অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৭
গান ৯৯ অজস্র ভাইয়েরা
আমরা কখনোই একা নই
“আমি তোমার সাহায্য করিব।”—যিশা. ৪১:১০.
আমরা কী শিখব?
আমরা চারটে উপায় নিয়ে বিবেচনা করব এবং দেখব যে, এই উপায়গুলোর মাধ্যমে যিহোবা কীভাবে আমাদের যত্ন নেন।
১-২. (ক) কেন আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, যত সমস্যাই আসুক না কেন, আমরা একা নই? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কোন বিষয়গুলো নিয়ে বিবেচনা করব?
আমরা যখন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়ি, তখন আমরা হয়তো নিজেদের সম্পূর্ণ একা বলে মনে করতে পারি। কিন্তু, সত্যটা হল আমরা কখনোই একা নই, আমাদের প্রেমময় পিতা যিহোবা সবসময় আমাদের সঙ্গে আছেন। তিনি ভালোভাবে জানেন, আমরা কোন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আর তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তিনি আমাদের সাহায্য করবেন। যিহোবা প্রেমের সঙ্গে তাঁর বিশ্বস্ত উপাসকদের আশ্বস্ত করেছেন যে, “আমি তোমার সাহায্য করিব।”—যিশা. ৪১:১০.
২ এই প্রবন্ধে আমরা বিবেচনা করে দেখব যে, কীভাবে যিহোবা আমাদের সাহায্য করেন: (১) সঠিক পথ দেখানোর মাধ্যমে, (২) প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ করার মাধ্যমে, (৩) সুরক্ষা জোগানোর মাধ্যমে আর (৪) সান্ত্বনা দেওয়ার মাধ্যমে। যিহোবা আমাদের নিশ্চয়তা দেন যে, আমাদের জীবনে যেকোনো সমস্যাই আসুক না কেন, তিনি আমাদের কখনো একা ছেড়ে দেবেন না আর কখনো ভুলেও যাবেন না। তাই, আমরা কখনোই একা নই।
যিহোবা আমাদের সঠিক পথ দেখান
৩-৪. যিহোবা কীভাবে আমাদের সঠিক পথ দেখান? (গীতসংহিতা ৪৮:১৪)
৩ গীতসংহিতা ৪৮:১৪ পদ পড়ুন। যিহোবা জানেন যে, মানুষ নিজেকে নির্দেশনা দিতে পারে না, তাই তিনি আমাদের সাহায্য করেন। তিনি কীভাবে তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের সঠিক পথ দেখান? একটা উপায় হল, বাইবেলের মাধ্যমে। (গীত. ১১৯:১০৫) বাইবেলে তিনি প্রজ্ঞার কথা লিখিয়েছেন, যেগুলোর সাহায্যে আমরা উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে পারি এবং ভালো গুণগুলো গড়ে তুলতে পারি। এটিতে লেখা কথাগুলো মেনে চলার মাধ্যমে আমরা বর্তমানে সুখী হতে পারি এবং ভবিষ্যতেও অনন্তজীবন লাভ করতে পারি।a উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যিহোবা বাইবেলের মাধ্যমে বলেছেন যে, আমরা যেন রাগ পুষে না রাখি এবং সমস্ত বিষয়ে সৎ হই আর হৃদয় থেকে একে অন্যকে ভালোবাসি। (গীত. ৩৭:৮; ইব্রীয় ১৩:১৮; ১ পিতর ১:২২) আমরা যখন এগুলো করি, তখন আমরা আরও ভালো বাবা-মা, জীবনসঙ্গী এবং বন্ধু হয়ে উঠতে পারি।
৪ আমাদের সঠিক পথ দেখানোর জন্য যিহোবা বাইবেলে সেই ব্যক্তিদের বিবরণ অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যারা আমাদের মতো একই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল এবং যাদের অনুভূতি আমাদের মতোই ছিল। (১ করি. ১০:১৩; যাকোব ৫:১৭) আমরা যখন এই বিবরণগুলো পড়ি এবং এখানে যে-শিক্ষাগুলো পাই, সেগুলো কাজে লাগাই, তখন আমরা অন্ততপক্ষে দুটো উপকার লাভ করি: (১) আমরা বুঝতে পারি যে, আমরা একাই সমস্যা সহ্য করছি না, অন্যেরাও আমাদের মতো একই সমস্যা সহ্য করেছে এবং তারা সেগুলো কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। (১ পিতর ৫:৯) আর (২) আমরা শিখতে পারি যে, আমরা কীভাবে সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি।—রোমীয় ১৫:৪.
৫. যিহোবা আর কোন উপায়ে আমাদের সঠিক পথ দেখান?
৫ যিহোবা ভাই-বোনদের ব্যবহার করেও আমাদের সঠিক পথ দেখান।b যেমন, সময়ে সময়ে সীমা অধ্যক্ষেরা আমাদের মণ্ডলী পরিদর্শন করেন এবং আমাদের উৎসাহিত করেন। তাদের বক্তৃতা থেকে আমাদের বিশ্বাস অনেক শক্তিশালী হয় এবং আমরা নিজেদের মধ্যে একতা বজায় রাখতে পারি। (প্রেরিত ১৫:৪০–১৬:৫) প্রাচীনেরাও মণ্ডলীর প্রত্যেক ভাই-বোনকে যিহোবার নিকটে থাকতে সাহায্য করেন। (১ পিতর ৫:২, ৩) বাবা-মায়েরা, তাদের সন্তানদের যিহোবাকে ভালোবাসতে শেখায়, তাদের মধ্যে ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে এবং সন্তানদের বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করতে শেখায়। (হিতো. ২২:৬) এ ছাড়া, মণ্ডলীর পরিপক্ব বোনেরা মণ্ডলীতে থাকা অল্পবয়সি বোনদের উত্তম উদাহরণ স্থাপন করতে সাহায্য করে। তারা তাদের ভালো পরামর্শ দেয় এবং প্রেমের সঙ্গে তাদের উৎসাহ দেয়।—তীত ২:৩-৫.
৬. যিহোবা আমাদের যে-পরামর্শ দেন, তা থেকে পূর্ণ উপকার লাভ করার জন্য আমাদের কী করতে হবে?
৬ যিহোবা আমাদের সঠিক পথ দেখানোর জন্য অনেক কিছু করেছেন। আমরা কী করতে পারি, যাতে তাঁর পরামর্শ থেকে আমরা পূর্ণ উপকার লাভ করতে পারি? হিতোপদেশ ৩:৫, ৬ পদ বলে: “তুমি নিজের বুদ্ধির উপর নির্ভর কোরো না বরং সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে যিহোবার উপর আস্থা রাখো।” আমরা যখন এমনটা করব, তখন কী হবে? পরে এভাবে লেখা রয়েছে, “তিনি তোমাকে সঠিক পথ দেখাবেন।” এই কারণে আমরা বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে পারব এবং আমাদের জীবন খুবই সুখের হবে। একটু চিন্তা করুন, যিহোবা কতই-না ভালো একজন ঈশ্বর! তিনি আমাদের প্রত্যেককে ভালোবাসেন এবং আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী পরামর্শ দেন।—গীত. ৩২:৮.
যিহোবা আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ করেন
৭. যিহোবা কীভাবে আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ করেন? (ফিলিপীয় ৪:১৯)
৭ ফিলিপীয় ৪:১৯ পদ পড়ুন। সঠিক পথ দেখানোর পাশাপাশি যিহোবা আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ করার মাধ্যমে আমাদের সাহায্য করেন। আমরা খাদ্য, বস্ত্র এবং বাসস্থানের মতো প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর জন্য যে-পরিশ্রম করি, যিহোবা তাতে আশীর্বাদ করেন। (মথি ৬:৩৩; ২ থিষল. ৩:১২) আমরা প্রত্যেকেই এই বিষয় নিয়ে চিন্তা করি যে, আমাদের প্রয়োজনগুলো কীভাবে পূরণ হবে, কিন্তু যিহোবা আমাদের বলেছেন আমরা যেন এই বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা না করি। (মথি ৬:২৫) কেন? কারণ আমাদের পিতা যিহোবা কখনোই তাঁর বিশ্বস্ত সেবকদের পরিত্যাগ করেন না। (মথি ৬:৮; ইব্রীয় ১৩:৫) তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তিনি আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ করবেন। আর আমরা তাঁর প্রতিজ্ঞার উপর পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারি।
৮. যিহোবা দায়ূদের জন্য কী করেছিলেন?
৮ লক্ষ করুন, কীভাবে যিহোবা দায়ূদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ করেছিলেন। দায়ূদ যখন শৌলের হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য পালিয়ে বেরাচ্ছিলেন, তখন যিহোবা দায়ূদ এবং তার লোকদের যত্ন নিয়েছিলেন। দায়ূদ যখন এই বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছিলেন যে, বছরের পর বছর ধরে যিহোবা কীভাবে তার যত্ন নিয়েছেন, তখন তিনি বলেছিলেন, “একসময় আমি যুবক ছিলাম, এখন বৃদ্ধ হয়েছি, কিন্তু আমি কখনো দেখিনি, কোনো ধার্মিক ব্যক্তিকে পরিত্যাগ করা হয়েছে কিংবা তার সন্তানেরা রুটির জন্য ভিক্ষা করছে।” (গীত. ৩৭:২৫) দায়ূদের মতো আপনিও হয়তো নিজের জীবনে দেখেছেন যে, কীভাবে যিহোবা কঠিন পরিস্থিতিতে আপনার এবং অন্য ভাই-বোনদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ করেছিলেন।
৯. যখন কোনো দুর্যোগ ঘটে, তখন যিহোবা কীভাবে তাঁর লোকদের যত্ন নেন? (ছবিগুলোও দেখুন।)
৯ যখন কোনো দুর্যোগ আসে, তখনও যিহোবা তাঁর লোকদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ করেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রথম শতাব্দীতে যখন একটা এলাকায় প্রচণ্ড দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, তখন বিভিন্ন এলাকার খ্রিস্টানেরা সেখানকার ভাই-বোনদের জন্য ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছিল। (প্রেরিত ১১:২৭-৩০; রোমীয় ১৫:২৫, ২৬) বর্তমানেও যিহোবা তাঁর লোকদের অনুপ্রাণিত করেন যেন তারা হৃদয় থেকে ভাই-বোনদের সাহায্য করে। তাই যখন কোনো দুর্যোগ ঘটে, তখন তারা দ্রুত ভাই-বোনদের কাছে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দেয়, যেমন খাবার, জল, জামাকাপড় এবং ওষুধপত্র। যে-ভাই-বোনেরা নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করে, তারা কিংডম হল এবং ভাই-বোনদের বাড়ি মেরামত করতেও সাহায্য করে। শুধু তা-ই নয়, যে-ব্যক্তিদের ঘরবাড়ি ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে এবং যারা নিজেদের প্রিয়জনদের মৃত্যুতে হারিয়েছে, যিহোবার সেবকেরা তাদের বাইবেল থেকে সান্ত্বনা দেয় এবং তাদের উৎসাহিত করে।c
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কীভাবে যিহোবা আমাদের সান্ত্বনা দেন? (৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)e
১০-১১. আপনি বোরিসের অভিজ্ঞতা থেকে কী শিখেছেন?
১০ যিহোবা সেই ব্যক্তিদেরও হৃদয় থেকে সাহায্য করেন, যারা তাঁর উপাসনা করে না। আমরাও যিহোবার মতো হতে চাই, তাই আমরা সেই লোকদের সাহায্য করার জন্য সুযোগ খুঁজি, যারা তাঁর উপাসনা করে না। (গালা. ৬:১০) আর প্রায়ই এটা করার ফলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। ইউক্রেনে থাকা বোরিস নামে একজন ব্যক্তির উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন, যিনি স্কুলের একজন প্রিন্সিপাল। যদিও তিনি একজন যিহোবার সাক্ষি ছিলেন না, তবুও তিনি তার স্কুলের সাক্ষি ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন এবং তাদের বিশ্বাসকে সম্মান করতেন। বোরিসকে যখন যুদ্ধের কারণে তার এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল, তখন ভাইয়েরা তাকে একটা নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দিতে সাহায্য করেছিল। পরে বোরিস যিশুর মৃত্যুর স্মরণার্থ সভায় যোগ দিয়েছিলেন। ভাইয়েরা যেভাবে বোরিসকে সাহায্য করেছিল, সেই সম্বন্ধে তিনি বলেন, “সাক্ষিরা আমাকে অনেক সাহায্য করেছিল এবং আমার ভালোভাবে যত্ন নিয়েছিল, আমি তাদের প্রতি সবসময় কৃতজ্ঞ থাকব।”
১১ আমরা আমাদের করুণাময় পিতা যিহোবাকে অনুকরণ করার চেষ্টা করি এবং যারা তাঁর সেবা করে না, তাদের প্রতিও প্রেম দেখানোর আপ্রাণ চেষ্টা করি। (লূক ৬:৩১, ৩৬) আমরা আশা করি যে, আমাদের এই প্রেম তাদের যিহোবা সম্বন্ধে জানতে এবং তাঁর সেবা করতে অনুপ্রাণিত করবে। (১ পিতর ২:১২) কিন্তু, তারা যিহোবার সেবা করুক বা না-ই করুক, আমরা সেই আনন্দ লাভ করতে পারি, যা অন্যদের দেওয়ার মাধ্যমে পাওয়া যায়।—প্রেরিত ২০:৩৫.
যিহোবা আমাদের সুরক্ষা জোগান
১২. যিহোবা কীভাবে একটা দল হিসেবে তাঁর লোকদের সুরক্ষা জোগানোর প্রতিজ্ঞা করেছেন? (গীতসংহিতা ৯১:১, ২, ১৪)
১২ গীতসংহিতা ৯১:১, ২, ১৪ পদ পড়ুন। যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, তিনি তাঁর লোকদের এমন যেকোনো বিপদ থেকে রক্ষা করবেন, যেটার কারণে তাঁর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যিহোবা কখনোই শয়তানকে বিশুদ্ধ উপাসনাকে কলুষিত করতে দেবেন না। (যোহন ১৭:১৫) শুধু তা-ই নয়, “মহাক্লেশের” সময়েও যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করবেন এবং তাঁর লোকদের সুরক্ষা জোগাবেন। কীভাবে? তিনি তাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় রাখবেন এবং তাদের একটা দল হিসেবে রক্ষা করবেন।—প্রকা. ৭:৯, ১৪.
১৩. যিহোবা কীভাবে আমাদের ব্যক্তি-বিশেষ হিসেবে সুরক্ষা জোগান?
১৩ যিহোবা আমাদের ব্যক্তি-বিশেষ হিসেবেও সুরক্ষা জোগান। কীভাবে? তিনি তাঁর বাক্যের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষা দেন যে, আমাদের জন্য কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল। (ইব্রীয় ৫:১৪) আমরা যখন বাইবেলের নীতি অনুযায়ী জীবনযাপন করি, তখন যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে কোনো চিড় ধরে না, আমাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং আমরা জীবনে সুখী হই। (গীত. ৯১:৪) যিহোবা মণ্ডলীর মাধ্যমেও আমাদের সুরক্ষা জোগান। (যিশা. ৩২:১, ২) ভাই-বোনেরা যিহোবাকে ভালোবাসে এবং তাঁর মান অনুযায়ী জীবনযাপন করে। তাই, আমরা যখন তাদের সঙ্গে সময় কাটাই, তখন আমরা উৎসাহিত হই এবং খারাপ কাজগুলো থেকে দূরে থাকার আমাদের সংকল্প আরও দৃঢ় হয়।—হিতো. ১৩:২০.
১৪. (ক) যিহোবা কেন আমাদের প্রতিটা সমস্যা থেকে উদ্ধার করেন না? (খ) গীতসংহিতা ৯:১০ পদ থেকে আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত হই? (পাদটীকাও দেখুন।)
১৪ অতীতে যিহোবা অনেকসময় তাঁর লোকদের জীবন রক্ষা করেছিলেন। কিন্তু, তিনি কি সবসময় এমনটা করেছিলেন? না। অনেক বার যিহোবার সেবকেরা ‘দুর্ঘটনার’ শিকার হয়েছে। (উপ. ৯:১১) আবার অনেকসময় তাদের উপর তাড়না করা হয়েছে এবং তাদের জীবনও হারাতে হয়েছে। যিহোবা কেন এমনটা ঘটতে দিয়েছেন? যাতে শয়তানের দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হতে পারে। (ইয়োব ২:৪-৬; মথি ২৩:৩৪) বর্তমানেও যিহোবা হয়তো আমাদের প্রতিটা সমস্যা থেকে উদ্ধার করেন না। কিন্তু, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যারা তাঁকে ভালোবাসে, তিনি তাদের কখনোও একা ছেড়ে দেবেন না।d—গীত. ৯:১০.
যিহোবা আমাদের সান্ত্বনা দেন
১৫. প্রার্থনা, বাইবেল এবং ভাই-বোনদের কাছ থেকে আমরা কীভাবে সান্ত্বনা লাভ করি? (২ করিন্থীয় ১:৩, ৪)
১৫ দ্বিতীয় করিন্থীয় ১:৩, ৪ পদ পড়ুন। মাঝে মাঝে আমরা হয়তো অনেক হতাশ ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তে পারি। আপনিও কি কোনো সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন অথবা নিজেকে একা মনে করছেন? যদি তা-ই হয়, তা হলে এই পরিস্থিতিতে আপনি হয়তো চিন্তা করতে পারেন, আপনার উপর দিয়ে কী ঝড় বইছে, তা কেউ বুঝতে পারে না। কিন্তু, যিহোবা তা বোঝেন। যিহোবা শুধুমাত্র আমাদের কষ্ট বোঝেন না, সেইসঙ্গে “তিনি আমাদের সমস্ত পরীক্ষার মধ্যে সান্ত্বনা দেন।” কীভাবে? যখন আমরা যিহোবার কাছে বিনতি করি, তখন তিনি আমাদের সেই শান্তি দেন, “যে-শান্তির কথা মানুষ চিন্তাও করতে পারে না।” (ফিলি. ৪:৬, ৭) আর বাইবেল থেকে আমরা যখন যিহোবার কথাগুলো পড়ি, তখনও আমরা অনেক সান্ত্বনা পাই। এটিতে বলা হয়েছে, তিনি আমাদের কতটা ভালোবাসেন, আমাদের প্রজ্ঞাবান হতে শেখান এবং আমাদের এক আশা জোগান। এই কথাগুলো পড়ে আমরা অনেক শক্তি লাভ করি। আর যখন সভাগুলোতে আমরা বাইবেল থেকে ভালো বিষয়গুলো শুনি এবং ভাই-বোনদের সঙ্গে মেলামেশা করি, তখন সেটা থেকেও আমরা অনেক সান্ত্বনা লাভ করি।
১৬. নেথেন ও প্রিষ্কিল্লার উদাহরণ থেকে আপনি কী শিখেছেন?
১৬ যিহোবা তাঁর বাক্যের মাধ্যমে আমাদের সান্ত্বনা দেন এবং উৎসাহ দেন। এটা বোঝার জন্য আমেরিকায় থাকা নেথেন ও প্রিষ্কিল্লার উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। কয়েক বছর আগে তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা এমন একটা এলাকায় গিয়ে সেবা করবে, যেখানে বেশি প্রচারকদের প্রয়োজন। নেথেন বলেন, “আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, যিহোবা আমাদের প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করবেন।” কিন্তু, যখন তারা নতুন জায়গায় গিয়ে সেবা করতে শুরু করে, তখন পরিস্থিতি হঠাৎ করেই বদলে যায়। তাদের স্বাস্থ্য খারাপ হতে শুরু করে এবং চাকরি না পাওয়ায় তাদের নিজেদের ভরণ-পোষণ জোগানো কঠিন হয়ে পড়ে। কিছু সময় পরই তাদের ঘরে ফিরে আসতে হয় আর সেখানেও তাদের আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। সেই সময়ের কথা মনে করে নেথেন বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম, যিহোবা আমাদের অনেক আশীর্বাদ দেবেন। কিন্তু, আমরা যেমনটা ভেবেছিলাম, তেমনটা হয়নি। এরপর আমি চিন্তা করতে শুরু করি, আমি কোনো ভুল করিনি তো?” কিন্তু, পরবর্তী সময়ে নেথেন ও প্রিষ্কিল্লা বুঝতে পেরেছিলেন যে, সেই কঠিন সময়েও যিহোবা তাদের হাত ছেড়ে দেননি। নেথেন বলেন,“একজন প্রকৃত বন্ধু কঠিন সময়ে যেমন আমাদের উৎসাহিত করে এবং সাহায্য করে, ঠিক একইভাবে বাইবেল থেকেও আমরা অনেক উৎসাহ পেয়েছিলাম এবং বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমাদের কী করতে হবে। আমরা আমাদের সমস্যাগুলোর উপর মনোযোগ দেওয়ার পরিবর্তে যিহোবা কীভাবে আমাদের সেই সমস্যাগুলো সহ্য করতে সাহায্য করেছেন, সেটার উপর মনোযোগ দিয়েছিলাম। এর ফলে আমাদের বিশ্বাস দৃঢ় হয়েছিল এবং পরবর্তী সময়ে আসা যেকোনো সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম।”
১৭. বোন হেলগা কীভাবে সান্ত্বনা লাভ করেছিলেন? (ছবিও দেখুন।)
১৭ ভাই-বোনদের মাধ্যমেও আমরা সান্ত্বনা পেতে পারি। এটা বোঝার জন্য হাঙ্গেরিতে থাকা বোন হেলগার উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। কয়েক বছর ধরে তাকে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে, যে-কারণে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন থাকতেন। তিনি মনে করেছিলেন যে, তিনি অযোগ্য এবং তার দ্বারা কিছুই হবে না। কিন্তু, এখন তিনি সেই সময়ের কথা চিন্তা করে বুঝতে পারেন যে, যিহোবা ভাই-বোনদের ব্যবহার করে তাকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমি চাকরি করছিলাম, আমার অসুস্থ সন্তানের যত্ন নিচ্ছিলাম এবং অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছিলাম। এই কারণে অনেকসময় আমি ভেঙে পড়তাম। আর সেই সময় যিহোবা আমাকে আবারও প্রচুর শক্তি দিতেন। গত ত্রিশ বছরে আমার এইরকম একটাও দিন যায়নি, যে-দিন যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করেননি এবং আমাকে সান্ত্বনা দেননি। আমি দেখেছি যে, আমি যখনই নিরুৎসাহিত হই, তখনই কোনো-না-কোনো ভাই অথবা বোন আমাকে ম্যাসেজ পাঠান অথবা কার্ডে লিখে কিছু পাঠান অথবা উৎসাহজনক কিছু বলেন। তাদের উৎসাহজনক কথা এবং প্রেম দেখে আমি আবারও শক্তি লাভ করি। আমি বুঝতে পারি, এই সমস্ত কিছু যিহোবার সাহায্যই ঘটছে।”
কীভাবে যিহোবা আপনার মাধ্যমে অন্যদের সান্ত্বনা দেন? (১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)
১৮. আমরা কীভাবে অন্যদের সান্ত্বনা দিতে পারি?
১৮ একটু চিন্তা করুন, আমরাও যিহোবার মতো অন্যদের সান্ত্বনা দিতে পারি। এটা কতই-না বড়ো এক সুযোগ! আমরা এটা কীভাবে করতে পারি? আমরা লোকদের কথা মন দিয়ে শুনতে পারি। আমাদের কথার মাধ্যমে তাদের সান্ত্বনা দিতে পারি আর তাদের সাহায্য করার জন্য আমাদের পক্ষে যা করা সম্ভব, তা-ই করতে পারি। (হিতো. ৩:২৭) আমাদের লক্ষ্য হল, যেকোনো ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দেওয়া এমনকী সে যিহোবার সেবা না করলেও। যখন কেউ অসুস্থ থাকে, উদ্বিগ্ন থাকে অথবা দুঃখের মধ্যে ডুবে থাকে, আমরা তার সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারি। আমরা মন দিয়ে তাদের কথা শুনতে পারি অথবা বাইবেল থেকে এমন কিছু বলতে পারি, যা থেকে তারা সান্ত্বনা পেতে পারে। আমরা যখন যিহোবাকে অনুকরণ করি, যিনি “সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর,” তখন আমরা কষ্ট সহ্য করতে ভাই-বোনদের সাহায্য করতে পারি। শুধু তা-ই নয়, যারা যিহোবার সেবা করে না, হয়তো তাদের উপরও এর ভালো প্রভাব পড়তে পারে। আর এর ফলে তারা হয়তো যিহোবা সম্বন্ধে জানতে চাইবে।—মথি ৫:১৬.
যিহোবা সবসময় আমাদের সঙ্গে থাকেন
১৯. যিহোবা আমাদের জন্য কী করেন এবং আমরা কীভাবে তাঁকে অনুকরণ করতে পারি?
১৯ যিহোবা সেই সমস্ত ব্যক্তির জন্য চিন্তা করেন, যারা তাঁকে গভীরভাবে ভালোবাসে। আমরা যখন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাই, তখন তিনি আমাদের একা ছেড়ে দেন না। একজন বাবা ও মা যেভাবে তার সন্তানদের যত্ন নেন, ঠিক একইভাবে যিহোবাও তাঁর বিশ্বস্ত উপাসকদের অনেক যত্ন নেন, তিনি তাদের সঠিক পথ দেখান, তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ করেন, তাদের সুরক্ষা জোগান এবং তাদের সান্ত্বনা দেন। আমরাও আমাদের প্রেমময় পিতাকে অনুকরণ করতে পারি। লোকেরা যখন সমস্যার মধ্য দিয়ে যায়, তখন আমরা তাদের সান্ত্বনা দিতে পারি এবং তাদের উৎসাহিত করতে পারি। আমাদেরও হয়তো কোনো সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে অথবা কোনো বিষয় নিয়ে আমরা হয়তো খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তে পারি। এইরকম পরিস্থিতিতে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। তিনি নিজে আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন, “ভয় করিও না, কারণ আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি।” (যিশা. ৪১:১০) এই পদ পড়ে আমরা কতই-না শক্তি লাভ করি। সত্যিই, যিহোবা কখনোই আমাদের একা ছেড়ে দেবেন না!
গান ১০০ অতিথি হিসেবে তাদের গ্রহণ করো
a ২০১১ সালের ১৫ এপ্রিল প্রহরীদুর্গ পত্রিকার “ঈশ্বরের সম্মান নিয়ে আসে এমন সিদ্ধান্ত নিন” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।
b ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকার “যিহোবার দেখানো পথে চলতে থাকুন” শিরোনামের প্রবন্ধের ১১-১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন।
c এই বিষয়ে সম্প্রতি কোনো তথ্য পড়ার জন্য jw.org ওয়েবসাইটের সার্চ বাক্সে “ত্রাণ কাজ” টাইপ করুন।
d আরও জানার জন্য ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল” দেখুন।
e ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: মালাউইতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ভাই-বোনদের খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেওয়া হচ্ছে এবং এর পাশাপাশি বাইবেল থেকে সান্ত্বনা দেওয়া হচ্ছে।