অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২১
গান ২১ রাজ্যকে প্রথম স্থান দাও
সেই নগরের জন্য অপেক্ষা করুন, যা চিরস্থায়ী
“আমরা আন্তরিকভাবে এমন এক নগরের জন্য অপেক্ষা করছি, যা আসতে যাচ্ছে।”—ইব্রীয় ১৩:১৪.
আমরা কী শিখব?
ইব্রীয় ১৩ অধ্যায়ে লেখা কথাগুলো মেনে চলা কীভাবে বর্তমানে ও ভবিষ্যতে আমাদের সাহায্য করতে পারে?
১. যিশু জেরুসালেম নগর সম্বন্ধে কী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন?
মৃত্যুর কয়েক দিন আগে যিশু খ্রিস্ট জেরুসালেম নগর এবং এর মন্দিরের বিষয়ে একটা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “তোমরা . . . জেরুসালেমকে সৈন্যদের দ্বারা বেষ্টিত দেখবে।” (লূক ২১:২০) এই ভবিষ্যদ্বাণী সেই সময়ে পরিপূর্ণ হয়েছিল, যখন প্রথম শতাব্দীতে রোমীয় সৈন্যেরা এসে জেরুসালেম নগরকে ঘিরে ফেলেছিল। যিশু তাঁর শিষ্যদের আগে থেকেই বলেছিলেন যে, এই ঘটনা ঘটলে তারা যেন সঙ্গেসঙ্গে সেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।—লূক ২১:২১, ২২.
২. পৌল যিহূদিয়া এবং জেরুসালেমের খ্রিস্টানদের কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন?
২ রোমীয় সৈন্যেরা জেরুসালেম নগর ঘিরে ফেলার কয়েক বছর আগেই প্রেরিত পৌল প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের কাছে একটা জোরালো চিঠি লিখেছিলেন। এই চিঠিটা আমাদের কাছে ইব্রীয় বই হিসেবে পরিচিত। পৌল সেই চিঠিতে যিহূদিয়া এবং জেরুসালেমের খ্রিস্টানদের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেগুলো তাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করতে পারত। এর পর কী ঘটতে যাচ্ছিল? শীঘ্রই জেরুসালেম ধ্বংস হতে যাচ্ছিল। পৌল লিখেছিলেন, “কারণ এখানে আমাদের এমন কোনো নগর নেই, যা চিরস্থায়ী, কিন্তু আমরা আন্তরিকভাবে এমন এক নগরের জন্য অপেক্ষা করছি, যা আসতে যাচ্ছে।” (ইব্রীয় ১৩:১৪) তাই, খ্রিস্টানেরা যদি আসন্ন ধ্বংস থেকে রক্ষা পেতে চাইত, তা হলে তাদের নিজেদের বাড়ি ও ব্যাবসা ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হত।
৩. সেই ‘নগরটা’ কী, “যা আসতে যাচ্ছে” এবং কেন আমরা এর জন্য অপেক্ষা করে আছি?
৩ যিহূদিয়া এবং জেরুসালেমের খ্রিস্টানেরা যখন সমস্ত কিছু ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখন লোকেরা হয়তো তাদের নিয়ে সমালোচনা এবং উপহাস করেছিল। তবে, এই সিদ্ধান্তের ফলে তারা রক্ষা পেয়েছিল। বর্তমানে, আমাদের নিয়েও ঠাট্টা করা হয় করা হয় কারণ আমরা আরাম-আয়েশের পিছনে ছুটি না আর এটাও বিশ্বাস করি না যে, মানুষেরা আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করবে। আমরা জানি, খুব শীঘ্রই এই বিধিব্যবস্থা ধ্বংস হতে চলেছে। তাই, আমরা “এমন এক নগরের” অর্থাৎ ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য ‘অপেক্ষা করছি, যেটার প্রকৃত ভিত্তি রয়েছে’ এবং “যা আসতে যাচ্ছে।” এই রাজ্যের মাধ্যমেই মানুষের সমস্ত সমস্যা দূর হবে। (ইব্রীয় ১১:১০; মথি ৬:৩৩) এই প্রবন্ধের প্রতিটা উপশিরোনাম থেকে আমরা এই তিনটে প্রশ্নের উত্তর জানতে পারব: (১) ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় পৌল খ্রিস্টানদের যে-পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেগুলো থেকে তারা কীভাবে আসন্ন নগরের জন্য অপেক্ষা করতে পেরেছিল? (২) পৌল কীভাবে তাদের আসন্ন ঘটনাগুলোর জন্য প্রস্তুত করেছিলেন? এবং (৩) তার পরামর্শ কীভাবে বর্তমানে আমাদের সাহায্য করতে পারে?
যিহোবার উপর আস্থা রাখুন, যিনি আপনাকে কখনো পরিত্যাগ করবেন না!
৪. জেরুসালেম কেন খ্রিস্টানদের কাছে একটা বিশেষ নগর ছিল?
৪ প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের কাছে জেরুসালেম খুবই বিশেষ একটা নগর ছিল। ৩৩ খ্রিস্টাব্দে সেখানে খ্রিস্টীয় মণ্ডলী গঠিত হয়েছিল এবং পরিচালকগোষ্ঠী এই নগরেই ছিল। শুধু তা-ই নয়, সেখানে অনেক খ্রিস্টানের নিজস্ব বাড়ি ছিল এবং তারা নিজেদের জন্য অনেক কিছু সঞ্চয়ও করে রেখেছিল। কিন্তু, যিশু তাঁর শিষ্যদের আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তাদের জেরুসালেম ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে। তাদের শুধুমাত্র জেরুসালেম নয় বরং সমগ্র যিহূদিয়া অঞ্চল থেকেই পালিয়ে যেতে হত।—মথি ২৪:১৬.
৫. কীভাবে পৌল প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের আসন্ন সময়ের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন?
৫ পৌল খ্রিস্টানদের আগে থেকেই প্রস্তুত করতে চেয়েছিলেন যেন সঠিক সময়ে তারা জেরুসালেম ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারে। তাই, পৌল তাদের বুঝিয়েছিলেন যে, জেরুসালেম নগর সম্বন্ধে যিহোবা কী মনে করেন। তিনি খ্রিস্টানদের বলেছিলেন, জেরুসালেম মন্দির এবং সেখানে যে-বলিগুলো উৎসর্গ করা হয়, সেগুলো ঈশ্বরের দৃষ্টিতে আর পবিত্র নয়। আর সেখানে যে-যাজকেরা সেবা করে, তাদের উপর আর যিহোবার অনুমোদন নেই। (ইব্রীয় ৮:১৩) শুধু তা-ই নয়, সেই নগরের বেশিরভাগ লোকই খ্রিস্টকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। তাই, জেরুসালেম মন্দির এখন আর যিহোবার উপাসনা করার জন্য বিশেষ স্থান ছিল না এবং সেটা খুব শীঘ্রই ধ্বংস হতে যাচ্ছিল।—লূক ১৩:৩৪, ৩৫.
৬. ইব্রীয় ১৩:৫, ৬ পদে পৌলের যে-পরামর্শ লিপিবদ্ধ রয়েছে, তা সেই সময়ের খ্রিস্টানদের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
৬ পৌল যখন ইব্রীয় খ্রিস্টানদের প্রতি চিঠি লিখেছিলেন, তখন জেরুসালেম একটা সমৃদ্ধিশালী নগর ছিল। সেই সময়ের একজন রোমীয় লেখক বলেছিলেন, “জেরুসালেম প্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত নগর ছিল।” আলাদা আলাদা দেশে বসবাসকারী যিহুদিরা বছরে তিন বার উৎসব পালন করার জন্য জেরুসালেমে আসত এবং এর ফলে সেই নগর আর্থিক দিক থেকে উন্নত হয়েছিল। কোনো সন্দেহ নেই যে, এই কারণে সেখানকার কিছু খ্রিস্টান প্রচুর অর্থ উপার্জন করছিল। তাই, হয়তো পৌল সেখানে থাকা খ্রিস্টানদের বলেছিলেন: “টাকাপয়সার প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলো না, বরং তোমাদের যা আছে, তাতেই সন্তুষ্ট থাকো।” এরপর তিনি তাদের যিহোবার এই প্রতিজ্ঞার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন: “আমি কখনো তোমাকে ছাড়ব না আর আমি কখনো তোমাকে পরিত্যাগ করব না।” (পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:৫, ৬; দ্বিতীয়. ৩১:৬; গীত. ১১৮:৬) জেরুসালেম এবং যিহূদিয়াতে থাকা খ্রিস্টানদের অবশ্যই এই বিষয়টা মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। কেন? কারণ এই চিঠি পাওয়ার কিছু সময় পরই তাদের বাড়ি, ব্যাবসা, জিনিসপত্র ছেড়ে নতুন জায়গায় গিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করতে হত।
৭. কেন আমাদের এখন থেকেই যিহোবার উপর আস্থা বৃদ্ধি করতে হবে?
৭ শিক্ষা: খুব শীঘ্রই “মহাক্লেশ” শুরু হবে এবং এই দুষ্ট জগৎ ধ্বংস করে দেওয়া হবে। (মথি ২৪:২১) প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের মতো আমাদেরও অবশ্যই সজাগ ও প্রস্তুত থাকতে হবে। (লূক ২১:৩৪-৩৬) মহাক্লেশের সময় আমাদের হয়তো সমস্ত সম্পত্তি ছেড়ে দিতে হবে। সেইসময় আমাদের যিহোবার উপর আস্থা রাখতে হবে। কিন্তু, বর্তমানে মহাক্লেশ শুরু হওয়ার আগেই আমাদের যিহোবার উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে। তাই নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমার সিদ্ধান্ত এবং ভবিষ্যতের জন্য আমি যে-পরিকল্পনা করেছি, সেটা কী প্রকাশ করে?’ ‘আমি কি ধনসম্পদের উপর আস্থা রাখি, না কি সেই ঈশ্বরের উপর, যিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, আমাকে কখনো ছেড়ে দেবেন না?’ (১ তীম. ৬:১৭) কোনো সন্দেহ নেই যে, প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের উদাহরণের প্রতি মনোযোগ দিলে আমরা ‘মহাক্লেশের’ সময়ে বিশ্বস্ত থাকতে পারব। তবে, এটা এমন এক কঠিন সময় হবে, যা আগে কখনো হয়নি। সেইসময় আমাদের কী করা উচিত, তা আমরা কীভাবে জানতে পারব?
নেতৃত্ব নেন এমন ভাইদের বাধ্য হোন
৮. যিশু তাঁর শিষ্যদের কোন নির্দেশনা দিয়েছিলেন?
৮ ইব্রীয় খ্রিস্টানেরা পৌলের চিঠি পাওয়ার কয়েক বছর পর রোমীয় সৈন্যবাহিনী জেরুসালেম ঘিরে ফেলে। এটা দেখে খ্রিস্টানেরা বুঝতে পেরেছিল যে, তাদের পালানোর সময় এসে গিয়েছে এবং জেরুসালেম নগর ধ্বংস হতে চলেছে। (মথি ২৪:৩; লূক ২১:২০, ২৪) কিন্তু, তারা কোথায় পালাবে? যিশু তাদের শুধুমাত্র এটা বলেছিলেন: “যারা যিহূদিয়াতে থাকে, তারা পাহাড়ি এলাকায় পালিয়ে যাক।” (লূক ২১:২১) কিন্তু, সেই এলাকায় অনেকগুলো পাহাড় ছিল। তাহলে, তারা কোন পাহাড়ের দিকে পালাবে?
৯. খ্রিস্টানেরা কেন হয়তো চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল যে, তাদের কোন পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যেতে হবে? (মানচিত্র দেখুন।)
৯ সেখানে কোন পাহাড়গুলো ছিল, তা লক্ষ করুন। শমরিয়ার পর্বত, গালীলের পর্বত, হর্মোণ পর্বত এবং লেবানন পর্বতমালা। শুধু তা-ই নয়, জর্ডনের ওপারেও অনেক পাহাড় ছিল। (মানচিত্র দেখুন।) কিছু লোক হয়তো চিন্তা করেছিল যে, সেই পাহাড়ি এলাকায় যে-নগরগুলো ছিল, সেখানে পালিয়ে যাওয়া নিরাপদ হবে। যেমন, গামলা নগর খুবই উঁচু পাহাড়ে অবস্থিত ছিল এবং সেখানে যাওয়া খুবই কঠিন ছিল। তাই, কিছু যিহুদি মনে করেছিল যে, এই নগর লুকোনোর জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা হবে। কিন্তু, পরে সেই নগরে যিহুদি এবং রোমীয় সৈন্যদের মধ্যে এক ভয়ানক যুদ্ধ হয় এবং সেখানে থাকা অনেক লোককে মেরে ফেলা হয়।a
এমন অনেক পাহাড় ছিল, যেগুলোতে খ্রিস্টানেরা আশ্রয় নিতে পারত, কিন্তু সমস্ত পাহাড় নিরাপদ ছিল না (৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)
১০-১১. (ক) যিহোবা খ্রিস্টানদের হয়তো কীভাবে পথ দেখিয়েছিলেন? (ইব্রীয় ১৩:৭, ১৭) (খ) নেতৃত্ব নেন এমন ভাইদের বাধ্য হওয়ার ফলে খ্রিস্টানেরা কীভাবে উপকৃত হয়েছিল? (ছবিও দেখুন।)
১০ এমনটা মনে করা হয়, যিহোবা নেতৃত্ব নেন এমন ভাইদের মাধ্যমে খ্রিস্টানদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ইউসেবিয়াস নামে একজন ইতিহাসবিদ পরবর্তী সময়ে লিখেছিলেন: “জেরুসালেমের মণ্ডলীর লোকেরা ঈশ্বরের কাছ থেকে নির্দেশনা পেয়েছিল। নিযুক্ত ভাইদের কাছে ঈশ্বর প্রকাশ করেছিলেন যে, তাদের কী করা উচিত। তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল. . . যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই তারা যেন নগর ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং পিরিয়ার পেল্লা নগরে চলে যায় এবং সেখানে বাস করতে শুরু করে।” এইরকমটা মনে করা হয়, পেল্লা একেবারে সঠিক জায়গা ছিল। কেন? কারণ এই নগরটা জেরুসালেম থেকে বেশি দূরে ছিল না এবং সেখানে পৌঁছানো সহজ ছিল। পেল্লা ন-যিহুদিদের নগর ছিল এবং সেখানে খুব কম যিহুদিই বাস করত। তাই, যখন গোঁড়া যিহুদিদের ও রোমীয়দের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তখন সেটার প্রভাব পেল্লা নগরে খুব একটা পড়েনি।—মানচিত্র দেখুন।
১১ পৌল খ্রিস্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন, “যারা তোমাদের মধ্যে নেতৃত্ব নেন, তাদের বাধ্য হও এবং বশীভূত হও।” আর নেতৃত্ব নেন এমন ভাইয়েরা যখন ভাই-বোনদের পেল্লায় পালিয়ে যেতে বলেছিল, তখন তারা তাদের বাধ্য হয়েছিল। (পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:৭, ১৭.) এর ফল কী হয়েছিল? তারা রক্ষা পেয়েছিল। ঈশ্বর তাঁর লোকদের একা ছেড়ে দেননি, কারণ তারা তাঁর রাজ্যের জন্য অর্থাৎ সেই ‘নগরের জন্য অপেক্ষা করছিল, যেটার প্রকৃত ভিত্তি রয়েছে।’—ইব্রীয় ১১:১০.
পেল্লা কাছেই ছিল এবং সেখানে কোনো বিপদ ছিল না (১০-১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)
১২-১৩. যিহোবা কঠিন সময়ে কীভাবে তাঁর লোকদের পথ দেখিয়েছেন?
১২ শিক্ষা: যিহোবা নেতৃত্ব নেন এমন ভাইদের মাধ্যমে তাঁর লোকদের নির্দেশনা দেন যে, তাদের কী করতে হবে। বাইবেলে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যা দেখায়, যিহোবা কঠিন সময়ে তাঁর লোকদের পথ দেখানোর জন্য পালকদের নিযুক্ত করেছিলেন। (দ্বিতীয়. ৩১:২৩; গীত. ৭৭:২০) বর্তমানেও আমরা এর অনেক প্রমাণ দেখতে পাচ্ছি যে, যিহোবা নেতৃত্ব নেন এমন ভাইদের মাধ্যমে তাঁর লোকদের পথ দেখাচ্ছেন।
১৩ উদাহরণ স্বরূপ, যখন কোভিড-১৯ অতিমারি শুরু হয়েছিল, তখন “নেতৃত্ব নেন” এমন ভাইয়েরা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছিল। প্রাচীনদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল যে, তারা কীভাবে সভা পরিচালনা করবে এবং ভাই-বোনদের জন্য প্রচারের ব্যবস্থা করবে, যাতে তারা যিহোবার উপাসনা চালিয়ে যেতে পারে। অতিমারি শুরু হওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই ৫০০টারও বেশি ভাষায় আমাদের সম্মেলনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ভাই-বোনেরা ইন্টারনেট ও টিভির মাধ্যমে কার্যক্রম দেখেছিল এবং রেডিওর মাধ্যমে তা শুনেছিল। এই সম্মেলন খুবই অসাধারণ ছিল, কারণ এমনটা আগে কখনো ঘটেনি। অতিমারি চলাকালীন প্রত্যেক ভাই-বোন ক্রমাগত যিহোবার কাছ থেকে সময়মতো নির্দেশনা পেয়েছিল। এই কারণেই আমাদের মধ্যে একতা বজায় ছিল। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, ভবিষ্যতে যত সমস্যাই আসুক না কেন, যিহোবা নেতৃত্ব নেন এমন ভাইদের মাধ্যমে ক্রমাগত তাঁর লোকদের পথ দেখাবেন, যাতে তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমরা যদি মহাক্লেশের জন্য প্রস্তুত হতে চাই এবং সেইসময় বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে চাই, তা হলে আমাদের যিহোবার উপর আস্থা রাখতে হবে এবং তাঁর আজ্ঞা পালন করতে হবে। কিন্তু, পৃথিবীকে কাঁপিয়ে তোলার মতো সেই সময়ের মুখোমুখি হওয়ার জন্য আমাদের নিজেদের মধ্যে আর কোন কোন গুণ বৃদ্ধি করতে হবে?
ভ্রাতৃপ্রেম ও আতিথেয়তা দেখান
১৪. যেমনটা ইব্রীয় ১৩:১-৩ পদে বলা হয়েছে, জেরুসালেম ধ্বংস হওয়ার আগেই খ্রিস্টানদের নিজেদের মধ্যে কোন গুণগুলো বৃদ্ধি করতে হত?
১৪ মহাক্লেশের সময় আমাদের আরও বেশি করে ভাই-বোনদের ভালোবাসতে হবে। এই বিষয়ে আমরা জেরুসালেম এবং যিহূদিয়ার খ্রিস্টানদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। তারা একে অন্যকে খুব ভালোবাসত। (ইব্রীয় ১০:৩২-৩৪) কিন্তু, জেরুসালেম ধ্বংস হওয়ার আগে তাদের আরও বেশি করে একে অন্যের প্রতি “ভ্রাতৃপ্রেম” ও “আতিথেয়তা” দেখাতে হত।b (পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:১-৩.) শীঘ্রই এই জগৎ ধ্বংস হতে যাচ্ছে এবং এর আগেই আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি ভালোবাসা আরও বৃদ্ধি করতে হবে।
১৫. জেরুসালেম ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর ইব্রীয় খ্রিস্টানদের কেন ভ্রাতৃপ্রেম ও আতিথেয়তা দেখানোর প্রয়োজন ছিল?
১৫ রোমীয় সৈন্যেরা জেরুসালেম ঘিরে ফেলার কিছু সময় পরই হঠাৎ করে নগর ছেড়ে চলে গিয়েছিল। এই সময়ে খ্রিস্টানদের সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল। এইরকম পরিস্থিতিতে তারা নিজেদের সঙ্গে অল্প জিনিসই নিয়ে যেতে পারত। (মথি ২৪:১৭, ১৮) তাই, পেল্লায় যাওয়ার সময় তাদের একে অন্যকে সাহায্য করতে হত এবং সেখানে গিয়ে এক নতুন জীবন শুরু করার জন্যও একে অন্যকে সাহায্য করতে হত। অনেক ভাই-বোনের খাবার, জামাকাপড় এবং থাকার জায়গার প্রয়োজন হয়েছিল। এই ‘প্রয়োজনের সময়ে’ খ্রিস্টানদের কাছে একে অন্যের প্রতি ভ্রাতৃপ্রেম ও আতিথেয়তা দেখানোর অর্থাৎ একে অন্যকে সাহায্য করার এবং তাদের কাছে যা-কিছু রয়েছে, তা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ ছিল।—তীত ৩:১৪.
১৬. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি, প্রয়োজন রয়েছে এমন ভাই-বোনদের আমরা ভালোবাসি? (ছবিও দেখুন।)
১৬ শিক্ষা: আমরা যদি আমাদের ভাই-বোনদের ভালোবাসি, তা হলে আমরা প্রয়োজনের সময় তাদের সাহায্য করব। সম্প্রতি, যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভাই-বোনদের যখন অন্য জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছিল, তখন সেখানকার খ্রিস্টানেরা তাদের সাহায্য করেছিল এবং উৎসাহ দিয়েছিল। এভাবে সেই ভাই-বোনেরা যিহোবার সেবা চালিয়ে যেতে পেরেছিল। ইউক্রেনে থাকা আমাদের এক বোনকে যুদ্ধের কারণে তার বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যেতে হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি যে, কীভাবে যিহোবা ভাই-বোনদের মাধ্যমে আমাদের যত্ন নিয়েছিলেন এবং আমাদের পথ দেখিয়েছিলেন। ভাই-বোনেরা আমাদের প্রেমের সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছিল। প্রথমে ইউক্রেনে, এরপর হাঙ্গেরিতে এবং এখন এখানে জার্মানিতে, যিহোবা ভাই-বোনদের মাধ্যমে আমাদের সাহায্য করেছিলেন।” আমরা যখন ভাই-বোনদের প্রতি আতিথেয়তা দেখাই, তখন আমরা আসলে যিহোবার সঙ্গে কাজ করি।—হিতো. ১৯:১৭; ২ করি. ১:৩, ৪.
সেই ভাই-বোনদের সাহায্য করুন, যাদের নিজের বাড়িঘর ছেড়ে অন্য জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নিতে হয় (১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)
১৭. কেন আমাদের এখন থেকেই একে অন্যের প্রতি ভ্রাতৃপ্রেম ও আতিথেয়তা দেখানো গুরুত্বপূর্ণ?
১৭ এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, মহাক্লেশের সময় আমাদের ভাই-বোনদের আরও বেশি করে সাহায্য করতে হবে। (হবক্. ৩:১৬-১৮) যিহোবা বর্তমানে আমাদের শেখাচ্ছেন, কীভাবে অন্যদের প্রতি ভ্রাতৃপ্রেম ও আতিথেয়তা দেখাতে হয়। আগামী দিনে আমাদের আরও বেশি করে এটার প্রয়োজন হবে।
ভবিষ্যতে কী ঘটবে?
১৮. আমরা প্রথম শতাব্দীর ইব্রীয় খ্রিস্টানদের কাছ থেকে কী শিখতে পারি?
১৮ যে-খ্রিস্টানেরা আজ্ঞা পালন করেছিল এবং জেরুসালেম ছেড়ে পাহাড়ের দিকে পালিয়ে গিয়েছিল, তারা রক্ষা পেয়েছিল। তাদের সব কিছু ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছিল। কিন্তু, যিহোবা তাদের কখনো একা ছেড়ে দেননি। তিনি তাদের যত্ন নিয়েছিলেন। আমরা তাদের কাছ থেকে কী শিখতে পারি? আমরা জানি না, ভবিষ্যতে ঘটনাগুলো কীভাবে ঘটবে। কিন্তু, আমরা এটা জানি, আমাদের বাধ্য হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ যিশু আমাদের তা করতে বলেছেন। (লূক ১২:৪০) শুধু তা-ই নয়, ইব্রীয় খ্রিস্টানদের প্রতি পৌল তার চিঠিতে যে-নির্দেশনা দিয়েছিলেন, সেটার প্রতিও আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। আর আমাদের যিহোবার প্রতিজ্ঞা মনে রাখতে হবে যে, তিনি কখনো আমাদের ছেড়ে দেবেন না। (ইব্রীয় ১৩:৫, ৬) তাই, আসুন ‘আমরা আন্তরিকভাবে এমন এক নগরের’ জন্য অর্থাৎ ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য অপেক্ষা করি, যা চিরস্থায়ী হবে এবং আমাদের জন্য অনেক আশীর্বাদ নিয়ে আসবে।—মথি ২৫:৩৪.
গান ১৫৭ শান্তি শেষ পর্যন্ত!
a খ্রিস্টানেরা জেরুসালেম ও যিহূদিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার কিছু সময় পরই অর্থাৎ ৬৭ খ্রিস্টাব্দে এই যুদ্ধ হয়েছিল।
b যে-গ্রিক শব্দটাকে “ভ্রাতৃপ্রেম” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, তা সেই ভালোবাসাকে বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হত, যেটা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের মধ্যে হয়। পৌল সেই শব্দটা ব্যবহার করে বলেন যে, খ্রিস্টান ভাই-বোনের মধ্যে কেমন প্রেম থাকা উচিত।