যাপ্ত প্রেম প্রদর্শন করেছিলেন?

৫ যখন যিহোবা ঈশ্বর প্রথম মানুষ, আদম ও হবাকে সৃষ্টি করেছিলেন, তখন তিনি তাঁর প্রেমের প্রমাণের দ্বারা তাদের পরিবেষ্টিত করেছিলেন। তিনি একটি উদ্যান, একটি পরমদেশ স্থাপন করেছিলেন এবং এর মধ্যে সমস্ত প্রকার বৃক্ষ উৎপন্ন করেছিলেন। তিনি সেখানে জলসেচনার্থে একটি নদী প্রদান করেছিলেন এবং মনোরম পাখি ও জীবজন্তুদের দ্বারা পূর্ণ করেছিলেন। তিনি এই সমস্তকিছু আদম ও হবাকে তাদের গৃহ হিসাবে দিয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ২:৮-১০, ১৯) যিহোবা তাদের সাথে তাঁর সন্তান হিসাবে, তাঁর সর্বজনীন পরিবারের অংশ হিসাবে আচরণ করেছিলেন। (লূক ৩:৩৮) এদনকে একটি নমুনা হিসাবে প্রদান করে, এই প্রথম মানব দম্পতির স্বর্গীয় পিতা তাদের সমগ্র পৃথিবীকে আচ্ছাদন করার জন্য পরমদেশ বিস্তৃত করার তৃপ্তিদায়ক কার্যভার অর্পণ করেছিলেন। সমগ্র পৃথিবী তাদের সন্তানসন্ততিদের দ্বারা পরিপূর্ণ হওয়ার ছিল।—আদিপুস্তক ১:২৮.

৬. (ক) আদম ও হবা যে বিদ্রোহাত্মক পদক্ষেপ নিয়েছিল তার প্রতি আপনি কেমন অনুভব করেন? (খ) কোন্‌ বিষয়টি ইঙ্গিত করতে পারে যে আমরা এদনে যা ঘটেছিল তা থেকে শিখতে পেরেছি এবং সেই জ্ঞান থেকে উপকৃত হয়েছি?

৬ কিন্তু, শীঘ্রই আদম ও হবা বাধ্যতার এক পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিল, নিষ্ঠার এক পরীক্ষা। প্রথমে একজন এবং পরে অন্যজন সেই প্রেমের প্রতি উপলব্ধি প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছিল যা তাদের প্রদান করা হয়েছিল। তারা যা করেছিল তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ছিল। তা ক্ষমার অযোগ্য ছিল! ফলস্বরূপ, তারা ঈশ্বরের সাথে তাদের সম্পর্ক হারিয়েছিল, তাঁর পরিবার থেকে বিতাড়িত হয়েছিল এবং এদন থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিল। আজকে আমরা এখনও পর্যন্ত তাদের পাপের প্রভাব অনুভব করি। (আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭; ৩:১-৬, ১৬-১৯, ২৪; রোমীয় ৫:১২) কিন্তু যা ঘটেছিল তা থেকে আমরা কি কিছু শিখতে পেরেছি? ঈশ্বরের প্রেমের প্রতি আমরা কিভাবে সাড়া দিচ্ছি? প্রতিদিন আমরা যে সমস্ত সিদ্ধান্ত নিই তা কি দেখায় যে আমরা তাঁর প্রেমকে উপলব্ধি করি?—১ যোহন ৫:৩.

৭. আদম ও হবা যা করেছিল তা সত্ত্বেও, যিহোবা কিভাবে তাদের সন্তানসন্ততিদের প্রতি প্রেম প্রদর্শন করেছিলেন?

৭ ঈশ্বর তাদের জন্য যা কিছু করেছিলেন সেই সমস্তের প্রতি আমাদের প্রথম মানব পিতামাতার উপলব্ধিবোধের এমনকি সম্পূর্ণ অভাবও ঈশ্বরকে তাঁর নিজ প্রেমকে প্রতিহত করতে দেয়নি। সেই সমস্ত মানুষের প্রতি, যারা তখনও জন্মগ্রহণ করেনি—যার অন্তর্ভুক্ত আজকে আমাদের যারা জীবিত রয়েছি, করুণাবশতঃ—ঈশ্বর আদম ও হবাকে তাদের মৃত্যুর পূর্বে এক পরিবার উৎপাদন করতে অনুমোদন করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৫:১-৫; মথি ৫:৪৪, ৪৫) যদি তিনি তা না করতেন, আমরা কেউ জন্মগ্রহণ করতাম না। তাঁর ইচ্ছার প্রগতিময় প্রকাশের দ্বারা, যিহোবা আদমের সকল সন্তানসন্ততি যারা বিশ্বাস অনুশীলন করবে, তাদের জন্য আশার এক ভিত্তিও প্রদান করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৩:১৫; ২২:১৮; যিশাইয় ৯:৬, ৭) তাঁর ব্যবস্থা সেই মাধ্যমটিকে অন্তর্ভুক্ত করে যার দ্বারা সমস্ত জাতির লোকেরা আদম যা হারিয়েছে তা পুনরায় লাভ করতে পারবে, অর্থাৎ, ঈশ্বরের সর্বজনীন পরিবারের অনুমোদিত সদস্য হিসাবে সিদ্ধ জীবন। মুক্তির মূল্য সরবরাহ করার দ্বারা তিনি তা করেছিলেন।

কেন মুক্তির মূল্য?

৮. কেন ঈশ্বর কেবলমাত্র রায় প্রদান করতে পারতেন না যে যদিও আদম ও হবাকে অবশ্যই মরতে হবে, কিন্তু তাদের বাধ্য সন্তানসন্ততিদের কাউকে মরতে হবে না?

৮ মানব জীবনমূলক মুক্তির মূল্য প্রদান করা বাস্তবিকই কি প্রয়োজনীয় ছিল? ঈশ্বর কি শুধুমাত্র এই রায় প্রদান করতে পারতেন না যে যদিও আদম ও হবাকে তাদের বিদ্রোহের জন্য অবশ্যই মরতে হবে, কিন্তু তাদের সকল সন্তানসন্ততি যারা ঈশ্বরের বাধ্য থাকবে তারা অনন্তকাল বেঁচে থাকতে পারবে? এক অদূরদর্শী মনুষ্য দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, তা হয়ত যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হতে পারে। কিন্তু, যিহোবা “ধার্ম্মিকতা ও ন্যায়বিচার ভালবাসেন।” (গীতসংহিতা ৩৩:৫) আদম ও হবা পাপী হওয়ার পরই কেবলমাত্র তাদের সন্তানদের জন্ম দিয়েছিল; তাই সেই সন্তানদের কেউই সিদ্ধ অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেনি। (গীতসংহিতা ৫১:৫) তারা সকলে উত্তরাধিকারসূত্রে পাপ পেয়েছিল আর পাপের শাস্তি হল মৃত্যু। যিহোবা যদি এটি উপেক্ষা করতেন, তাহলে তাঁর সর্বজনীন পরিবারের সদস্যদের জন্য তা কিধরনের উদাহরণ স্থাপন করত? তিনি তাঁর নিজস্ব ধার্মিক মানগুলিকে উপেক্ষা করতে পারেন না। ন্যায়বিচারের প্রয়োজনকে তিনি সম্মান করেন। কেউ কখনও ন্যায়সঙ্গতভাবে উপায়টিতে কোন ত্রুটি খুঁজে বের করতে পারবে না যার মাধ্যমে ঈশ্বর এই জড়িত বিচার্য বিষয়গুলির ব্যবস্থা করেছিলেন।—রোমীয় ৩:২১-২৩.

৯. ন্যায়বিচারের ঐশিক মান অনুসারে, কিধরনের মুক্তির মূল্যের প্রয়োজন ছিল?

৯ তাহলে, কিভাবে আদমের সন্তানসন্ততি যারা যিহোবার প্রতি প্রেমময় বাধ্যতা প্রদর্শন করে তাদের মুক্তির জন্য এক উপযুক্ত ভিত্তি প্রদান করা যেতে পারত? যদি একজন সিদ্ধ মানুষ বলিদানমূলক মৃত্যু বরণ করে, তবে যারা মুক্তির মূল্যে বিশ্বাস এবং স্বীকার করবে তাদের পাপের আচ্ছাদন প্রদান করার জন্য ন্যায়বিচার সেই সিদ্ধ জীবনের মূল্যকে অনুমোদন করতে পারত। যেহেতু একজন ব্যক্তি, আদমের পাপ, সমগ্র মানব পরিবারকে পাপে পতিত করার জন্য দায়ী, তাই অপর সিদ্ধ ব্যক্তির পাতিত রক্ত, অনুরূপ মূল্য হয়ে, ন্যায়বিচারের পরিমাপে ভারসাম্য আনয়ন করতে পারত। (১ তীমথিয় ২:৫, ৬) কিন্তু এইরূপ একজন ব্যক্তিকে কোথায় পাওয়া যেতে পারে?

মূল্য কতটা মহান ছিল?

১০. কেন আদমের সন্তানসন্ততিরা প্রয়োজনীয় মুক্তির মূল্য প্রদান করতে অক্ষম ছিল?

১০ পাপী আদমের সন্তানসন্ততিদের মধ্যে, এমন একজনও ছিল না যে, আদম যে জীবনের প্রত্যাশা হারিয়েছিল তা ফিরিয়ে আনার জন্য যা প্রয়োজন ছিল তা প্রদান করতে পারত। “তাহাদের মধ্যে কেহই কোন মতে ভ্রাতাকে মুক্ত করিতে পারে না, কিম্বা তাহার প্রায়শ্চিত্তের জন্য ঈশ্বরকে কিছু দিতে পারে না, (কেননা তাহাদের প্রাণের মুক্তি দুর্মূল্য, এবং চিরকালেও অসাধ্য;) যেন সে নিত্যজীবী হয়, যেন সে ক্ষয় না দেখে।” (গীতসংহিতা ৪৯:৭-৯) মানবজাতিকে হতাশার মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে, যিহোবা নিজে করুণার সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।

১১. কোন্‌ উপায়ে যিহোবা উপযুক্ত মুক্তির মূল্যের জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধ মানব জীবনের ব্যবস্থা করেছিলেন?

১১ যিহোবা একজন দূতকে পৃথিবীতে পাঠাননি যে মানব রূপ ধারণকারী এক শরীরকে শায়িত করার দ্বারা মৃত্যুর ভান করে যখন সে আত্মা হিসাবে জীবিত থাকে। পরিবর্তে, একটি অলৌকিক কাজ সম্পাদন করার দ্বারা যা একমাত্র ঈশ্বর, সৃষ্টিকর্তা, পরিকল্পনা করতে পারেন, তিনি একজন স্বর্গীয় পুত্রের জীবনী-শক্তি ও ব্যক্তিত্বের আদর্শকে এক নারী, যিহূদা বংশীয় হেলির কন্যা মরিয়মের গর্ভে স্থানান্তরিত করেছিলেন। ঈশ্বরের কার্যকারী শক্তি, তাঁর পবিত্র আত্মা, মায়ের গর্ভে শিশুটির বৃদ্ধিকে সুরক্ষিত করেছিল এবং তা এক সিদ্ধ মানুষ হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছিল। (লূক ১:৩৫; ১ পিতর ২:২২) অতএব একটি মুক্তির মূল্য প্রদান করার জন্য প্রয়োজনীয় মূল্য তাঁর অধিকারে ছিল যা ঐশিক ন্যায়বিচারের চাহিদাগুলি সম্পূর্ণভাবে পূরণ করতে পারত।—ইব্রীয় ১০:৫.

১২. (ক) কোন্‌ অর্থে যীশু হলেন ঈশ্বরের ‘একজাত পুত্ত্র’? (খ) মুক্তির মূল্য দিতে ঈশ্বরের এই ব্যক্তিকে পাঠান, কিভাবে আমাদের প্রতি তাঁর প্রেমের উপর জোর দেয়?

১২ তাঁর অযুত অযুত স্বর্গীয় দূতেদের মধ্যে কাকে যিহোবা এই কার্যভার অর্পণ করেছিলেন? সেই ব্যক্তিকে যাঁকে শাস্ত্রে তাঁর ‘একজাত পুত্ত্র’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। (১ যোহন ৪:৯) এই অভিব্যক্তিটি মানুষ হিসাবে জন্মগ্রহণের সময় তিনি যা তা নয়, বরঞ্চ এর পূর্বে স্বর্গে তিনি যেমন ছিলেন তা বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। তিনিই ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যাঁকে যিহোবা কারও সহযোগিতা ছাড়াই সরাসরি সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি সমস্ত সৃষ্টির প্রথমজাত। তিনিই ছিলেন সেই ব্যক্তি যিনি অন্যান্য সমস্ত সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনার জন্য ঈশ্বর কর্তৃক ব্যবহৃত হয়েছিলেন। দূতেরা ঈশ্বরের পুত্র, যেমন আদম ঈশ্বরের এক পুত্র ছিল। কিন্তু যীশুকে “যেমন পিতা হইতে আগত একজাতের মহিমা” প্রাপ্ত হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি “পিতার ক্রোড়ে” বসবাস করেন বলে বলা হয়। (যোহন ১:১৪, ১৮) পিতার সাথে তাঁর সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, ব্যক্তিগত এবং কোমল। তিনি তাঁর পিতার প্রেম মানবজাতির জন্য বন্টন করেন। হিতোপদেশ ৮:৩০, ৩১ পদ তাঁর পিতা এই পুত্রের জন্য কেমন অনুভব করেন এবং পুত্র মানবজাতির জন্য কেমন বোধ করেন তা প্রকাশ করে: “আমি দিন দিন [যিহোবার] আনন্দময় ছিলাম, তাঁহার সম্মুখে নিত্য আহলাদ করিতাম; . . . মনুষ্য-সন্তানগণে আমার [যিহোবার প্রধান কার্যকারী, প্রজ্ঞার প্রতিমূর্তি যীশুর] আনন্দ হইত।” তিনিই ছিলেন সর্বাধিক মহামূল্যবান পুত্র যাঁকে ঈশ্বর মুক্তির মূল্য প্রদান করার জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। অতএব, যীশুর উক্তি কতই না অর্থপূর্ণ: “ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন”!—যোহন ৩:১৬.

১৩, ১৪. ইস্‌হাককে বলিদান দিতে অব্রাহামের পদক্ষেপ সম্বন্ধে বাইবেলের বিবরণ যিহোবা যা করেছেন তার প্রতি উপলব্ধি দেখাতে কিভাবে আমাদের সাহায্য করে? (১ যোহন ৪:১০)

১৩ এর অর্থ কী, তার কিছু পরিমাণ আত্মস্থ করতে আমাদের সাহায্য করার জন্য, যীশু পৃথিবীতে আসার বহু পূর্বে, ঈশ্বর প্রায় ৩,৮৯০ বছর আগে অব্রাহামকে নির্দেশ দিয়েছিলেন: “তুমি আপন পুত্ত্রকে, তোমার অদ্বিতীয় পুত্ত্রকে, যাহাকে তুমি ভাল বাস, সেই ইস্‌হাককে লইয়া মোরিয়া দেশে যাও, এবং তথাকার যে এক পর্ব্বতের কথা আমি তোমাকে বলিব, তাহার উপরে তাহাকে হোমার্থে বলিদান কর।” (আদিপুস্তক ২২:১, ২) বিশ্বাসে, অব্রাহাম বাধ্য হয়েছিলেন। অব্রাহামের স্থানে নিজেকে কল্পনা করুন। কী হত যদি সে আপনার পুত্র হত, আপনার একমাত্র পুত্র যাকে আপনি অত্যন্ত ভালবাসেন? যদি আপনি হোমার্থে বলিদানের জন্য কাঠ টুকরো করতেন, কয়েক দিনের পথ ভ্রমণ করে মোরিয়া দেশে যেতেন এবং আপনার পুত্রকে বেদির উপর স্থাপন করতেন তাহলে সেই সময় আপনার অনুভূতি কেমন হত?

১৪ কেন এক করুণাময় পিতামাতার এইরূপ অনুভূতি থাকে? আদিপুস্তক ১:২৭ পদ বলে যে ঈশ্বর তাঁর প্রতিমূর্তিতে মানুষকে সৃষ্টি করেছিলেন। আমাদের প্রেম ও করুণার অনুভূতি অত্যন্ত সীমিতভাবে যিহোবার নিজস্ব প্রেম ও করুণাকে প্রতিফলিত করে। অব্রাহামের ক্ষেত্রে, ঈশ্বর হস্তক্ষেপ করেছিলেন, যে কারণে ইস্‌হাক প্রকৃতপক্ষে বলিকৃত হয়নি। (আদিপুস্তক ২২:১২, ১৩; ইব্রীয় ১১:১৭-১৯) কিন্তু, তাঁর নিজের ক্ষেত্রে, যিহোবা শেষ মুহূর্তে মুক্তির মূল্য প্রদান করতে বিরত হননি, যদিও তা তাঁর এবং তাঁর পুত্র উভয়ের ক্ষেত্রে চরম মূল্যে সম্পন্ন হয়েছিল। যা করা হয়েছিল তা ঈশ্বরের দিক থেকে কোন বাধ্যবাধকতার কারণে নয়, বরঞ্চ, অসাধারণ অযাচিত করুণার এক অভিব্যক্তি হিসাবে। আমরা কি তা সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করি?—ইব্রীয় ২:৯.

যা এটিকে সম্ভব করে

১৫. এমনকি এই বর্তমান বিধিব্যবস্থায় মুক্তির মূল্য কিভাবে জীবনকে প্রভাবিত করেছে?

১৫ ঈশ্বর যে প্রেমময় ব্যবস্থা করেছিলেন তা যারা এটিকে বিশ্বাসের সাথে গ্রহণ করে তাদের জীবনের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। পাপের ফলস্বরূপ তারা পূর্বে ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। তাঁর বাক্য যেমন বলে, সেই অনুসারে তারা “চিত্তে দুষ্ক্রিয়াতে বহিঃস্থ ও শত্রু” ছিল। (কলসীয় ১:২১-২৩) কিন্তু তারা “ঈশ্বরের সহিত তাঁহার পুত্ত্রের মৃত্যু দ্বারা সম্মিলিত” হয়েছিল। (রোমীয় ৫:৮-১০) তাদের জীবনধারা পরিবর্তিত করে এবং যারা খ্রীষ্টের বলিদানে বিশ্বাস অনুশীলন করে তাদের জন্য যে ক্ষমা ঈশ্বর সম্ভব করেছেন তা গ্রহণ করে তারা এক শুচি সংবেদ দ্বারা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হয়েছে।—ইব্রীয় ৯:১৪; ১ পিতর ৩:২১.

১৬. মুক্তির মূল্যে বিশ্বাসের কারণে ক্ষুদ্র মেষপাল কোন্‌ আশীর্বাদগুলির জন্য অনুমোদন লাভ করে?

১৬ যিহোবা এদের এক সীমিত সংখ্যা, এক ক্ষুদ্র মেষপালের প্রতি, পৃথিবীর জন্য ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্য সম্পাদনের লক্ষ্যে, স্বর্গীয় রাজ্যে তাঁর পুত্রের সাথে মিলিত হওয়ার অযাচিত অনুগ্রহ-দান প্রসারিত করেছেন। (লূক ১২:৩২) তাদের নেওয়া হয়েছে “সমুদয় বংশ ও ভাষা ও জাতি ও লোকবৃন্দ হইতে . . . আমাদের ঈশ্বরের উদ্দেশে . . . রাজ্য ও যাজক করিয়াছ; আর তাহারা পৃথিবীর উপরে রাজত্ব করিবে।” (প্রকাশিত বাক্য ৫:৯, ১০) তাদের উদ্দেশ্যে, প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “তোমরা . . . দত্তকপুত্ত্রতার আত্মা পাইয়াছ, যে আত্মাতে আমরা আব্বা, পিতা, বলিয়া ডাকিয়া উঠি। আত্মা আপনিও আমাদের আত্মার সহিত সাক্ষ্য দিতেছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান। আর যখন সন্তান, তখন দায়াদ, ঈশ্বরের দায়াদ ও খ্রীষ্টের সহদায়াদ।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (রোমীয় ৮:১৫-১৭) তাঁর পুত্র হিসাবে ঈশ্বরের দ্বারা দত্তক হওয়ায়, তারা অত্যন্ত আকাঙ্ক্ষিত সম্পর্ক যা আদম হারিয়েছিল তার জন্য অনুমোদন লাভ করে; কিন্তু এই পুত্রেরা স্বর্গীয় পরিচর্যার অতিরিক্ত সুযোগের জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত হবে—এমন কিছু যা আদমের কখনও ছিল না। কোন আশ্চর্যের বিষয় নয় যে প্রেরিত যোহন বলেছিলেন: “দেখ, পিতা আমাদিগকে কেমন প্রেম প্রদান করিয়াছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান বলিয়া আখ্যাত হই”! (১ যোহন ৩:১) এইরূপ ব্যক্তিদের প্রতি ঈশ্বর কেবলমাত্র নীতিগত প্রেম (আগাপে) প্রকাশ করেন না, কিন্তু কোমল স্নেহও (ফিলিয়া) প্রকাশ করেন, যা অকৃত্রিম বন্ধুদের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যস্বরূপ।—যোহন ১৬:২৭.

১৭. (ক) মুক্তির মূল্যে যারা বিশ্বাস অনুশীলন করে তাদের সকলের জন্য কোন্‌ সুযোগ দেওয়া হয়েছে? (খ) তাদের জন্য “ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা” কী অর্থ রাখে?

১৭ এছাড়া অন্যান্যদের জন্যও—সকলে যারা যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে জীবনের জন্য ঈশ্বরের উদার ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস অনুশীলন করে—যিহোবা মহামূল্যবান সম্পর্ক যা আদম হারিয়েছিল তা অর্জন করার সুযোগ উন্মুক্ত করে দেন। প্রেরিত পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন: “সৃষ্টির ঐকান্তিকী প্রতীক্ষা [আদম থেকে বংশজাত মনুষ্য সৃষ্টি] ঈশ্বরের পুত্ত্রগণের প্রকাশপ্রাপ্তির অপেক্ষা করিতেছে। [এটি হচ্ছে এইরূপ যে তারা অপেক্ষা করছে সেই সময়ের জন্য যখন এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে যে ঈশ্বরের পুত্রেরা যারা খ্রীষ্টের সাথে স্বর্গীয় রাজ্যের উত্তরাধিকারী, মানবজাতির পক্ষে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে] কারণ সৃষ্টি অসারতার বশীকৃত হইল, [তারা মৃত্যুর সম্ভাবনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিল আর এমন কোন উপায় ছিল না যার দ্বারা তারা নিজেদেরকে স্বাধীন করতে পারত] স্ব-ইচ্ছায় যে হইল, তাহা নয়, কিন্তু বশীকর্ত্তার নিমিত্ত; এই প্রত্যাশায় [ঈশ্বর দ্বারা প্রদত্ত] হইল যে, সৃষ্টি নিজেও ক্ষয়ের দাসত্ব হইতে মুক্ত হইয়া ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা পাইবে।” (রোমীয় ৮:১৯-২১) এই স্বাধীনতার অর্থ কী হবে? এটি হল তারা পাপ ও মৃত্যুর দাসত্ব থেকে স্বাধীন হয়েছে। তাদের মন ও দেহে সিদ্ধতা থাকবে, পরমদেশ তাদের গৃহ হিসাবে থাকবে ও অনন্ত জীবন থাকবে যেখানে তারা তাদের সিদ্ধতা উপভোগ এবং একমাত্র সত্য ঈশ্বর, যিহোবার প্রতি তাদের উপলব্ধি প্রকাশ করবে। আর এই সমস্তকিছু কিভাবে সম্ভবপর হয়েছিল? ঈশ্বরের একজাত পুত্রের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের মাধ্যমে।

১৮. ২৩শে মার্চ সূর্যাস্তের পর, আমরা কী করব এবং কেন?

১৮ সা.শ. ৩৩ সালের ১৪ই নিশান, যিরূশালেমের একটি উপরের কক্ষে, যীশু তাঁর মৃত্যুর স্মরণার্থক সভা প্রবর্তন করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর বাৎসরিক স্মরণার্থক অনুষ্ঠানটি সমস্ত সত্য খ্রীষ্টানদের জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। যীশু নিজে আদেশ দিয়েছিলেন: “ইহা আমার স্মরণার্থে করিও।” (লূক ২২:১৯) ১৯৯৭ সালে স্মরণার্থক সভা ২৩শে মার্চ সূর্যাস্তের (যখন ১৪ই নিশান শুরু হয়) পর অনুষ্ঠিত হবে। সেই দিনটিতে, এই স্মরণার্থক সভায় উপস্থিত হওয়ার চেয়ে আর কোন কিছুই অধিক গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না।

আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন?

◻ কোন্‌ উপায়গুলির মাধ্যমে যিহোবা মানবজাতির জন্য পর্যাপ্ত প্রেম প্রদর্শন করেছেন?

◻ আদমের সন্তানসন্ততিদের কেন প্রয়োজনীয় মুক্তির মূল্যের জন্য একটি সিদ্ধ মানব জীবনের প্রয়োজন ছিল?

◻ কোন্‌ চরম মুক্তির মূল্য যিহোবা সরবরাহ করেন?

◻ মুক্তির মূল্য কী সম্ভবপর করে?

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বর তাঁর একজাত পুত্রকে দান করেছিলেন

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৫)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার