অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৩
গান ৪ যিহোবা প্রেমময় পালক
যিহোবার হাত খাটো নয়!
“সদাপ্রভুর হস্ত কি সঙ্কুচিত হইয়াছে?”—গণনা. ১১:২৩.
আমরা কী শিখব?
এই প্রবন্ধ পড়ে আপনার এই আস্থা বাড়বে যে, যিহোবা সবসময় আপনার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে দেবেন।
১. মোশি যখন ইজরায়েলীয়দের মিশর থেকে বের করে এনেছিলেন, তখন তিনি কীভাবে যিহোবার উপর আস্থা রেখেছিলেন?
ইব্রীয় বইতে যিহোবার অনেক বিশ্বস্ত সেবকের বিষয়ে বলা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন মোশি, যার বিশ্বাস অনেক দৃঢ় ছিল। (ইব্রীয় ৩:২-৫; ১১:২৩-২৫) তিনি ইজরায়েলীয়দের মিশর থেকে বের করে এনেছিলেন। যখন ফরৌণ এবং তার সেনাবাহিনী তাদের পিছু ধাওয়া করেছিল, সেইসময় তিনি ভয় পেয়ে যাননি বরং তিনি যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন। তিনি ইজরায়েলীয়দের লোহিত সাগর পার করার সময় এবং প্রান্তরে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। (ইব্রীয় ১১:২৭-২৯) বেশিরভাগ ইজরায়েলীয় যখন মনে করেছিল যে, যিহোবা তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ করতে পারবেন না, তখনও মোশি যিহোবার উপর আস্থা রেখেছিলেন। আর যিহোবার উপর আস্থা রেখে তিনি কোনো ভুল করেননি। যিহোবা প্রান্তরে ইজরায়েলীয়দের চমৎকার উপায়ে খাবার এবং জল জুগিয়েছিলেন এবং তাদের যত্ন নিয়েছিলেন।a—যাত্রা. ১৫:২২-২৫; গীত. ৭৮:২৩-২৫.
২. যিহোবা কেন মোশিকে বলেছিলেন, “সদাপ্রভুর হস্ত কি সঙ্কুচিত হইয়াছে?” (গণনাপুস্তক ১১:২১-২৩)
২ মোশির বিশ্বাস খুবই দৃঢ় ছিল। কিন্তু, ইজরায়েলীয়দের বের করে আনার প্রায় এক বছর পর তিনি একটা ক্ষেত্রে যিহোবার উপর সন্দেহ করতে শুরু করেছিলেন। ইজরায়েলীয়েরা মাংস চাইতে শুরু করেছিল এবং মোশি এই বিষয়ে চিন্তা করছিলেন যে, যিহোবা এই প্রান্তরে এত লোকের জন্য কোথা থেকে মাংস জোগাড় করবেন। তখন যিহোবা মোশিকে বলেছিলেন, “সদাপ্রভুর হস্ত কি সঙ্কুচিত হইয়াছে?” (পড়ুন, গণনাপুস্তক ১১:২১-২৩.) এই পদে “সদাপ্রভুর হস্ত” শব্দের অর্থ হল, যিহোবার পবিত্র শক্তি বা সক্রিয় শক্তি, যেটার মাধ্যমে তিনি তাঁর ইচ্ছা পূরণ করেন। এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার মাধ্যমে যিহোবা যেন মোশিকে বলেছিলেন, ‘তোমার কী মনে হয়, আমি যা বলি, তা কি আমি পূরণ করতে পারব না?’
৩. আমাদের কেন মোশি এবং ইজরায়েলীয়দের উদাহরণের উপর মনোযোগ দেওয়া উচিত?
৩ আপনার মনেও কি কখনো এই সন্দেহ এসেছে যে, ‘কী জানি, যিহোবা আমার এবং আমার পরিবারের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগাতে পারবেন কি না?’ আসুন, আমরা মোশি এবং ইজরায়েলীয়দের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিই, যাদের মনেও এইরকম সন্দেহ এসেছিল। এই প্রবন্ধে আমরা কিছু বাইবেলের নীতির উপরও মনোযোগ দেব। এই নীতিগুলো আমাদের এই আস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে যে, যিহোবার হাত খাটো নয়।
মোশি এবং ইজরায়েলীয়দের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করুন
৪. অনেক ইজরায়েলীয় হয়তো কেন সন্দেহ করতে শুরু করেছিল?
৪ আসুন দেখি যে, ইজরায়েলীয়েরা কেন এই সন্দেহ করেছিল যে, যিহোবা তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগাতে পারবেন কি না। প্রান্তরে ইজরায়েলীয়দের সঙ্গে ন-ইজরায়েলীয় ‘মিশ্রিত লোকদের মহাজনতাও’ ছিল, যারা মিশর থেকে তাদের সঙ্গে বের হয়ে এসেছিল। প্রান্তরে আসার পর তাদের কিছু সময় কেটে গিয়েছিল। (যাত্রা. ১২:৩৮; দ্বিতীয়. ৮:১৫) এই মিশ্রিত লোকদের মহাজনতা মান্না খেয়ে এতটাই বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল যে, তারা অভিযোগ করেছিল আর তাদের দেখাদেখি অনেক ইজরায়েলীয় একই অভিযোগ করতে শুরু করেছিল। (গণনা. ১১:৪-৬) তারা সেই খাবারগুলোর জন্য আকাঙ্ক্ষা করতে শুরু করেছিল, যেগুলো তারা মিশরে পেত। তাই তারা মোশির কাছে অভিযোগ করেছিল। তাদের অভিযোগ শুনে মোশি চিন্তা করতে শুরু করেছিলেন যে, তিনি তাদের জন্য কীভাবে মাংস জোগাবেন।—গণনা. ১১:১৩, ১৪.
৫-৬. অনেক ইজরায়েলীয়ের উপর মিশ্রিত লোকদের মহাজনতার কোন প্রভাব পড়েছিল এবং সেখান থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি?
৫ যিহোবা যে-বিষয়গুলো জুগিয়েছিলেন, সেগুলোর জন্য ন-ইজরায়েলীয়েরা কোনো কৃতজ্ঞতাই দেখায়নি। আর এমনটা মনে হয়, অনেক ইজরায়েলীয় তাদের মতোই হয়ে গিয়েছিল। আজ আমাদের সঙ্গেও এমনটা ঘটতে পারে। আমরাও এমন লোকদের মাঝে রয়েছি, যারা অন্যদের প্রতি একটুও কৃতজ্ঞতা দেখায় না। আমরাও হয়তো তাদের মতো যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানো বন্ধ করে দিতে পারি। আমরাও হয়তো সেই বিষয়গুলোর জন্য আকাঙ্ক্ষা করতে পারি, যেগুলো আমরা পিছনে ছেড়ে এসেছি অথবা অন্যদের কাছে যা-কিছু রয়েছে, সেগুলো দেখে আমরা হিংসা করতে পারি। কিন্তু, আমরা যদি সন্তুষ্টির মনোভাব গড়ে তুলতে শিখি, তা হলে পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আমরা আনন্দে থাকতে পারব।
৬ ইজরায়েলীয়দের এই বিষয়ে চিন্তা করা উচিত ছিল যে, যিহোবা তাদের কোন কোন আশীর্বাদ দিতে চলেছেন। কিন্তু, তাদের মনে রাখতে হত, এই আশীর্বাদগুলো তারা প্রান্তরে নয় বরং প্রতিজ্ঞাত দেশে গিয়ে লাভ করবে। একইভাবে, আমাদেরও এই বিষয়ে চিন্তা করা উচিত নয় যে, এখন আমাদের কাছে কী নেই বরং এই বিষয়ে চিন্তা করা উচিত, যিহোবা নতুন জগতে আমাদের কোন কোন আশীর্বাদ দেবেন। এ ছাড়া, আমরা বাইবেলের সেই পদগুলো নিয়েও গভীরভাবে চিন্তা করতে পারি, যেগুলো থেকে যিহোবার উপর আমাদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে।
৭. কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবার হাত খাটো নয়?
৭ আপনি হয়তো চিন্তা করতে পারেন, যিহোবা কেন মোশিকে এটা বলেছিলেন, “সদাপ্রভুর হস্ত কি সঙ্কুচিত হইয়াছে?” তিনি হয়তো মোশিকে এটা বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, তিনি খুবই শক্তিশালী এবং তাঁর লোকেরা যেখানেই থাকুক না কেন, তিনি তাদের সাহায্য করতে পারেন। হ্যাঁ, যিহোবা সেই প্রান্তরে ইজরায়েলীয়দের প্রচুর মাংস জুগিয়ে দিতে পারতেন আর যিহোবা এমনটাই করেছিলেন। “তিনি তাঁর শক্তিশালী হাত বাড়িয়ে” দেখিয়েছিলেন যে, তাঁর কতটা শক্তি রয়েছে। (গীত. ১৩৬:১১, ১২) আমরাও যখন সমস্যার মধ্যে থাকি, তখন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা আমাদের প্রত্যেককে সাহায্য করতে পারেন, তা আমরা যেখানেই থাকি না কেন।—গীত. ১৩৮:৬, ৭.
৮. আমরা যদি ইজরায়েলীয়দের মতো সেই একই ভুল করতে না চাই, তা হলে আমাদের কী করতে হবে? (ছবিও দেখুন।)
৮ যিহোবা যেমনটা বলেছিলেন, তেমনটাই করেছিলেন। কিছু সময়ের মধ্যেই তিনি লোকদের জন্য প্রচুর পরিমাণে ভারুই পাখি জুগিয়েছিলেন। কিন্তু, ইজরায়েলীয়েরা এই অলৌকিক কাজের জন্য যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখায়নি। এর পরিবর্তে, তারা লোভী হয়ে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকে সারাদিন ধরে এবং সারারাত জেগে ভারুই পাখি সংগ্রহ করেছিল। খাবারের প্রতি তাদের ‘লোভ’ দেখে যিহোবা খুবই রেগে গিয়েছিলেন এবং তাদের শাস্তি দিয়েছিলেন। (গণনা. ১১:৩১-৩৪) এই বিবরণ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, আমরা যেন লোভ না করি। আমরা ধনী হই অথবা গরিব, আমাদের “স্বর্গে ধনসম্পদ সঞ্চয়” করতে হবে। এটা করার জন্য যিহোবা এবং যিশুর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে হবে এবং দিন দিন তাঁদের নিকটবর্তী হতে হবে। (মথি ৬:১৯, ২০; লূক ১৬:৯) আমরা যদি এমনটা করি, তা হলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে দেবেন।
যিহোবা যখন প্রান্তরে ভারুই পাখি জুগিয়েছিলেন, তখন অনেক লোক কী করেছিল এবং এই বিবরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? (৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)
৯. আমরা কোন বিষয়ে আস্থা রাখতে পারি?
৯ বর্তমানে, যিহোবা নিজের হাত বাড়িয়ে তাঁর লোকদের সাহায্য করছেন। কিন্তু, এর মানে এই নয় যে, আমাদের কখনো টাকাপয়সার সমস্যা হবে না অথবা খাবারের অভাব হবে না।b তবে, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা আমাদের কখনো একা ছেড়ে দেবেন না। তিনি প্রতিটা সমস্যার সময়ে আমাদের ধরে রাখবেন। আসুন, আমরা দুটো পরিস্থিতির উপর মনোযোগ দিই, যে-ক্ষেত্রে আমরা এই আস্থা রাখতে পারি যে, যিহোবা তাঁর হাত বাড়িয়ে আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ করবেন: (১) যখন আমাদের আর্থিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয় এবং (২) যখন আমরা এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন হই যে, পরবর্তী সময়ে আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো কীভাবে পূরণ হবে।
যখন আমাদের আর্থিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়
১০. কোন কোন কারণে আমরা আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হতে পারি?
১০ জগতের শেষ যত এগিয়ে আসবে, ততবেশি লোকেরা আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অথবা নতুন নতুন মহামারির কারণে আমাদের খরচ হয়তো বেড়ে যেতে পারে, আমাদের চাকরি চলে যেতে পারে, ধনসম্পত্তি লুট হতে পারে অথবা আমাদের নিজেদের ঘর ছেড়ে চলে যেতে হতে পারে। এইরকম পরিস্থিতিতে আমাদের কোনো নতুন চাকরি খুঁজতে হতে পারে অথবা ভরণ-পোষণ জোগানোর জন্য আমাদের নিজেদের পরিবারের সঙ্গে অন্য জায়গায় গিয়ে থাকতে হতে পারে। এইরকম পরিস্থিতিতে আমরা কোন সিদ্ধান্ত নেব এবং কীভাবে দেখাব যে, যিহোবার উপর আমাদের এই আস্থা রয়েছে যে, তাঁর হাত খাটো নয়?
১১. টাকাপয়সা নিয়ে যদি আমাদের অতিরিক্ত চিন্তা হয়, তা হলে আমরা কী করতে পারি? (লূক ১২:২৯-৩১)
১১ টাকাপয়সা নিয়ে যদি আমাদের অতিরিক্ত চিন্তা হয়, তা হলে যিহোবা সবচেয়ে ভালো উপায়ে আমাদের সাহায্য করতে পারেন। (হিতো. ১৬:৩) তাই, যিহোবাকে আপনার চিন্তার বিষয়ে বলুন। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তাঁর কাছে প্রজ্ঞা চান এবং তাঁকে বলুন, তিনি যেন আপনার মনকে শান্ত করেন এবং আপনি যেন “অতিরিক্ত চিন্তিত” না হন। (পড়ুন, লূক ১২:২৯-৩১.) তাঁর কাছে এই বিনতিও করুন যে, আপনার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ করা হলে আপনি যেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকেন। (১ তীম. ৬:৭, ৮) এ ছাড়া, আপনি আমাদের প্রকাশনা থেকে গবেষণা করতে পারেন এবং এমন প্রবন্ধ পড়তে পারেন, যেগুলোতে বলা হয়েছে যে, আপনি কীভাবে আর্থিক সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইট jw.org-এ এই বিষয়ে অনেক তথ্য দেওয়া রয়েছে, যেগুলো থেকে অনেক লোক উপকার পেয়েছে। আপনি সেগুলোও দেখতে পারেন।
১২. আপনি যদি আপনার পরিবারের জন্য কোনো ভালো সিদ্ধান্ত নিতে চান, তা হলে আপনার নিজেকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত?
১২ কিছু লোক নিজের পরিবার ছেড়ে দূরে গিয়ে অন্য কোথাও চাকরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু, পরে তারা বুঝতে পেরেছে যে, তাদের সেই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না। তাই, কোনো নতুন চাকরি বাছাই করার আগে শুধুমাত্র এটা চিন্তা করবেন না যে, আপনি কত টাকা উপার্জন করতে পারবেন বরং এটাও চিন্তা করুন, আপনি এবং আপনার পরিবার কি যিহোবার নিকটবর্তী থাকতে পারবেন? (লূক ১৪:২৮) নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি যদি আমার জীবনসঙ্গীর কাছ থেকে দূরে থাকি, তা হলে এটা আমাদের সম্পর্কের উপর কোন প্রভাব ফেলবে? আমি কি প্রতিটা সভাতে যেতে পারব? প্রচারে যেতে পারব এবং ভাই-বোনদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারব?’ আপনার যদি সন্তান থাকে, তা হলে এই বিষয়েও চিন্তা করুন: “পরিবারের কাছ থেকে দূরে থেকে আমি কি সন্তানদের ‘যিহোবার শাসনে ও উপদেশে মানুষ করে’ তুলতে পারব?” (ইফি. ৬:৪) কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সেই বন্ধু এবং আত্মীয়দের কথা শুনবেন না, যারা সত্যে নেই বরং এটা চিন্তা করুন যে, যিহোবা কী চান।c টোনি, যিনি পশ্চিম এশিয়ায় থাকেন, তিনি বিদেশে চাকরি করার অনেক সুযোগ পেয়েছিলেন, যেটার ফলে তিনি প্রচুর টাকা উপার্জন করতে পারতেন। কিন্তু, তিনি এই বিষয়ে যিহোবার কাছে অনেক প্রার্থনা করেছিলেন এবং তার স্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা করেছিলেন। এরপর টোনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, তিনি বিদেশে না গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গেই থাকবেন এবং নিজেদের খরচ কম করবেন। টোনি বলেন,“আমার এই সিদ্ধান্তের কারণে আমি অনেক লোককে যিহোবা সম্বন্ধে শেখাতে পেরেছি। আমার সন্তানেরাও আজ উদ্যোগের সঙ্গে যিহোবার সেবা করছে। আমাদের পুরো পরিবার শিখেছে যে, আমরা যদি মথি ৬:৩৩ পদ অনুযায়ী জীবনযাপন করি, তা হলে যিহোবা সবসময় আমাদের যত্ন নেবেন।”
যখন আমরা এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন হই যে, আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো কীভাবে পূরণ হবে
১৩. বৃদ্ধ বয়সে আমরা যাতে নিজেদের ভরণ-পোষণ জোগাতে পারি, সেইজন্য এখন থেকেই আমরা কী করতে পারি?
১৩ আমরা হয়তো এটা নিয়েও চিন্তা করতে পারি, বৃদ্ধ বয়সে কীভাবে আমরা নিজেদের ভরণ-পোষণ জোগাব। এটা একটা পরীক্ষার মতো, যেটা দেখাবে যে, যিহোবার উপর আমাদের কতটা আস্থা রয়েছে। তাঁর বাক্যে বলা হয়েছে, আমাদের পরিশ্রম করা উচিত, যাতে ভবিষ্যতের জন্য আমাদের কাছে কিছু থাকে। (হিতো. ৬:৬-১১) তাই, আমাদের ভবিষ্যতের জন্য অল্প টাকাপয়সা সঞ্চয় করে রাখা ভালো। এটা ভুল নয়, কারণ প্রয়োজনের সময় এই টাকাপয়সা আমাদের কাজে লাগতে পারে। (উপ. ৭:১২) কিন্তু, আমাদের দিন-রাত শুধুমাত্র টাকাপয়সা উপার্জন করার বিষয়ে চিন্তা করা উচিত নয়।
১৪. একজন ব্যক্তি যখন ভবিষ্যতের জন্য অল্প কিছু টাকাপয়সা সঞ্চয় করার কথা চিন্তা করে, তখন কেন তাকে ইব্রীয় ১৩:৫ পদে লেখা কথাগুলোর উপর মনোযোগ দিতে হবে?
১৪ যিশু একটা দৃষ্টান্তে বলেছেন, একজন ব্যক্তি যদি সবসময় টাকাপয়সা সঞ্চয় করার পিছনেই ব্যস্ত থাকে, কিন্তু “ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ধনবান নয়,” তা হলে সে মূর্খ। (লূক ১২:১৬-২১) আমরা কেউই জানি না, ভবিষ্যতে কী ঘটবে। (হিতো. ২৩:৪, ৫; যাকোব ৪:১৩-১৫) এ ছাড়া, যিশু বলেছিলেন যে, যারা তাঁর শিষ্য হতে চায়, তাদের সমস্ত ধনসম্পত্তি “পরিত্যাগ” করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। (লূক ১৪:৩৩) প্রথম শতাব্দীতে যিহূদিয়ার খ্রিস্টানেরা আনন্দের সঙ্গে নিজেদের সমস্ত জিনিস পরিত্যাগ করেছে। (ইব্রীয় ১০:৩৪) আর বর্তমানেও অনেক ভাই-বোনকে তাদের চাকরি এবং ধনসম্পত্তি পরিত্যাগ করতে হয়েছে। কেন? কারণ তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে সমর্থন করতে প্রত্যাখ্যান করেছে। (প্রকা. ১৩:১৬, ১৭) তারা এটা এইজন্যই করতে পেরেছে কারণ তারা যিহোবার এই প্রতিজ্ঞার উপর আস্থা রেখেছে: “আমি কখনো তোমাকে ছাড়ব না আর আমি কখনো তোমাকে পরিত্যাগ করব না।” (পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:৫.) এটা ঠিক যে, আমরা ভবিষ্যতের জন্য অল্প কিছু টাকাপয়সা সঞ্চয় করব, কিন্তু হঠাৎ যদি কোনো কঠিন পরিস্থিতি আমাদের সামনে চলে আসে, তা হলে আমরা এই আস্থা রাখতে পারি যে, যিহোবা আমাদের ধরে রাখবেন।
১৫. খ্রিস্টান বাবা-মায়েদের তাদের সন্তানদের বড়ো করে তোলার ক্ষেত্রে কেমন মনোভাব রাখা উচিত? (ছবিও দেখুন।)
১৫ কিছু দেশে লোকেরা বিশেষ করে এই কারণে সন্তান নেয়, যাতে বৃদ্ধ বয়সে সন্তানেরা তাদের যত্ন নিতে এবং ভরণ-পোষণ জোগাতে পারে। তারা সন্তানদের এমন জমানো পুঁজি হিসেবে দেখে, যেটা পরে গিয়ে তারা সুদসমেত ফেরত পাবে। কিন্তু, বাইবেলে লেখা রয়েছে, বাবা-মায়েদের তাদের সন্তানদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগানো উচিত। (২ করি. ১২:১৪) এটা স্বাভাবিক যে, বাবা-মায়েরা যখন বয়স্ক হয়ে যায়, তখন তাদের সন্তানদের সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে এবং অনেক সন্তান আনন্দের সঙ্গে তাদের বাবা মায়ের যত্ন নেয়। (১ তীম. ৫:৪) কিন্তু, যে-বাবা-মায়েরা যিহোবার উপর আস্থা রাখে, তারা এই ভেবে সন্তানদের বড়ো করে তোলে না যে, তাদের সন্তানেরা ভবিষ্যতে টাকাপয়সা উপার্জন করবে এবং তাদের যত্ন নেবে। এর পরিবর্তে, তারা সন্তানদের যিহোবার সেবক হওয়ার জন্য সাহায্য করে আর এভাবেই তারা সবচেয়ে বেশি আনন্দ লাভ করে।—৩ যোহন ৪.
যে-দম্পতি যিহোবার উপর আস্থা রাখে, তারা নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বাইবেলের নীতিগুলো মনে রাখে (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)d
১৬. বাবা-মায়েরা কীভাবে তাদের সন্তানদের নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে শেখাতে পারেন? (ইফিষীয় ৪:২৮)
১৬ বাবা-মায়েরা, আপনার সন্তানদের জন্য উত্তম উদাহরণ স্থাপন করুন এবং তাদের যিহোবার উপর আস্থা গড়ে তুলতে শেখান। তাদের প্রশিক্ষণ দিন, যাতে তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। তাদের ছোটো থেকেই পরিশ্রম করতে শেখান। (হিতো. ২৯:২১; পড়ুন, ইফিষীয় ৪:২৮.) তাদের উৎসাহিত করুন যেন তারা স্কুলে ভালোভাবে পড়াশোনা করে। এ ছাড়া, তারা কতদূর পড়াশোনা করবে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও তাদের সাহায্য করুন। আপনি এটা কীভাবে করতে পারেন? এই বিষয়ে বাইবেলের নীতি খুঁজুন এবং সন্তানদের সঙ্গে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করুন। এভাবে, আপনার সন্তানেরা এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, যার ফলে তারা ভবিষ্যতে নিজেদের ভরণ-পোষণ জোগাতে পারবে। এ ছাড়া, প্রচারে বেশি সময় দিতে পারবে আর সম্ভব হলে তারা অগ্রগামী সেবা করতে পারবে।
১৭. আমরা কোন বিষয়ে আস্থা রাখতে পারি?
১৭ যিহোবার বিশ্বস্ত সেবকেরা আস্থা রাখে যে, যিহোবা তাদের সমস্ত প্রয়োজনগুলো পূরণ করতে পারেন এবং এটা করার ইচ্ছাও তাঁর রয়েছে। কিন্তু, এই জগতের শেষ যত এগিয়ে আসছে, ততই তাঁর উপর আমাদের আস্থা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। তাই আসুন, আমরা যেন যিহোবার উপর এই আস্থা রাখি যে, তিনি যেকোনো পরিস্থিতিতে আমাদের যত্ন নেবেন এবং নিজের শক্তিশালী হাত বাড়িয়ে আমাদের সাহায্য করবেন। সত্যিই, যিহোবার হাত খাটো নয়!
গান ১৫০ পরিত্রাণ পেতে ঈশ্বরের খোঁজ করেই চলো
a ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “পাঠকদের কাছ থেকে প্রশ্ন” দেখুন।
b ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ তারিখের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “পাঠকদের কাছ থেকে প্রশ্ন” দেখুন।
c ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “কেউই দুই কর্তার সেবা করতে পারে না” শিরোনামের প্রবন্ধ দেখুন।
d ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: এক বাবা-মা, যারা যিহোবার উপর নির্ভর করেন, তারা তাদের মেয়ের সঙ্গে কথা বলছেন। তাদের মেয়ে তার স্বামীর সঙ্গে কিংডম হল নির্মাণের কাজে সাহায্য করছেন।